যৌবনকাল খারাপ হলে বৃদ্ধকালে যা হয়

লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ০৪ জুলাই, ২০১৬, ১০:২৯:১৭ রাত

মানুষের আয়ূ কাল পাঁচ প্রকার :-

শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকাল, প্রৌঢ়কাল ও বৃদ্ধকাল.

শিশুকাল: আমাদের জন্মের পর আপনজনদের কোলে-কাঁধে চড়ে বেড়ে উঠে, মায়ের কোলে বুলি শেখে যার ইতি হয়. এইকালে মায়ের ভুমিকা খুব বেশি. মা যদি হয় নর্তকি তাহলে শিশুর উপর তার প্রভাব পড়ে, মা যদি হয় শিক্ষক, ডাক্তার, সত্পুলিশ বা অসত্পুলিশ তাহলে শিশুর উপর তার প্রভাবও পড়ে. আর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান শিশু সে, যে একজন ধার্মিক আদর্শ মা পেল.

কিশোরকাল: যা (হয়তো) তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু হয়, এইকালটি চরিত্র শেখার কাল, এই বয়সে মা-বাবা পাড়া-প্রতিবেশী সহপাঠী খেলার সাথীদের থেকে চরিত্র শিখে থাকে. তবে এই বয়সে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশী. কারন সে কাঁধা মাটির মতো শিক্ষালয়ে প্রবেশ করে, শিক্ষক ইচ্ছে করলে এই মাটি দিয়ে মসজিদ বানাতে পারেন আবার ইচ্ছে করলে মন্দির কিংবা গীর্জাও বানাতে পারেন. অর্থাত এই বয়সে কিশোরেরা শিক্ষদের সবকিছু বিশ্বাস করে এবং মেনে চলে. তাই ঐ কিশোরই সৌভাগ্যবান যে এমন একজন আদর্শ শিক্ষক পেল যিনি দুনিয়া-আখিরাতের জীবনকে আলোকিত করার পথ দেখান. এই বয়সে মা-বাবার কর্তব্য সন্তানকে ছেড়ে দিয়ে নজর বন্দি রাখা অর্থাত সন্তান কার কাছে শিখছে? কি শিখছে? তার খেলার সাথীরা কেমন? তা দেখা এবং ভাল শিক্ষক, ভাল শিক্ষা আর ভাল খেলার সাথী নির্বাচন করে দেওয়া, রুটিন মাফিক কিশোরকে নিয়ে আলোচনা করা. আলোচনায় থাকতে হবে কোন পথে চললে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠা যাবে.

যৌবনকাল: এটি খুব বিপদ জনক, লোভনীয়কাল এই কালটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারন যুবকরা হচ্ছে দেশ কিংবা বিশ্বের শক্তি, এইকাল যার ভাল যাবে বৃদ্ধকালে সে সুখি হবে সম্মানী হবে. এইকালে চোখে রঙ্গিন চশমা থাকে তাই পৃথিবীকে রঙিন মনে হয়. পৃথিবীতে যত খুন-খারাবী রাহাজানী হয় তার সাথে জড়িত থাকে যৌবন কালের যুবকেরা. খারাপ মানুষেরা উঁতপেতে থাকে এসব যুবকদের খারাপ কাজে ব্যবহার করার জন্য. যেসব যুবক মিথ্যে প্রলোভনে বিপথগামী হয় সেসব যুবক বৃদ্ধকালে খুব আফসোস করে এবং সবকিছু থাকার পরও অসহায় বোধ করে. এই বয়সে নিজেকে কোন পথে পরিচালিত করবে তার সিদ্ধান্ত বেশির ভাগ নিজেকে নিতে হয়. তবে বেশিরভাগ যুবক ভাল সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন. তারা কেউ রঙ-তামাশায়, কেউ অসত লোকদের খপ্পরে পড়ে মিছিলে সম্মুখ ভাগে অস্ত্রের ঝনঝনানি দিয়ে, কেউ বা নারী-মদ নিয়ে, কেউবা খুন-খারাবী করে নিজেদের যৌবন শেষ করে দেয়. এসব যুবকদের দেখে সাধারন লোকজন আতঙ্কে থাকে ভয়ে সালাম দেয়, বাবার বয়সী অসহায় বৃদ্ধরাও এসব খারাপ যুবকদের ভিআইপির মর্যাদা দেয়, তারাও তা বেশ উপভোগ করে. কিন্তু এসব যুবকের যৌবন যখন শেষ হয়ে যায় কিংবা কোন খারাপ কাজে মৃত্যু বরণ করে তখন পৃথিবীর সব প্রাণি স্বস্তি বোধ করে. এসব যুবক যখন বৃদ্ধ বয়সে পতিত হয় তখন তাদের স্ত্রী-সন্তান প্রতিবেশীরা তাদের কোন কাজে আসে না, খুব অসহায় অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে.তবে যারা বুদ্ধিমান যুবক তারা তাদের ক্রোধ, লোভ আর শক্তিকে নিয়ন্ত্রন করে, খারাপকাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখে পুরুষেরা মেয়েদের দেখলে আর মেয়েরা পুরুষদের দেখলে দৃষ্টি অবনতে করে এসব যুবকেরা বৃদ্ধকালে সুখ লাভ করে স্ত্রী-সন্তানেরা তাদের বাধ্য থাকে, পুরো সমাজ তাদের সম্মান করে আল্লাহও তাদের সহায় হন. এমনকি যেসব যুবক আ্ল্লাহ'র দেখানো পথে লালিত-পালিত হবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ রাব্বুল আ-লামীন তাদেরকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন.

প্রৌঢ়কাল: যৌবন এবং বৃদ্ধকালের মাঝামাঝি সময়টি হচ্ছে প্রোঢ়কাল এটি খুব স্বল্প সময়ের এই বয়সে সংসারের ঘানি টেনে ক্লান্ত থাকে, কেউ এসব ঘানি সত্পথে আর কেউ অসত্পথে টানে, যাদের সন্তান আছে তারা তাদের নিয়ে সুখ-স্বপ্ন দেখতে দেখতে এই কাল শেষ হয়ে যায়. আর কারো জীবন শেষ হয় যৌবনকালের কুকর্মের মাশুল দিয়ে.

বৃদ্ধকাল: এটি হচ্ছে একটি ভিড়িও রেকর্ডারের মতো, শিশু-কিশোর-যৌবন-প্রৌঢ়কালে যা করেছে তা ভেবে-ভেবে এই কাল কাটে. স্বপ্ন দেখে আর বছর খানেক বাঁচার, এইকালে মানুষ মৃত্যু দূত আযারাঈল আ. কে খুব কাছে থেকে দেখে. তাই কিছু দোয়া দরূদ পড়তে চাইলেও মুখ দিয়ে বের হয় না, মুখ দিযে বের হয় কেবল অতীতের কর্মকান্ড়গুলো কারন এইকালটি একটি ভিড়িও রেকর্ডার, যাকে দেখেলে মানুষ ভয়ে ঘরের কোনে লুকিয়ে থাকত আজ তাকে দেখলে মানুষ ঘৃণা করে, স্ত্রী-সন্তানও সম্মান করে না, কারন তাদের চোখে এই বৃদ্ধ একজন অসত মানুষ. চোর সব সময় চোর এমনকি যার জন্য চুরি করবে তার কাছেও চোর.

আর যেসব যুবক নবী সাহাবাদের পথে লালিত পালিত হয়েছে তাদের মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে আল্লাহ'র জিকির বের হতে থাকবে অজ্ঞান অবস্থাতেও তারা অজুর পানির জন্য হাত নাড়াবে, কারন যে যেকাজে অভ্যস্ত সে নিজের অজান্তেও সেকাজ করে ফেলে. এবং স্ত্রী-সন্তানেরা এসব বৃদ্ধদের সেবা করে নিজের জিবনকে বরকতময় করে তোলে, এসব আল্লাহওয়ালা বৃদ্ধদের দেখভাল করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে. এসব বৃদ্ধরা আল্লাহ'র সান্নিধ্যের অপেক্ষায় থাকে আখিরাতের সুখ-শান্তির আশায় তাদের ঈমান আরো বেশী তেজদ্বীপ্ত হয়.

মহান রব আমাদের যৌবনকালকে কবুল করুন. আমরা যেন বৃদ্ধ বয়সে অসহায় না হই, আমাদের মৃত্যু যেন কোন প্রাণীর খুশির কারন না হয়.

বিষয়: বিবিধ

২৬৯৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373956
০৪ জুলাই ২০১৬ রাত ১০:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : সহমত রইল।
০৫ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:৪৪
310331
বিন হারুন লিখেছেন : মূল্যবান সময় দিয়ে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ. সহমত পোষন করার জন্য Rose
373965
০৫ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৫ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:৪৪
310332
বিন হারুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য Happy
373974
০৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:৫৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : শিশু-কিশোর-যৌবন-প্রৌঢ়কালে যা করেছে তা ভেবে-ভেবে এই কাল কাটে. স্বপ্ন দেখে আর বছর খানেক বাঁচার ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৫ জুলাই ২০১৬ সকাল ১১:৪৬
310333
বিন হারুন লিখেছেন : আপনার ভাল লাগায় আমিও আনন্দিত, আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ Love Struck
374005
০৫ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:৩২
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। লাইক Good Luck
০৫ জুলাই ২০১৬ রাত ১০:৫৩
310358
বিন হারুন লিখেছেন : আপনার মন্তব্য পড়ে আমারও ভাল লাগল. আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File