কয়েকটি প্রচলিত জাল হাদীস
লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:২৭:২৩ সকাল
কয়েকটি প্রচলিত জাল হাদীস // - মুফতী শামসুর রহমান
জাল হাদীস মূলতঃ রাসূলুল্লাহ (সা.)এর হাদীস নয়। এটি মানুষের মনগড়া তৈরী কথা। মুহাদ্দিসগণ একে ‘মাওযূ’ নামে অভিহিত করেছেন।
‘মাওযূ’ শব্দটি আরবী। মূলধাতু “ওয়াযাআ” হতে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ- তৈরী করা, সৃষ্টি করা, বানানো ইত্যাদি। লিসানুল আরব গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে, এটি ‘উঁচু’ এর বিপরীতার্থক শব্দ।
মাওযূ হাদীসের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, ইমাম ইবনে সালাহ (রাহ.) বলেন, “মনগড়া ও বানোয়াট হাদীসকে মাওযূ বলা হয়”। (মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ- ৭৭ পৃষ্ঠা)। হাফিজুল হাদীস যাইনুদ্দীন ইরাকী (রাহ.) বলেন, “মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসকে মাওযূ বলা হয়”। (ফাতহুল মুগীছ লিল ইরাকী, ১৩০)।
মুহাদ্দিস আল্লামা জাফর আহমদ ওসমানী (রাহ.) বলেন, “নবী কারীম (সা.)এর বাণীর নামে স্বেচ্ছায় মিথ্যা কথা বানানো হয়েছে, এমন হাদীসকে মাওযূ বলা হয়”। (মুকাদ্দামায়ে ইলাউস সুনান- ১/২৯)।
উপরোক্ত সংজ্ঞা সমূহে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, স্বেচ্ছায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নামে মনগড়া-বানানো মিথ্যা বাণীর প্রচার-প্রসারকে জাল হাদীস বলা হয়।
মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, স্বেচ্ছায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নামে মানব সমাজে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস বানিয়ে প্রচার-প্রসার করা জঘন্যতম অপরাধ; যা কবীরা গুনাহের শামিল। কারণ, এটি এমন একটি মহাঅপরাধ, যার চূড়ান্ত পরিণতি হল জাহান্নাম। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এ প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেন- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি স্বেচ্ছায় মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন নিজেই জাহান্নামে তার স্থান বানিয়ে নেয়”। (বুখারী-১/২১ পৃষ্ঠা)। অতএব, রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নামে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস বানিয়ে প্রচার-প্রসার করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। (আল-ওয়াজউ ফিল হাদীস-১/৩১৭)।
এ জঘন্যতম অপরাধ তথা জাল হাদীস প্রচার-প্রসারের প্রারম্ভিক কাল সম্পর্কে কয়েকটি মতামত রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য মত হচ্ছে, হিজরী ১ম শতাব্দীর ৪০তম সনের পর মিথ্যা বা জাল হাদীসের সূচনা হয়।
বর্তমানে এ অপকর্মের সাথে যোগ দিয়েছে মুসলিম নামধারী কিছু ভন্ড। তারা এসব জাল হাদীসকে ব্যবহার করে তাদের অসৎ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু অসচেতন আলেমের দ্বারাও তাদের অজান্তে কিছু জাল হাদীস জনসমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। ইসলামের শত্রুরা এ ধরণের ঘৃণ্য অপতৎপরতা চালিয়ে মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় আঘাত হানার চেষ্টা করছে। কিন্তু উলামায়ে কেরামের সতকর্ততামূলক পদক্ষেপ ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বরাবরই তাদের এ ধরণের অপপ্রয়াস বার্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। কেননা, প্রত্যেক যুগে বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ এসব জাল হাদীসের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দ্বীন ইসলামকে হেফাজত করার ওয়াদার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের মাধ্যমে। তবে অনেক সময় সেসব জাল হাদীস সম্পর্কে অনবহিত ও অসচেতনার ফলে বিপথগামী হতে হয় অনেককেই। এ জন্য বক্ষমান প্রবন্ধে বহুল প্রচলিত কয়েকটি জাল হাদীসের পরিচয় করে দেয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
১। “উলামাউ উম্মাতী কা আম্বিয়ায়ে বানী ইসরাঈল”।
অর্থাৎ- আমার উম্মতের আলেমগণ বনী ইসরাঈলের নবীগণের সমতুল্য।
পর্যালোচনাঃ বর্ণিত বাক্যটি বর্তমানে কোনো কোনো ওয়ায়েয ও বক্তাগণের মুখে নবীর হাদীস হিসেবে বর্ণনা করতে শোনা যায়। অথচ হাদীসের গ্রন্থসমূহে অনুসন্ধান করলে হাদীস হিসেবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাফিজুল হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী (রাহ.) ও আল্লামা দিময়ারী (রাহ.) বলেছেন, হাদীসটির কোনো ভিত্তি নেই। আল্লামা জারকাশী (রাহ.) ও মোল্লা আলী কারী (রাহ.)ও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। (আল মাসনূ-১২৩; আল ফাওয়াইদুল মাজমূআহ-২৮৬; কাশফুল খফা-২/৮৩)।
তবে অন্য একটি হাসান তথা গ্রহণযোগ্য হাদীসে ওলামায়ে কেরামের ফযীলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- হযরত নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিশ। আল্লাহর নবীগণ দুনিয়াবী ধন-সম্পদের মিরাস (ওয়ারিশি সম্পত্তি) রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার রূপে রেখে যান শুধুমাত্র দ্বীনি ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করেছে, সে পূর্ণ অংশ অর্জন করেছে। (মিশকাত- ৩৪)।
২। “উতলুবুল ইলমা ওয়ালাও বিস্-চীন, ফাইন্না তালাবাল ইলমি ফারিযাতুন আলা কুল্লি মুসলিমীন”।
অর্থাৎ- সুদূর চীন দেশে হলেও জ্ঞান অন্বেষণ কর। কারণ, জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয।
পর্যালোচনাঃ মুহাদ্দিস আল্লামা শাওকানী (রাহ.) বলেন, হাদীসটি মুহাদ্দিস উকাইলী এবং মুহাদ্দিস ইবনে আদী (রাহ.) হযরত আনাস (রাযি.) থেকে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, মুহাদ্দিস ইবনে হিব্বান উপরোক্ত হাদীস সম্পর্কে বলেন, “হাদীসটি বাতিল। তার কোনো ভিত্তি নেই”। এর সনদে ‘আতেকা’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তিনি মুনকারুল হাদীস তথা হাদীসশাস্ত্রে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আল্লামা ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার মাওযূআতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাফিজুল হাদীস ইমাম মিজ্জী (রাহ.) বলেন, হাদীসটির একাধিক সূত্র রয়েছে, যা একত্রিত করলে হাদীসটি হাসানের স্তরে উপনীত হয়।
আর ইমাম যাহাবী (রাহ.) ‘তালখীছুল ওয়াহিয়াহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, এ হাদীসটি অনেক সনদে বর্ণিত হয়েছে। যার কিছু হল ওয়াহী (অগ্রহণযোগ্য)। আর কিছু হল সালেহ (গ্রহণযোগ্য)। তবে একথা সুস্পষ্ট যে, এ হাদীসটির দু’টি অংশ রয়েছে। একটি হল- “উতলুবুল ইলমা ওয়ালাও বিস্-চীন” -এ অংশটি অনেক সনদে বর্ণিত হলেও প্রতিটি সনদ মাওযূ বা ওয়াহী (অগ্রহণণযোগ্য)এর স্তরে। তাই এ অংশটি বাতিল বা মাওযূ। আর দ্বিতীয় অংশ হল- “ফাইন্না তালাবাল ইলমি ফারিযাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন” -এ অংশটি অনেক মুহতামাল বা দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। যার ফলে এ অংশটি হাসান লি গাইরিহীর স্তরে পৌঁছে যায়। আর ইমাম মিজ্জী (রাহ.)এর উক্তির উদ্দেশ্য এই দ্বিতীয়াংশ, প্রথমাংশ নয়। আর ইমাম যাহাবী (রাহ.)এর উক্তির প্রথমাংশ হাদীসটির প্রথমাংশের জন্য প্রযোজ্য, তথা এই প্রথম অংশটি অগ্রহণযোগ্য এবং দ্বিতীয়াংশ হাদীসটির দ্বিতীয়াংশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তথা দ্বিতীয়াংশটি গ্রহণযোগ্য। মুহাদ্দিস ইবনে আবদুল বার (রাহ.) হযরত আনাস (রাযি.) থেকে যে সনদে হাদীসটি রেওয়ায়াত করেছেন, সেই সিলসিলায়ে সনদে চরম মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারীও রয়েছেন। (কাশফুল খফা- ১/১৫৪; কিতাবুল মাওযূআত-১৫৪; আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআ-২৭২)।
৩। “আন-নাসু কুল্লুহুম হাল্কা ইল্লাল আলিমূন, ওয়াল আলিমূনা কুল্লুহুম হাল্কা ইল্লাল আমিলূন, ওয়াল আমিলূনা কুল্লুহুম হাল্কা ইল্লাল মুখলিসূন, ওয়াল মুখলিসূনা আলা-খাতারিন আযীম”।
অর্থাৎ- আলেমগণ ব্যতীত সকল মানুষই ধ্বংসের পথে। আমলকারীগণ ব্যতীত আলেমরাও ধ্বংসের পথে। মুখলিসগণ ব্যতীত আমলকারী আলেমরাও ধ্বংসের পথে। আর মুখলিসগণও আছেন ভীষণ ভয়ের মধ্যে।
পর্যালোচনাঃ বর্ণিত বাক্যটি অনেক ওয়ায়েযগণের মুখে নবীর হাদীস হিসাবে বর্ণনা করতে শোনা যায়। অথচ হাদীস শাস্ত্রের অনেক ইমামগণের দৃষ্টিতে তা হাদীস নয়; বরং এটি শায়েখ সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ তুসতারী (রাহ.)এর উক্তি। ইমাম সাগানী, ইমাম আজলুনী, ইমাম শাওকানী (রাহ.)সহ অনেক হাদীস বিশারদ একে জাল হাদীস বলেছেন। (কাশফুল খফা-২/৪১৫; আলা ফাওয়াইদিল মাজমূআহ-২৫৭)।
ইখলাসের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে কুরআন মাজীদে অনেক আয়াত এবং হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে। সেগুলোকে পরিহার করে এ ধরনের জাল ও ভিত্তিহীন হাদীস বর্ণনা করা কোনো সচেতন ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।
৪। “আদ-দুনিয়া মাযরাআতুন আখিরাহ”।
অর্থাৎ- দুনিয়া আখেরাতের ফসলী ভূমি।
পর্যালোচনাঃ বর্ণিত বাক্যটি অনেক বক্তাগণের মুখে নবীর হাদীস হিসাবে বর্ণনা করতে শোনা যায়। অথচ এটি নবী কারীম (সা.)এর হাদীস নয়। ইমাম সাগানী (রাহ.) বলেন, হাদীসটি মাওযূ তথা বানোয়াট।
হাফিজুল হাদীস আল্লামা ছাখাভী (রাহ.) বলেন, ইমাম গাজালী (রাহ.) যদিও ইহয়ায়ে উলূমিদ্দীন গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন; কিন্তু আমি এ হাদীসটি সম্পর্কে অবগত নই। মোল্লা আলী ক্বারী (রাহ.) বলেন, হাদীসটি মাওযূ হলেও কথাটির অর্থ সত্য। যেমন- কুরআন মাজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্যে সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না”। (সূরা শূরা, আয়াত-২০)।
মুহাদ্দিস ইবনুল গরস (রাহ.) বলেন, হাদীসটির পরিচয় জানা যায়নি। (কাশফুল খফা-১/৪৯৫; আল মাসনু- ১০১ পৃষ্ঠা)।
৫। “মান যারাল উলামাআ ফাআন্নামা যারানি, ওয়ামান ছাফাহাল উলামাআ ফাআন্নামা ছাফাহানী, ওয়ামান জালাস উলামাআ ফাআন্নামা জালাসানি, ওয়ামান জালাসানী ফি-দ্দুনিয়া উজলিসা ইলাইয়্যা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ্”।
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ওলামায়ে কেরামের সাথে সাাৎ করল সে যেন আমার সাথে সাাৎ করল। যে ব্যক্তি ওলামায়ে কেরামের সাথে মুসাফাহা করল, সে যেন আমার সাথেই মুসাফাহা করল। যে ব্যক্তি ওলামায়ে কেরামের সংশ্রবে থাকে, সে যেন আমার সংশ্রবে থাকে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার সংশ্রবে বসবে, তাকে কেয়ামতের দিবসে আমার নিকট বসানো হবে।
পর্যালোচনাঃ অনেক বক্তা ওলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে অত্যন্ত আগ্রহের আতিশয্যে এটিকে নবীর হাদীস মনে করে বর্ণনা করে থাকেন। বস্তুতঃ তা নবীর হাদীস নয়। এ হাদীসের সনদে ‘হাফস ইবনে ওমর আদী’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। যাকে ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম বুখারী (রাহ.) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। এই মিথ্যুক রাবী বিদ্যমান থাকায় উক্ত হাদীসকে হাফেজ সুয়ূতী (রাহ.) জাল সাব্যস্ত করেছেন।
মোল্লা আলী কারী ও আল্লামা শাওকানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামও তাদের কিতাবে এটিকে জাল বলেছেন। (কাশফুল খফা-২/৩৩০; আল মাসনূ-১৮৪; আল ফাওয়াইদুল মাজমূআহ-২৮৫)।
৬। “আসসালাতু মি’রাজুল মু’মিনীন”।
অর্থাৎ- নামায মুমিনদের মি’রাজ স্বরূপ।
পর্যালোচনাঃ উক্ত বাক্যটি বিভিন্ন ওয়ায়েযগণের মুখে নামাযের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীস হিসাবে শোনা যায়। কিন্তু হাদীসের ভান্ডার অনুসন্ধানে এর কোনো গ্রহণযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় না। তবে এ বাক্যটির সারমর্ম বিভিন্ন সহীহ হাদীসে উপলব্ধি করা যায়। এ জন্য বাক্যটিকে একটি প্রসিদ্ধ উক্তি হিসাবেই বলা উচিত; হাদীস হিসাবে নয়। এ ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস বর্ণনা করা বাঞ্ছনীয়। যেমন- বুখারী শরীফে উল্লেখ হয়েছে, মুমিন যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে যেন তার প্রতিপালকের সাথে একান্তে কথা বলছেন। (সহীহ বুখারী, ১/৫৯)।
৭। “ইন্নাল আলিমা ওয়াল মুতাআল্লিমা ইযা মাররা আলা ক্বারইয়াতিন ফাইন্নাল্লাহা তাআলা ইয়ারফাউল আযাবা আন মাকবারাতি তিলকাল ক্বারইয়াতি আরবায়ীনা ইয়াওমান”।
অর্থাৎ- যখন কোনো আলেম বা ইলম অন্বেষণকারী কোনো গ্রাম অতিক্রম করে, তখন আল্লাহ তাআলা (তাদের বরকতে) চল্লিশ দিনের জন্যে সেই গ্রামের কবরস্থানের আযাব মাফ করে দেন।
পর্যালোচনাঃ বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে উপর্যুক্ত বাক্যটি রাসূল (সা.)এর হাদীস হিসাবে শোনা যায়। অথচ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও জাল। মুহাদ্দিস আল্লামা আজলুনী ও মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (রাহ.) উল্লেখ করেছেন যে, হাফিজুল হাদীস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রাহ.) উক্ত হাদীসটির ব্যাপারে বলেন, ‘লা-আসলালাহু’ অর্থাৎ- হাদীসটির কোনো ভিত্তি নেই। (কাশফুল খফা-১/২৫৬; মাসনূ-৬৫)।
৮। “হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ঈমান”।
অর্থাৎ- স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ।
পর্যালোচনাঃ এ বাক্যটি ওয়ায়েযগণের নিকট হাদীস হিসাবে সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ। অথচ এটি হাদীস নয়। মুহাদ্দিস আল্লামা ইসমাঈল আজলুনী (রাহ.) উল্লেখ করেন যে, ইমাম সাগানী (রাহ.) বলেন, হাদীসটি মাওযূ। উক্ত হাদীসটির প্রসঙ্গে মোল্লা আলী কারী (রাহ.) বলেন, “হাফিজুল হাদীসগণের নিকট হাদীসটির কোনো ভিত্তি নেই”। তিনি আল মাওযূআতুল কুবরা গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, মুহাদ্দিস জারকাশী (রাহ.) বলেন, আমি এ হাদীসটির ব্যাপারে অবগত নই। মুহাদ্দিস মুঈনুদ্দীন (রাহ.) বলেন, এ হাদীসটি আমার নিকট প্রমাণিত নয়; বরং এটি কোনো পূর্ববর্তী বুযুর্গের উক্তি। (আল-মাকাসিদুল হাসানাহ-১৮৯; কাশফুল খফা-১/৪১৩; আল মাসনূ-৯১)।
এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য মাওযূ হাদীস, যার বর্ণনা এ সংপ্তি পরিসরে সম্ভবপর নয়।
পরিশেষে বলতে চাই, যেসব হাদীসের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের উক্তিতে ‘মাওযূ’ তথা বানোয়াট শব্দের উল্লেখ থাকে, তা হাদীসরূপে বর্ণনা করা যাবে না। আর যদি সেটি কোনো মনীষীর বাণী হয়, তাহলে কেবল তার বাণী হিসাবে বর্ণনা করতে হবে; হাদীসে রাসূল হিসাবে বর্ণনা করা যাবে না। তবে হ্যাঁ! এটি যে মাওযূ বা জাল, তা মানুষের অবগতির জন্যে বর্ণনা করা বৈধ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমীন॥
[উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী-এর বিষয় ভিত্তিক মাসিক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত প্রবন্ধ]
তত্ত্বাবধানে- আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী।
http://www.monthlymueenulislam.com/sp_details.php?id=98
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সম্ভব হলে ধারাবাহিকভাবে এ ব্যাপারে কিছু লিখলে আমাদের উপকারে আসবে।
ব্রেলভী ভন্ডরা এই ব্লগে নতুন করে জায়গা দখল করতে চাচ্ছে জাল হাদীস দিয়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন