সম্ভ্রম নারীর মূল্যবান সম্পদ

লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:৫২:০৫ রাত

http://www.monthlymueenulislam.com/sp_details.php?id=105

// - রাবেয়া সুলতানা

এ পৃথিবীতে সম্ভ্রমই নারী জাতির অপর্ব ও অমল্য সম্পদ। যে নারী তার সম্ভ্রম হারিয়েছে সে সব কিছুই হারিয়েছে, আর যে নারীর চরিত্র নিষ্কলুষ নিষ্কলঙ্ক তার যেন সব কিছু রয়েছে। সম্ভ্রম নারী জাতির এমন এক সম্পদ যার মল্যায়ন করার মত দুনিয়াতে অপর কোন বস্তু নেই। যে সব মুসলিম নারী নিজ সম্ভ্রম রার জন্য অবলিলায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তারা মহিয়সী, মরেও যেন তারা আজ অমর।

নারী তো নারীই, কিন্তু পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক হয়ত মাতার অথবা কন্যার, বোনের কিংবা স্ত্রীর। একজন নারী সে যদি কারো মা হয় তবে অন্যের বোন। অনুরূপভাবে সে নারী আবার কারো কন্যা অথবা কারো স্ত্রী। অর্থাৎ নারীর সম্পর্ক পুরুষের সাথে এতই নিবীড় যে, মানবিক দিক থেকে কুদৃষ্টিতে দেখার কোন অবকাশ নেই। আর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারী অধিকার সংরণের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসে যে সতর্কবাণী এসেছে পুরুষের প্রতি, তদ্রুপ নারীর প্রতি নির্দেশ এসেছে তাদের নারীত্ব এবং সম্ভ্রম রার তাকীদ দিয়ে। যে পুরুষের অন্তরে লেশমাত্র লজ্জা থাকে সে কখনো নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করতে পারে না। অনুরূপভাবে যে নারীর মাঝে সমান্যতম ঈমান থাকে সে কখনো স্বেচ্ছায় ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে না।

হযরত ইমাম আহ্মদ বিন হাম্বল (রাহ্.)এর মসনদে আহ্মদ নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে, হযরত আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দিন। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম লোকটির অবৈধ প্রস্তাবের কথা শুনে তার উপর ক্রুদ্ধ হন এবং তাকে ধমক দেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে সান্ত্বনা দিলেন এবং লোকটিকে কাছে ডেকে বসালেন। এরপর তাকে প্রশ্ন করলেন- তোমার মার সাথে কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হোক এতে তুমি সম্মত আছ? সে বল্ল- কখনও না। হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমার মত অন্য কোন ব্যক্তিও তার মায়ের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সম্মত হবে না। তুমি কি তোমার কন্যার ক্ষেত্রে পছন্দ করবে? যুবক বলল- অসম্ভব, কখনও না। হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- অন্যেরাও তাদের কন্যার ক্ষেত্রে পছন্দ করবে না। আচ্ছা, তুমি কি তোমার বোনের ক্ষেত্রে পছন্দ করবে? যুবক বলল- কখনই না। এভাবে হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকটিকে তার ফুফু, খালা সর্বশেষে স্ত্রীর ব্যাপারে প্রশ্ন করেন এবং যথারীতি সে তার অসম্মতির কথা জানায়।

দয়ার নবী যুবকটির অন্তরে কথাগুলো পরিস্কারভাবে আলোকপাত করে তার জন্য দোয়া করেন। ফলে নবীজির শিা এবং দোয়া তার জন্য এতই ফলপ্রসু হয়ে দেখা দেয় যে, সে জীবনে কখনও কুকর্মে লিপ্ত হওয়ার কথা কল্পনাও করেনি।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ো না এবং তার ধারে কাছেও যেয়ো না।” বর্ণিত আয়াতের আলোকে বোঝা যায়, যে সব চাল-চলন এবং উপায়-উপকরণ দ্বারা নারী-পুরুষকে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে তার ধারে কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দুঃখের হলেও সত্য যে, আজকের দিনে ডিসএন্টিনার মাধ্যমে পর্ণোচিত্র এবং উলঙ্গপনা আর বেহায়াপনার যে প্রদর্শনী তথাকথিত সভ্য নামের পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যেভাবে আমদানী করা হচ্ছে, আর প্রগতিবাদী মা-বাবারা ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা অবলিলায় অবলোকন করছে, এতে যুবক-যুবতী সন্তানেরা হয়ে উঠে নির্লজ্জ বেপরোয়া।

মুসলিম নারীদের পবিত্রতা এবং সম্ভ্রম রার গুরুত্ব কতটুকু তা ইসলামের নবী মুসলিম মহিলাদের যে শিা দিয়েছেন তাতে এ কথাটিও বর্ণিত আছে, “ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ো না এমন কি নারীর পবিত্রতার আঁচলে কলঙ্কের দাগ লাগতে দিয়ো না।” পবিত্র কুরআনের সরা মুমতাহিনায় ইরশাদ হয়েছে- “তোমরা ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে না, আপন সন্তানদের হত্যা করবে না, আর কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ রটাবে না।”

দয়ার নবী উম্মতের নারী-পুরুষের সম্ভ্রম রক্ষা করার এবং চরিত্র গঠনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দিয়েছেন। এবং সাথে সাথে এমন পরিবেশও তৈরী করেছেন যেন লোকেরা নিজ সম্ভ্রমের মল্যায়ন করে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “হে লোক সকল! তোমরা কামোদ্দীপক প্রত্যঙ্গের হিফাযত কর। ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ো না। শুন! যারা যৌনাঙ্গকে হিফাযত করে তাদের জন্য বেহেশ্ত।”

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যখন কোন লোক ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার অন্তর থেকে ঈমান বের হয়ে যায় এবং তার মাথার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় কম্পমান থাকে, যতণ পর্যন্ত সে কুকর্মে লিপ্ত থাকে। যখন তার কুকর্ম শেষ হয় তখন পুনরায় ঈমান ফিরে আসে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে দেশে ব্যাভিচার বেড়ে যাবে সে দেশে মহামারী রোগ এবং দুর্ভি দেখা দেবে। আজকের দিনে দৈনিক পত্রিকাগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেই নজরে পড়ে যুবতী মহিলার লাশ। এসব মহিলা অবৈধ সম্পর্কের কারণে পাষণ্ড পুরুষের হাতে ধর্ষিতা হয়ে নর্দমায়, ডোবায় লাশ হয়ে ভাসছে। এসব যুবতী মহিলারা যদি নিজ দেহের রূপ চর্চা পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে হিফাযত করত, তবে কখনো লাশে পরিণত হতো না। এক শ্রেণীর প্রগতিবাদী নারী-পুরুষেরা বুলি আওড়িয়ে থাকেন, নারীরাও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে, সুতরাং তারা পর্দার আড়ালে আবদ্ধ থাকবে কেন? উত্তরে বলব, ইসলাম নারী স্বাধীনতার যে দৃষ্টাš রেখেছে পৃথিবীতে আর কোন ধর্ম দিতে পারেনি। স্বাধীনতার মানে এ নয় যে, রূপচর্চা করে পরপুরুষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা। বরং নারী দেহের রূপচর্চা একমাত্র স্বামীর জন্য বৈধ করা হয়েছে এবং তাতেই নিহিত রয়েছে নারীর কল্যাণ। অন্যথায় কামুক পুরুষের খপ্পরে পড়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে সন্দেহ নেই। সমাজে যে সব মহিলা পর্দাশীলা, লজ্জাবতী, তারা পরিবারে যেমন সকলের আদরের এবং সম্মানের পাত্রী তেমনি স্বামীর নিকট অত্যন্ত প্রিয়তমা। সর্বোপরি আল্লাহর কাছেও অসীম মর্যাদার অধিকারিনী। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে, নিজের সম্ভ্রম রা করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, সে নারী বেহেশ্তের আট তোরণের যে কোন একটি দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আল্লাহ্ সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥ #

বিষয়: বিবিধ

১৪২০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214558
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:০৭
জিরো ফাইব লিখেছেন : আমিন
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৩৩
162884
বিন হারুন লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File