আমি তোমাকে চাই: ১, ২ একত্রে

লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত পথ ১৫ মার্চ, ২০১৪, ১১:৩৬:২৯ সকাল

আমি তোমাকে চাই: ১

ভোরের প্রথম আলো (পত্রিকা নয়) যখন গ্রামের কোন এক কুঁড়ে ঘরের ভাঙ্গা চাল দিয়ে ভিতরে ঢুকে কোমল পরশ বুলায়, আর একটি কঠিন দিনের সূচনার আহবান জানায়; তখন আমি তোমাকে চাই।

দুঃখিনী মা যখন তার বাচ্চাকে নুন আর পান্তা ভাত দিতে গিয়ে তার অজান্তেই চোখের পানি ফেলে ঐ নোনা ভাতকে আরেকটু হলেও নোনা করে ফেলে ; তখন আমি তোমাকে চাই।

তখনও আমি তোমাকে চাই; যখন ছোট্ট শিশুটি ইট ভাংতে ভাংতে পাশের একটি ভাগ্যাবান শিশুকে খেলতে দেখে, স্কুলে যেতে দেখে... আর সেই দেখার কারনে অন্যমনস্ক হয়ে হাতুড়ির বাড়িটি ইটের উপর না ফেলে নিজের হাতের উপরই ফেলে বসে!!

সেই বৃদ্ধটির দিকে তাকিয়েও আমি তোমাকে চাই যখন সে তার সামনে জ্বলতে থাকা আগুনের শেষ ফুলকিটি নিভে যেতে দ্যাখে। আর পরক্ষনেই শীত জেঁকে বসে তার ঝুলে পড়া চামড়ার উপর। যেন একটু কাঁপিয়ে দিতে মজা পায়- যে মানুষটি সারা জীবন দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়িয়েছে! তাকেই যেন কাঁপানোর পন করে হতচ্ছাড়া শীত!

যে বাবা বহু আগে ন্যায়ের সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া ছেলে হারানোর দুঃখের বহিপ্রকাশ ঘটায় বৃষ্টির সময়ে; কারন সে একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তাকে তার চোখের পানি দেখাতে চায়। অন্য কেউ না দেখলেও বৃষ্টির শুদ্ধ পানি ঐ নোনা পানিকে ঠিকই সৃষ্টার কাছে বয়ে নিয়ে যায়! ঠিক তখনি আমি তোমাকে চাই।

যখন উচ্চ শব্দ দূষণ এর মধ্যেও কাজ করা শ্রমিকটির কাছে মেশিনের শব্দের চাইতে মনিবের বিষে ভরা কথা শুনতে বেশি খারাপ লাগে আর মনে মনে কখনো চিন্তাও করে ফেলে! আমি যদি কালা হতাম!!! সেই মনের চিন্তা বুঝতে বা শুনতে না পারলেও তোমাকে পেতে ইচ্ছা হয়।

যখন এতিম শিশুটি জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও চোখ বুজে সব সহ্য করতে থাকে তার একমাত্র আশ্রয়স্থল আল্লাহর কাছে সব আবদার, অভিযোগ পেশ করার জন্য। তখনো তোমার অনুপস্থিতি আমাকে কাঁদায়।

জীবনের এই সব ছোট খাট (আসলেই কি?) ঘটনা দেখে তোমার সান্নিধ্য পেতে বড় ইচ্ছা হয়। আমি, আমরা যে তোমার ছোয়া, উপস্থিতির জন্য অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছি! দেখা দাও, ধরা দাও হে ইসলাম। আমাদের ব্যর্থতা আছে মানি। তোমাকে গ্রহন বা লালন করার যোগ্যতা হয়তো আমাদের নেই তবুও তোমার প্রত্যাশায় আছি। তোমার আসল সৌন্দর্য্য, রুপ এখনও অনেকে দেখতে পায়নি বলে অন্য কিছুর পিছে তারা ছুটে বেড়ায়! তুমি তো এসেছ মানবতার কল্যানে। তোমার আসল ও পূর্ন সৌন্দর্য্য, রুপ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হও। এই আমার মিনতি।

আমি তোমাকে চাই: ২

খুব পেতে ইচ্ছা করে তোমাকে।......

যখন সবার কাছে একান্ত ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত লোকটি তার অর্থনৈতিক বা কিছুটা শারীরিক Superiority এর কারনে তার জীবনসঙ্গিনীর উপর অবিচার করে বসে তখন তোমাকে আমি খুজি। অনেকে আবার অবিচার করে বা করে না; কিন্তু এটাকে তাদের স্বভাবগত পাওনা বা পুরুষতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে গন্য করতে পছন্দবোধ বা enjoy করে; এদের জ্ঞানের সীমা পরিসীমার কথা চিন্তা করে বার বার তোমার কথা মনে পড়ে।

একান্ত শান্ত শিষ্ট, ঘরের লক্ষীটি যখন তার বিভিন্ন আবদারের (উচ্চাভিলাষী) কারনে তার জীবনসঙ্গির উপর বুঝে বা না বুঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং এই চাপ যখন একসময় সহ্যের বাইরে চলে গিয়ে তাকে অবৈধ উপার্জনের দিকে ঠেলে দেয়; তখন তোমার অনুপস্থিতির কারনে মাথা ঠুকে মারা যেতে ইচ্ছা হয়!

তোমাকে ঠিক তখনই পেতে ইচ্ছা করে যখন ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটি তার বাবাকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পাওয়ার দুঃখ ভুলে যাওয়ার আগেই! তার মা কে হাসিমুখে ‘টা-টা’ (আল্লাহ হাফেয বা ফি আমানিল্লাহ এর কি অদ্ভুত, অর্থহীন ও অপ্রাসঙ্গিক প্রতিস্থাপন!!!) জানানোর এক বিচিত্র (!) অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হয়!!! তার মুখের এক কোনায় হয়তো একটু অভিনয়ের হাসি লুকিয়ে থাকে কিন্তু বড় অংশ জুড়েই থাকে উপযুক্ত খেলার সাথী, প্রানের সাথী (মা) কে বিদায় জানানোর এক অব্যক্ত অভিমান।

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে যখন তোমার সংস্পর্শের অভাবে একজন দ্বায়িত্বশীল মা তার বাড়ন্ত মেয়েকে চুল বাঁধতে, ঘর গোছাতে, রান্না করতে শেখায় কিন্তু তার সৃষ্টার দরবারে নিজেকে সমর্পন করে তার সাথে দেখা করার জন্য নামাজ পড়া শেখায় না বা নামাজের সময় সাথে নিয়ে নামাজ পড়ে না! বুকে চাঁপা ক্ষোভ রয়ে যায় যখন মা তার মেয়েকে নানা রকম জামা-পাজামা, অলংকার পরিয়ে দেয় কিন্তু হিজাব পরিয়ে দেয় না এবং শালীনতার জ্ঞানকে কচি মনে গেথে দেয় না। আর সবচাইতে কষ্ট হয় তখন যখন স্কুলের পড়ার বই, মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়িয়ে দিলেও কুরআন, হাদীসকে পাঠ্য হিসাবে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে না!!!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তোমার অপেক্ষায় থাকি যখন এক গর্বিত বাবা তার ছেলেকে স্কুলে, মাঠে, বাজারে, বেড়াতে নিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু ছোট্ট হাতটি ধরে নিয়মিত মসজিদে নিয়ে যায় না। ছেলের হাজারো খেলনা, স্কুলের পাঠ্য বই, গল্পের বই কিনে দিতে একটুও দেরী হয়না কিন্তু কেন যেন ঐ শিশুটির জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় কুরআন, হাদীস, ইসলামী সাহিত্য কিনে দেওয়া হয়ে ওঠে না!

যখন পুরুষ তার নিজের মত মনে করে স্ত্রীকেও উপার্জনের জন্য উৎসাহ দেয় সংসারের রোজগার বাড়ানোর জন্য; তখন হয়তো অনেকেই বাহবা দেয় কিন্তু তারা কি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে? তোমার অভাব অনুভুত হয় যখন নারী জাতিকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত স্বভাব (সন্তানদের মায়া, ভালোবাসা, লালনপালন; স্বামীর প্রেরনার উৎস), মানসিক ও শারীরিক গঠনের বিপরিতে গিয়ে শালীনতা, পবিত্রতা ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে বাইরের কর্মক্ষত্রে যেতে উৎসাহ দেওয়া বা জোর করা হয়। তাদেরকে কৌশলে আসল কর্মক্ষত্র (পরিবার) থেকে সরিয়ে ফেলা হয় কারন তারা জানে না সামান্য কয়েকটি টাকাকে তারা প্রাধান্য দিয়ে ফেলছে শিশুদের ভালোভাবে গড়ে ওঠা, স্বামীর মানসিক প্রশান্তির চেয়ে! তোমার অনুপস্থিতির কারনেই তারা গৃহিনী নারীদের দেয়া service গুলোকে quantify করতে বা মূল্যায়ন করতে পারে না। সব কিছুকে economical বা financial প্যারামিটার এ আনা ঠিক নয়। আর যদি নারীদের পরিবারে অবস্থান না করে বাইরে কাজ করার জন্য পরিবারের উপর পড়া effect (baby sitter, house tutor, অটিস্টিক বাচ্চা, বখে যাওয়া, অ্যাডিক্টেড সন্তান সহ আরো অনেক...) গুলোকে quantify এবং financial conversion ঠিকভাবে করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যেত তবে হয়তো তারা নিবৃত হোত!

এই সব কারনেই তোমাকে পেতে বড় ইচ্ছা হয় হে ‘ইসলাম’। তোমার পরিপূর্ন আত্মপ্রকাশের অভাবেই আমদের আজ এই পরিনতি। আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী। তুমি যে এসেছ আমাদের সৃষ্টিকর্তা হতে; আমাদের স্বভাব এর সাথে ম্যাচ করে। আমরাই তোমাকে আপন করে নিতে পারি নাই। তাও তোমায় আমি ও আমরা সকলেই চাই। আমাদের শত দূর্বলতা সত্ত্বেও তুমি দেখা দাও তোমার পূর্নতা নিয়ে কারন আমরা যে তোমার অভাব টের পাচ্ছি (হাড়ে হাড়ে)!!!

বিষয়: বিবিধ

৪০৮৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192461
১৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৫১
বিন হারুন লিখেছেন : হে ইসলাম! তোমার আসল ও পূর্ন সৌন্দর্য্য, রুপ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হও। এই আমার মিনতি। পিলাচ
192466
১৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
192479
১৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
হতভাগা লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন ।

ছোট বয়সে বাচ্চারা তো অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে , ভালও লাগে শুনতে । কেউ কেউ এসব করেও ।

কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে খুব কম লোকই তা ধরে রাখতে পারে ।

পিচ্চি ছেলে মেয়ের ছবির কথাগুলো ঠিক ।

কিন্তু বয়সকালের নীতি কথা মার্কা এই ছবিটা বেশী বেশী মনে হয়েছে ।




নীতি কথা তো আমরা ছোট কালেই পড়ি । পরিনত বয়সে এসে ছোটকালে পড়া এইসব নীতি কথাগুলো পাংশে মনে হয় পারিপার্শিক অবস্থার কারণেই ।

মেয়েরা কখনই এরকম কথা বলে না পরিনত বয়সে ।

তারা থাকে হিন্দী সিরিয়ালে মত্ত , নাচ-গান-অভিনয় এসবের প্রতিযোগিতার জন্য ব্যাকুল । কর্পোরেট চাকরি ও অ্যাপারেলসের বিজ্ঞাপনে মডেল হতে এরা তটস্থ থাকে ।
192514
১৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন । ভালো লাগলো ।
192516
১৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
সজল আহমেদ লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল।
192587
১৫ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
ফেরারী মন লিখেছেন : হে ইসলাম! তোমার আসল ও পূর্ন সৌন্দর্য্য, রুপ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হও। এই আমার মিনতি। পিলাচ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File