আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ানক ০৮ ডিসেম্বর। (এটা কোন গল্প নয়, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা) পর্ব-০১
লিখেছেন লিখেছেন এমরুল কায়েস ভুট্টো ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪৯:০০ দুপুর
০৮ই ডিসেম্বর ২০১৩। দেশ তখন যুদ্ধপারাধী ইস্যুতে উত্তাল। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবাদে জামায়াতে ডাকা টানা হরতাল এবং অবরোধ চলছিল। কিন্তু আমি তো চাকরী জীবী। তাই এই ভীতকর পরিস্থিতির মধ্যেও অফিসে যেতে হত। সারাদিন অফিস করে বাসায় ফেরার জন্য অফিসের ফান্স করতেছি তখন ফান্সের টাইম ৫.৪৭ মিনিট। সোজা রিক্সা যোগে বাসায় চলে আসলাম। তখন আমার বাসা ছিল বহদ্দারহাট খাজা রোড়ের মোড়ে চাদগাঁও থানার পাশে । কিন্তু বাসাটিতে পানির সমস্যার কারণে ছেড়ে দিয়ে নতুন ডিসেম্বর মাসে ছেড়ে দেবার সিদ্ধন্ত নিয়েছিল। এমনিতেই ব্যচলারদের কে বাসা ভাড়া দিতে চাইনা তার উপর ব্যচলার বাসা খুজে খুজে পুলিশি অভিযান চলার কারণে কোন বাড়িওয়ালাই ব্যচলারদের বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।
আমি বাসায় পৌছার পরপরই আমার রোমমেট হেলালভাই ফোনদিয়ে জানাল যে একটি বাসা পাওয়া গেছে। এডভান্স দেওয়ার জন্য ১৯০০০ টাকা নিয়ে আমাকে এককিলোমিটার (চাদাগাঁও থানার দক্ষিনে) আসতে বলল।
তখনও আমি বুঝতে পারেনি বের হয়েই এতো বড় বিপদে পড়তে হবে। বুঝতে পারলে কখনোই বের হতাম না।
আমি বাসা থেকে বের হলে হেলাল ভাই আবার ফোন করে বলে যে সে ছুট্ট একটা কাজে আটকে গেছে। আসতে আরো ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগতে পারে। না আসা পযর্ন্ত আমাকে অপেক্ষ করতে বলল। আমি ভাবলাম যে এতক্ষন সময় আমি কি আর করব, ফ্লাইওভারে ওঠে হাটাহাটি করলে সময় চলে যাবে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনে শুনে ফ্লাইওভারে হাটতেছি ঠিক সেই মুহুত্বে ২জন লোক(একজন খুবই হেগলা, পরনে জিন্সর্শাট। অন্যজন পোজপাজ পাইপের ইং করা, হাতে একটা ব্যাগ ছিল।) আমাকে ডাক দিয়ে বললঃ "এ....ই এদিকে আস"
আমাকে ঠিক এভাবে ডাক দিল যাতে তাদের সাথে আমার হাজার বছরের দোস্তি ছিল। আমি বল্লামঃ " কিছু বলবেন?"
তারপর আমাকে আরো বিস্মীত করে দিয়ে বললঃ "এই শালার পুত শালা তুকে এদিকে আসতে বলসি না? আসছিস না ক্যান?" বলে লোক ২টা আমার কাছে চলে আসল।
তখন আমি বললামঃ ভাই আপনার এভাবে কথা বলতেছেন কেন? আপনারা কারা?
তখন তাদের এতজন বলে উঠলঃ একটু পরে টের পাবি আমরা কারা। বাড়ি কোথায় তোর?
তখন আমি আমার বাসার দিকে হাত দেখিয়ে বললামঃ "এইতো আমার বাসা।
কিন্তু তারা কথা বলার সময় বার বার একজন সামনে এবং একজন দাড়িয়ে আমাকে ২জনের মাঝে ডোকিয়ে ফেলে। আমি সরে দাড়িয়ে ২জনকে সামনে করে ফেলি। কিন্তু তারা আমাকে বার বার মাঝে ডোকিয়ে ফেলে। তারা এভাবে কথা এবং আচরন করতেছে তা দেখে আমার মনে হল হাইজাকার। তাছাড়া একজন বার বার আমার হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম এখানে বাড়াবাড়ি না করে চলে যাওয়াটাই ভাল হবে। তখন আমি ওখান থেকে চলে আসতে চাইলে আমাকে বাধা দিয়ে একজন সামনে দাড়িয়ে বলেঃ আমরা পুলিশের লোক। তুই কই জাচ্ছিস? তখন আমি মনে মনে ভাবলাম র্যাব, পুলিশ পরিচয় দিয়ে তো প্রতিদিনই ডাকাতি চিনতাই হচ্ছে। তাই আমার বিশ্বাস হল না। তাছাড়া পুলিশ সম্পর্কে আমার যে ধারনা ছিল তার উল্টো তাদের আচারন। যার কারনে কিছু বলতে না পারলেও বিশ্বাস করতে পারলাম না।
আমি বললামঃ আমি তো প্রতিরাতে প্লাইওভারে হাঠতে বের হয়। আজও হাঠতে বের হয়েছি।
এই কথা বলার পর আমাকে এমন কিছু বাজে(গালি) কথা বলল যা এখানে উল্লেখ করা যাবে না।
আমি আবার চলে যেতে চাইলে হুট করে একজন আমার হাত ধরে ফেলে। তখন আমি হুট করে জোরে একটা ঝাকি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে একটু সামনে গিয়ে লাইট পুষ্টের পাশে বড় বড় কিছু ইট ভাঙ্গা দেখে দাড়ালাম। সিদ্ধান্ত নিলাম এবার যদি তারা বাড়াবাড়ি করে তাহলে পাশে থাকা ভাঙ্গা ইট গুলো দিয়ে ২জরেই মাথা ফাটিয়ে দেব। তখন আমি তদের উদ্দেশ্যে বল্লামঃ এই কুত্তার বাচ্চারা..এবার সাহস থাকলে কাছে আই।
আমাকে খুব উত্তেজিত দেখে তারা আর আসে নি। তখন আমি ফ্লাইওভার থেকে নেমে যাওয়ার জন্য নেমে আসতে লাগলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল ফ্লাই ওভার থেকে নেমেই দেখি তারা আমার সামনে। হুক করে কোত্তেকে এলো কিভাবে এলাে কিছুই বুজতে পারলাম না। তখন তারা দৌডে এসে আমাকে ধরল। আমি তো তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলাম। একপর্যায়ে তাদের সাথে কিল ঘুষির বিনিময়ও হল। তাদের মধ্যে জিন্স পরা লোকটা কে একটা ঘুষি দিলাম (রাগের ঘুষি তো, খুব জোরে লেগেছিল)। ঘুষিটা স্বজোরে তার গলায় লাগে। আমাদের মারামারি দেখে অনেক মানুষ জমায়ত হয়ে গেল। তখন আমি বললাম এরা হাইজাকার। তখন মানুষেরাও তাদের কে মারতে উদ্দত হল। তখন তারা বলল তারা হাইজাকার নয়, তারা পুলিশ। জিন্স পরা লোকটি বললঃ আমি এস আই জব্বর। এবং অন্যও এস আই..( এই মুহুত্বে নামটা মনে পড়েতেছেনা।)
তখন আমি বল্লামঃ আপনার পুলিশ হলে মামলা বা কোন অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও আমার সাথে ঝামেলা করতেছেন কেন? তাছাড়া সর্বোচ্চ আমাকে থানা নিয়ে যেতে পারেন।
তখন এক লোক বল্লঃ আপনারা যে পুলিশ তার প্রমান কি? তাছাড়া এই ছেলেটা তো (আমাকে ইঙ্গিত করে) ফ্লাইওভার থেকে নেমে আসতেছে। তার অপরাধ কি?
আমার সাথে মারামারির সময় কিন্তু ইং করা লোকটার হাতে ব্যাগ ছিল না। আমাকে দেখিয়ে সে উচ্চস্বরে চেচিয়ে বললঃ "এই শালা প্রতিদিনই ফ্লাই ওভার থেকে ককটেল মারে। গাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নীসংযোগও করেছে। এখন আপনার যান...যান, পুলিশের কাজে ঝামেলা কইরেন না। "
বলে মানুষদের সরিয়ে দিল। তখন আমি বল্লামঃ আমি কেন ককটেল মারব, গাড়ি ভাংচুর করব। কিছুক্ষন আগেই আমি অফিস থেকে এসেছি মাত্র।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। তারা আমাকে চড় থাপ্পর দিতে দিতে বলতে লাগলঃ " ককটেল মারতে গিয়ে হাতেনাতে ধরেছি !! উল্টো পুলিশের গায়ে হাত তুলছ!! কত্তবড় সাহস তুর!! থানায় নিয়ে গিয়ে আজ রাতে তুর পাজরের হাড় ভঙ্গবো।"
আমাকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে ফেললো।
চলবে......
বিষয়: বিবিধ
২৩৬৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
বাকি ঘটনা শেয়ার করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন