প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাস

লিখেছেন লিখেছেন সজল আহমেদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:২৯:২১ দুপুর

(চিত্রঃ পিরামিড) (চিত্রঃ স্ফিংস) [ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত]

ইস্টিশনে আমার প্রথম পোস্টে পৌত্তলিকতার জন্ম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম ।ইস্টিশনে প্রথম লিখেছিলাম তাই সাহসে কুলতে পারিনি বলে আলোচনা অতিসংক্ষিপ্ত হওয়ায় "আনিস রায়হান" ভাই ও নিয়াজ রাফি ভাইয়ের সমালোচনার মুখে পরেছিলাম।আনিস রায়হান ভাই পৌত্তলিকতার আদি জন্ম নিয়ে লিখবেন বলেছিলেন তাই পৌত্তলিকতার জন্ম নিয়ে আমি এ পোস্টে আলোচনা করলাম না তবে নিয়াজ রাফি ভাই প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ।তার মন্তব্য নিম্নরুপ:



একজায়গায় পরেছিলাম প্রাচীন

রান্নার রেসিপি নাকি ফারাওদের ।

গ্রহণযোগ্য বলে মনে হল।

ভালো লেগেছে।

তবে ভাই আরও অনেক ধর্মের নাম

শুনেছি সেগুলা কোথায় ?
এসব

বিষয় এত কম

আঙ্গিকে লিখলে সমালোচনার স্বীকার

হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।



আমি এই পোস্টে প্রাচীন মিশরীয়দের

ধর্ম বিশ্বাস সম্বন্ধে কিছু

লিখতে চাই ।

৩২% ঐতিহাসিকদের

মতে মিশরীয়রাই সর্বপ্রথম ধর্মীয়

বিশ্বাসের প্রচলন করে।মিশরীয়দের

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মের

প্রভাব ছিল অপরিসীম ।শুধু ধর্মীয়

শাসন বা পুরোহিততন্ত্রেই

নয় ,অর্থনৈতিক ,সামাজিক ও

সাংস্কৃতিক জীবনেও তাদের ধর্মীয়

অনুশাসনের প্রতিফল পরিদৃষ্ট হয়।

সাহিত্য ,লিখন পদ্ধতির

আবিষ্কার ,বিজ্ঞান ,দর্শন ,স্থাপত্য ,ভাস্কর্য ,চিত্রকলায়

ও স্পষ্ট ধর্মের ছাপ।এছাড়াও

তারা ধর্মের বিধিবিধান

দিয়ে রাষ্ট্রশাসন করা হতো ।তাদের

ধর্মমন্দিরে গড়ে ওঠা প্রশাসন

নিয়ন্ত্রন করত দেশের অর্থনীতি ।

প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্ম ছিল

বহুশ্বেরবাদ ।খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৭৫

অব্দে সম্রাট চতুর্থ আমেনহোটেপ

(Ameenhoteph) প্রাচীন

মিশরীয়দের মধ্যে একেশ্বরবাদের

মতবাদ প্রচার করার

আগে তারা বহুশ্বেরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

মিশরীয়রা প্রচুর

দেবদেবীতে বিশ্বাসী ছিলেন ।তাদের

প্রধান দেবতার নাম ছিল 'আমন-রে' ।

নীলনদের দেবতার নাম ছিল 'ওসিরিস'



ঐতিহাসিক Professor Sayce এর

মতে,



নীল নদ মাঝে মাঝে ক্ষিপ্ত তার

সন্তানদের(মিশরবাসীর) উপর,

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের

কবলে যখন তারা পরত তখনই

তারা 'ওসিরিস' এর পূজা করতে উদ্যত

হতেন



মিশরীয়দের ধারনা ছিল

সূর্যদেবতা 'আমন রে' এবং প্রাকৃতিক

শক্তি,শস্য ও নীলনদের

দেবতা 'ওসিরিস' মিলিতভাবে সমগ্র

পৃথিবী পরিচালনা করেন।এই দুই

দেবতার পাশাপাশি মিশরীয়রা মেঘ

দেবতা,বিড়াল,কুমীর ,ষাড়,আরো কিছু

সংখ্যক পশু

পক্ষীকে ভক্তি করে পূজো করত ।



পিরামিড,বিজ্ঞান,মমি,দর্শন,সাহি

ত্যে ধর্মের প্রভাব



পিরামিড ও ভাস্কর্য ও চিত্রকলা:

খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ অব্দে খুফু নামক

জনৈক রাজা বর্তমান

কায়রো নগরী হতে দক্ষিণ

পশ্চিমে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত

মরুভূমিতে ১৩একর জমির উপর ১লক্ষ

কারিগর ও শ্রমিকের

সাহায্যে সর্বপ্রথম পাথর

জমিয়ে লম্বায়৭৫৫ফুট এবং উচ্চতায়

৪৮১ ফুট পিরামিড তৈরী করে।

মিশরীয়রা স্থাপত্যশিল্পে সকল জাতীর

জনক ।ঐতিহাসিক মায়ার্স যথার্থই

বলেছেন,



''In the building art the

ancient Egyptians,in some

respect,have never

surpassed ...It should be

noted here that it was

especially in the domain of

art that the influence of

Egypt was exerted upon

contemporary civilization"-

Myers:A Short

History of Ancient,Medieval

and Modern Times



অধ্যাপক J.E. Swain এর

মতে পিরামিড তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল

দেবতা 'আমন-রে' কে খুশি করার জন্য ।

চিত্রকলায় ও প্রাচীন মিশরীয়দের

ধর্ম বিদ্যমান ছিল ।তাঁদের মন্দিরের

গাত্রে বহু Fresco

বা দেয়ালচিত্রে পরিলক্ষিত ।

মমি নির্মানে:প্রথমে মমি নির্মানের

কৌশল

পড়ুন

উইকিপিডিয়া থেকে


ধীরে ধীরে মিশরীয়রা 'বা' (আত্মা)

এবং 'কা' (কায়া/দেহ) এ

বিশ্বাসী হয়ে ওঠে ।তাদের বিশ্বাস

ছিল মৃত্যুর পর 'বা' পূণরায় তারই 'কা'

তে আশ্রয় গ্রহণ করত ।দেহ

ছাড়া আত্মা ঈশ্বরে সান্নিধ্যলাভে বঞ্চিত

হতে পারে ,এ

কারনে তারা দেহকে সংরক্ষন করত

মমি পদ্ধতিতে[নোট:মমি একমাত্র

রাজাদের এবং ধনীদের

করা হতো ,সাধারন বা দরিদ্রদের

পক্ষে মমি করানো সম্ভব হতনা]।

মমিকে যুগ পরম্পরায় অক্ষত রাখার

জন্য নির্মিত হয় স্তম্ভ পিরামিড।

পুনর্জন্মে গভীর বিশ্বাসের দরুন

তারা মৃতদেহের সাথে নানাবিধ

খাদ্যদ্রব্যও রাখত ।তারা বিশ্বাস

করত যে মৃত্যুর পর অসিরিস নামক

বিচারকের সম্মখীন হয়ে জীবনের

হিসাব নিকাশ দিতে হবে ।যারা সত্ ও

ধর্মভীরু তাদের স্বর্গে এবং পাপীদের

নরকে পাঠানো হবে ।[নোট:তখনকার

ধর্ম মতে মমির মানুষগুলোই

স্বর্গে যাবে কারন তারা দেহ

আত্মা সম্বলিত] ।মমি সংরক্ষিত

স্থানগুলোতে কেউ ভয়ে ঢুকতো না কারন

তাদের বিশ্বাস ছিল

আত্মা সংরক্ষনকারী দেবতা এতে অসন্তুষ্ট

হবেন এবং তাদের মেরে ফেলবেন।

[নোট:তুতেন খামেনের মমির গায়ে এমন

অভিশাপ মূলক কিছু বাণী লেখা ছিল]

মিশরীয়দের এই মমির কল্যাণেই

আশীরিরি বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস

জন্মে ।



লিখন পদ্ধতিতে,বিজ্ঞানে ,সাহিত্যে ও

দর্শনে মিশরীয়দের ধর্মের প্রভাব



ঐতিহাসিক মায়ার্স বলেন , দেবতাদের

ছবি মিশরীয়রা শাকসবজির রস

দিয়ে পেপিরাস ঘাসের কাগজে ও

দেয়ালে ছবি আঁকতো ,দেবতাদের

ছবি আঁকতে তারা ৩টি লিপির

আবিষ্কার করেন ,চিত্র

লিখন ,হিরাটিক(আরবির মত দ্রুত

লিখন) এবং ডেমেটিক ।

সাহিত্যে ও দর্শন:তাদের

সাহিত্যচর্চা মূলত ছিল দর্শন ও ধর্ম

ভিত্তিক ।পিরামিড

স্টেকস্টস ,মেমফিস,রয়াল সান

হিম ,মৃতদের পুস্তক ,আতেনের হিম (ধর্ম

সঙ্গীত) ইত্যাদি প্রায় সকল সাহিত্য

ছিল ধর্ম ভিত্তিক ।এছাড়া তারা ধর্ম

নিরপেক্ষ সাহিত্য চর্চাও করত ।

[নোট:প্রাচীন মিশরীয়দের

মধ্যে যুক্তি ও

মুক্তবুদ্ধি বৃত্তি চর্চা ছিল,তত্কালিন

কিছু দার্শনিক বিশ্বাস করতেন

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চীরস্থায়ী ,

নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে তাদের

রচিত "ফাহোটেপের ম্যাক্সিম" এ

তাদের গভীর দার্শনিক তত্ত্বের

পরিচয় মেলে]এ ছাড়াও দেবতাদের

শক্তি নিয়ে রচিত হত ছোট ছোট গল্প।

মিশরীয়রা তাদের ইতিহাস লেখাও

চর্চা করতেন ।



বিজ্ঞান



বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখায়

প্রাচীন মিশরীয়দের অশেষ অবদান

লক্ষ করা যায় ।বিশেষ

করে অঙ্কশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিদ্যায়

তারা অসামান্য অবদান রেখেছেন ।

তারাই সর্বপ্রথম জ্যামিতি ও

অঙ্কশাস্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন ।

যোগ,বিয়োগ,ভাগ ও দশমিক প্রথার

প্রবর্তন তারাই করেন ।

জ্যামিতি শাস্ত্রে তারাই প্রথম

কৌণিক ,আয়তক্ষেত্র ও ষড়ভূজ আবিষ্কার

করেন ।অঙ্কশাস্ত্রে ধর্মের অবদান

না থাকলেও তাদের জ্যোতির্বিদ্যায়

ধর্মের অবদান রয়েছে ।দেবতাদের

আরধনার সময় নির্ধারন ও ঋতুর

ক্রমবিকাশের সাথে নীলনদের বন্যার

সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য

তারা সর্বপ্রথম সৌরবর্ষের আবিষ্কার

করেন ।

তারা সৌরবর্ষকে ৩৬৫দিনে বা ১২

মাস ৩০ দিনি বিভক্ত করেন ।

[নোট:দন্ত চিকিত্সা ,অস্ত্রোপচার,পা

কস্থলীর পীড়ার চিকিত্সা ও

হৃদযন্ত্র ও নাড়ীর জ্ঞান

মিশরীয়রা রাখত

যা পরবর্তীতে গ্রিকগণ ইউরোপে বহন

করে]



একেশ্বরবাদ



মিশরীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম ১৩৭৫

খ্রিস্টপূর্বাব্ দে একেশ্বরবাদের

ধারনা দেন আমেন হোটেপ।মিশরীয়

সভ্যতার অবসান যুগে কিছু

সুবিধালোভী পুরোহিতরা তাদের

প্রচলিত ধর্মে নানা কুসংস্কারের

জায়গা করে দেয় এবং নিজেদের

স্বার্থ ধর্মে চালিয়ে দেন

[নোট:ইউরোপীয় আর্যরাও এই

পুরোহিতদের বংশধর

যারা কিনা পরবর্তীতে মিশর

থেকে বিতরিত হয়ে ইউরোপে যান

এবং কালের বিবর্তনে ভারত জয়

করে ভারতীয়দের সাথে ধর্মের

নামে প্রতারনা করে বর্তমান পর্যন্ত

নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন

। ]।এসময়

সুবিধালোভী পুরোহিতরা ধর্মভীরুদের

সাথে নানা রকম

প্রতারনা করতে থাকেন।পুরোহিতদে

র হাত থেকে ধর্ম রক্ষার জন্য

এগিয়ে আসেন আমেন হোটেপ ।

এভাবে পুরোহিত চরম স্বৈরতন্ত্রের

রুপ গ্রহণ করলে ১৩৭৫

খ্রীস্টপূর্বাব্ দে তিনি ক্ষমতায়

এসে পুরোহিতদের হাত থেকে ধর্ম

রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন তিনি ।

তিনি ক্ষমতায় এসে পুরোহিতদের

মন্দির থেকে বের করে দেন ।এবং বহু

দেবতার বদলে তিনি একমাত্র

সূর্যদেবতার আরধনার কথা প্রচার

করেন ।সূর্যদেবতার নাম দেয়া হয়

এটন ,সূর্যদেবতার নামের সাথে মিল

রেখে তিনি নিজের নাম রাখেন

ইখটন ।এভাবে ইখটন হিব্রুদের প্রায়

৬০০বছর আগে একেশ্বরবাদের

পূনর্জীবিত করেছিলেন ।

পাঠক আজ

এপর্যন্তই ,পরবর্তীতে অন্যকোন

জাতীর ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে হাজির

হব ।ধন্যবাদ ধৈর্যধারন

করে লেখাটি পড়ার জন্য ।

বিষয়: বিবিধ

২০০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298067
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
নোমান২৯ লিখেছেন : দীজ্ঞ পোস্ট।অর্ধেক পড়লাম।ধন্যবাদ ।বাকি অর্ধেক হয়তবা অন্য কোনদিন।
২১ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
243551
সজল আহমেদ লিখেছেন : আচ্ছা
298127
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের পৃথিবী পরিভ্রমনের জন্য বলেছেন এবং বলেছেন যে দেখতে অবিশ্বাসীদের কি পরিনাম হয়েছিল ।

পিরামিড ফেরাউনদের আমলে তৈরি এবং ফেরাউন আল্লাহর সাথে শিরক কারীদের মধ্যে শীর্ষে । আল্লাহ এটাও বলেছেন যে উনি ফেরাউনের দেহ সংরক্ষন করে রাখবেন নিদর্শন স্বরুপ। দোযখে সে তার অনুসারীদেরকে নিয়ে প্রবেশ করবে ।

আর আমরা মিশর গেলে পিরামিড না দেখে পারি না বা এদের পিরামিড , মমি , স্ফিংস দেখে আমরা এদের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হই । কিন্তু কখনও কি এটা চিন্তা করি যে এরা ছিল আল্লাহ তায়ালার চরম নাফরমান ।
২১ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৫০
243552
সজল আহমেদ লিখেছেন : জ্বী এ বিষয়েও সহমত ,যে এরা ছিল আল্লাহ্ বিদ্বেষী

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File