মৃত্যুঃ "রেজা এবার তোমার পালা"
লিখেছেন লিখেছেন রেজু ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:২৮:৪৩ সকাল
আজ সোমবার ধরুন আপনাকে জানিয়ে দেয়া হলো সামনে শুক্রবার আপনি মারা যাবেন, তাহলে এই কয়দিন আপনি আপনার চেকলিস্ট ও অ্যাকশন লিস্ট কিভাবে সাজাবেন? আর কি রকমই বা ফিল করবেন এই কয়দিন? এই বিষয়েই মূলত আমার কিছু ফিলিংস শেয়ার করছি আজ।
সুপার একটা দিন কাটল আজ। জীবনের প্রথম এতো বড় দীর্ঘ (প্রায়৩ঘণ্টা) এক দারসুল কুরআনের সেশন উপভোগ করেছিলাম। সুরা তাওবা নিয়ে ডিটেইলস এক ব্যাপক তথ্যভিত্তিক আলোচনা। মডারেটর ছিলেন মাহমুদ আলী ভাই। উনি প্রথমেই সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, এই সূরাটি স্টাডি করতে গিয়ে কার কার, কি কি বিষয়ে, কেমন ফিলিং হয়েছে? সবাই সেটা সবার সাথে শেয়ার করলেন। মাশাআল্লাহ ইট ওয়াজ সিম্পলি গ্রেট!
প্রোগ্রাম শেষে আনিস ভাইয়ের বাসায় সবাই মিলে আড্ডা দিতে যাওয়ার হঠাৎ প্ল্যান করলাম এবং যথারীতি বান্দাগন হাজির। বাসায় গিয়ে হৈ হুল্লোড় আর আড্ডা। ওদিকে একই সাথে সারাদিন প্রোগ্রাম থেকে ফিরে গিয়ে ভাবি ও আনিস ভাই মাস্তি করে রান্না করতেছেন এই ভাদাইম্মা সব পোলাপানদের খাওয়ানোর জন্যে। এরই মাঝে আমি আস্তে করে গিয়ে ফাহিমের রুমে ঘুমিয়ে পড়েছি। পরে আনিফা-ফাহিমের ডাকাডাকি ও সীমাহীন অত্যাচারে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। মজাই আলাদা এক সাথে সবাই খাওয়া আর মজার মজার বিষয় নিয়ে হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়া। খাওয়া এবং আড্ডাবাজি শেষে মধ্যরাত্রে বাসায় ফেরা। সব মিলিয়ে জম্পেশ একটা দিন।
এতো কিছুর পর এই রাত্রি দ্বিপ্রহরে এক অজানা এবং চরম এক মৃত্যু অনুভূতিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। পিসি তে একটা আজব ভিডিও ক্লিপ দেখে মূলত এই ফিলিংস। ক্লিপটিতে দেখলাম একজনকে তার মৃত্যু তারিখ কয়েকদিন আগে জেনে ফেলে তার ভিতরের অস্থিরতা ও পাগলামির বহিঃপ্রকাশ করতে। এই ফিলিংস গুলো মারাত্মক রকমের ছোঁয়াচে ধরনের। সাথে সাথে আমিও কিছুটা মৃত্যু ভয় আর কিছু স্মৃতি এবং নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে ব্যাপক অস্থিরতায় ভেসে যাচ্ছি।
বিশেষ করে ২০১১ সালের অগাস্ট মাসের দিনগুলো খুব অস্থির করে দিচ্ছে আমায়। আমার বড় ভাই হার্ট অ্যাটাক করে ঢাকাতে হসপিটালের আই.সি.ইউ-তে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন আছেন। খুবই খারাপ অবস্থা তখন। ২৩ তারিখ লিটু মামা (কার্ডিওলজিষ্ট,ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু) বললেন- রেজা, আমরা এখন জাস্ট কয়েকদিনের জন্যে অপেক্ষা করছি। বিদেশ থেকে ছোট ভাই হিসেবে নিজের বড় ভাইয়ের এই অবস্থা কোনমতেই সহ্যের সাধ্যে কুলাচ্ছিলনা। দিন দিন ভাই খুব খারাপের দিকে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে ২৬ তারিখ ভাই একদম সুস্থ হয়ে গেলেন এবং আমার সাথে টেলিফোনে ১৪ মিনিট সাবলীল ভাষায় কথা বললেন। উনি বললেন, তুই চিন্তা করিসনা আমি বেঁচে যাব ইনশাআল্লাহ্। আমি ভাইকে অনেক মজার মজার কথা ও স্বপ্নের কথা বলে হাঁসালাম এবং উনি সুস্থ মানুষের মত হাসলেন আর বললেন “তুই দেশে আসলে আমরা তিন ভাই মিলে এগুলো সব বাস্তবায়ন করব”।
আসলে আমি তাকে হাঁসাচ্ছিলাম আর গোপনে গোপনে কাঁদছিলাম, যেহেতু আমি জানি আমার ভাইটি তার স্বল্পতম জীবনের একদম শেষ মুহূর্তে দাড়িয়ে আমাকে জাস্ট একটু সময় দিচ্ছেন। কাউকে চিরতরে বিদায় দেয়ার বা কারো কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নেয়ার কি যে কলিজাছ্যাচা যন্ত্রণা সেটা বলে বুঝানোর চেয়ে বেশি কষ্টের কিছু নেই। অবশেষে পরের দিন ২৭ অগাস্ট মিয়া ভাই (বড় ভাইকে মিয়া ভাই বলতাম,এখন এই শব্দটা আর ব্যবহার করতে পারিনা) আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন।
মিয়া ভাই মৃত্যুযানে উঠার প্রস্তুতি নিয়ে সাদা-সফেদ কাপড় পরে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করছেন যখন আমি বিদেশ থেকে শুধু ছটফট করি বাড়িতে আম্মাকে ম্যানেজ করা নিয়ে অথবা ভাবিকে আর কখনোবা ভাইকে। নিজের চোখের পানি আর পাশে না থাকার যন্ত্রণায় বুক ভেঙ্গে চৌচির হয়ে বের হয়ে আসা লহুতে আমি “মৃত্যু” বা “চিরতরে বিদায়” নামক এই টপিকের সাথে সেসময় এক দুর্ধর্ষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ আজ আবার সেই ফিলিং অক্টোপাসের মতো আমাকে গিলে খাচ্ছে।
দুনিয়ার সব কথা, স্মৃতি ও ঘটনা মনে পড়ছে আর ভয়ে কুঁকড়ে কুঁকড়ে উঠছি। মনে হচ্ছে কেউ জানালার ওপাশে সাদা স্নোর উপর বসে বলছে “রেজা এবার তোমার পালা” যার প্রতিধ্বনিতে হৃৎপিণ্ড থর থর করে কেপে উঠছে আর মনে মনে বলে উঠছি, ইয়া আল্লাহ কোন প্রিপারেশন যে এখনো নিতে পারিনি তোমার কাছে যাওয়ার
সবশেষে উপরের প্রশ্নে আসতে চাই। আসলে প্রশ্নটা পেয়েছিলাম স্টকহোল্মে অনুষ্ঠিত এক টাইম ম্যানেজমেন্ট কোর্সের ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে। উনি আমাদের বলেছিলেন-“ আজ সোমবার ধরুন আপনাকে জানিয়ে দেয়া হলো সামনে শুক্রবার আপনি মারা যাবেন, তাহলে এই কয় দিন আপনি আপনার চেকলিস্ট ও অ্যাকশন লিস্ট কিভাবে সাজাবেন?” খুব বেশি ভাল উত্তর আজো খুজে পাইনি।
উত্তর কি হতে পারে?
¤ যথাসাধ্য নিজের ঋণের বোঝার কথা স্মরণ ও মুক্ত হওয়ার চেষ্টা?
¤ গণহারে সবার কাছে মাফ চাওয়া?
¤ মা-বাবার পায়ের কাছে আশ্রয় নেয়া?
¤ সব সময় মসজিদে ইবাদাতে মশগুল থাকা?
অথবা ????
বিষয়: বিবিধ
১১৩৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
they allways feel, how i to face our god,allah.
may allah give us the realization.
আলোকিত ভোর ও
প্রিন্সিপাল সাহেব,
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ আমার মতো নতুন হাতের লেখা পড়ে কমেন্ট করার জন্যে।
ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক সহযোগিতার জন্যে।
এনিওয়ে, হালিম ভাই ও আফরা আপু সব্বাইকে ধন্যবাদ!!
আপনার লেখায় আবার তাড়িত হলাম।জাজাকাল্লহু খইরান।
ওয়া ইয়াকুম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন