ছয়টি ভদ্রতা যা বিদেশে এসে শিখলাম
লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:০৪:৫২ সন্ধ্যা
দেশে মা-বাবার বারণ ছিল হেঁটে খাবার খাওয়া যাবে না, প্রবাসে অনেক মানুষ সময়ের অভাবে হেঁটে হেঁটে চা পান করে. আমি কিন্তু আগের মতোই চা নিয়ে অফিসে এসে তারপর পান করি, রাস্তায় হেঁটে চা পান করতে এখনো আগের মতো লজ্জাবোধ করি.
তবে প্রবাসে এসে কিছু নতুন ভদ্রতা শিখেছি:
যেমন: (ক) দেশে থাকতে বাজারে আসা-যাওয়ার পথে খোলা জায়গায় প্রশ্রাব করতে বসে যেতাম, মোটেই লজ্জাবোধ করতাম না, কিন্তু প্রবাসে এসে মনে হচ্ছে ঐটিও একটি অভদ্রতা ছিল. এখন খোলা প্রশ্রাব খানায়ও প্রশ্রাব করতে লজ্জাবোধ করি.
(খ) দেশে থাকতে যেখানে সেখানে রাস্তা-ঘাটে, মানুষের সামনে থুথু ফেলার বদঅভ্যাস ছিল. এখানে ওপেন থুথু ফেললে ২০০ দিরহাম যা বাংলাদেশের চারহাজার দুইশ টাকারও বেশি জরিমানা গুণতে হবে, সেই ভয়ে এখন যখন-তখন যেখানে-সেখানে থুথু ফেলার বদঅভ্যাস চলে গেছে. এখানে থুথু ফেলার নিয়ম: নির্দিষ্ট বেসিনে, কাছে বেসিন পাওয়া না গেলে টিস্যুতে থুথু রেখে তা নির্দিষ্ট ময়লার বক্সে ফেলতে হয়. বর্তমানে তা আমার খুব পছন্দ. (গ) আগে বদ অভ্যাস ছিল যেখানে সেখানে পলিথিন ময়লা অবর্জনা ফেলা. প্রবাসে এসে দেখলাম নির্দিষ্ট ময়লার বক্স ছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতে দেখলে দুইশ থেকে পাঁচশ দিরহাম যা বাংলাদেশের চার হাজার একশ থেকে দশ হাজার পাঁচশ টাকার কিছু বেশি জরিমানা করা হবে. (ঘ) দেশে খাকতে আরেকটি বদ অভ্যাস ছিল রাস্তা পারা-পারে জেব্রা অনুস্মরণ করতাম না, যখন যেদিক দিয়ে ইচ্ছে ব্যস্ত সড়কে রাস্তা পার হতাম, এখানে এসে তা-ও দূর হল. কারন সিগনাল অনুস্মরণ না করে রাস্তা পার হলে মৃত্যুর ভয়তো আছেই পাশা-পাশি জরিমানাও গুণতে হবে. বার বার জরিমানা গুণলে সেই ব্যাক্তিকে এখানে ভাল চোখে দেখে না. বলে রাখা ভাল এখানের ড্রাইভারগুলো আমাদের দেশের ড্রাইবারের মতো জনসাধারণকে ভয় দেখায় না. বরং ছোট খাট রাস্তায় সাধারণ মানুষ দেখলে গাড়ি খামিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ দেয় বা পার হওয়ার জন্য ইশারা করে.
(ঙ) আরেকটি বদ অভ্যাস ছিল তবে তা আমার নয় কার তা এখানে বলব না. বদঅভ্যাসটি হচ্ছে বিদ্যুতের বা গ্যাসের বিল দিতে গেলে আমাদের দেশে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয় তেমনি ভাবে এখানেও বিভিন্ন কাজে আরো বেশী দীর্ঘ লাইন ধরে বসে খাকতে হয় (আমাদের দেশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে খাকতে হয়) দীর্ঘ লাইন হলেও এখানে তা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় কষ্ট অনুভব হয় না. কারণ এখানে আছে পর্যাপ্ত সরকারি ভদ্র, শিক্ষিত কর্মকর্তা আর সিরিয়াল নাম্বার নিতে হয় মেশিন থেকে, এদেশের টোকেনের মেশিনগুলো আমাদের দেশের টোকেন দাতার মতো ৯৭ নং টোকেন আগে বিশ টাকার বিনিময়ে ১৯ নং টোকেনটি এক ঘন্টা পর আরেকজনকে দেওয়ার মতো দূর্নীতি করে না. তা ছাড়া নেতা টাইপের কেউ পরে এসে আগে কাজ সমাধা করার চেষ্টাও করে না.
তাছাড়া মসজিদে অজু করতে গেলে টয়লেটে গেলেও লাইন ধরতে হয়. এখানে মানুষ নিজে নিজেই একজনের পরে একজন লাইন ধরে যায় হৈ-হুল্লড়, চিল্লা-চিল্লি হয় না.
(চ) আরেকটি বদ অভ্যাস আমাদের আছে তা হচ্ছে আমাদের দেশে খেলা-ধূলায় বা ইত্যাদি কারণে এমনকি মসজিদেও বড়রা ছোট বাচ্চাদের গায়ে কথায় কথায় হাত তুলে বা ধমক দেয়. এখানে কিন্তু বাচ্চারা যতই দুষ্টুমি করুক কেউ বাঁধা বা ধমক দেয় না. অতিরিক্ত হলে অভিভাবকের কাছে হাসিমুখে নালিশ করে. সে জন্যই মনে হয় আমাদের দেশের মানুষ যত বৃদ্ধ হয় তত খিটখিটে মেজাজের হয়, আর এ দেশে মানুষ যত বৃদ্ধ হয় তত রসিক হয়.
(জ) কি লিখব ........ এখন আর মনে পড়ছে না, একটু আগেও মনের কোণে অনেকগুলো কথা জমে ছিল, আর এখন বেমালুম ভুলে গেছি. আচ্ছা যাক আবার যদি মনে পড়ে তাহলে শেয়ার করব.
বিষয়: বিবিধ
১৯৫৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশে যে ছেলে এক গ্লাস পানিও নিজে ঢেলে খায় না, সে আমেরিকা /বৃটেন গেলে অড জব করে ।
আবার দেশে বেড়াতে এসে সেই আগের মুডেই চলে ।
বাংলাদেশীরা মাইরের/শক্তের ভক্ত ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন