বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের স্থবিরতার কারন ও কিছু পরামর্শ
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ তাহসীন ৩০ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৫১:২৯ রাত
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন বলতে মূলত জামায়াত ইসলামীর আন্দোলনকেই বেশি বুঝায়। জামায়াত ইসলামির চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম হলো বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ইসলামকামী ছা্ত্রছাত্রীদের ভরসার স্থল হলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির সংক্ষেপে শিবির ই হলো একমাত্র সংগঠন যারা নৈতিকতার বলে বলীয়ান একদল শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক তরুন তৈরীর কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক ছাত্র থাকে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে না জড়ালেও ছাত্রশিবিরকে ভালোবাসে ইসলামকে ভালোবাসার কারনে। অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের তুলনায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীতে দুর্নীতি না থাকলেও সংগঠনকে গতিশীল করতে সময়ের সাথে সংগঠনের কাঠামোগত বা অন্যান্য পরিবর্তনে খুবই স্থবিরতা দেখা যায়।
সময়ের চ্যালেন্জ মোকাবেলায় ছাত্রশিবির উন্নত আইডিয়াকে এ্যাকোমোডেইট করতে অনেক ইতস্তত বোধ করে বা অনেক ক্ষেত্রে পারে না। বিগত কয়েক দশকে ছাত্রশিবির যত মানুষ তৈরী করেছে সেসব মানুষের চিন্তা চেতনাকে অনেক সময় মুল্যয়ন না করে সেই সেকেলে সংগঠনের ধারায় চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
ইসলামী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আধুনিক শিক্ষার চর্চা তুলনামূলক অনেক কম। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যেখানে সিলেবাস পরিবর্তন হয়েছে অনেকবার অথচ একটি বড় ইসলামী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরের সিলেবাসের পরিবর্তন চোখে পড়ে সামান্যই।
সকল ক্ষেত্রে ট্রেনিং হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং ম্যাটেরিয়াল এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটে সময়ের সাথে সাথে। উন্নত বিশ্বে অফিসের কম্পিউটারগুলোকে পরিবর্তন করা হয় ৫-৬ বছর পর পর যাতে করে আপডেট থাকা যায়। অথচ সেখানে একটি বড় ইসলামি সংগঠন হওয়া সত্তেও সংগঠনের কর্মী ও নেতৃত্বের ট্রেনিং এ আধুনিকায়ন হয়েছে সামান্যই।
রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে বেশি ইনভলভ থাকার কারনে সামাজিক সমস্যাগুলোতে নিজেদের অংশগ্রহনে অনেক দেরী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক সমস্যার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয় প্রতিনিয়তই এসব সামাজিক সমস্যায় বাস্তবসম্মত অংশগ্রহন ইসলামী সংগঠন গুলোর মধ্যে দেখা যায় না। ফলে দেশের তৃণমূল মানুষের সাথে দুরত্ব তৈরী হয়েছে অনেকাংশে।
দেশের বেকার যুব সমাজ যারা পড়াশোনা করতে পারে না বা স্কুলে যাওয়ার যাদের পক্ষে সম্ভব হয় না এসব মানুষের জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
গ্রামীন সমাজের সুবিধাবন্চিত মহিলা এবং শিশুদের নিয়ে কাজে ইসলামী সংগঠন গুলোর অংশগ্রহন একবারে নেই বললেও চলে।
ইসলামী সংগঠনের মধ্যে রাজনীতিকে বেশি অগ্রধিকার দেয়ার কারনে, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নৈতিক মানে ঘাটতি থেকে যায়। সব কাজে আল্লাহর উপস্থিতির ঘাটতি চোখে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই।
যারা ইসলামী আন্দোলন করে তাদেরকে পরবর্তীতে পৃষ্ঠপোষকতা বা তাদেরকে সাহায্য করার মত বা পরামর্শ দেয়ার মত সংগঠনের অনুপস্থিতি অনেক নেতা কর্মীকে বাস্তবতার কাছে হার মেনে সংগঠনের সংগ্রামী জীবন থেকে দুরে সরে যেতে বাধ্য করে।
কিছু পরামর্শঃ
সংগঠনের গতিশীলতার জন্য ভালো-মন্দ সব আইডিয়াকে শোনার মত যোগ্য নেতা তৈরী করতে হবে।
সিলেবাসকে আরো আধুনিক করা এখানে আধুনিক বলতে আপডেট বুঝানো হয়েছে। যুগের প্রয়োজনে নেতা কর্মীদের এগিয়ে নিতে হলে সমসাময়িক আলেমদের চিন্তা ধারনা স্ট্যাডি এবং ইসলামী আন্দোলন নিয়ে স্ট্যাডি করা প্রয়োজন।
আধুনিক সময়ে সংগঠনকে আধুনিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারে এমন যোগ্য নেতা-কর্মী তৈরীতে বাস্তবসম্মত সিলেবাস প্রনয়ন অত্যন্ত জরূরী। সমসাময়ক আলেমদের বই আরো বেশি অনুবাদ করে সেগুলোকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
ট্রেনিং কে বিগ্গান সম্মত ও আরো আধুনিক করা প্রয়োজন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভালো প্রফেসনাল লোক নিয়ে গিয়ে ট্রেনিং দেয়া যেতে পারে। অথবা নেতা-কর্মীদের বিদেশে পাঠিয়ে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে বিদেশের কালচার দেখে সেগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ তৈরী হবে নেতাদের মধ্যে। ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে অভিগ্গতাকে আরো মজবুত করার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
দেশের সামাজিক সমস্যাগুলো কে চিহ্নিত করে সেগুলোকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাস্তবসম্মত প্রজেক্ট তৈরী করা যেতে পারে। যাতে করে দলের নেতা-কর্মীরা সাধারন মানুষের সমস্যা গুলো নিয়ে তাদের কাছে যেতে ফলে। সাধারন মানুষের কাছে গ্রহন যোগ্যতা বেশি বৃদ্ধি পাবে।
দেশের যুব সমাজের মধ্যে কাজ করার জন্য, ইসলামী আন্দোলনে যুব সমাজকে নিয়ে কাজ করার জন্য ইসলামি যুব সংগঠন নামে একটি সংগঠন দাড় করানো যেতে পারে। যারা যুবকদের কাজের সুযোগ তৈরী কিংবা যুবকদের নৈতিক মান উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কাজ করবে।
সংগঠনের সকল জেলার সংগঠনের ভাই-বোনদের নিয়ে মহিলা-শিশুদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সামাজিক সংগঠন করা যেতে পারে যারা শুধুমাত্র সামাজিক সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাবে।
ইসলামী সংগঠনের মধ্যে রাজনীতিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়ার কারনে অনেক সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে সংগঠনের লাভকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয় ফলে নেতা-কর্মীদের মাঝে নৈতিকভাবে দূর্বল একটি জায়গা তৈরী হয় এবং এর চর্চা চলতে থাকার ফলে পরবর্তীতে ঈমান আমলের মধ্যে অনেক গ্যাপ তৈরী হয়। সাধারন মানুষ কিংবা ছাত্রের কাছে উসওয়াতুল হাসানা অনেক সময়ে হয়ে উঠা সম্ভব হয় না। তাই রাজনীতির লাভের চেয়ে নৈতিক মান এবং তাক্বওয়ার চর্চাকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়ার চর্চা অব্যহত রাখতে হবে। এবং নেতাদের মধ্যে কেউ কোন খারাপ কাজে বা অনৈতিক কাজে বা অন্যের হক নষ্ট হয় এমন কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিনা তা মনিটর করার জন্য একটি উচ্চতর মনিটরিং সেল থাকা দরকার। যাতে কর্মীরা নির্ভয়ে কোন নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ দায়ের করতে পারে সেজন্য একটি উচ্চতর নৈতিকতা সম্পন্ন শুরা থাকা দরকার। যাদের কাজ হবে নেতাদের বিরুদ্ধে উত্থাপতি অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগকারীকে যথাযথ জবাব দেয়া। এবং অভিযোগ কারীর যাতে হয়রানী না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা।
অনেক ভাই আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সংগঠন থেকে দূরে সরে যান। এটি হয়ত করতে বাধ্য হন জীবনের প্রয়োজনে। সংগঠনের দায়িত্বশীল রা যাতে সময়ের স্রোতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করা। বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যে কেন তারা হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর কারন বের করে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা। দেশের ভেতরে জব এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ করা ভাইদের জন্য চাকুরী পরামর্শ প্রতিষ্ঠান তৈরী করা। ভালো রেজাল্টধারী ভাইদের বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে সহায়তা করা।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে তাদেরকে সংগঠেনর আয়াত্বের মধ্যে রাখা। কারন তারা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবে তাদের এই ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানো। তাদের আয়ত্বের মধ্যে রাখলে সংগঠনের প্রয়োজনে বিভিন্ন ফিডব্যাক পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।
আপাতত এইটুকুই ............
বিষয়: বিবিধ
১৭১৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(ক) জামাত রিসার্স পর্ব। তরুন গভেষক:এম,এন,হাসান। ওনার দুটো ব্লগ সাইট রয়েছে। একটা ইংরেজী, একটা বাংলায়
(খ) আমি আল বদর বলছি: কে,এম, আমিনুল হক। http://www.storyofbangladesh.com/ebooks/amialbadrbolchhi.html
পড়ে দেখতে পারেন। ১৯৮২ দিকে যুবশিবির ছিল।
ওটা বেশী স্থায়ী হয়নি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন