দুনিয়া এক পান্থশালা
লিখেছেন লিখেছেন পবিত্র ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৫৭:০৬ দুপুর
এ দুনিয়া একটি পান্থশালার ন্যায়, যেখানে পথিকরা কিছু সময়ের জন্য বসে আরাম করে, অতঃপর সামনে চলতে শুরু করে। পান্থশালায় কিছুক্ষনের জন্য আরাম গ্রহণকারী মুসাফির এখানে জমিন ক্রয় করা, ব্যবসা করা, বাড়ি করা ইত্যাদি বিষয়ে কখনো চিন্তা করবে না। বরং লোভহীন ব্যক্তি একথা চিন্তা করে যে এখানে একটু আরাম করতে পারলেই হলো।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন: একদা রাসূল (সাঃ) একটি চাটাইয়ের উপর খালী শরীরে শুয়ে ছিলেন এতে তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পরে গেছে তা দেখে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! যদি আপনি বলতেন তাহলে আমরা আপনার জন্য ভাল বিছানার ব্যবস্থা করে দিতাম। রাসূল (সাঃ) বললেন: দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক এতোটুকু যেমন কোন পথিক পত চলার সময় কোন একটি গাছের নীচে শুয়ে আরাম করে তার ক্লান্তি দূর করে, আরা ক্লান্তি কেটে গেলে চলতে শুরু করে, আর গাছ তার যথাস্থানেই থেকে যায়। (আহমদ, তিরমিযী)
ক্ষনস্থায়ী এ জীবনের জন্য আমরা কি ধোকায় পরে আছি। মাস বছর অতিক্রম হচ্ছে আর ভাবছি এখনো তরুন, অথচ প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সময়ের স্রোত সফলতা, ব্যর্থতা, সুখ, দুঃখ নিয়ে চলতে আছে, আমরা নিজের কামনা বাসনাকে পূরণ করার জন্য দিন-রাত একাকার করে দিচ্ছি। দীর্ঘ কামনা বাসনা, বিভন্ন পদের আকাঙ্খা, ডলার, রীয়াল, দীনার, টাকা, প্লট, ফ্ল্যাট, প্রাসাদ ইত্যাদির চক্করে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। আত্নীয়-স্বজন মৃত্যু বরণ করছে বাহ্যিক শোক পালনও করছি কিন্তু আবারও ছুটছি উচ্চ বিলাষ জীবন যাপনের পিছনে। এ কথা ভাবার সুযোগও হয় না যে, মৃত্যুর ফেরেশতা আমার জন্যও কোন সংবাদ রেখে গেছে।
জীবন মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তো যেমন “আজ ও কাল” বলার মত। এ সত্যতাকে আলী (রাঃ) কত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন। “ আজ আমলের সময় হিসাবের সময় নয়, আগামী দিন হিসাবের দিন আমলের নয়”।
রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) কে বলেছেন: আব্দুল্লাহ! দুনিয়াতে মুসাফির বা পথিকের ন্যায় সময় কাটাও”। তাই
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলতেন: হে মানব মন্ডলী! যদি সন্ধ্যা হয়ে যায় তাহলে সকাল পর্যন্ত তুমি বেঁচে থাকবে তা ভাবিও না। আর যদি সকাল হয়ে যায় তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমি বেঁচে থাকবে তাও ভাবিও না। সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে গনীমত মনে করবে। (বুখারী)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন: আমি কবরের চেয়ে কঠিনতম স্থান আর দেখি নাই। (তিরমিযী)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন: রাসূল (সাঃ) আমাদের কে কবরের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়া এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কোরআনের আয়াত শিক্ষা দিতেন। (নাসায়ী)
ওসমান (রাঃ) কবরের কথা স্মরণ হলে এমন কাঁদতেন যে তাঁর দাড়ী ভিজে যেত। তিনি বলতেন: কবর আখিরাতের মন্জিল সমূহের সর্বপ্রথম মন্জিল। যে এখান থেকে মুক্তি পাবে তার জন্য পরবর্তী মন্জিল সমূহ সহজ হবে। আর যে এখান থেকে মুক্তি পাবেনা তার জন্য পরবর্তী মন্জিল সমূহ আরো কঠিন হবে।
উমর (রাঃ) কবর ও আখিরাতের কথা স্মরণ করে এত কাঁদতেন যে, তাঁর চেহারা দুইটি কালো দাগ পরে গিয়েছিল।
আবু জর গেফারী (রাঃ) মৃত্যু ও বরযাখের জীবনের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর খুৎবা শুনে আফসোস করতে লাগলেন যে, হায়! যদি আমি কোন বৃক্ষ হতাম তাহলে তা আমার জন্য কতই না ভালো ছিল। এক সময় মালিক আমাকে কেটে ফেলত (আর আমার জীবনের সমাপ্তি হত)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর যখন মৃত্যুর সময় হল তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, কি আবু হুরায়রা! পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছ তাই কাঁদতেছ? উত্তরে তিনি বললেন: না, বরং দীর্ঘ সফরে স্বল্প পাথেয়ের জন্য কাঁদছি। আমি এমন এক সন্ধ্যায় এসে উপনীত হয়েছি, যার সামনে রয়েছে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। কিন্তু আমি জানি না আমার ঠিকানা কোথায়?
আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) মৃত্যু ও কবরের ভয়ে কত ভীত সন্ত্রস্থ থাকতেন তা বুঝা যাবে এ লাইনদ্বয় দ্বারা; "হে প্রভূ কি আমার হবে, সৎ আমল আমার নেই, অসৎ আমল অসংখ্য, পাথেয় স্বল্প"।
মৃত্যু পরবর্তী জীবন ও কবরের কঠিন ঘাঁটিকে আমাদের পূর্বসূরীরা যতটা ভয় পেত, আজ আমরা তা থেকে ততটা অন্য মনস্ক এবং নির্ভয়ে আছি। পৃথিবীর রং তামাশায় এতটা মত্ত হয়ে আছি যে ভুলেও কখনো কবরের কথা স্মরণ হয় না।
আমাদের এ অন মনস্কতার ব্যাপারে কোরআনের এ দিক নির্দেশনা যথার্থ; "মানুষের হিসাব-নিকাষের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদসীনতায় অন্য মনস্ক রয়েছে"। ( সূরা আম্বীয়া - ১)
ইউটিউব ভিডিও না আসলে এখানে দেখুন
বিষয়: বিবিধ
২৩৪৩ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে "আজ আমলের সময় হিসাবের সময় নয়, আগামী দিন হিসাবের দিন আমলের নয়”। (বুখারী)" ছোট্ট এই লাইনটি অনেক চিন্তার খোরাক দিয়েছে আমাকে।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ভালো লাগলো!
======
আমি বলছি সুধু সুন্দর না অসম্ভব সুন্দর হয়েছে বিষয়টি। জাজাকাল্লাহু খায়রান।
এই গাছের সব ডাব আপনার।
কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে যাবার আগে পারলারে গিয়ে সাজবার সময় বা শপিং মলে গিয়ে দুহাতে শপিং করার সময় কি আর সেটা মনে থাকে !
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা'লাকে ভয় করো! প্রত্যেকের উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা! আল্লাহকে ভয় করতে থাকো! তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন! তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে! ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্ন-বিস্মৃত করে দিয়েছেন! তারাই অবাধ্য! [সূরা আল-হাশর: ১৮-১৯]
জাযাকাল্লাহ খাইরান কাসীরা...
আল্লাহকে ভুলে যাওয়াই এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। একজন অফিসার যখন ঘুষ খান বা কোন চুরি করেন তখন তারমধ্যে বিন্দুমাত্র এই চিন্তা থাকেনা যে তাকেও একদিন হিসাব দিতে হবে।
যাত্রা হবে শুরু,
পথ-পাথেয় সঙ্গে নিও
সামনে ধূসর মরু৷
ভবিষ্যতে কি হবে?
কি করবো?
কি খাবো?
কই থাকবো?
উত্তরঃ কিছু হোক বা না হোক মউত হবে মউত।
সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এটাই।
অনেক ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর।
এটি বুখারীতে কোথায় আছে একটু জানালে খুশী হব। ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহু খাইরান শুধরিয়ে দেয়ার জন্য। এডিট করে দিচ্ছি।
(অবশ্যই আপনি জানেন, যে উনি একজন মুসলিমাহ্) । তবুও আপনার এরকম কমেন্ট করা মোটেও উচিত হয়নি। হতে পারে আপনার এমন কমন্টে এর কারনে সংশ্লিষ্ঠ ব্লগার আন-ইজি ফীল করতে পারে, বিতৃঞ্চাবোধ করতে পারে ব্লগে কমেন্ট করতে।
আপনি নিজের নিক নামের ক্ষেত্রে কী একটু ভেবে দেখছেন কখনও? আপনার নিকটা দেখতে কোন ধর্মের অনুসারীর মতো লাগে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন