আমার ইসলামী জীবনের শুরু হয় যেভাবে
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ তাহসীন ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০২:১৬:৩৬ রাত
যখন অনেক ছোট ছিলাম, হয়ত স্কুল জীবনও শুরু করিনি সকাল হলেও শুনতাম আমার আম্মু কুরআন পড়ছে। ঘুম থেকে উঠে কুরআন শুনতাম আবার বিকেল হলেও আম্মু কুরআন পড়া শুরু করত। আমার নানা কঠোরভাবে ইসলাম পালন করতেন। আমি যখন ৪-৫ বছর বয়সের পিচ্ছি তখন নানার বাড়ি গেলাম, রমজান মাস। রোজা রাখার বায়না ধরলাম। রোজা রাখলাম। কিন্তু সমস্যা হলো যেই দুপুর হলো ক্ষুধা শুরু হলো। রোজা ভেংগে ফেলবো। আমার নানা করলেন কি, সেই দুপুর ৩ টায় ইফতার নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললেন যে, রোজা শেষ হবে একটু পড়ে তখন রোজা শেষ করে খাও। সেটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম রোজা। আম্মা কুরআন জানার কারনে, কুরআন শিখে ফেলি ছোট বেলায়। কিন্তু নামায পড়তাম অনিয়মিত। শুরু করতাম গ্যাপ পড়ত আবার শুরু করতাম এভাবে চলছিলো। স্কুলে পড়াকালীন প্রায় ফুফুর বাসা যেতাম, ফুফুর বাসায় গেলে নিউজ লেটার নামে পত্রিকা দেখতাম পড়তাম। মাঝে মাঝে সাইমুম সিরিজের বই নিয়ে এসে পড়তাম। আমার ফুফাত ভাই এই বইগুলো পড়ত। তখন থেকে ইরান, খোমেনী, ইসলামি ম্যুভমেন্ট এসব শব্দের সাথে পরিচিত হই। মাঝে মাঝে দেখতাম আমাদের মহল্লাহর মসজিদে কিছু ভাই বসতেন কি নিয়ে যেন আলোচনা করতেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে ইসলামি আন্দোলনের দাওয়াত পাইনি। তবে এসএসসি পরীক্ষার পর তাবলীগের লোকজন খুবই ঘুরাঘুরি শুরু করলো তাবলীগে নিয়ে যাবে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক বন্ধু যাইতে রাজী না হওয়ায় আর যাওয়া হয়নি। এভাবে স্কুল কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকা শুরু করলাম। আগে থেকে ইসলামি মাইন্ডের হওয়ার কারনে সহজে তবালীগের ভাইদের নজরে পরলাম, তাবলীগে গেলাম নাটোরের তানোরে। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমীর ছিলেন খুবই ভালো একজন ভাই। আমরা গিয়েছিলাম ১০ দিনের জন্য। তানোরে একটি বড় বাজার আছে ঐ বাজারের ভেতরে এক মসজিদে গিয়েছিলাম। আমীরকে সবাই মিলে বলা হলো ৩ শিফটে ঘুম না হলে আমরা কেউ থাকবো না, আমীর বললেন ঠিক আছে। তখন সকালে ফজরের পর, বিকেলে জোহরের পর, আর রাতে ঈশার পর তিনবার ঘুমের জন্য নিয়ম করা হলো। এরপর কয়েকজন বু্দ্ধি বের করলো যে, চিড়া, দুধ না খেলে পেটে সমস্যা হবে। ওটার ব্যবস্থা করা হলো। এরপর পাশের আর এক মসজিদে গেলাম দারুন খা্ওয়া দাওয়া হয়েছিলো। আমরা ৬ নম্বর শিখেছিলাম, যাহোক শেষে ৫ দিন থেকে চলে আসি।
এরপর ছাত্রাবাস পরিবর্তন করে পাশের এলাকার এক ছাত্রাবাসে যাই, ঐ ছাত্রাবাস ছিলো, মসজিদের ছাত্রাবাস। একেবারে মসজিদের সাথে লাগানো। মসজিদের তাকবীর রুম থেকে শোনা যেত। একবার তো একভাই নিজ রুম থেকে জুম্মার জামাতে শরীক হয়েছিলেন, মানে রুমে দাড়িয়ে মসজিদের সাথে কাতার বন্দী হয়ে নামাজ পড়েছিলেন।
সে মসজিদ ছিলো আহলে হাদীস জামাতের। ঐ মসজিদের মুয়ায্যিন ছিলেন কলেজের এক ছাত্র। তো প্রায় বেদয়াত বেদয়াত বলে আলোচনা করত যে, অমুক বেদয়াত। এক ভাই ছিলেন ঐ গ্রুপের গোসল করে গা মুছতেন না। তো তাদের বেদয়াতের জ্বালায় আমি এবং আমার ভাই বুখারী শরীফ কিনে আনলাম যে, দেখি হাদিস পড়েই আহলে হাদিসকে ধরব যে ওরা ঠিক না আমরা ঠিক। এভাবেই হাদীস চর্চা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় হলে সিট হয় তৃতীয় বর্ষে। হলে যে রূমে উঠি সে রূমে থাকতো শিবিরের ব্লগ সভাপতি। আমি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শুরু থেকে নিয়মিত নামাজ আদা. করতাম। হলে উঠে হলের মসজিদ কাছে পেয়ে ফজরের নামাজও নিয়মিত পড়া শুরু করলাম। ঐ সময়ে হল সভাপতি ছিলেন আমাদের ইয়ারমেট এক ভাই, তিনি আবার আমার এক ফ্রেন্ডের ক্লাশমেট।
প্রতিদিন ঈশার নামাজ পড়ার পর দেখতাম কিছু ছেলে বসে কি যেন কথা বলছে। বুঝলাম যে এরা শিবির। এভাবে একদিন দুদিন যায়। একদিন হল সভাপতি আমাকে বললেন যে, ভাই বসেন একটু। আমি দেখি বসি, এভাবে বসা শুরু হলো। এরপর এভাবে একদিন রিপোর্ট বই পেলাম, দেখলাম রিপোর্ট বইতো অনেক ভালো রেখে দিলাম। এভাবে নাকি কর্মী হয়ে গেলাম।
কর্মী হওয়ার পর ঈশার নামাজের পর বসে দেখতাম প্রতিদিনের খোজ খবর নেয়, তো দেখতাম একটু পর বলে কর্মী ভাইয়েরা চলে যান, সাথী ভাইয়েরা বসেন। আমি দেখতাম যে, ওনেক জুনিয়র ছেলেরা সাথী, আবার আমি ভালো সাব্জেক্টে পড়ি। ভাবলাম লজ্জার কথা। সাথী হওয়াই লাগবে। এভাবে সাথী সীলেবাস পড়ে দ্রুত শেষ করলাম। খুব দ্রুত সাথী হয়ে গেলাম।
পরে সাথী অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে এখন প্রবাসে এসে পড়াশোনা করছি। প্রবাসে এসেও সেই ইসলামী সংগঠন থেকে বের হতে পারিনি।
ইসলামী সংগঠনের ভাইয়েরা বেশির ভাগই অনেক ভালো। অনেক ত্যাগী।
আমার কাছে মনেহয় অনেকেই আছে যারা অন্য সংগঠনের ভাইদের ছোট করে দেখে। আবার ইসলামী সংগঠন করে এমন সংগঠনের লোকদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে না। অনেকের দৃষ্টিভংগী অনেক ছোট। অনেকেই আবার নিজেদের জান্নাতের একমাত্র উত্তরাধিকারী মনে করে।
এসব দোষ থেকে নিজেদের দুরে রেখে, বেশি বেশি করে বই পড়তে হবে। বিখ্যাত মনীষী, আলেমদের বই পড়তে হবে। সমসাময়িক আলেমদের বই এবং সংগঠন নিয়ে ভাবনা গুলো পড়ে সেভাবে নিজেদের কে পরিবর্তন করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে সময়ের প্রতিযোগিতায় যুগের চাহিদাকে সমুন্নত রেখে টিকে থেকে সামনে অগ্রসর সম্ভব হবে।
আল্লাহ আমাদের কে প্রকৃত মুমিন হিসেবে মৃত্যুবরন করার তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৫১১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার কাছে মনেহয় অনেকেই আছে যারা অন্য সংগঠনের ভাইদের ছোট করে দেখে। আবার ইসলামী সংগঠন করে এমন সংগঠনের লোকদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে না। অনেকের দৃষ্টিভংগী অনেক ছোট। অনেকেই আবার নিজেদের জান্নাতের একমাত্র উত্তরাধিকারী মনে করে।
I think you are right. A percentage of activists needs to understand this and or the senior leaders need to let them know about it.
Thanks for sharing.
মন্তব্য করতে লগইন করুন