এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam) এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পর্কিত যে সকল বিষয় না জানলেই নয়
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৬:০১ সন্ধ্যা
২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশে এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ৪টি ভলিউমে ৩শ’ পৃষ্ঠায় দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগ আনা হয়।
আসুন আমরা জেনে নেই জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মামলার পদ্ধতিগত ত্রুটিসমূহ:
# প্রসিকিউশন পক্ষের ১৮ জন সাক্ষী থাকলেও আসামী পক্ষের জন্য ৫ জন সাক্ষী বেধে দেওয়া হয়।
# তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন মামলার প্রস্তুতির জন্য দেড় বছর সময় পেলেও ডিফেন্স পক্ষকে মাত্র ৪ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
# ট্রাইব্যুনাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সাক্ষীঃ তদন্ত কর্মকর্তার জেরা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েছিলেন।
# এই মামলা আমলে নেয়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন ইকোনোমিস্ট ও আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ কেলেঙ্কারীর জন্য প্রশ্নবিদ্ধ বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ যিনি পরে ঐ কেলেঙ্কারীর জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এরপর দেখার চেষ্টা করি এটিএম আজহারুল ইসলাম এর উপর আনিত অভিযোগ সমূহের অসঙ্গতিগুলোঃ ১৯৭১ সালে এটিএম আজহারুল ইসলাম রংপুর কারমাইকেল কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় তিনি নাকি ঐ সময়ে পাকিস্তান আর্মি অফিসারদের বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন! সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলরা একাদশ শ্রেনীর একজন ছাত্রের আদেশ মান্য করতেন; এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
Superior Command Responsibility!!!
কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের কমান্ডে চলতো পাকিস্তান সেনাবাহিনী!!!
জামায়াত নেতারা নাকি ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আর্মি অফিসারদের (মেজর, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন! সেনাবাহিনীর অফিসাররা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের ঐসব নির্দেশ মান্য করতেন; এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
এটিএম আজহারুল ইসলামএর উপর আনিত অভিযোগের অসঙ্গতি :
অভিযোগ নং ৩ - ঝাড়ুয়ার বিলে ১২শ’লোককে গণহত্যা ও ২শ লোককে অপহরণের পরে হত্যা।
৪নং সাক্ষী মেছের উদ্দিন ও ৫নং সাক্ষী আব্দুর রহমান কেউই ১২/১৪ গ্রামের নন এবং তারা ভিকটিম পরিবারেরও কেউ নন! একজন দেখেছেন ৩ কিলোমিটার দূর থেকে, আরেক জন দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে! এত বড় একটা জঘন্য ঘটনায় মাত্র ২জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের অবস্থাই যখন এই তার পরে শোনা সাক্ষী তিনজনের বক্তব্য ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। উপরন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা যে এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিশ্চিতভাবে দেখেছেন একথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেননি!
৪নং সাক্ষী মেছের উদ্দিন আজহারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তার জবানবন্দীতে। কিন্তু জেরাতে তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি আজহারকে দেখেননি! তার বাড়িও ঝাড়ুয়ার বিল সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত ১২/১৪টি গ্রামের মধ্যে নয়। জবানবন্দীর বক্তব্য অনুসারে তিনি দেখেছেন অনেক দূর থেকে। এত বড় একটা জঘন্য ঘটনায় মাত্র ২জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর একজন এই মেছের উদ্দিন।
মায়ের চেয়ে মাসীমার দরদ বেশি!!!
অভিযোগ নং ৩ - ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে ঝাড়ুয়ার বিল সংলগ্ন ১২/১৪ টি গ্রামে পাকিস্তান আর্মি ও তাদের সহযোগীরা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়, ১২শ লোককে গুলি করে হত্যা এবং ২শ’ লোককে অপহরণ করে পরে হত্যা করা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রত্যক্ষদর্শী বা শোনা মোট ৫ জন সাক্ষীর কেউই এই ১২/১৪ গ্রামের বাসিন্দা নয় এবং তারা নিহতদের পরিবারেরও কেউ নয়! হত্যার শিকার মোট ১৪শ’ লোকের কোন একটি পরিবার থেকেও কেউ তাদের আপনজনদের হত্যা এবং সম্পদহানির বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে আসেনি! ১৪শ’ লোকের কারোই কি আপনজনদের প্রতি দরদ নেই! এসেছে অনেক দূরবর্তী সাক্ষী যাদের নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তাহলে কি মায়ের চেয়ে মাসীমার দরদ বেশি?
এটিএম আজহারুল ইসলাম এর উপর আনিত অভিযোগের অসঙ্গতি
অভিযোগ নং ৪ - প্রফেসর চিত্তরঞ্জনসহ অন্যদের হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতা
Ø একজন সাক্ষী নাকি তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন, কোনো অপরাধ করতে দেখেননি।
Ø সাক্ষী শোভা কর তার সাথে একই ক্লাসে পড়েছেন বলে উল্লেখ করলেও সরকার পক্ষেরই দাখিল করা ডকুমেন্টে দেখা যায়, দুজনের সেশন আলাদা (১৯৬৭-৬৮ এবং ১৯৭০-৭১)!
Ø আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রতন চন্দ্র দাস কারমাইকেল কলেজের পাচক ছিলেন মর্মে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঐ সময়কার প্রিন্সিপ্যালের নাম জানেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোনো দায়িত্বশীলের নাম জানেন না। তিনি জানেন শুধু আজহারুল ইসলামের নাম। এটা কি করে সম্ভব?
জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মামলার অসঙ্গতি
অভিযোগ নং ৫ – মহিলাদের শারীরিক নির্যাতনসহ ধর্ষনে সহায়তা
একমাত্র দেখা সাক্ষী এবং ভিকটিম দাবিদার মনসুরা খাতুন।
# নিজেকে বীরাঙ্গনা দাবি করলেও রংপুর জেলার বীরাঙ্গনার তালিকায় তার নাম নেই!!! তার স্বামী মোস্তফা মিয়াও তা স্বীকার করেছেন।
# ১৯৭১ সালে কথিত ঘটনার সময় তার বয়স ১৭ বছর ছিল মর্মে জবানবন্দী দিলেও তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৪৫। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৬ বছর!
# কথিত ঘটনার সময় তিনি নি:সন্তান ও ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ছিলেন মর্মে জবানবন্দী দিলেও তার প্রথম সন্তান সেতারা বেগমের ভোটার আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা মতে জন্ম তারিখ ১ মে ১৯৬৪। মনসুরা খাতুনের আরো ৫টি সন্তান রয়েছে যাদের প্রত্যেকের ভোটার আইডি কার্ড আছে। সর্বশেষ সন্তানের জন্ম হয়েছে ১৯৬৯ সালে!
৪ নং চার্জের ঘটনার তথাকথিত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রতন চন্দ্র দাস কারমাইকেল কলেজের পাচক ছিলেন মর্মে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঐ সময়কার প্রিন্সিপ্যালের নাম জানেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোন দায়িত্বশীলের নাম জানেন না। তিনি জানেন শুধু এ টি এম আজহারুল ইসলামের নাম । এটা কি করে সম্ভব?
শিক্ষাবর্ষ ভিন্ন অথচ ক্লাসমেট!!!
সরকার পক্ষের সাক্ষী শোভা কর নিজেকে এ টি এম আজহারুল ইসলামের ক্লাসমেট বলে পরিচয় দিলেও এ টি এম আজহারুল ইসলামের এসএসসি শিক্ষাবর্ষ
১৯৬৭-৬৮ আর শোভা করের শিক্ষাবর্ষ ১৯৭০-৭১। তাদের দাখিলকৃত ডকুমেন্টেই দেখা যায় যে, সাক্ষীর বক্তব্য দালিলিক ডকুমেন্ট দ্বারা প্রমাণিত হয় না।
সরকার পক্ষের ডকুমেন্টেই রয়েছে নানা অসঙ্গতি ও পরষ্পরবিরোধী তথ্য:
+ প্রদর্শনী-২৫ এ দেখা যায়, এ টি এম আজহারুল ইসলাম সম্পর্কে প্রদত্ত তথ্য তালিকার ৭(খ) তে বলা হয়েছে যে, তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে ১৯৭১ সালে উক্ত কলেজের আশপাশ, লোহানী পাড়াসহ রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, লুন্ঠন ইত্যাদি কাজে লিপ্ত ছিলেন।
+ একই প্রদর্শনীতে ৮নং কলামে ১৯৭১ সালে আসামীর অবস্থান এবং ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে “কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি”। এটা হলো পুলিশের ডিআইজির কাছ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট।
বেশির ভাগ সাক্ষীই 'সেফ হোম' বা ঐ ধরনের কোন তোতাপাখি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের প্রোডাক্টঃ
আসুন এ পর্যায়ে একটা আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে অবগত হইঃ
সব কিছুর পরও বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল রায় দিলোঃ
আমরা কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিচার দেখতে চাই না
এই অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, তাঁর আসলে অপরাধ কি ছিলো? এর জবাব আল কুরআনেই দেওয়া আছেঃ "ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল" (আল কুরআন; সূরা আল বুরুজ, আয়াত ৮)
জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম এর সাথে তাদের (সরকারের) শত্রুতার এছাড়া আর কোন কারণ নাই যে, তিনি পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন ও ইসলামী রাজনীতি করেন।
সব অবস্থায় ধৈর্য্য ধারন করার বিষয়েই ইসলাম শিক্ষা দেয়। আর বিরুদ্ধবাদী, ইসলাম বিরোধীদের এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিৎঃ
সবশেষে একটু মাথা খাটানোর অনুরোধ করবো। একটু ভাবে দেখুন বিষয়টাঃ
আরো জানতে লাইক করুনঃ Free Jamaat Leaders
বিষয়: বিবিধ
৫০২২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুর্ণ ব্যবস্হাটাই যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে অসংগতি না খুজে বিন্দু মাত্র সংগতি পাওয়াই ওদের জন্যে যথেষ্ট!
ইসলামী আন্দোলনের চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে চেতনাবাজদের কাছে!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন