আব্দুল কাদের মোল্লা এর উপর আনিত অভিযোগ ও ইতিহাসের দায়মুক্তি নিয়ে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০৭:০৬ রাত
আসুন শুরুতেই তার সম্পর্কে কিছু জেনে নেইঃ
১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া কাদের মোল্লার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫-৭৬-৭৭ সেশনে ১ম শ্রেনীতে পাশ করা মার্কশিট। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন: তিনি রাজাকার হলে কি জনরোষের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারতেন?
শেখ মুজিবের সময় তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কাজ করতেন। তারপর উদয়ন স্কুল ও পরে রাইফেলস স্কুলে চাকুরী করেন। তিনি যদি তিনি রাজাকার হতেন তাহলে কি এসব সম্ভব হতো?
৫ ফিট ১১ ইঞ্চি লম্বা নিয়াজির সাথে কসাই কাদের (আনুমানিক উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি) ও ১৯৯২ এর রোকন সম্মেলনে ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার মরহুম গোলাম
আযমের পাশে দাঁড়ানো ৫ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কাদের মোল্লা এর মিল নেই।
নিয়াজির পাশে যে লোকটাকে কাদের মোল্লা (ওরফে তথাকথিত কসাই কাদের) হিসাবে প্রমান করার চেষ্টা হয়েছে তার বয়স কত হবে ? অন্তত ৩৫ বা ৪০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫-৭৬-৭৭ সেশনে ১ম শ্রেনীতে পাশ করা কাদের মোল্লার মার্কশিটে তার জন্মসন লেখা আছে ১৯৪৮। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে সেই কাদের মোল্লার বয়স ছিলো ২২ বছর। ১৯৭৩ সালে তোলা মার্কশিটের ঐ ছবির সাথে নিয়াজির পাশে যে লোকটার চেহারায়ও মিল নেই। সুতরাং নিয়াজির পাশের ঐ লোকটা আব্দুল কাদের মোল্লা নন এবং তিনি কসাই কাদেরও ছিলেন না।
শহীদ সাংবাদিক আব্দুল কাদের মোল্লা
১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর নির্বাচিত সহ সভাপতি ছিলেন। তিনি রাজাকার/ যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী হলে কি তিনি নর্বাচিত হতে পারতেন?
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিল
এর করা ট্রাইব্যুনালের প্রতি ৪ টি প্রশ্ন করেন যার জবাব আজ পর্যন্ত মেলে নাই।
১ম প্রশ্নঃ শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা এতো বড় যুদ্ধাপরাধী (ঘাদানিকের ভাষ্যমতে) এটাতো ঘাদানিক জানতো। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যখন জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে তখন তিনি লিয়াজো কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি যদি এতো বড় যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে আওয়ামী লীগ তখন চুপ ছিলো কেন? তখন কোথায় ছিল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি? তারা কেন তখন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন নাই কাদের মোল্লা যুদ্ধাপরাধী?
২য় প্রশ্ন: শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা যদি যুদ্ধাপরাধী কিংবা হত্যাকারী হতেন তবে ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার আগ পর্যন্ত কোন মামলা বা কোনো জিডি (জেনারেল ডায়েরি) কেন নেই?
৩য় প্রশ্ন:১৯৭৮ সাল পর্যন্ত শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে IER (Institute of Education and Research) বিষয়ে পড়েছেন। তিনি যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে দেশ স্বাধীন হবার পরও দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলেন কিভাবে ?
৪র্থ প্রশ্ন: তিনি তৎকালীন রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে (বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ) সিনিয়র শিক্ষক; পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি উদয়ন স্কুলেও শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধী হলে কিভাবে তিনি এই সুযোগ পেলেন? কেন তাকে তখন বরখাস্ত করা হলো না? তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে পরপর দুবার নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। এত বড় যুদ্ধাপরাধীকে কেন সাংবাদিকরা ভোট দিলেন? কেন সেই সময়কার সাংবাদিকরা সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করলেননা?
তার উপর আরোপিত অভিযোগের কিছু অসঙ্গতি জেনে নেইঃ
আব্দুল কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের ৬ নং সাক্ষী সফিউদ্দিন এর কোয়ালিটিঃ
সফিউদ্দিন দাবী করেন তিনি ১৯৭০ এর নির্বাচনে জহির উদ্দিন জালালের পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু তিনি উত্তর করতে পারেননিঃ
# জহির উদ্দিন জালাল এর নির্বাচনী এলাকা কোনটি ছিলো?
# জহির উদ্দিন জালাল বাঙ্গালী না অবাঙ্গালী ছিলেন?
তবে কি ৬ নং সাক্ষী সফিউদ্দিন সাজানো সাক্ষী হিসাবে বানোয়াট সাক্ষ্য দিয়েছেন?
আব্দুল কাদের মোল্লার বিপক্ষে ৬ নং সাক্ষী সফিউদ্দিন এর সাক্ষ্য ও জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্নঃ
সফিউদ্দিন বলেন তিনি ৫ নং অভিযোগের ঘটনার দিন ২৪ এপ্রিল আব্দুল কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে ও গুলি করতে দেখেছেন।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেন যে, সাক্ষী সফিউদ্দিন তাকে এমন কথা বলেননি।
তাহলে কি প্রশ্ন থাকে না যে, সাক্ষী আদালতে এসব বানিয়ে বলেছেন কিনা?
সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব হত্যা বিষয়ে ৩ নং অভিযোগে ফরমাল চার্জ ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যে অমিলঃ
ফরমাল চার্জে ছিলোঃ মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ড থেকে তাকে কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য আলবদর, রাজাকার ও বিহারীরা দড়ি দিয়ে বেঁধে মিরপুর জল্লাদ খানায় নিয়ে হত্যা করে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যে উঠে আসেঃ খন্দকার আবু তালেব বাসায় ফেরার পথে ইত্তেফাকের তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা বিহারী আব্দুল হালিম তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেবার নাম করে গাড়িতে তোলেন এবং কাদের মোল্লা ও বিহারীদের হাতে তুলে দেন।
সারমর্ম ও উপলব্ধিঃ সাজানো জিনিস কি আর মেলে? এজন্যই অমিল বিদ্যমান
আব্দুল কাদের মোল্লার বিপক্ষে ৬ নং সাক্ষী সফিউদ্দিন ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের গরমিলঃ
৬ নং সাক্ষী সফিউদ্দিন জেরায় বলেন যে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৯৭০ সাল থেকে চিনতেন এমন কথা তদন্ত কর্মকর্তাকে তার জবানবন্দীতে বলেছেন ।
তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেন যে, সফিউদ্দিন তার জবানবন্দীতে এমন কথা বলেননি ।
মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট কি ভুল?
হযরত আলী হত্যাকান্ড ও খন্দকার আবু তালেব হত্যা কান্ড বিষয়ে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে দেখা যায় যে, খন্দকার আবু তালেবকে বিহারীরা হত্যা করেছে। হযরত আলী হত্যাকান্ডও ঘটিয়েছে বিহারীরা। সেখানে এসব ঘটনায় কোথাও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
মামলার অনিয়মতান্ত্রিকতা: আব্দুল কাদের মোল্লার বিপক্ষে ইতিহাসে প্রমানিত ও প্রতিষ্ঠিত নয় এমন একটি ঘটনা (তিনি বিহারী গুন্ডাদের দোসর ছিলেন) কে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জুডিশিয়াল নোটিশে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে জুডিশিয়াল নোটিশে নেওয়া যায় সেই সব বিষয় যা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমানিত ও প্রতিষ্ঠিত।
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের ৪ নম্বর সাক্ষী কাজী রোজী এর সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়:
# তিনি শোনা কথা বলেছেন।
# কার কাছ থেকে শুনেছেন তাও প্রকাশ করেননি।
# তিনি ২০১১ সালে লিখিত বইয়ে কবি মেহেরুন্নিসা হত্যা (২ নং অভিযোগ) এর বিষয়ে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি।
সাজানো মোমেনা বেগমকে দিয়ে ক্যামেরা ট্রায়াল করা হলো।
আসুন এ পর্যায়ে একটা আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে অবগত হইঃ
______________________________________
এত অসঙ্গতি থাকার পরও তার যাবজ্জীবন দেওয়া হলো প্রথমে। এরপর শাহবাগীদের অন্যায্য দাবীর মুখে আইন পরিবর্তন করে পরে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো
এবং কার্যকরও করা হলো।
তিনি পেলেন শহীদি মর্যাদা। আগে শুধু ছিলেন পরিবারের ও বাংলাদেশের কিছু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা কিন্তু আল্লাহ তাকে সারা বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কবুল করলেন।
“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না। এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না”। (আল কুরআন; সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৫৪)
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা: বেঁচে আছেন তার কর্মের মাধ্যমে
শাহাদাতের বর্ষপূর্তিতে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিলের বক্তব্যে যা যা উঠে এসেছেঃ
# শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা যথেষ্ট আইনী সুযোগ পান নাই। এজন্য ঐ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলা যেতে পারে ।
# সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ আবেদনের সুযোগ ছিলো। আইনজীবীগণ ফাঁসি স্থগিত ও রিভিউর জন্য আবেদনও করেন। কিন্তু তা খারিজ করে দেওয়া হয়।
# আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার ৩৪৮ দিন পর আপীল বিভাগ থেকে রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে রিভিউ ‘মেনটেনেবল’ বলে সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করেন এবং বলেন যে, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়ের করতে হবে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সাত দিনের মাথায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
# ফাঁসির আদেশ স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এর আহ্বান অগ্রাহ্য করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়।
# পরিবারের সদস্যদেরকে জানাযায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। মৃতদেহ শেষবারের মত এক নজর দেখারও সুযোগ দেয়া হয়নি।
# রাতে একদিকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়, অন্যদিকে পরিবারের উপর হামলা করা হয়, জেলে নেয়া হয়।
আসুন আমরা এই সব বিষয়গুলো জানি, প্রচার করি। আব্দুল কাদের মোল্লা যে নির্দোষ ছিলেন তা প্রমান করতে, তার উপর অপবাদের বোঝা নামাতে ও ইতিহাসের দায়মুক্তির জন্য চেষ্টা করি।
আরো জানতে লাইক করুনঃ সহায়ক পেজঃ https://www.facebook.com/FreeJamaatLeadersBD https://www.facebook.com/ShahidAbdulQuaderMollah)
তাকে নিয়ে ডকুমেন্টারী ও ভিডিও গুলো দেখুন এখানেঃ https://www.youtube.com/channel/UCr0uxDPkpXHUWKs0PkAYeBQ/videos
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৩৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন