ব্যাচেলারদের বাসাভাড়া বিড়ম্বনা এবং আমার অভিজ্ঞতা।
লিখেছেন লিখেছেন এমরুল কায়েস ভুট্টো ২৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৫:০০ সকাল
বাড়িওয়ালার চুখে জাতীয় ক্রিমিলান হচ্ছে ব্যাচেলার পুলাপাইন গুলা। আমি যে বাসাতে ব্যাচেলার হিসেবে ভাড়াটি ছিলাম সেখানে বাড়িওয়ালার ২টা মেয়ে ছিল। এমনিতেই বাড়িওয়ালা ছিল হুজুর টাইপের। তারউপর ২টা ইয়াং মেয়ে থাকায় আমাদের ছাদে যাওয়া তে ১৪৪ ধারা জারী করে দিয়েছিল। যদিও ছাদের পাশে অথ্যাৎ উপরের তলায় ছিল আমাদের প্লাটটি তবে ছাদে যাওয়া সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ। কিন্তু বাড়িওয়ালার মেয়ে ২টা ছিল বদের হাড্ডি। বাসা ছেড়ে দিতে বলবে ভয়ে আমরা তো বাড়িওয়ালার মেয় সহ বিল্ডিংয়ের কোন মেয়ের দিকে থাকাতাম না। এই সুযোগে মেয়ে দুটি আমাদেরকে রীতিমত ইভটিজিং শুরু করে দেয়। আমাদের কে দেখে উচ্চস্বরে হাসাহাসি করা, বেকসাউন্ড দেওয়া ছিল তাদের দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ। শুধু তারা ২জন বললে ভুল হবে, বিল্ডিংয়ের আরো কয়েকটি মেয়ে তাদের সাথে যোগ হয় আমাদেরকে ইভটিজিং করে মজা নেওয়ার জন্য। তারা জানত যে তারা যাই করুক না কেন তাদের কে কিছু বলার সাহসা আমাদের নাই। কারন আমরা অসহয় ব্যাচেলার।
এক সময় এসে মেয়ে ২টার অত্যচার আরো বেড়ে গেল। ছাদের উপর থাকা আমাদের বাসার পানি চলাচলের সব গেট ভালব সুইচ গুলো বন্ধ করে দিত। সব প্লাটে পানি থাকলেও আমাদের বাসার পানি তাদের করুনার উপর নির্ভর করত। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বাধ্য হয়ে বাসাটিতে থাকবনা বলে জবাব দিয়ে দিয়েছিলাম। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল বাসা ছাড়ার ২মাস আগে বাড়িওয়াকে জানাতে হবে। তাই করলাম। এবার শুরু হল বাসা খোজার মিশন। কিন্তু দেড় মাস চলে গেল কোথাও বাসা পাচ্ছি পায় নি। কারন তখন যুদ্ধপারাধ ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। যেখানে ব্যাচলার ম্যাচ আছে সেখানেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাই কেউ ব্যাচলারদের বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।
টু লেট দেখে ফোন করলে বলে দেয় "ব্যাচলারদের বাসা ভাড়া দিয় না।"
তখন কোথাও অনেকটা বাধ্য হয়ে হেলাল নামের একজন বিবাহিত ব্যচলার কে ধরি। তাকে বললাম, বাসা নিতে এডভান্স যত টাকা লাগোক আমি দেব কিন্তু যেই করেই হওক ভাবি কে ১মাসের জন্য নিয়ে আসেন। ফেমিলি বলে বাসা নিব তারপর ১মাস পর ভাবি চলে যাবে। ওনিও প্রথমে আমতা আমতা ভাব করলেও পরে রাজি হয়। এবং অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ভাবি কে অনেক কষ্ট করে রাজী করিয়েছিল।
অহ হ্যা… আমরা ছিলাম তিন জন। তারপর ফেমিলি সেজে টু লেট দেখে একটি বাসা দেখতে যায়। তখন বাড়িওয়ালাকে আমরা পরাষ্পরকে ভাই পরিচয় দিয়। তখন বাড়িওয়ালা আমাদের চেহেরার দিকে থাকিয়ে বলে, "ফাজলামি করার জায়গা পাওনা? তোমাদের চেহেরাই বলতেছে তোমরা কেউ ভাই নয়। তোমাদের কে বাসা বাড়া দেব না"। আমরা পরাষ্পরকে কাজিন বললেও সে আর কোন কথাই শুনতে নারাজ।
অথ্যাৎ সেখানেও ধরা খেয়ে গেলাম। কিন্তু ২মাস শেষ হতে আর মাত্র ৫দিন বাকি। এই ৫দিনের মধ্যে বাসা ঠিক করতে না পরলে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে। দুঃখের বিষয় হল এই সংকটময় সময়ে ভাবিও উল্টে গলে। হেলাল ভাইকে ভাবি স্পষ্টভাবে বলে দিল “অপরিচত ছেলেদের সাথে আমি থাকব না।“ পড়ে গেলাম মইককার চিপায়।
তখন কি আর করা, বাসা খুজেই চললাম। আরেকটি বাসায় গেলাম। প্লাটটি দেখে আমাদেরও পছন্দ হয়। ভাড়া কত জিজ্ঞাস করলে কেয়ারটেকার আমরা ফ্যামিলি নাকি ব্যচলার জিজ্ঞাস করে।
আমি ফ্যামিলি কত আর ব্যাচেলার কত জিজ্ঞাস করলে কেয়ারটেকার বলে ফ্যামিলি হলে ৮৫০০ টাকা। আর ব্যচলার হলে আরো ১০০০ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে ২৫,০০০ টাকা এডভান্স দিতে হবে। তখন আর দেরি করিনি। আমাদের তিন জনের পকেটক চেক করে ১৫,০০০ দিয়ে বললাম, "আঙ্কেল এই পনের হাজার টাকা রাখেন। বাকি টাকা ১ ঘন্টার মধ্যে নিয়ে আসতেছি।"
যদিও বাড়িওয়ালা সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক হয়েছে এবং মানুষটাও অনেক ভাল। তারপরও ভয়ের মধ্যে থাকি যদি কেউ আমাদের বিরোদ্ধে অভিযোগ করে বসে।
"আমরা হলাম অসহায় ব্যাচেলার
আতঙ্কে কাটে দিন রাত।"
বিষয়: বিবিধ
৪০৩৪ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাড়িওয়ালাদের বললেই পারতেন যে আপনরা তাদের মেয়েকে্ বিবাহ করতে ইচ্ছুক!
বাড়িওয়ালার মেয়ে সম্পর্কে টু শব্দ বের করলে "বেড বয়" সির্টিফিকেট দিয়ে তখনই বাসা থেকে বের করে দিত।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
ধন্যবাদ আপনাকে, লিখাটা ব্যাচেলরদের মনের কথাই বলছে তাই খুব ভাল লাগলো।
তবে ভাই আমার জানতে ইচ্ছা করতেছে ইন্ডিয়ানরা আবুধাবিতে ফ্লাটের মালিক হয় কি ভাবে? ওখানে কি বিদেশিরা জমির মালিক হতে পারে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন