বিয়ের দাওয়াতী খাবারে দেখতে পা্ই কন্যার বাবার রক্ত আর ঘাম

লিখেছেন লিখেছেন বিন হারুন ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৯:৫১ দুপুর



প্রথমে বলে রাখি চট্টগ্রামে বিয়ের দাওয়াত খাওয়াকে বলে বিয়ে খাওয়া. সে হিসেবে জীবনে কতবার বিয়ে খেয়েছি হিসেব করে দেখিনি. ঘরের বড় ছিলাম বলে প্রতিটি বিয়েতে আমাকেই যেতে হত. ছোট বেলায় বিয়ে খাওয়াতে অনেক আনন্দ পেতাম. তার চেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম বাবা-মার সাথে বিয়েতে যেতে. কিন্তু একটি বিয়ে আমার হৃদয় ভেঙ্গে ছারখার করে দিয়েছে.

আফজাল সাহেবের ৫ মেয়ে এক ছেলে, ছেলে সবার ছোট. ছোট একটি চায়ের দোকান করে অভাব অনটনে সংসার চালায়. এদিকে দেখতে দেখতে প্রথম তিনটি মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেল. বাকি দু'টোও ৩/৪ বছর পর বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যাবে. তিনি মেয়েদের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেলেন. ঘটক আসে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে প্রায় সবগুলোতেই থাকে উপটৌকনের নামে যৌতুকের আবদার কিন্তু তিনি টাকা পাবেন কোথায়? তাই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সাহস করেন না. কিন্তু মেয়ের যে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তাই তিনি সাহস করে একবার রাজি হলেন.

আফজাল সাহেব ঘটক কে জিজ্ঞাসা করলেন : ছেলে কি করে?

ঘটক: আরে বলোনা ছেলে অনেক পরিশ্রমী, ক্ষেত খামার করে অনেক পয়সা আয় রোজগার করে? দেখতে একটু সুন্দর কম হলেও পরিবারে সবাই অনেক ভাল. তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হবে কিনা জানিনা. তবে যদি রাজি করাতে পারি তাহলে তোমার মেয়ে অনেক সুখি হবে.

পান খেয়ে ৫০টাকা নিয়ে বিদায় হয়ে দু'দিন পর আবার আসলেন.

ঘটক: ছেলে আজ সন্ধায় মেয়ে দেখতে চায়.

আফজাল সাহেব না আজ নয় আগামী শুক্রবার দেখুক. তার আগে আমরা একটু ছেলেকে দেখব.

ঘটক: তাহলে আজ দেখ. আফজাল সাহেব রাজি হলেন তাঁর ভাইকে নিয়ে ছেলেকে দেখলেন. পছন্দ হয়নি তবু রাজি হলেন. কারন মেয়ে আরো রয়ে গেছে.

শুক্রবার এলো বরপক্ষ আসলো কনে বাড়িতে পোলাও বিরিয়ানি, হাতে বানানো হরেক রকম নাস্তা খেয়ে চলে গেল. মেহমান যাওয়ার পর মেয়ে মুখ কালো করে আছে ছেলে তার পছন্দ হয়নি. কিন্তু কি করবেন তাঁরা গরিব তাছাড়া তার আরো চার বোন রয়ে গেছে. সব ভেবে মেয়েও রাজি হয়ে গেলেন.

এবার বিয়ের কথা বার্তা-ফাইনাল করতে ঘটক প্রস্তাব দিল. ঘটক পান খেতে খেতে বললেন দেখ আমি দশহাজার টাকা নিই তুমি গরিব মানুষ তুমি পাঁচ হাজার টাকা দিও. বাকি পাঁচ হাজার ছেলে পক্ষথেকে নিয়ে নেব.

আফজাল সাহেব: ছেলেকে কি দিতে হবে?

ঘটক তাদের তেমন দাবি নেই. এই হাফ ফার্ণিচার দেবে তিনশো বরযাত্রী খাওয়াবে, আর ছেলেকে বিয়েতে খরচ করার জন্য সত্তর হাজার টাকা দেবে. ঘটক আরো বললেন দেখ আফজাল এরকম সুযোগ আর পাবে না. আর শুনো! টাকার ব্যাপারটা তুমি ছাড়া যেন আর কেউ না জানে, মান-সম্মান বলে কথা আছে না! আফজাল সাহেব অনেক চিন্তায় পড়ে গেলেন অবশেষে বরযাত্রী পঞ্চাশজন কমিয়ে দুইশো পঞ্চাশ জনে রাজি করালেন. বাবার রেখে যাওয়া সম্বল তিন শতক জমিটুকু বিক্রি করে মেয়ের সুখের আশায় হাসিমুখে ধুমধামের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেনে.

মেয়ের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই মেয়ের উপর শুরু হল অত্যাচার, অত্যাচার দেখে প্রথম প্রথম প্রতিবেশীরা বাঁধা দিত, ছেলে প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করলে প্রতিবেশীরাও আর সেদিকে খেয়াল করেনা. মেয়ে পক্ষ ভাবে হয়তো কোন সন্তান সন্তুতি জন্ম হলে ছেলে ভাল হয়ে যাবে সেই আশায় বুক বাঁধে. চৌদ্দমাস পর একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হল. মেয়েটি মায়ের মতোই সুন্দর হয়েছে. মেয়েটির বয়স তিন বছর হল. কিন্তু বাবা হয়েও তাঁর চরিত্র-মানষিকতার পরিবর্তন হয়নি, বরং বর নিজেকে রাজকুমার ভাবতে লাগল. পরের জমিতে সামান্য চাষ করে. শুধু ভাতই জোটে, নুন জোটেনা. অনেক সময় ভাতও জোটেনা ছেলের মুখে নেই মিষ্টতা, খেয়াল করে না স্ত্রীর চাহিদা, কিছুদিন পর পর যৌতুকের জন্য মেয়েকে চাপ দেয় নির্যাতন করে. কিন্তু মেয়ে কোন মুখে বাবার কাছে যৌতুকের কথা বলবে দাদার তিনশতক জমি বিক্রি করেই তো তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন. অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে কিন্তু সেও তো রক্ত মাংসের মানুষ আর কত নির্যাতন সহ্য করবে. এসব নিয়ে গ্রাম্য সালিশ দরবারও কম হয়নি. কিন্তু ছেলের চরিত্রের পরিবর্তন হয় না. থানায় মামলা করার শক্তি, সময়, পয়সাও আফজাল সাহেবের নেই.

কনেকে পিতৃালয়ে যেতে দেয়না, অত্যাচারই করতে থাকে, ঘর থেকে বের হতে দেয়না, প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগও করতে দেয় না. একদিন সুযোগ পেয়ে মেয়েটি পালিয়ে গেল. আফজাল সাহেব মেয়ের শরীরের নির্যাতনের চিহ্ন সহ্য করতে পারলেন না. অবশেষে প্রতিবেশীদের নিয়ে নিকটবর্তী থাানায় জিডি করলেন. পুলিশ একদিন আসামি ধরতে গেলেন আসামী পালিয়ে গেল. পুলিশ দ্বিতীয়বার আর যায়নি. আফজাল সাহেবের মেয়েকে প্রতিবেশী এক যুবক আবার বিয়ে করলেন. আফজাল সাহেব এবং তাঁর মেয়ে এখন অনেক খুশি.

তাই এখন আর বিয়ে খেতে যাইনা. কারণ বিয়ের খাবারে কণের বাবার রক্ত দেখতে পাই. যতই বলুক এসব আনন্দের খাবার আমি আর সেসব খাবারে আনন্দ পাই না.

মহান রব আমাদের সকলের পরিবারকে প্রকৃত সুখি করুক. আ-মীন.

(তাই আসুন আমরা বর পক্ষ হয়ে কণের ঘরে দাওয়াত খাওয়া বন্ধ করি তাহলে একদিন সমাজ থেকে যৌতুকের অভিশাপ কিছু হ্রাস পেতে পারে)

এটি কাল্পনিক নয়.

দু:খিত, সবার মন খারাপ করে দিলাম বলে.

বিষয়: বিয়ের গল্প

১৯৪৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

166640
২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৫৮
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
120872
বিন হারুন লিখেছেন : এই পোষ্টে আপনি একমাত্র ধন্যবাদ দাতা, তাই আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
166983
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৫৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : এই ব্যাপারগুলো খুবই কষ্টদায়ক কারণ এগুলো ধর্ম আমাদের ওপর চাপায়নি, সমাজ চাপিয়েছে। Broken Heart Broken Heart
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২৩
121129
বিন হারুন লিখেছেন : অবশ্যই এগুলো আমাদের উপর সমাজ চাপিয়েছে, সহমত. ব্লগে বেড়াতে আসার জন্য শুভেচ্ছাGood Luck
170564
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০৪
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : পোস্টখানা সুন্দর হলেও বিষয়টা অত্যন্ত কষ্টের। Sad Sad
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:১২
124364
বিন হারুন লিখেছেন : আসলে আমরা আনন্দ করে যেই বিয়েগুলো খাই. তার পেছনে কত জনের কষ্ট লুকিয়ে থাকে তা আমরা বুঝতে পারি না. মূল্যবান সময় ব্যয় করে পোষ্টটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ.Good Luck
170570
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:১৫
আফরোজা হাসান লিখেছেন : সত্যিই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। মানুষের তৈরি এইসব প্রথা থেকে বের হতে না পারলে আমাদের সমাজ থেকে এইসব অনাচার বন্ধ হবে না।
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
124386
বিন হারুন লিখেছেন : সহমত,
আমার ব্লগবাড়িতে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা.Good Luck
176083
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:২৭
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
132383
বিন হারুন লিখেছেন : আমার ব্লগ কুটিরে আপনার প্রতি অনেক অনেক Rose শুভেচ্ছা রইল
179409
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : অনেক সুন্দর করে একটি সামাজিক চলমান সমস্যাকে কলমের ডগায় গেঁথে নিলেন। অসংখ্যা ধন্যবাদ।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৩
132384
বিন হারুন লিখেছেন : মহান রব আমাদেরকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দান করুন. আমার ব্লগ বাড়িতে অনেক অনেক Rose শুভেচ্ছা.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File