অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি অপবাদের কিছু যুক্তি খন্ডন; যে বিষয়গুলো জানা উচিৎ

লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৪২:৪৬ রাত

তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের ইসলামী আন্দোলনের প্রানপুরুষ। একজন ভাষা সৈনিক।



তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মূল থিমও তিনিই দিয়েছিলেন।

তিনি মারা গেলেও জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেছেন। তার উপর অপবাদের বোঝা জাতি সইতে পারবে তো?

দেখুন তার শিক্ষাজীবন সম্পর্কেঃ

অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে যে বিষয়গুলো আপনাকে জানতেই হবে:

# বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের মত তিনিও ছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষপাতি। কারন তিনি তার প্রজ্ঞার দ্বারা ধারনা করেছিলেন যে, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হলে পরে ভারতের দখলে চলে যাবে; যা এখন অনেকটাই বাস্তব।

# তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের আমীর হিসেবে দেশের মানুষের ক্ষতি না করার জন্য, নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের অনুরোধ নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক নেতৃবৃন্দের সাথে যে বৈঠক করেন, পরবর্তীতে তাকে আঁতাতের বৈঠক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

# ঐ অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধের পরে তার নাগরিকত্ব অন্যায়ভাবে বাতিল করা হয় এবং অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার আইনী লড়াইয়ে নাগরিকত্ব আদায় করে নেন। হাইকোর্টের রায়ে তার নাগরিকত্ব পরবর্তীতে পুনর্বহাল করা হয়। আমরা জন্মসূত্রে বিনা প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের নাগরিক। আর

অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার আইনী লড়াইয়ে অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া নাগরিকত্ব আদায় করে নেওয়া যোদ্ধা। লাখো সালাম সেই অকুতোভয়, দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক নাগরিককে





অধ্যাপক গোলাম আযম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক, নেতা ছিলেন (যার প্রমান মেলে বিভিন্ন দেশে তার গায়েবানা জানাযা এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের দোয়ার দ্বারা)। তিনি ইচ্ছা করলে পৃথিবীর যেকোন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে সেখানে থেকে যেতে পারতেন। বা পরেও চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাননি। যুদ্ধাপরাধের অপবাদ, অভিযোগ থাকা সত্তেও এই অকুতোভয় দেশপ্রেমিক মানুষটি দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সালাম আপনাকে হে বীর, দেশপ্রেমিক কিংবদন্তী!!

# রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা কে? অধ্যাপক গোলাম আযম নাকি জেনারেল নিয়াজী?

জেনারেল নিয়াজী তার লেখা “The Betrayal of East Pakistan” বইতে যা লিখেছেন তা থেকে প্রমানিত হয় যে, রাজাকার বাহিনীর তিনিই স্রষ্টা। (দেখুন পৃষ্ঠা ৭৮, ৭৯, ৮৭)

জেনারেল নিয়াজী মুনতাসির মামুনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অত্যন্ত গর্বের সাথে বলেছেন, রাজাকার বাহিনীর তিনিই স্রষ্টা। (শান্তি কমিটি ১৯৭১, মুনতাসির মামুনঃ পৃষ্ঠা ১২)।



জেনারেল নিয়াজী তার লেখা “The Betrayal of East Pakistan” বইতে যা লিখেছেন তা পড়ুন।

The proposal for raising an organized Razakar Force remained under consideration with HQ CMLA and GHQ for a long time. Although their recruitment had started earlier, sanction for the raising of this force was given at the end of August 1971. A separate Razakar Directorate was established, and the whole setup started taking proper shape...

The Razakars were mostly employed in areas where army elements were around to control and untilizethem. Being raw and not fully trained, they were prone to subversion through local influences."[page-78]

"Battle schools were established to train Razakars platoon and company commanders. To provide an effective command structure to this organization, about sixty young officers selected to be appointed as Razakar Group Commanders."[page-79]

“local Razakars, mainly consisting of ex-Biharis and loyal East Pakistanis." [page-87]



দেখুন তার বিরুদ্ধে আনিত চার্জ সমূহের অসারতাঃ

চার্জ নং ১: ষড়যন্ত্র (Conspiracy) এর অসারতাঃ

# গনহত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমানের জন্য ইয়াহিয়া বা টিক্কা খানের সাথে গনহত্যার কোন চুক্তি হয়েছিলো মর্মে কোন সাক্ষ্য, প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।

# ইয়াহিয়া খান বা টিক্কা খানের সাথে তার বৈঠক ষড়যন্ত্রের অভিযোগকে প্রমান করে না কারন তখন অনেকেই তাদের সাথে বৈঠক করেছে।

# টিক্কা খানের সাথে তার বৈঠকের ১ টি ছবিই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমান করে না।

# তিনি বাঙ্গালী জাতি বা হিন্দু গোষ্ঠী নিধনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন মর্মে কোন সাক্ষ্য, প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।

চার্জ নং ২

গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা (Plannning) এর অসারতাঃ

# ১৯৭৩ সালের আইনের ৩(২) ধারায় পরিকল্পনা করা কোন অপরাধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

# ৪(২) ধারায় “উর্দ্ধতন কর্মকর্তা” বা “কমান্ডার” এর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই মামলায় “উর্দ্ধতন কর্মকর্তা” বা “কমান্ডার” হিসাবে আখ্যায়িত করে কোন অভিযোগ আনা হয়নি এবং তা আনা সম্ভবও নয় কেননা তিনি বেসামরিক ব্যক্তি।

# গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা করার কোন দালিলিক প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।

# তার তথাকথিত পরিকল্পনার ফলে ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি অপরাধেরও সুনির্দিষ্ট বর্ননা রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারে নাই।

চার্জ নং ৩

উস্কানি (Incitement) এর অসারতাঃ

উস্কানির অভিযোগ প্রমানের জন্য জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে ৪ টি গোষ্ঠীর কোন একটি সদস্যের বিরুদ্ধে সেই গোষ্ঠীকে নিধনের উদ্দেশ্যে কোন প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রমান হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।

চার্জ নং ৪ সম্পৃক্ততা (Complicity) এর অসারতাঃ

# সম্পৃক্ততা প্রমান করতে একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের বর্ননা দিতে হবে যে অপরাধটি অধ্যাপক গোলাম আযম এর সহযোগিতার ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বা এর অক্সিলারী ফোর্সকে সহযোগিতা করেছেন বা এরুপ সহযোগিতার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালের আইনের ৩(২) ধারায় কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এই মর্মে কোন দালিলিক বা সাক্ষ্য প্রমান হাজির করতে হবে যা রাষ্ট্রপক্ষ পারে নাই।

# তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন যে, উনার বক্তৃতা/ বিবৃতি শুনে বা পাঠ করে অথবা নির্দেশে ১৯৭১ সালে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছিলো কিনা তা তার জানা নাই।



চার্জ নং ৫: সিরু মিয়া হত্যাকান্ড এর অসারতা :

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ তিনি সিরু মিয়া ও তার সহযোগিদের হত্যার নির্দেশ সম্বলিত একটি চিঠি ব্রাক্ষনবাড়ীয়া পিস কমিটির সভাপতি পিয়ার মিয়াকে প্রেরন করেন যার ফলশ্রুতিতে তাদের সকলকে হত্যা করা হয়।

মজার ব্যাপার হলোঃ

+ সেই কথিত চিঠি রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারে নাই।

+ সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমও সেই চিঠি দেখেননি বলে স্বীকার করেছেন।

+ তিনি গোলাম আযম সাহেবের হাতের লেখা বা স্বাক্ষরের সাথেও পরিচিত নন।

+ এই কথিত চিঠি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, কিভাবে পেয়ারা মিয়াকে প্রেরন করা হয়েছে তাও তার জানা নেই।

এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক অসঙ্গতিঃ স্কাইপ কেলেঙ্কারী

→ মামলার চার্জগঠনের ড্রাফট বেলজিয়াম থেকে পাঠানো হয় এবং হুবহু কপি করে তা বসিয়ে দিয়ে চার্জ গঠন আদেশ দেয়া হয়।

→ বিভিন্ন তারিখে চার্জগঠন বিষয়ে মোট ছয়টি ড্রাফট এসেছে বেলজিয়াম থেকে।

→ ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬৮ পৃষ্ঠার, ১২ ডিসেম্বর ৯৮ ও ৬২ পৃষ্ঠার দুটি ড্রাফট, ১৯ ডিসেম্বর ২৩ পৃষ্ঠার, ২০ ডিসেম্বর ৮২ পৃষ্ঠার এবং ২৩ ডিসেম্বর ১০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পাঠানো হয় চার্জ গঠন বিষয়ে।

→ চার্জগঠন বিষয়ে রিভিউ আবেদন ১৮ জুন ২০১১ তারিখে খারিজ করা হয়। ১৬ জুন বেলজিয়াম থেকে এ বিষয়ে আদেশ আসে।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে ন্যাটোর সাবেক এক জেনারেলসহ ২ জন বিদেশী সাক্ষী মানা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের হাজিরের জন্য সমন জারি করে করা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। কেন এমনটি হলো? কোন গোমর ফাঁস হয়ে যেত তারা এলে? জাতি আজ জানতে চায়।



তিনি জীবনে অনেক বই লিখে গেছেন। দেখুন তার কয়েকটিঃ একজন যুদ্ধাপরাধী/মানবতাবিরোধীর কি সেই নৈতিক শক্তি থাকা সম্ভব এরকম বই লেখার জন্য? বরং একজন আলেম, নেক বান্দাহরই সাজে এমন বই লেখা।















বিষয়: বিবিধ

২২৭২৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277648
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


জাযাকাল্লাহ
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪৬
221558
আলোকিত পথ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ধন্যবাদ
277650
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪২
আবু জারীর লিখেছেন : হে রব! তুমি তোমার গোলাম অধ্যাপক গোলাম আযমকে মাফ করে দাও। তাকে তোমার জান্নাতের মেহমান বানাও। সারা জীবন যারা তাকে জন্ত্রনা দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, জেল খাটিয়েছে, ভবিষ্যতে যারা তাকে অপবাদ দিবে তুমি তাদের সকলকে তোমার কঠিন আজাবে নিপতিত কর। তাকে যারা ভালোবাসে, ভালোবেসেছিল এবং ভবিষ্যতেও ভালোবাসবে তুমি তাদের সকলকে হেদায়েতের উপর অটল রেখ। মরহুমের রেখে যাওয়া অসমপ্ত কাজকে সফলতার সাথে আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার উত্তরসূরিদের হিম্মত দাও। তার আজীবনের লালীত স্বপ্ন বাংলাদেশে তোমার দীন প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতে তার বিদেহী আত্মাকে পরিতৃপ্ত কর। হে রব তুমি আমাদের দুয়া কবুল কর।
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪৬
221560
আলোকিত পথ লিখেছেন : আমীন
277651
২৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪২
আবু জারীর লিখেছেন : হে রব! তুমি তোমার গোলাম অধ্যাপক গোলাম আযমকে মাফ করে দাও। তাকে তোমার জান্নাতের মেহমান বানাও। সারা জীবন যারা তাকে জন্ত্রনা দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, জেল খাটিয়েছে, ভবিষ্যতে যারা তাকে অপবাদ দিবে তুমি তাদের সকলকে তোমার কঠিন আজাবে নিপতিত কর। তাকে যারা ভালোবাসে, ভালোবেসেছিল এবং ভবিষ্যতেও ভালোবাসবে তুমি তাদের সকলকে হেদায়েতের উপর অটল রেখ। মরহুমের রেখে যাওয়া অসমপ্ত কাজকে সফলতার সাথে আঞ্জাম দেয়ার জন্য তার উত্তরসূরিদের হিম্মত দাও। তার আজীবনের লালীত স্বপ্ন বাংলাদেশে তোমার দীন প্রতিষ্ঠিত করে জান্নাতে তার বিদেহী আত্মাকে পরিতৃপ্ত কর। হে রব তুমি আমাদের দুয়া কবুল কর।
278139
২৬ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২১
চেয়ারম্যান লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৬ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:০০
222237
আলোকিত পথ লিখেছেন : ধন্যবাদ
282467
০৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২২
লেখক ভাই লিখেছেন : সমসাময়ীক তিনজন রাজনীতিবিদঃ শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও অধ্যাপক গোলাম আজম। তিন জনের মৃত্যু পরবর্তী জানাযা প্রমাণ করে কার জনপ্রিয়তা কতটুকু!
শেখ মুজিব ও জিয়াকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরপূর্বক সম্মানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং গোলাম আজমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরপূর্বক অসম্মানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তা সত্বেও বাংলাদেশের জনগন প্রমান করেছে কার সম্মান কতটুুকু প্রাপ্য!
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২২
226093
আলোকিত পথ লিখেছেন : ঠিক
282571
০৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪৮
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা মরহুমকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।
উনার জানাযায় অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছিল। তার আগের দিন মগবাজার দেখতে গিয়েছিলাম দেহমুবারক। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে এক নজর দেখলাম। কি পবিত্র নিষ্পাপ মুখমন্ডল! অনেক লোককে দেখলাম প্রিয় নেতাকে হারিয়ে আকুল নয়নে কাঁদছে।
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২১
226092
আলোকিত পথ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File