"যে ভালোবাসা সবচেয়ে দামী..
লিখেছেন লিখেছেন হাসিনার ক্যান্সার ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৩:৪৯ বিকাল
-ইথার ভাইয়া দাড়া,
আমিও আসতেসি...
- কই আসবি রে তুই
মিমি??
-আমি জানি তুই আজও কলেজের
বাহানা দিয়ে আব্বুর
সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে অফিসে যাচ্ছিস...!
সতের বছরের কিশোর
ইথার তার পাঁচ বছরের ছোট্ট বোন মিমির কথা শুনে বাসার দরজা দিয়ে বের
হতে নিয়েও থমকে দাড়িয়ে রইল.......
- কিরে দুষ্টু ভাইয়া,আমার চকলেট
কালারের হিল
জুতাটা কই লুকায়া রেখেছিস,আব্বু
বলেছিল আব্বুর
সাথে বেড়াতে গেলে আম আব্বুর দেয়া ওই
জুতাটা পড়ে যাই...! আর কিছুক্ষণ
আগে টিভিতে দেখলাম
আজ ভ্যালেন্টাইন ডে..
ভুলে গেছিস আমাদের
প্ল্যান?
- ইঁদুর তোর
জুতা খেয়ে ফেলেছেরে আমি কলেজে যাই,আসার সময় ঠিক অমনই একটা জুতা আনব,তারপর যাইস।
- তুই প্রতিদিনই
এটা বলিস আর আসার
সময় একটা করে কিটক্যাট
চকলেট নিয়ে আসিস
আমার জন্য.. কিন্তু
আমি জানি আব্বু-ই
চকলেট দেয় তোর
কাছে আমাকে দেয়ার
জন্য,আর তুই
চুরি করে সব চকলেট
খেয়ে মাত্র একটা কিটক্যাট নিয়ে এসে আমার হাতে ধরায়া দিস প্রতিদিন!
-আল্পনা আন্টি ............... ...
মিমিকে ধরো,গেট
টা একটু লাগাও
আমি যাই...!
***************
*******
......সিঁড়ি বেয়ে ইথারের
দ্রুত গতিতে নামার
শব্দের সাথে সাথে ধীরে ধীরে পেছন থেকে আসা কোমল
কন্ঠের " ভাইয়া......
ভাইয়া......" চিৎকার।
***************
*****
একমাস দুই দিন পার
হয়ে গেছে প্লেন
দূর্ঘটনায় মিমি -
ইথারের বাবা মিনহাজ
চৌধুরী মারা যাওয়ার। উনি বেঁচে থাকতে business
এর ব্যস্ততায় খুব কম
দিনই বাসায় থাকতেন,
তবে যেদিনই বাসায়
আসতেন, ইথারকে ইথারের পছন্দের ক্যাপ
কিনে দিতেন,মিমি কে
চকলেট কিনে দিতেন।
ইথার ওর আদরের বোন
মিমিকে রাগানোর
জন্য মিমির পড়ার
টেবিলের ড্রয়ার
থেকে কিটক্যাট
চুরি করে খেত!
আসলে,রাগলে মিমির
ছোট্ট মুখটা গোলাপী ক্যন্ডিফ্ এর
মতো হয়ে যায়,এটা দেখ
ভালোলাগে ইথারের।
আর মিমি ইথারের
আলমারি খুলে শখের
রং - বেরংয়ের
ক্যাপের কালেকশন
থেকে ক্যাপ চুরি করে লুকিয়ে রেখে ইথারের চোখ জ্বালা করে এসব
ভাবলেই.. যে, ভাগ্যের
নির্মম খেলায়... আজ আর ইথারের কিটক্যাট চকলেট
চুরি করে খাওয়া হয়না নিজেই মিমির
জন্যে কিটক্যাট
নিয়ে আসে।আর
মিমিটা তো সারাদিন
"আব্বু.. আব্বু.."
করেতে করতে ,আগের
মতো ক্যাপ লুকিয়ে ভাইকে রাগানো
কথা ভুলেই গেছে...!
নিষ্পাপ পাগলীটা এখনও কেন বোঝেনা যে ওর বাবা আর কোনদিন
ওকে সন্ধ্যাবেলায়
ব্যালকনিতে কোলে নিয় মজার গল্প শুনাবেনা, চকলেট
কিনে সারপ্রাইজ
দেবেনা!
***************
*****
চোখের জলের
ফোঁটা গাল বেয়ে পিচঢালা রাস্তা
পড়ল........ ফেব্রুয়ারীর
ফাল্গুনী রোদে তপ্ত
রোড শুষে নিল সেই
নোনতা দুঃখ,কিন্তু
কোনভাবেই বুকের ভার কমাতে পারেনা ইথার!
সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু প্রশ্ন করে......" আম্মু তো দু বছর আগেই অন্যকোথাও
বিয়ে করে চলে গেছে,
ফিরে তাকায়নি আমাদে দিকে, আর শেষ পর্যন্ত বাবার ছায়াটুকুও কেন
মুছে গেল আজ...! "
***************
*****
হঠাৎ প্যান্টের
পকেটে ঘুমিয়ে থাকা mobile জাগ্রত
ভাইব্রেশনে চমকে ওঠে রিসিভ করতেই
শুনতে পায় ওদের
ক্লাসের রিশাতের
মায়ের কান্নাজড়ানো কন্ঠ।
- ইথার,বাবা... রিশাত
কি গতকাল সন্ধ্যায়
কোচিং ক্লাসে গেছিলো
- না আন্টি, কেন?
-রিশাত তো আমারে হুমকি, ধমক
দিয়া আমার আলমারি থেইকা গতকাল
টাকা নিয়ে গেছেগা কো
ডিজে পার্টিতে!
তুমিতো জানো বাবা,রিশাত
রে আমি একাই মানুষ
করসি,ভালোবাসা,ভ
ালো শিক্ষার কমতি হইতে দেইনি কুনু
কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর থেকাই রিশাত আমারে খ্যাত
বলে,বন্ধুদের সামনে মা বইলা পরিচয়
দিতেও চায়না........!
কিছু বলার
ভাষা হারিয়ে গেছে..!
***************
****
হঠাৎ ইথারের
অশ্রুনীল চোখের
দৃষ্টিতে আটকে গেল
আজকের ভালোবাসা দিবসে...
একটি অতি সাধারণ
অথচ অমূল্য
ভালোবাসার দৃশ্য.....
রাস্তার পাশে ফুটপাতের কোনায় উষ্কো-খুষ্কো চুলের এক মাঝবয়সী লোক তার বালক
বয়সী ছেলেটিকে মাটি হাড়িতে করে ডালভাত মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে
ছেলেটিও কি মধুর
তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে..............
তা দেখে ছেলেটার
বাবার মুখে কি অদ্ভুত তৃপ্তি মাখা ভালোবাসা হাসি...!
ইথারের মনে পড়ছে সেইদিনগুলো...যখন আব্বু ওকে আর
মিমিকে নিয়ে ছুটির
দিনে মুভি দেখতে গিয়ে আবার বাসায় যেদিন বাবার
সাথে খেতে বসা হতো,আর মিমি ইচ্ছে করে খাবার প্রতি অনীহা দেখাত,
আদর করে খাইয়ে দেয়,এই আশায়.. আর তখন সেই ছোট্ট
আশাগুলো মিষ্টি করে পূর করে দিত ওদের আব্বু! এ
বছর,আব্বুকে নিয়ে ইথার আর
মিমি ভ্যালেন্টাইন
ডে পালন করবে,এমনই
প্ল্যান ছিল!
আজ ভ্যালেন্টাইনস
ডে..... আগামীতে হয়ত
কোন জীবনসঙ্গী ভালোবাসা
সবচেয়ে বড়
কথা বাবাকে নিয়ে ভ্যা
ডে পালনের সুযোগ এ
জীবনে আর কোনদিন
আসবেনা! কেন
সারাটি জীবনের
জন্যে অপূরনীয়
রয়ে গেল মা বাবার
ভালোবাসা পাবার
তৃষ্ণা..!! "
আসলেই পৃথিবীটা বড়
অদ্ভুত! মা বাবাকে সম্মান করার
শিক্ষা ইথারদের
মধ্যে আছে কিন্তু
রিশানের মতো মা ইথারের ভাগ্যে জোটেনি,আর
ফুটপাতের ওই
ছেলেটির ইথারদের
মতো দোতালা ডুপ্লেক্স
বাড়ি আর বিলাসবহুল
খাবারের প্রাচুর্য
নেই,কিন্তু "বাবা"
নামক বিশেষ মূল্যবান সম্পদ আছে,যা ইথার
আর মিমির নেই!
উৎসর্গঃ সেইসব
ইথারদের.. যাদের সব
আছে ,বাবা কে নিয়ে ভ্য: ডে পালনের
মতো বিশাল মনও
আছে কিন্তু
মা বাবা নেই,আর
সেইসব রিশানদের..
যারা মা বাবার
ভালোবাসাকে পথের
ধূলোর চেয়েও নিকৃষ্ট
মনে করে মিথ্যা মোহে...
বিষয়: বিবিধ
১১১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন