বুয়েটের এক ছাত্রের "সালাম" আজ ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৪:০৯ রাত
"আসসালামু আলাইকুম" এর সরল অর্থ "আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক"
তবে এর নানা প্রকার অর্থ আজকাল প্রচলিত হয়ে গেছে। বশ্যতা বা অনুগত থাকার স্বীকৃতি স্বরূপ হয়ে গেছে। কর্মচারী তার কর্মকর্তাকে সালাম দিবে ACR, প্রমোশনের জন্য; জুনিয়র তার সিনিয়র ভাইকে সমীহ করে সালাম দিবে এটাই যেন একটা অলিখিত নীতি হয়ে গেছে।
এক ছাত্রের "সালাম" আজ ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে; অথচ সেই সালাম কে ঠেকানোর কত প্রচেষ্টা ছিলো!!!
আমাদের রসুল(স) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, এমনকি খ্রিস্টান লেখক মাইকেল এইচ হার্ট ও তার শ্রেষ্ঠ একশ জন মনিষীর বই এ তাকে (স) প্রথমেই রেখেছেন। সেই মানুষটিকে কেউ কখনো আগে সালাম দিতে পারতো না! সালাম দেওয়া শুধু রাসূলের সুন্নাত নয়, এটি আল্লাহরও সুন্নাত!!! "আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ/সালাম পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও। (সূরা আল আহযাব; আয়াত ৫৬)
এই সালাম নিয়ে অনলাইনে ঝড় উঠেছে মূলত এদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের শিক্ষার্থী মোঃ তানজিলুর রহমান ওরফে লাবীবের
সালাম বিষয়ক একটি সাবলীল স্ট্যাটাস ও তার পরবর্তী ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা নিয়ে। গত বুধবার রাতে লাবীব তার ফেসবুকে সালাম নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি জুনিয়র- সিনিয়র সবার মাঝে সালামের প্রচলনের আহবান জানান। এতে বুয়েট ছাত্রলীগ তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। একাডেমিক কাজে ক্যাম্পাসে অবস্থানের সময় ছাত্রলীগ তাকে তাকে আটকের জন্য মিছিল করে
এবং পরে আটক করে শিবির কর্মী বলে অভিহিত করে ভিসির কাছে নিয়ে যায়।
পরে তারা পুলিশকে খবর দিয়ে বুয়েট ভিসির অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করায়। উল্লেখ্য সম্প্রতি বুয়েট ছাত্র লীগ ক্যাডাররা অঘোষিতভাবে জুনিয়ররা সিনিয়রদের সালাম দিবে এমন নিয়ম চালু করেছে।
তার রিমান্ড বা যামীন কোনটারই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। সামনের সপ্তাহে আবার হয়তো কোর্টে তোলা হবে।
আমার একটু মতামত এবার না তুলে ধরলেই নয়ঃ
অনেকেই প্রশ্ন করছে এর পিছনের কারন কি? অনেকের মত হলো তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাসই সবকিছুর মূল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে ঐ স্ট্যাটাস হয়তো বড় ভুমিকা পালন করেছে কিন্তু মূল বিষয়টা অন্যখানে। ঐ প্রশ্নের উত্তর পবিত্র কুরআনেই আমি খুঁজে পেয়েছি। আমরা যেমন নামাজে আল্লাহর সাথে কথা বলি তেমনি আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন তার কুরআনের মাধ্যমে। তিনি এর মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তার এই জবাবটা আমার খুবই প্রিয় "ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল" (সূরা আল বুরুজ আয়াত ৮)।
জানা যায় তানজীল অমায়িক, হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল একজন ছেলে। সকলেই তার সান্নিধ্য উপভোগ করে, ভালোবাসে। আর হবেই বা না কেন? তিনি আল কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতটি জানতেন। "(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো"
কিন্তু তার প্রতি কেন এই আচরন? তার সব গুনাবলী, সুন্দর আচরনের পরেও কেন কিছু শিক্ষার্থী এমন বিরূপ আচরন করলো? তারা কি তার আচরন দেখে না? একটু আগেই একবার বলেছি- আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। দেখুন তিনি সূরা আল বাকারার ৭ থেকে ১২ নং আয়াতে কি সুন্দরভাবে জবাব দিয়েছেন!!!
"আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। কিছু লোক এমনও আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর ওপর ও আখেরাতের দিনের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়। তারা আল্লাহর সাথে ও যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। কিন্তু আসলে তারা নিজেদেরকেই প্রতারণা করছে, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়। তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যখনই তাদের বলা হয়েছে, যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা একথাই বলেছে, আমরা তো সংশোধনকারী। সাবধান! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়।"
যাই হোক তবুও আমার মনে হয় সেই অমায়িক ছেলেটি ঐ সব অজ্ঞ শিক্ষার্থীকে ক্ষমা করে দিবে তার নিজ গুনে।
সে সহ অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ন সহবস্থান কামনা করে।
হয়তো তাদের জন্য সে এখন হেদায়াতের দোয়াও করছে। আরেকটি আয়াত মনে পড়ে গেলোঃ "মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে।" (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১০)
শেষ কথা হলো, আসুন আমরা সকলে সেই ছেলেটির জন্য দোয়া করি। তানজীল, আমরা সবাই তোমার পাশেই আছি। ভাইয়া তুমি একা নও; কারাগারের অন্ধকারে একা মনে হলেও অগনিত উর্ধপানে তুলে ধরা হাত, অশ্রুশিক্ত নয়ন বা দোয়ারত ঠোট তোমার পাশে থাকবে। এর মূল কারন আমরা মুসলিম, মুমিন; আমরা ভাই ভাই।
শেষ করছি একটি হাদীস দিয়েঃ আবু মুসা আশআরী (র) হতে বর্নিত, নবী (স) বলেছেন, "একজন মুমিনের সাথে আরেকজন মুমিনের সম্পর্ক সুদৃঢ় প্রাসাদের মত; যার একটি অংশ অপর অংশের সাথে মযবুতভাবে সংযুক্ত। একথা বলে উপমা স্বরূপ তিনি তার এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন। " (বুখারী, মুসলিম)
বিষয়: বিবিধ
৩৯২০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। কিছু লোক এমনও আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর ওপর ও আখেরাতের দিনের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়। তারা আল্লাহর সাথে ও যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। কিন্তু আসলে তারা নিজেদেরকেই প্রতারণা করছে, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়। তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যখনই তাদের বলা হয়েছে, যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা একথাই বলেছে, আমরা তো সংশোধনকারী। সাবধান! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়।"
তানজিলের এই উদ্যোগকে আল্লাহ তার নাজাতের মাধ্যম বানিয়ে দিন এবং কারাগারের অন্ধ-প্রকোষ্ঠে আল্লাহ তার অন্তরে প্রশান্তি দান করুন।
আ মী ন
কুশিক্ষা মানুষকে অমানুষ করে, . . . আজ নামধারী মুসলমানেরা ইসলামকে নিজেদের মত করে বিকৃত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে, . . . !!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
আমরা তাকে সালাম জানাই। তার সত্যের জন্য কষ্টভোগ আল্লাহতায়লা কবুল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন