অবাক সম্মান!!
লিখেছেন লিখেছেন সজল আহমেদ ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৫৯:৫৪ সকাল
কামিলদার সাহেব ব্যাস্ত লোক।সর্বদা কাজের চাপ পোহাইতে হয় তাহাকে,একদন্ড বিশ্রাম করিবার সময় নাই তাহার হাতে।স্বীয় প্রতিষ্ঠান খানা টিকাইয়া রাখিতে কামিলদার প্রত্যহ প্রায় ১৪ ঘন্টা পরিশ্রম করিয়া থাকে।
তাহার এইটা লইয়া প্রায় ০৬খানা গার্মেন্টস আছে!বিশাল ধনদৌলত তাহার কিন্তু তাই বলিয়া তিনি কিন্তু থামিয়া নাই বরংচ দিন দিন দৌলত আরো বাড়িয়া চলিতেছে।ঢাকা শহরে প্রায় ১১খানা বাড়ি ২টা মার্কেট ও ৩টি দামী নিশান পেট্রোল গাড়ি রহিয়াছে তাহার।শোনা যাইতেছে তিনি আরো ২খানা বাড়ি কিনিতে চান।ছেলে মেয়ে বলতে কিছুই নাই।তবুও যে এত ধন দিয়া তিনি কি করিবেন তাহা ভাবিয়া পাইনে।
স্বভাবে তিনি প্রচন্ড রগচটা লোক,যাহা বলে সবার সামনে বসিয়াই বলিয়া ফেলেন,আর গালির মধ্যে দুটাই তিনি দিয়া থাকেন"গরু চোর" "থাপ্রামু"।
একদিন নির্বাচনী মিটিংয়ে মেয়র সাহেব যেন কি একখানা অপরাধ মূলক বক্তব্য দিতেছিলেন,কামিলদার সাহেব মান্যগন্য লোক বলিয়া ঐ অনুষ্ঠানে তাহাকে দাওয়াত দেওয়া হইয়াছিল ।মেয়র সাহেবের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর কামিলদার সাহেবকে স্টেজে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রন জানানো হইল ।কামিলদার সাহেব বক্তৃতা শুরু করিলেন এই বলিয়া,"আসলে মেয়র সাহেব গরু চোরের মত কথাটি বল্লেন আমি তার সাথে একমত নও।কথাটি অন্য কেহ বল্লে আমি তাকে থাপ্রাতাম!"সেইদিন মেয়র সাহেব যে কি লজ্জাটা পাইলেন তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখেনা।
আরেকদিন তাহার স্ত্রী কি যেন একটা অপরাধ করিলেন তিনি রাগে কাপিতে,কাপিতে,ফুপাইতে,ফুপাইতে কহিলেন,"তোমার কাজকর্ম গরু চোরের মত!থাপ্রানো উচিত্"।কামেলদার সাহেবের স্ত্রী যে সেইদিন কি ভয়টা পাইয়াছিলেন তাহার স্বামীর তর্জন গর্জন শুনিয়া কি ভয়টা পাইয়াছিলেন তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখেনা।
গার্মেন্টস কর্মীরা কোন অপরাধ করিলেও কামিলদার সাহেবের ঐ একই গালি"গরুচোর,তোমাকে থাপ্রাব"।
অবশ্যই সকলে বুঝিতে পারিয়াছেন যে কামিলদার সাহেব কেমন প্রকৃতির মনুষ্য!
প্রতি বৃহস্পতিবার তাহার কাজের চাপ বেশি ,ঐ দিন কেহ তাহাকে ডিষ্টার্ব করিলে তাহার মাথা ১০০%গরম হইয়া যায়।
আজ বৃহস্পতিবার,কামিলদার সাহেব নিজ মনে কাজ করিতেছিলেন এমন সময় গার্মেন্টস দারোয়ান সাহেব তাহার নিকট আসিয়া কহিলেন,স্যার এক বুড়া আপনের লগে দ্যাখা করবাম চায়।
কেন?
কইতাম পারিনো স্যার।
১ঘন্টা পর দেখা করতে বল।
আইচ্ছা স্যার।
দারোয়ান চলিয়া গেল কামিলদার সাহেব আপন মনে কাজ করিতেছে।১০মিনিট পর দারোয়ান আবার আসিল।কামিলদার সাহেব রাগিয়া কহিলেন,
আবার কি চাই?
স্যার বুড়া আপনের লগে বোলে অনেক জরুরী কতা কইব।
তুমি বলনাই যে তিনি ব্যাস্ত?
কইছি স্যার কিন্তু উনি উনার জরুরী কতা কইবে।
কামিলদার সাহেব এবার বুড়োকে পাঠাইতে বলিলেন।
কামিলদার সাহেব ফাইলের দিক তাকাইয়া কাজ করিতেছিলেন ,বুড়ো লোকটা কামিলদার সাহেবের রুমে প্রবেশ করিয়াই একখানা লম্বা সালাম দিলেন(বুড়ো আসিয়াছিল তাহার নাত্নির চাকুরী বিষয়ক আলাপ করিতে)।কামিলদার সাহেব সালামের জবাব দিতে যাইয়া মাথাটা উঁচু করিয়াই বিস্মিত হইয়া গেলেন!আহা এ যে, আঃ মান্নান স্যার,তাহার স্কুল শিক্ষক!ক্লাশ এইটে পড়াকালীন উনি ছিলেন ক্লাশ টিচার।চেয়ার হইতে দাঁড়াইয়া গেল কামিলদার সাহেব।এক দৌড়ে গিয়ে বুড়োর পা ছুঁইয়া সালাম করিল।
বুড়ো ও বিস্মিত হইয়া কহিলেন,স্যার আপনি আমাকে ছালাম করিলেন!কে আপনি?
কামিলদার সাহেব অতি আবেগ তড়িত্ হইয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কহিলেন,স্যার আমি কামিল আপনার মাথামোটা ছাত্র ।
বুড়ো নাম বলা মাত্র কহিলেন, কোন কামিল?
কামিল:-স্যার আপনি যাকে গাধা বলে ডাকতেন।প্রতিদিন দুষ্টুমির জন্য কানে ধরে দশবার উঠা বসা করাতেন।বীজগনিতে অপরিপক্ক হওয়ায় যাকে আপনি এক্সটা ২ঘন্টা অঙ্ক শিখাতেন।আমি সেই কামিল।স্যার আপনার কি মনে আছে যে,ক্লাশ সেভেনে পড়াকালীন আমার পিতা আমার সব বইখাতা পুড়ে ফেলেছিল আমায় লেখাপড়া শিখাবেনা বলে।তখন আপনিই প্রায় ৩বছর আমার পড়ার খরচ চালিয়েছিলেন।
এইবার বুড়ো লোকটা চিনিতে পারিল তাহার মাথামোটা ছাত্র কামিলদার কে।
বুড়ো হতবাক হইয়া কহিলেন,তুমি মানে আপনি সেই কামিল?এতবড় হয়েছেন আপনি?
কামিলদার অতিমাত্রায় শরম পাইয়া কহিলেন,স্যার আমি আপনার ছেলের মতো আর আপনি আমাকে আপনি আপনি করলে মনে হয়,পিতা তার সন্তান কে আপনি আপনি করে কথা বলছে।আপনি আমাকে গাধা কামিল ডাকেন।আপনার গাধা বলাও আমার কাছে আশির্বাদের মত।
কামিলদার আবিষ্কার করিল যে তাহার শ্রদ্ধেও স্যার কে তিনি দাঁড়া করাইয়া রাখিয়াছেন।কামিলদার সসম্মানে তাহার স্যারকে কামিলদারের নিজের আসনে বসাইয়া তিনি বসিলেন স্যারের পায়ের নিকট।
স্যার বলিল,কামিল তুমি ঐখানে বসলা কেন চেয়ারে বস।
কামিলদার কহিল,স্যার গুরুজির সামনে আমি চেয়ারে বসতে পারবনা।
বেলা ১১টায় কামিলদার গার্মেন্টসের সবাইকে ছুটি দিয়া দিলো (সাধারনত তাহার গার্মেন্টস ছুটি হইত রাত্র ১০টায়,আজিকা সে স্যারের সেবা করিবে বলিয়াই এইটা করিল।) স্যারকে লইয়া কামিল তাহার বাসায় গেল।স্যারে আদর যে কি পরিমান তাহারা ২ স্বামী স্ত্রী করিতে লাগিল তাহা ভাষায় প্রকাশ করিবার মত না!এরুপ আদর যত্ন তাহার ইহ জীবনে স্যার পান নাই।
দুপুরে খানাপিনা শেষ করিয়া আঃ মান্নান স্যার তন্দ্রায় পড়িয়া গেল।ঘন্টা দুয়েক পর তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেলে তিনি অনুভব করিলেন কেহ একজন তাহার হাত পা টিপিতেছেছে।চক্ষু মেলিয়া দেখিল তাহার ছাত্র কামিলদার তাহার হাত পা টিপিতেছে।স্যারের ঘুম ভাঙ্গিয়াছে দেখিয়া কামিলদার এক দৌড়ে এক কাপ চা স্যারকে আনিয়া দিয়া আবার তাহার হাত পা টিপিবার কার্জে লাগিয়া গেল।
স্যার পরম আবেগে একবার চক্ষু মুদিয়া উপরের দিক তাকাইয়া চক্ষু হইতে একফোঁটা জল ফেলিয়া দিলো এবং চরম তৃপ্তির সহিত কহিলেন,"আমি এতটা তো সৃষ্টিকর্তার কাছে আশা করিনাই,তবুও তিনি আমাকে দিলেন।এর চেয়ে আর পরম তৃপ্তির কি হতে পারে?"মান্নান স্যার উঠিয়া কামিলদারকে বুকে জড়াইয়া কহিলেন,"গাধারে আজ আমার শিক্ষক জীবন সার্থক হলো!"
বিশ্বাস করিবেন কিনা জানিনা তখন সমস্ত বাড়ি আবেগে কাঁপিতেছিল আর কামেলদার সাহেবের স্যার শিশুদের মত ফোপাইয়া কাঁদিতেছিল।
(সমাপ্ত)
বিষয়: বিবিধ
১১৭২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর পোস্ট
অসাধারণ সুন্দর লেখা ও বিষয়বস্তু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন