বিরোধিতার তীব্রতা
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশে ইসলাম ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৪৯:৪৫ সন্ধ্যা
যে কোনো আন্দোলনের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বিরোধিতা এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতও স্বভাবত বাড়তে থাকে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের বিস্তৃতির সঙ্গে বিরোধিতা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের যে প্রচন্ডতা দেখা দেয়, তা তার অনুগামীদেরকে অধিকতর কঠিনতর পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করে। দশম নববী সাল নাগাদ ইসলামী আন্দোলন যেমন ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করছিল, তেমনি সত্যের আহবায়ক এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছিলো। কুরাইশ প্রধানগণ চূড়ান্ত ভাবে স্থির করলো যে, তারা খোদ হযরত (স)-এর ওপর এতোটা উৎপীড়ন চালাবে, যাতে তিনি নিজেই বাধ্য হয়ে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হন। কুরাইশদের বড়ো বড়ো সর্দারগণ ছিলো তাঁর প্রতিবেশী এবং এরাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় দুশমন। এরা হযরত (স)-এর পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো, নামায পড়ার সময় হাসি-ঠাট্টা করতো। তিনি সিজদায় থাকলে তাঁর ঘাড়ের ওপর নাড়িভুঁড়ি এনে ফেলতো এবং গলায় চাদর জড়িয়ে এমন নির্দয়ভাবে টানতো যে, তাঁর পবিত্র গর্দানে দাগ পড়ে যেতো। তার পেছনে দুষ্ট ছেলেদের লেলিয়ে হাততালি দিতো। কোথাও কখনো তিনি বক্তৃতা দান করলে সভার মাঝখানে তারা গোলযোগের সৃষ্টি করতো এবং বলতো, এ সবই মিথ্যা কথা। মোটকথা, হয়রানি ও উৎপীড়নের যতো ন্যক্কারজনক পন্থা ছিলো, তা সবই তারা অবলম্বন করেছিলো।
এ পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তার নবীর প্রতি যে সব ওহী নাযিল করেছিলেন, তাতে এ সব অবস্থার মুকাবেলার জন্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বর্তমান ছিল। ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনাদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেওয়া হলোঃ বর্তমানে সত্যের ওপর দৃশ্যত যে জুলুমের পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে, তাকে কোন স্থায়ী ব্যাপার মনে করা উচিত নয়। দুনিয়ার জীবনের এ ধরনের তামাসা বারবারই ঘটে আসছে। তাছাড়া সফলতার আসর ক্ষেত্র এ দুনিয়ার জীবন নয় বরং পরকালীন জীবন। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে,যারা তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করে, পরকাল তাদের জন্যেই উত্তম।
রাসূলে আকরাম কে উদ্দেশ্য করে বলা হলোঃআমি জানি তোমার সাথে যা কিছু করা হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু এই সব লোক সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে শুধু তোমারই নয়, বরং আমারই প্রতি অসত্য আরোপ করছে। আর এটা কোন নতুন কথা নয়, এর আগেও আমার নবী-রাসূলদের সাথে এরুপ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তারা ধৈর্য ও সবরের সাথে এই পরিস্থিতি মুকাবেলা করেছেন এবং আমার সাহায্য না পৌঁছা পর্যন্ত সর্ববিধ দুঃখ-মসিবতকে হাসিমুখে সহ্য করেছেন। তুমিও এমনি পরিস্থিতি অতিক্রম করছো এবং এরুপ পরিস্থিতিই অতিক্রম করতে হবে।
সাহাবায়ে কেরামকে বারবার বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো যে, হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যাকে বদলে দেয়ার সাধ্য কারো নেই।সে নিয়ম অনুসারে হকপন্থীদের কে এক সুদীর্ঘ কাল ব্যাপী যাচাই করা এবং তাদের ধৈর্য, সততা, আত্মত্যাগ, আনুগত্য, আত্মসমর্পণ ঈমানী দৃঢ়তার পরীক্ষা নেওয়া একান্ত অপরিহার্য। সেই সঙ্গে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং তার প্রতি ঈমানের ব্যাপারে তারা কতখানি মজবুত,তা-ও নিরুপণ করা প্রয়োজন। কারণ, এইরুপ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের মাধ্যমে তাদের মধ্যে এমন সব গুণাবলীর সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীকালে আল্লাহর দ্বীনের খাঁটি অনুবর্তী হবার পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক হয়ে থাকে। আর লোকেরা যখন এরুপ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রতিপন্ন হয়, কেবল তখনই আল্লাহর সাহায্য এসে হাজির হয়। এর আগে কখনো তা আসতে পারে না।
বিষয়: বিবিধ
১১০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন