ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম (Ghulam Azam)। কিছু চেপে রাখা ইতিহাস, না জানা কিছু কথা।
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৩৬:৩৪ রাত
অধ্যাপক গোলাম আযম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হতেই ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালিত হয়। ১৯৪৮ সালে কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আগমনের পূর্বে এই দাবির যথার্থতা তুলে ধরার জন্যই প্রথম গণদাবী হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। হরতাল সফল করতে তিনি (গোলাম আযম) ডাকসু’র জিএস হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করেন, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে পিকেটিংয়ের জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পাঠান। তিনি নিজেও একটি গ্রুপ নিয়ে গুলিস্তান টিএন্ডটি অফিস (বর্তমান টেলিফোন এক্সচেঞ্জ) ভবনের কাছে যান। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতালে পিকেটিংয়ের সময় তখন তাঁকে সহ ১০-১২ জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিসম্বলিত একটি ঐতিহাসিক স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীকে প্রদান করা হয়। তৎকালীন ডাকসুর জিএস অর্থাৎ (অধ্যাপক) গোলাম আযম ঐ তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিটি পাঠ করেন তুখোড় ছাত্রনেতা (অধ্যাপক) গোলাম আযম। এরপর থেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দাবি দানা বাঁধতে থাকে, যার মূলে ছিল প্রধানত ছাত্ররা। আর তখন সকল ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রাণকেন্দ্রে ছিলেন ডাকসু’র তrকালীন জিএস এই (অধ্যাপক) গোলাম আযম।
১৯৫২ সালে জনাব গোলাম আযম রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৫০’ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করে সেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল ঐ সময়ে সেখানে তিনি তখন বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জমির উদ্দীন ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কলিমুদ্দীন আহমদ এবং সেখানকার স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। [b]তখন শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্রসহ অধ্যাপক গোলাম আযম আবারো গ্রেফতার হন।
পরবর্তীতে, তিনি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার “অপরাধে” ১৯৫৫ সালে পুনরায় গ্রেফতার হন এবং তাঁর সরকারি চাকুরী হারান। উনাকে মুক্তি দেয়ার দিন স্থানীয় জনগণ যেন জমায়েত/ সংবর্ধনা দিতে না পারে সে জন্য রংপুর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল।
আজ, ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার অধ্যাপক গোলাম আযম এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অপরাধে আজ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। রাজনৈতিকভাবে যারা উনাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ তারা এই বৃদ্ধকে কারাবন্দী রেখে নির্যাতন করে চলেছে।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিচার করা হয়েছে। দেখুন তার বিরুদ্ধে আনিত চার্জ সমূহের অসারতাঃ চার্জ নং ১: ষড়যন্ত্র (Conspiracy) এর অসারতাঃ
# গনহত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমানের জন্য ইয়াহিয়া বা টিক্কা খানের সাথে গনহত্যার কোন চুক্তি হয়েছিলো মর্মে কোন সাক্ষ্য, প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।
# ইয়াহিয়া খান বা টিক্কা খানের সাথে তার বৈঠক ষড়যন্ত্রের অভিযোগকে প্রমান করে না কারন তখন অনেকেই তাদের সাথে বৈঠক করেছে।
# টিক্কা খানের সাথে তার বৈঠকের ১ টি ছবিই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমান করে না।
# তিনি বাঙ্গালী জাতি বা হিন্দু গোষ্ঠী নিধনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন মর্মে কোন সাক্ষ্য, প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।
চার্জ নং ২
গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা (Plannning) এর অসারতাঃ
# ১৯৭৩ সালের আইনের ৩(২) ধারায় পরিকল্পনা করা কোন অপরাধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।
# ৪(২) ধারায় “উর্দ্ধতন কর্মকর্তা” বা “কমান্ডার” এর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই মামলায় “উর্দ্ধতন কর্মকর্তা” বা “কমান্ডার” হিসাবে আখ্যায়িত করে কোন অভিযোগ আনা হয়নি এবং তা আনা সম্ভবও নয় কেননা তিনি বেসামরিক ব্যক্তি।
# গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা করার কোন দালিলিক প্রমান রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।
# তার তথাকথিত পরিকল্পনার ফলে ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি অপরাধেরও সুনির্দিষ্ট বর্ননা রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারে নাই।
চার্জ নং ৩
উস্কানি (Incitement) এর অসারতাঃ
উস্কানির অভিযোগ প্রমানের জন্য জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে ৪ টি গোষ্ঠীর কোন একটি সদস্যের বিরুদ্ধে সেই গোষ্ঠীকে নিধনের উদ্দেশ্যে কোন প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রমান হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারে নাই।
চার্জ নং ৪ সম্পৃক্ততা (Complicity) এর অসারতাঃ
# সম্পৃক্ততা প্রমান করতে একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের বর্ননা দিতে হবে যে অপরাধটি অধ্যাপক গোলাম আযম এর সহযোগিতার ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বা এর অক্সিলারী ফোর্সকে সহযোগিতা করেছেন বা এরুপ সহযোগিতার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালের আইনের ৩(২) ধারায় কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এই মর্মে কোন দালিলিক বা সাক্ষ্য প্রমান হাজির করতে হবে যা রাষ্ট্রপক্ষ পারে নাই।
# তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন যে, উনার বক্তৃতা/ বিবৃতি শুনে বা পাঠ করে অথবা নির্দেশে ১৯৭১ সালে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছিলো কিনা তা তার জানা নাই।
চার্জ নং ৫: সিরু মিয়া হত্যাকান্ড এর অসারতা :
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ তিনি সিরু মিয়া ও তার সহযোগিদের হত্যার নির্দেশ সম্বলিত একটি চিঠি ব্রাক্ষনবাড়ীয়া পিস কমিটির সভাপতি পিয়ার মিয়াকে প্রেরন করেন যার ফলশ্রুতিতে তাদের সকলকে হত্যা করা হয়।
মজার ব্যাপার হলোঃ
+ সেই কথিত চিঠি রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারে নাই।
+ সিরু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমও সেই চিঠি দেখেননি বলে স্বীকার করেছেন।
+ তিনি গোলাম আযম সাহেবের হাতের লেখা বা স্বাক্ষরের সাথেও পরিচিত নন।
+ এই কথিত চিঠি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, কিভাবে পেয়ারা মিয়াকে
প্রেরন করা হয়েছে তাও তার জানা নেই।
এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক অসঙ্গতিঃ স্কাইপ কেলেঙ্কারী
→ মামলার চার্জগঠনের ড্রাফট বেলজিয়াম থেকে পাঠানো হয় এবং হুবহু কপি করে তা বসিয়ে দিয়ে চার্জ গঠন আদেশ দেয়া হয়।
→ বিভিন্ন তারিখে চার্জগঠন বিষয়ে মোট ছয়টি ড্রাফট এসেছে বেলজিয়াম থেকে।
→ ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬৮ পৃষ্ঠার, ১২ ডিসেম্বর ৯৮ ও ৬২ পৃষ্ঠার দুটি ড্রাফট, ১৯ ডিসেম্বর ২৩ পৃষ্ঠার, ২০ ডিসেম্বর ৮২ পৃষ্ঠার এবং ২৩ ডিসেম্বর ১০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পাঠানো হয় চার্জ গঠন বিষয়ে।
→ চার্জগঠন বিষয়ে রিভিউ আবেদন ১৮ জুন ২০১১ তারিখে খারিজ করা হয়। ১৬ জুন বেলজিয়াম থেকে এ বিষয়ে আদেশ আসে।
আরো জানতে লাইক করুনঃ Click this link
বিষয়: বিবিধ
৬৪১০ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি পারলে __ __ ফালান,
বরং আপনার খবর আছে,
ভালো লাগলো ধন্যবাদ
"মানষিক ভাবে গোলাম হলেই মানুষ ভৌগলিক ভাবে গোলাম হয়। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আজম।"
আজ মানষিক গোলামে পরিণত জনতার বিবেক মরে গেছে বলেই মহান এই ভাষা সৈনিক কে ষড়যন্ত্র মুলক মিথ্যা অভিযোগে কারাভোগ করতে হচ্ছে...।
করুণাময় আল্লাহ তার স হায় হোন, আমিন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
https://www.facebook.com/1450933055184806/photos/a.1450953608516084.1073741827.1450933055184806/1482057795405665/?type=1&theater;
,
মন্তব্য করতে লগইন করুন