এর শেষ কোথায় !
লিখেছেন লিখেছেন তাবিজ বাবা ২১ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:০১:০৮ রাত
তখন নবম কি দশম শ্রেণীতে পড়ি । কয়েকটা আন্ঞ্চলিক পত্রিকাতে কাজ করতাম । শখের বসেই বলা চলে । বিষয়টা আরো সহজ হয়েছিল ফুফাতো ভাই বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উপসম্পাদক সালাহউদ্দিন রাজ্জাক
ভাইয়ের জন্যে । একসাথে আমি আর আমার আরেক বন্ধু ফেরদৌস সরদার একসাথে খবর সংগ্রহ,ছবি তোলা সবশেষে ইমেইল করে লেখাটা পত্রিকা অফিসে পাঠাতাম । আর অপেক্ষা করতাম আগামীকালের জন্যে,কখন পত্রিকাটা আসবে আর নিজেদের নামে লেখাটা দেখব । বন্ধুমহলের পাশাপাশি স্কুলের স্যাররাও আমাদের সাংবাদিকতার কথা জানতেন । কোন ঘটনা দেখলেই বা শুনলেই ফোন পেতাম ।খবর সংগ্রহ করতাম ।
একদিন ফোন পেলাম উপজেলা সদরের কাছেই বাস দুর্ঘটনার । সাথে সাথে গিয়ে ছবি তুললাম,খবর সংগ্রহ করলাম । সামান্য ছোট্ট একটা লোকাল বাস দুর্ঘটনা ছিল সেটা ।কাটা ছেড়া টাইপ আহত হয়েছিল যাত্রীরা ।
এর কয়েকদিন পরেই হঠাৎ ফোন পেলাম, শুনলাম ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া গোলচত্বরে একটি লোকাল বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছে । ছুটলাম সেদিকে।কষ্ট করে আর যাওয়া লাগল না।পথিমধ্যেই দেখলাম ভটভটিতে করেআহত মানুষগুলোকে নিয়ে আসা হচ্ছে।ফিরে চললাম উপজেলা হাসপাতালের দিকে । যেয়ে দেখলাম লোকে লোকারণ্য হাসপাতাল।হাসপাতালের মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে । ভিড়ঠেলে সামনে যেতেই দেখলাম অধিকাংশ মানুষের শরীরের চামড়া উঠে গেছে ব্যাটারির অ্যাসিডে পুড়ে । সেকি বীভৎস্য দৃশ্য!পেশাদার কাজের কথা ভুলে গেলাম।মনটা হাহাকার দিয়ে উঠল । বন্ধু ফেরদৌসকে বললাম আমরা কিছু করতে পারিনা? হ্যাসূচক সম্মতি পেয়েই হাসপাতালের প্রধান দুই গেটে দাঁড়িয়ে গেলাম।উৎসুক জনতার কারণে ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছিল।সাথে সাথে আরো কয়েকজনের সহযোগিতা পেলাম। কিছুটা হলেও মানুষগুলোতে সাহায্য করতে পেরেছিলাম ।
এইঘটনাটা মনে পড়ে গেল আজ নাটোরের বড়াইগ্রামে সড়কদুর্ঘটনার খবর দেখে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে মৃতের সংখ্যা ৩৩ । যতটুকু জানি স্পটডেড:২২ ।তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন কি ভয়ানক দুর্ঘটনাটা হয়েছে। এরকম কম বেশি সড়ক দুর্ঘটনা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসতেছি। যতটুকু শুনলাম আর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন । বিরোধীদলের নেতার খবর এখনো পাই নি কিছুক্ষণ পর হয়তে একে একে উনারা সবাই শোক দুঃখ প্রকাশ করবেন । তাতে নিহত বা আহতের পরিবারগুলোর কিচ্ছু যাবে আসবে না,চুল ছেড়াও যাবেনা ।যা যাওয়ার সেটাতো চলেই গেছে,প্রিয়জন/প্রিয়জনের প্রাণ । জুনায়েদ আহমেদ পলক সাহেবকে ফেসবুকে দেখলাম সবার সহযোগিতা চেয়েছেন ।আজকাল এক ভালো সুবিধা হয়েছে । ফেসবুক হওয়াতে রাজনীতিবিদদের শোক প্রকাশ করাটা আর সবার কাছে সেটা পৌছানোটা খুবই সুবিধা হয়েছে কিন্তু আর যাইহোক সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করাটা খুব একটা সুবিধার হয়নি ।
আমার Hometown গোপালগন্জ্ঞের কাশিয়ানীতে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের খুবই নিকটে । আর তাই সড়ক দুর্ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকেই দেখেছি। যেমন মরা মানুষগুলোর দেহথেকে আলাদা ছিন্নভিন্ন মাংসগুলোকে রাস্তায় পড়ে লাফাতে বা কাপতে দেখছি তেমনি দেখেছি নিহতের স্বজনদের চোখের পানি। যখন পেপারে পড়ি বা টিভিতে সড়ক দুর্ঘটনার রিপোর্টগুলি দেখি তখন হাহাকার করি ,খারাপ লাগে কিন্তু উপলদ্ধি করিনা । আর তাইতো পরবর্তীতে আমরাই বাস ড্রাইভারকে বলি , "মামু এত্ত আসতে চালাও ক্যান?আর কি জোর টোর নাই নাকি?" কিংবা "অ্যাকসেলটর পাড়ায় ধরতে কি মায়া লাগে? ঝিমায় ঝিমায় চালাও ক্যান?"
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারি কিন্তু আমরাই ।এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো আন্তরিক হতে হবে । রাখতে হবে কড়া নজরদারি ।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় যেন কোন ফাক ফোকর বা দুর্বলতা না থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে।বিশেষ করে চালকদের লাইসেন্স প্রদান করার ক্ষেত্রে ।
গাড়ীর চালকদের উচিৎ আইনমেনে,ট্রাফিক সাইন মেনে গাড়ি চালানো।যেখানে সর্বোচ্চ গতিসীমা যতটুকু দেওয়া আছে ততটুকু মেনেই গাড়ি চালাতে হবে।আর তাহলেই হয়তোবা আমাদের যাত্রা হবে নিরাপদ, সড়কদুর্ঘটনার হার কমে আসবে শূণ্যের কাছাকাছি ।।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষন ও জন সচেতনতা সৃষ্টির চাইতে আমাদের দেশে ট্রাফিক পুলিশকে অধিক ঘুষ খাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন