আসুন জেনে নেই একজন সাংবাদিক মোঃ কামারুজ্জামান (Md. Kamaruzzaman) এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এর বিভিন্ন অসঙ্গতি সম্পর্কে।
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৬:১০ সন্ধ্যা
প্রথমেই একটু ভূমিকা। তার সম্পর্কে একটু জানাঃ
সাংবাদিক মোঃ কামারুজ্জামান :
# ১৯৮০ সালে বাংলা মাসিক ‘ঢাকা ডাইজেস্ট’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
# ১৯৮১ সালে সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং এখনও পত্রিকাটির সম্পাদক।
# তিনি একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নতুন পত্র’ প্রকাশ শুরু করেছিলেন।
# ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দশ বছর দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
# তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের একজন সদস্য এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।
#১৯৮৫-৮৬ সালে তিনি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে মিশে মানবতা শিখেছেন ও সারা জীবন চর্চা করেছেন মোঃ কামারুজ্জামান। আর তাকেই কিনা বলা হচ্ছে মানবতাবিরোধী!!!
তিনি অবশ্যই মানবতাবিরোধী নন, তার অপরাধ মানবতার মুক্তির জন্য কাজ করে যাওয়া, কলম চালিয়ে যাওয়া।
তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি ও অভিযোগের অসঙ্গতিঃ
স্বীকৃত মতে ১৯৭১ সালে মোঃ কামারুজ্জামান ছিলেন ১৯ বছরের তরুন। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী যত অপরাধের বিচার হয়েছে কোথাও একজন তরুনের কাধে এ ধরনের অপরাধের দায় চাপানো হয়নি।
মামলার কিছু অসঙ্গতিঃ
১৯৭১ সালে মোঃ কামারুজ্জামান ছিলেন ১৯ বছরের তরুন। কয়েকজন সাক্ষী বলেছে যে, তিনি ঐ সময়ে পাকিস্তান আর্মি অফিসারদের বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন! সেনাবাহিনীর মেজর, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলরা ১৯ বছর বয়সের একজন ছাত্রের আদেশ মান্য করতেন; এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
অভিযোগ নং ১ - বদিউজ্জামানকে হত্যা
অভিযোগের ওপর জবানবন্দিতে চতুর্থ সাক্ষী বলেছেন, তিনি সাইদুর রহমানের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছেন এবং সাইদুর রহমান তাকে বলেছে তিনি নিজে দেখেননি, তিনি শুনেছেন মকবুলের কাছ থেকে। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী হাসানুজ্জামান বলেছেন, তিনি ঘটনাটি সাইদুর রহমানের কাছ থেকে শুনেছেন এবং এ ঘটনার সময় সাইদুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং দুই সাক্ষীর জবানবন্দিতে মিল নেই।
এ ছাড়া মকবুল বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি
আসুন এ পর্যায়ে একটা আয়াত ও হাদীস সম্পর্কে অবগত হইঃ
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নং ২- প্রিন্সিপাল আ. হান্নানকে নির্যাতন
অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মে মাসে।
তৃতীয় সাক্ষী জহুরুল হক মুন্সী জবানবন্দিতে বলেছেন অক্টোবর মাসে ঘটনাটি ঘটেছে দ্বিতীয় সাক্ষী মহন মুন্সী ঘটনার বিষয়ে তিনটি তারিখ উল্লেখ করেছে!!!
সুতরাং ঘটনা ঘটেছে কি না তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
আ. হান্নান জীবিত, তাকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করার পরও তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি!!!
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নং ৩- সোহাগপুরে হত্যা
ঘটনার ওপর জবানবন্দি দেওয়া ১ম সাক্ষী হামিদুল হক ও ২য় সাক্ষী মহন মুন্সী অন্যের নিকট থেকে শুনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া ১০ জালাল, ১১ হাসেন বানু, ১২ হাফিজা বেওয়া এবং ১৩তম সাক্ষী করফুলী বেওয়া বলেছেন তারা ঘটনার সময় কামারুজ্জামানকে দেখেছেন। কিন্তু জেরায় তারা স্বীকার করেছেন, স্বাধীনতার তিন চার মাস পর থেকে তারা কামারুজ্জামানকে চেনেন!
এ ছাড়া ২য় সাক্ষী মহন মুন্সী বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় সোহাগপুরে মানুষ মেরে ট্রাকে করে শেরপুরে মানুষ নিয়ে আসা হয়। সোহাগপুর থেকে শেরপুরের দূরত্ব ২৫-৩০ কিলোমিটার’। কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে সে সময় সোহাগপুর-শেরপুরে আসার জন্য ট্রাক বা বাসের কোনো রাস্তা ছিল না!!!
সাংবাদিক মামুন-উর রশিদ সোহাগপুর পরিদর্শন করে ২০১১ সালে ‘সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা ১৯৭১' নামে একটি বই প্রকাশ করেন সেখানে অনেক সাক্ষীর সাক্ষাৎকার আছে। তাতে কেউ একবারের জন্যও বলেননি যে মোঃ কামারুজ্জামান
সোহাগপুরের গণহত্যা ঘটনার সাথে যুক্ত ছিলেন৷
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নং ৪- গোলাম মোস্তফাকে হত্যা
অভিযোগে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে ২৩ আগস্ট। অথচ ১৪তম সাক্ষী মুজিবুর রহমান পানু বলেছেন, ঘটনাটি মে মাসে ঘটেছে।
২য় সাক্ষী মহন মুন্সী বলেছেন আমি দেখেছি মেজর রিয়াজের উপস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছে। সেখানে সব কথা হয়েছে উর্দুতে। অথচ তিনি উর্দু বুঝেন না বলে জেরায় স্বীকার করেছেন। অপরদিকে ৫ম সাক্ষী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘মেজর রিয়াজ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানে চলে গেছে’।
তাহলে ঘটনাটি ২৩ আগস্ট ঘটল কীভাবে?
বেশির ভাগ সাক্ষীই 'সেফ হোম' বা ঐ ধরনের কোন তোতাপাখি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের প্রোডাক্টঃ
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নং ৫ - আহম্মেদনগর ক্যাম্পে হত্যা
# অভিযোগে বলা হয়েছে,ক্যাম্পে বন্দী ১১ জনের মধ্যে ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়, বাকি ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
# কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুসারে, ঘটনার দিন কামারুজ্জামানের নির্দেশে ৪ বন্দীকে হত্যা করা হয়।
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নং ৭- টেপা মিয়া ও তার ছেলে দারাকে অপহরণ
জবানবন্দিতে কোনো সাক্ষী বলে নাই যে তাদেরকে কামারুজ্জামান অপহরণ করেছে। প্রসিকিউশনের ১ম সাক্ষী হামিদুল হক বলেছেন, ‘আমি নিজে ক্যাম্পে বন্দি ছিলাম। তখন টেপা ও তার ছেলেকে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে।’ তবে তাদেরকে কে এনেছে তা সাক্ষী জানতেন না।
৯ম সাক্ষী অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমও তার সঙ্গে ছিল বলে জবানবন্দিতে জানান ১ম সাক্ষী। এদিকে ৯ম সাক্ষী জানিয়েছেন, ১ম সাক্ষী তার সাথে ক্যাম্পে ছিলেন না!
১৫তম সাক্ষী বলেছেন ঘটনাটি ঘটেছে জু্লাই মাসে। অথচ মূল অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ২০ নভেম্বর
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিপক্ষের সাক্ষীদের বৈশিষ্ট্য:
# কয়েকজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
# কয়েকজনই অপরাধ্মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত
# বেশিরভাগই শোনা সাক্ষী
# অনেকেই অবিশ্বাস্য সাক্ষ্য দিয়েছে
প্রস্তুতির সময়ের বৈষম্য: তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন মামলা সাজাতে দেড় বছর সময় পেলেও ডিফেন্স পক্ষকে প্রস্তুতি ও জবাব দেয়ার জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ৪ মাস!
সাক্ষীদের সংখ্যার বৈষম্য: রাষ্ট্রপক্ষের ১৮ জন সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন করা হলেও মোঃ কামারুজ্জামান এর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে দেওয়া হয় মাত্র ৫ জনকে!
মোঃ কামারুজ্জামান এর বিরুদ্ধে ৮ম সাক্ষী মোঃ জিয়াউল ইসলাম এর উদ্ভট মন্তব্যঃ “১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ছিলো তখন আপনার বাবার হত্যার মামলা করেননি কেন?”- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর দেনঃ “সময় পাইনি” !!!
উল্লেখ্য যে, ৭২ হাজার ৭৫০ টাকা বিদ্যুৎ পরিশোধ না করায় এবং বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে ২০০৪ সালে সাক্ষী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
শেরপুরবাসীসহ সারা বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষের জ্ঞাতার্থে
১৯৮৬ সাল থেকে শেরপুর সদর তথা শেরপুর-১ আসনে জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সর্বশেষ দুটি সাধারন নির্বাচনে (২০০১ এর নির্বাচনে ৬৫,৪৯০ ভোট (বিজয়ী আওয়ামী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮৬,১০১) এবং ২০০৮ এর ডিজিটাল নির্বাচনে ১,১০,০৭০ ভোট পান (বিজয়ী আওয়ামী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১,৩৬,১২৭)। তিনি খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে গেলেও ধারনা করা হয় তিনিই প্রকৃত বিজয়ী ছিলেন। কারণ, ঐ দুই নির্বাচনেই আওয়ামীলীগ প্রার্থী তার নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকার ভোট কেন্দ্রগুলো দখল করে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নেন।
১৯৭১ সালে তার উপর আরোপিত তথাকথিত অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী মানুষগুলো ও তাদের বংশধরেরা বেঁচে থাকতে জনাব কামারুজ্জামানকে এত বিপুল ম্যান্ডেট দেয়া কি কোন অর্থ বহন করে না?
হ্যা। তিনি যদি সত্যি ঐসব কর্মকান্ড করতেন তাহলে এই গনরায় পেতেন না। এতো ভোট ও মানুষের ভালোবাসা পেতেন না।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পরিবারের জামাই মোঃ কামারুজ্জামান
• শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্বা সংসদের নির্বাচিত বর্তমান জেলা কমান্ডার, ৭১ এর রনাংগনের বীর মুক্তিযোদ্বা জনাব নুরুল ইসলাম হিরুর ছোট বোন মিসেস নুরুন্নাহার জনাব কামারুজ্জামানের সহধর্মিণী।
• আনোয়ার হোসেন মন্জু (সম্বন্ধী) স্বনামধন্য অনুবাদক,বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার,সাবেক বার্তা সম্পাদক: দৈনিক বাংলার বাণী (শেখ ফজলুল হক মণি প্রতিষ্ঠিত ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এম.পি. সম্পাদিত - এক সময়ে আওয়ামীলীগের মূখপত্র হিসেবে পরিচিত)
• শ্বশুর জনাব আজিজুর রহমান ১৯৭১ সালে কৃষি অধিদপ্তরে চাকরি করতেন, যুদ্বের সময় অনেক মুক্তিযোদ্বাদের আশ্রয় দিতেন, খাবার দিতেন, সবরকমের সহযোগীতা করতেন।
শেরপুরের এ পরিবার ৭১ এর এতগুলো গুরতর অপরাধে অভিযুক্তের হাতে ১৯৭৮ সালে কি নিজেদের মেয়েকে তুলে দিতেন? অবশ্যই না; তারমানে তার বিরুদ্ধে সাজানো ঐ সব অভিযোগ সব বানোয়াট।
সুতরাং বোঝা গেল, তার মূল অপরাধ হলো ইসলামের পথে তার অবস্থান, লেখালেখি ও নেতৃত্ব।
দেখুন তার কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতাঃ
বন্যা কবলিত এলাকার অসহায় মানুষের পাশে মানবতাবাদী নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। শুধু কলম হাতে এসির নিচে বসে থাকেননি মোঃ কামারুজ্জামান। আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে গিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। তাকেই কিনা বলা হচ্ছে মানবতাবিরোধী!!!
স্বনামধন্য সাংবাদিক, লেখক কামারুজ্জামান এর কয়েকটি বই। তার আশু মুক্তি চাইঃ
সবশেষে একটু মাথা খাটানোর অনুরোধ করবো। একটু ভাবে দেখুন বিষয়টাঃ
রায় যেটাই হোক সব অবস্থায় ধৈর্য্য ধারন করার বিষয়েই ইসলাম শিক্ষা দেয়। আর বিরুদ্ধবাদী, ইসলাম বিরোধীদের এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিৎঃ
আরো জানতে লাইক করুনঃ Free Jamaat Leaders, কামারুজ্জামানের মুক্তি চাই
বিষয়: বিবিধ
১০৭৫০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালে কোন প্রকার হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগও নেই যা দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করা সম্ভব। ভিডিওটিতে এসবের প্রমাণ রয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন