মুস্তাইনের মাস্তানী -পুলিশ যখন হিংস্র
লিখেছেন লিখেছেন তানজিমুল হাসান মায়াজ ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ০১:৪০:২০ রাত
পুলিশ যখন জনগণের রক্ষক হয়ে বক্ষকের ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠে তখন সাধারণ মানুষের জীবন যায়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় সাংবাদিক তথা সংবাদ মাধ্যমকে। রাষ্ট্রের আইন,বিচার ও নির্বাহী বিভাগের পরই সংবাদ মাধ্যম কিংবা সাংবাদিকতাকেই রাষ্ট্রের চতুর্থ চালিকা শক্তি বলা হয়। আর যখন সেই চতুর্থ শক্তির উপরই তৃতীয় শক্তি ঝাপিয়ে পড়ে তখন রাষ্ট্রিয় শক্তি কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে তা বোধগম্য সকলের। সাংবাদিকদের উপর পুলিশের এমন ন্যক্কারজনক হিংস্র আচরণ শুধুমাত্র মানবজমিন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক নাসির এর উপর পৈশাচিক আক্রমণ এর দৃশ্যই নয়।এর আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা ।তবে এসব ঘটনা অদৃশ্য কোন ছায়ার স্পর্শে সময়ের শ্রোতে মিলিয়ে যায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা আবারো পাঠকদের মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।
ঘটনা ১:
“২০১৬ সালের ০৯ জানুয়ারী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা (এর আগে সময় টেলিভিশনে কর্মরত ছিলেন) গোলাম রাব্বিকে মোহাম্মদপুর থানার এস আই মাসুদ অভিনব কায়দায় অত্যাচার করেন সে কথা কারো অজনা নায়। সেসময় গোলাম রাব্বি সাংবাদিকদের জানান , ০৯জানুয়ারী ২০১৬ রাত ১১ টায় মোহাম্মদপুরে তার খালার বাসা থেকে কল্যাণপুরে নিজ বাসায় ফেরার পথে পেছন থেকে মোহাম্মদপুর থানার এস আই মাসুদ এর নেতৃত্বাধীন এক পুলিশ সদস্য তাকে পেছন থেকে শার্টের কলার ধরে গতিরোধ করেন এবং বলেন ,ভূক্তভোগীর কাছে ইয়াবা আছে এসময় তিনি অস্বীকার করলে এস আই মাসুদ তাকে মারধর করে। রাব্বি এসময় নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেয়ার পর এস আই মাসুদ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আঘাত করেন এবং মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।”
এ ঘটনা নিয়ে জল ঘোলা হয়েছে অনেক ,তবুও শোধরায়নি পুলিশ।এসব ঘটনায় পুলিশ বরাবর বলে আসছে “অভিযোগ পেয়েছি,তদন্তে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ঘটনা ২ :
“গত আগষ্ট মাসের শুরুর দিকে ফার্মগেট এলাকায় এক মোটরবাইক আরোহীকে বেধরক লাঠি পেটা করে এক ট্রাফিক কনস্টেবল।এসময় পাশে থাকা এ ব্যাক্তি ঘটনা ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে এটি ভাইরাল হয়ে যায়।সেসময় একটি ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সকল বাইক চালকরা একত্রিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ,ফার্মগেট এবং প্রেসক্লাব এলাকায় দোষী কনস্টেবল এর শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করে। সেসময় ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের (পশ্চিম) উপ-কমিশনার লিটন কুমার রায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই মোটরসাইকেল চালককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ঘটনা ৩:
আলোচিত ঘটনার শীর্ষে এ মূহুর্তে অবস্থান করছে গত ১১ অক্টোবর (বৃহষ্পতিবার) এর ঘটনাটি।
“পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মানবজমিন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক নাসির এর মোটরবাইক দাড় করানোর সিগ্নাল দেয় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মুস্তাইন।এসময়,সাংবাদিক নাসির এর হেলম্যাট না থাকায় তাকে মামলাও দেয়া হয়। পরবর্তীতে সাংবাদিক নাসির এর ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তার কলার চেপে ধরে তাকে মারধর করে সার্জেন্ট মুস্তাইন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সিনিয়র সাংবাদিকরা গিয়ে নাসিরকে ছাড়িয়ে আনে।এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার নির্দেশনায় ট্রাফিক-দক্ষিণের সহকারী কমিশনার (এসি) ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য যান। প্রাথমিক তদন্তে সার্জেন্ট মুস্তাইনের ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে ক্লোজ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এতো গেলো আলোচিত ৩টি ঘটনার চিত্র।প্রতিটি ঘটনার শেষ বলে কিছু ই দেখা হয়নি এখনো।পুলিশের তদন্তের ফল আজও জানতে পারেনি জাতী। এছাড়াও রয়েছে সড়কে- মহাসড়কে পুলিশের বিরুদ্ধে লাগামহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ। এ যেন অনিয়ন্ত্রিত একটি ভয়ানক রাষ্টযন্ত্র।ফটো সাংবাদিক নাসির কে নির্যাতনের পর বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নিজ ফেইসবুক প্রোফাইলে সাংবাদিক নির্যাতনকে উস্কে দিয়েছেন। সাংবাদিককে মেরে ফেলা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেছেন পুলিশে কর্মরত জনগণের এসব রক্ষক।
নিচে তাদের ফেইসবুক থেকে নেয়া কিছু ছবি তুলে ধরা হলো।
ছবি ১-
ছবি ২-
ছবি ৩ -
ছবি ৪-
ছবি ৫-
এটাই কি পুলিশের ধর্ম? নাকি তারা রাষ্ট্রিয় পোশাকে মোড়া জনগণের আতঙ্ক !!
বিষয়: বিবিধ
৮৯৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন