স্মরনে কবি নজরুল
লিখেছেন লিখেছেন সজল আহমেদ ২৫ মে, ২০১৪, ১০:৪৯:২১ রাত
পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও যিনি আজীবন বাংলা কাব্য ও সাহিত্য চর্চায় কাব্য ও সাহিত্যে চর্চায় ব্রতী ছিলেন,যিনি ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী,যিনি বাংলা কাব্য ও সাহিত্যে প্রচণ্ড বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন,যিনি দেশের স্বাধীনতা মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে জালেম শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন।যার কাব্য ও সাহিত্যে ইসলামী ও ঐতিহ্য বলিষ্ঠ ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে,যার কবিতায় ,হামদ ,নাত,গজল ও ইসলামী গান প্রায় প্রতিটি বাঙ্গালী মুসলিমের হৃদয়কে করেছে জাগরিত,যিনি ছিলেন একধারে শ্রমিক ,সৈনিক,কবি ,সাহিত্যিক,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক তাঁর নাম কাজী নজরুল ইসলাম।
(জন্মঃ-১৩০৬সালের১১ই জৈষ্ঠ মোতাবেক ১৮৯৯সালের ২৫মে বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।কবি নজরুলের জীবনি সম্বন্ধে না জানে এমন কাউকে দেখিনা তাই তার জীবনি সম্বন্ধে লিখা প্রয়োজন মনে করিনা)
বাল্যকাল কাঁটে কবির সীমাহীন দুঃখ কষ্টে!কবি নজরুল পারেননি উচ্চশিক্ষিত
১১১৯সালে কবির একনিষ্ঠ সাহিত্য রচনা শুরু হয়।
১৯২১সালে মাত্র ২২বছর বয়সে তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত অমর কবিতা 'বিদ্রোহী'যা বাংলা সাহিত্যে তাঁকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে অমর করে রেখেছে।
বল চির উন্নত মম শির
শির নেহারি নত শির ওই
শিখর হিমাদ্রির।
১৭৯৭সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী এ দেশের বিশেষ করে মুসলমান কৃষকদের ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব করে ফেলেছিল।মুসলমান কৃষকরা তাঁদের জায়গা জমি ও বাড়ি ঘর সব হারিয়ে প্রায় পথে বসেছিল।কবি নজরুল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকচক্রের বিরুদ্ধে এদেশের কৃষক সমাজকে বিদ্রোহ করার আহবান জানান।তিনি সর্বহারা কাব্যগন্থে 'কৃষকের গান'নামক কবিতায় লিখেছেন।বর্তমানে সেটা বাংলার রণসঙ্গীতঃ
উর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল,
নিম্নে উতলা ধরণী-তল,
অরুণ পাতে তরুণ দল
চল্-রে চল্-রে চল।
চল্ চল্ চল্।।
ইসলামি আদর্শ এবং মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়নে নজরুলের অবদান অবিস্মরণী তিনি খেয়াপারাপারের তরণী কবিতায় লিখেছেন:-
দাড়ী যে এ তরণীর,নাই ওরে নাই ডর।
কান্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
দাড়ী মুখে সারী গান-লা শরীক আল্লাহ।
কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ঘটনা কবি নজরুল কি সুন্দর ভাবে তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন-
আম্মা!লাল তেরি খুনকিয়া খনিয়া
কাঁদোকোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে
সে কাঁদনে আসু আনে সীমারের ছোড়াতে।
ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম জাতির স্বরুপ ব্যাখা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন-
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি
আমরা সেই সে জাতী।
কবির আল্লাহর প্রতি ছিল অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস তাইতো তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি লিখেছেন-
খোদা তোমার মেহের বাণী।।
এই শস্য শ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালি খানি খোদা তোমার মেহের বাণী।।
তুমি কতই দিলে মানিক রতন ভাই বেরাদার পুত্র স্বজন
ক্ষুধা পেলে অন্ন জোগাও মানি না মানি
খোদা তোমার মেহের বাণী।
তিনি ইসলামের মৌলিক ইবাদত ও বিধানকেও বাংলা কাব্যে যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছেন।তিনি লিখেছেন-
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই বক্ষে পাবি বল।
ওরে চল নামাযে চল্।
...........................
...........................
তুই হাজার কাজের অছিলাতে নামায করিস কাজা,
খাজনা তারে দিলি না,যে দিন দুনিয়ার রাজা।
তারে পাঁচ বার তুই করবি মনে তাতেও এত ছল
ওরে চল্ নামাযে চল্।
১৯৪২সালে কবি এক দূরহ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান।১৯৫৩সালে চিকিত্সার জন্যে কবিকে লন্ডন পাঠানো হয় কিন্তু সেখানেও কবির রোগমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।তারপর ১৯৭২সালে তাঁকে বিদেশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে আনা হয় এবং ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করাহয়।দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৩৩৮বাংলা সালের১৩ই ভাদ্র ১৯৭৬ইং সালের ২৯শে আগষ্ট এ বিখ্যাত মনীষী পিজি হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন।মৃত্যুর আগে তিনি অছিয়ত করে গিয়েছিলেন,
যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।
..................
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাযীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এবান্দা শুনতে পাবে।
গোর আযাব থেকে এ গুণাহ্গার পাইবে রেহাই।।
তার এই অছিয়ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয়।
আজ কবি পৃথিবীতে নেই;কিন্তু কাব্যে কবি অমর হয়ে থাকবেন প্রতিটি শিক্ষিত বাঙ্গালী হৃদয়ে।
বিষয়: সাহিত্য
১১৮৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যাবদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন