গ্রিকদের ধর্ম বিশ্বাস (সংক্ষিপ্ত আলোচনা)
লিখেছেন লিখেছেন সজল আহমেদ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:৪২:১৫ রাত
একটি গ্রিক মন্দির:ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহিত
বিশ্ববিজয়ী অপারাজেয় শক্তির অধিকারী মহাবীর আলেকজান্ডারের দেশ ,বিশ্ববিশ্রুত দার্শনিক সক্রেটিস ,অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর দেশ ,প্রখ্যাত ঐতিহাসিক হেরোডোটাস,অসাধারণ বিজ্ঞানী পিথাগোরাস ,আর্কিমিডিস ইউক্লিড ,হিপোক্রেট্'স্ প্রমুখের দেশ গ্রিস।বিশ্ব যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-সভ্যতার দিকে হাঁটাহাঁটি করছিল,গ্রিক জাতি তখন জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে চারদিক আলোকিত করেছিল ।প্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রিস তার কৃতিত্ব সংযোজন করে ।তাই বিশ্ব সভ্যতা গ্রিকদের কাছে বহু দিক দিয়ে ঋণী ।বিশ্ববিশ্রুত কবি পার্সিবিশী শেলী যথার্থই বলেছিলেন ,
আমরা সবাই গ্রিক,আমাদের-আইন,আমাদের সাহিত্য ,আমাদের কলা-এগুলো(সকলের)মূল রয়েছে গ্রিসে
প্রবাদ রয়েছে যে গ্রিকরা হেলেন নামক একজন পূর্বপুরুষের বংশধর বলে নিজেদেরকে হেলেনিজ ও নিজেদের দেশকে হেলাস বলত ।[নোট:গ্রিস ও গ্রিক নামটি রোমানরা তাদের দিয়েছিল]
ক্লাসিক্যাল গ্রিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অবদান হচ্ছে নগররাষ্ট্র সম্বন্ধে ধ্যান ধারনা প্রদান ।দেশের ভূপ্রকৃতি ও জাতীগত বৈশিষ্ঠের ফলে গ্রিসে নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে ।প্রত্যেকটি নগর রাষ্ট্র নিরাপত্তার জন্য প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল ।প্রত্যেকটি নগররাষ্ট্রের নিজস্ব সরকার ,নিজস্ব দেব দেবী ,নিজস্ব ধর্মীয় উত্সব এবং নিজস্ব সতন্ত্রবোধ ছিল ।গ্রিকরা ধর্মের ব্যাপারে ছিল উদর এবং গোড়া প্রকৃতির ।কথিত আছে দেশের ভূপ্রকৃতি ও জাতীগত বৈশিষ্টের পাশাপাশি প্রত্যেকের ভিন্ন ও নিজস্ব ধর্ম, নগর রাষ্ট্রের উদ্ভবের কারণ ।পাঠক আজকের আলোচনা যেহেতু তাদের ধর্ম নিয়ে করব তাই কথা না বাড়িয়ে সরাসরি তাদের ধর্মেই চলে যাই ।
গ্রিকদের ধর্ম
গ্রিকদের নিকট দেবতারা ছিলেন মহামন্বিত ব্যক্তিত্ব ,পার্থিব ও লোভী।তবে দেবতারা অমর ।জিয়াস নামক এক দেবতাকে গ্রিকরা সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে মানতো ।তিনি তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাসহ মোট ১২জন ওলিম্পিয়াস পাহাড়ে বসবাস করতেন বলে গ্রিকদের বিশ্বাস ছিল।আসুন চিনে নেই গ্রীকদের কিছু দেব-দেবী:
দেব-দেবীর নাম | ধরন |
---|---|
জিউস | বড় |
হেরা | বড় |
পোসাইডন | বড় |
এরিস | বড় |
হারসিস | বড় |
হেফোসটাস | বড় |
আফরোদিতি | বড় |
অ্যাথেনা | ছোট |
অ্যাপোলো | বড় |
আটেমিস | ছোট |
ডিমিটার | ছোট |
হেড্'স | বড় |
হেব | বড় দেবী |
হিলিওস | ছোট দেবী |
ডিওনিসাস | বড় |
হারকিউলিস | বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ |
গ্রিকরা ডেমি নামক এক বড় দেবতার পূজো করতেন তিনি ছিলেন মানুষ ।ডিমিটার ,হেডেস,এথেনা ,অ্যাপোলো প্রভৃতি দেবতাগণ গ্রিকদের সংস্কৃতি ও কর্মকান্ডের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল।[নোট:অলিম্পিকের জনক গ্রিকরা এবং অলিম্পিক খেলাধুলা ছিল তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের অন্তর্গত।সূত্র:History of Islam:Mayers]
তাদের ধর্মীয় কাহিনী থেকে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের একটি ঘটনা শোনা যায় কাহীনিটি তুলে ধরা হল:
সক্রেটিস এবং তার এক বন্ধু/অথবা এক পথিক হাঁটতে হাঁটতে ডেলফিন মন্দিরে গেলেন ।সিড়ি বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না করতেই পুরোহিত এগিয়ে এলেন ,সক্রেটিস তার দিকে তাকিয়ে বল্লেন ,'আমরা একটা বিষয় দেবতার কাছ থেকে জানতে এসেছি'পুরোহিত বল্ল ,আপনারা প্রভূ অ্যাপেলের মূর্তির সামনে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দিন এবং বলুন আপনারা কি জানতে চান ।কুত্সিত চেহারা লোকটি মূর্তির সামনে গিয়ে বল্লেন ,আমি সক্রেটিস,প্রভূ আমি কিছু জানিনা ।এবার তার সাথি চেরফোন নিজের পরিচয় দিয়ে বল্লেন ,হে সর্বশক্তিমান দেবতা আপনি বলুন হেলাসের(গ্রিসের) সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী কে ?
তখন নাকি আকাশ,বাতাস কাঁপিয়ে এক দ্বৈববাণী ভেসে এসেছিল যে ,"যে নিজেকে জানে"
সূত্র:"The 100:A Ranking of the Most Influential Person in History"Page No:46
সক্রেটিস কে নিয়ে সাজানো এই ঘটনাটা থেকে পাঠক নিশ্চয় বুঝতে বাকি নেই যে কেমন গাঢ় ছিল গ্রিসদের ধর্ম বিশ্বাস তাই তারা মহান ব্যক্তিত্বদের নিয়েও বিশেষ ঘটনা রচনা করে ফেলতেন।
গ্রিক পুরাণ সম্বন্ধে সকলের জানা আছে। গ্রিক পুরাণ তাদের ঈশ্বর ও হিরোদের গল্প ,পৃথিবীর প্রকৃতি পালনের গুরুত্ব নিয়ে গঠিত ।গ্রীকরা তাদের দেবদেবীর প্রশংসা মূলক কবিতা ও গান রচনা করতেন ।এ নিয়ে ঐতিহাসিক ড. মুহম্মদ গাল্লাব বলেছেন ,
যখন প্রাচীন গ্রিকে তাদের দেবতাদের প্রশংসায় বীরত্বসূচক কবিতা ও ধর্মীয় সঙ্গীতের সূচনা হয় তখনই গীতি কবিতার সূচনা হয়গ্রিক নাট্য সাহিত্যে তাদের ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতা পরিলক্ষিত হয় ।সাহিত্য ধারা ও গ্রিকদের ধর্মীয় উত্সব কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল ।গ্রিক সাহিত্য থেকে অনূদিত আরবি নাটকগুলো গ্রিকদের দেবদেবীর গুণকীর্তনে পরিপূর্ণ।পূর্ণ লেখাটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে,গিকদের প্রায় সকল বিষয়ের সাথে তাদের ধর্মের ছিল নিবিড় সম্পর্ক।গ্রিকদের প্রায় সকল রাজা বাদশাহ,জ্ঞানীগুণী সকলেই ধর্মের সাথে ওত্'প্রেত ভাবে জড়িত ছিল ।
[পূর্ণ লেখাটিতে তথ্য ধার করা হয়েছে:
- ↑A History of World Civilization(J.E Swain)
- ↑Wikipedia
- ↑নয়া দিগন্ত
- ↑History of Islam(Page no:120)
পাঠক বরাবর:প্রিয় পাঠক লেখাটিতে বানানগত কিছু ভুল থাকতে পারে দয়া করে নিজগুণে শুধরে নিবেন ।
বিষয়: বিবিধ
৩৬১৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মিল্কি ওয়ে সম্পর্কে যদি কিছু জ্ঞান দিতেন এই মাইথোলজির আলোকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন