মায়ের আকাশ থেকে খসে গেল চাঁদ
লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:৫০:১৯ রাত
ছবিতে যেই ভা্ইকে দেখছেন তার নাম আতাউর রহমান জুয়েল. গ্রাম-শিক্ষা, থানা-শ্রীমঙ্গল, জেলা-মৌলভীবাজার. সে ভাগ্য বদলাতে দুই বছর আগে ইউ.এ.ই তে এসেছিল. তার পরিবারে রয়েছে মাস দেড়েক আগে রোড এক্সিড়েন্ট হয়ে পঙ্গু পিতা, আর বৃদ্ধ মা এবং পাঁচ জন বোন. সে যখন বিদেশ আসে তখন তার ভিসা-পতাকার কাজ আমাদের অফিসে করি. তাই সে বিদেশ আসার আগে থেকেই তার ছবি দেখেছি. বিদেশে সবাই কর্মব্যস্ত তাই কারো সাথে কেউ তেমন বেশি মেশা সম্ভব হয় না. সে যেহেতু আমাদের দোকানের পাশে থাকে সেহেতু নামাযে যাতায়াতের পথে তার সাথে কুশল বিমিময় হতো. বেশিরভাগ সময় আলাপ আলোচনায় সে আরবী শিখতে চাইত, কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ করার চেষ্টা করতো, নামাজের প্রতিও আগ্রহ ছিল তার.
যতটুক জানলাম তারা ভাই-বোন ছয় জন. ছয়জনের মধ্যে সেই একমাত্র ভাই, দুই বোন বিবাহিত বাকি তিন বোন অবিবাহিত, অবিবাহিত বোনগুলোর সুখ নিয়েই ভাবত বেশ. একটি মাত্র ছেলে বলে ঘরে সব সদস্যদের আদরের মাত্রাও ছিল বেশ. সে মাসয়ালা-মাসয়িল জিজ্ঞেস করতো, কুরআনের তাজবীদ শিখতে চাইতো নামাজে যাওয়া আসার সময় আমার জন্য অপেক্ষা করতো. দূর থেকে দেখা হলে চিত্কার দিয়ে আমাকে ডাক দিত. আমিও দুষ্টমি করে প্রথমে বলতাম খিতা খবররে বা. সে বলত ভাল আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করত এককানা গম আছনি? (একটু ভাল আছেন?)
সে যেই দোকানে এসেছে সেখানে বিশ-বাইশ দিন পূর্বে দু'বছর পূর্ণ হয়েছে. দোকানটি ত্রিশ মিটারের কম তাই ইউএই'র সরকার নবায়ন করতে দিচ্ছে না. দোকানের মালিক ছয়মাস ধরে নবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন. কোম্পানির নতুন ভিসা বন্ধ তাই ইতোমধ্যে সে এক আরবীর কাছে লাগানোর কথা পাকাপুক্ত করে ফেলেছে. যেই না পুরাতন কোম্পানি থেকে ভিসা ক্যান্সেল করে আরবির ঘরে ভিসা লাগানোর জন্য ইমিগ্রেশনে আবেদন পত্র জমা করল. পাশপোর্ট মেশিন রিডেবল না হওয়ায় নতুন ভিসা হল না. তাই সে পাশপোর্ট মেশিন রিড়েবল করতে দিল. যেহেতু ক্যান্সেল এর পর আটাশ থেকে ত্রিশ দিন বৈধ ভাবে থাকা যায় সে এর ভেতর নতুন ভিসার প্রস্তুতি নিতে লাগল.
২১ তারিখ দিবাগত রাতে সে এক আরবীর ঘরে গাড়ি করে পর্দা লাগাতে যাচ্ছিল তাদের কারটি ৬০-৭০ এ চলছিল. পেছন থেকে এক আরবির গাড়ি ১৬০-১৭০ ডিগ্রিতে এসে ধাক্কা দেয়. এতে তাদের গাড়ি পাতাড়ি হয়ে যায়. আরবী গতি হারিয়ে পাশ থেকে আবার ধাক্কা দিলে সাথে সাথে এই ভাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে. (ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জিউন)
তার মৃত্যুতে পুরো এরিয়া জুড়ে শোক নেমে আসে. সব দেশের মানুষ যারা তাকে চেনে সবা্ই শোকাহত হল. সবার মুখ থেকে অকপটে বেরিয়ে আসছে ছেলেটি খুব ভাল ভদ্র, নম্র ছিল. আচ্ছা ভাল'রা কি এভাবে চলে যায়?
আগামি শনিবার দিবাগত রাতে তার মৃত দেহ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে. তার ঠিকানা উপরে দেওয়া আছে. যারা কাছে আছেন জানাযায় অংশগ্রহণের অনুরোধ করছি. আর যারা দূরে তারা তার মাতা-পিতা পাঁচ বোনদের জন্য দোয় করবেন. তারা যেন শোক কেটে উঠতে পারেন, আল্লাহ যেন তাঁদের হৃদয়ে শান্তি দেন.
বিষয়: বিবিধ
১৫৭১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন ,,আমিন
কোন দেশ ভাইয়া ,,
মন্তব্য করতে লগইন করুন