বিখ্যাত গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
লিখেছেন লিখেছেন পবিত্র ০৭ জুন, ২০১৪, ০১:৪৪:১১ দুপুর
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর গিরিখাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। কিন্তু এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিংবা সবচেয়ে গভীর গিরিখাতও নয়। নেপালে অবস্থিত ‘কালি গন্দকি জর্জ’ নামক গিরিখাতটি আরো গভীর, আবার অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ‘ক্যাপারটি ভ্যালি’ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা এবং চওড়া।
এই গিরিখাতটি বিখ্যাত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর বিশালত্ব, দুর্গম অঞ্চল আর বিচিত্ররঙা পাথরে গড়া পাহাড়ের সমাবেশই একে মানুষের আকর্ষণের বস্তু হিসেবে তুলে ধরেছে।
বিখ্যাত গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রায় ২৭৭ মাইল বা ৪৪৬ কিলোমিটার লম্বা। আর কিছু কিছু জায়গায় এই গিরিখাত প্রায় ১৮ মাইল বা ২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা প্রায় ১ মাইল (৬০০০ ফিট বা ১৮০০ মিটার)!
সবচেয়ে মজার কথা হল, বিশাল এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে একটা আস্ত নদীই বয়ে গেছে, নদীটার নাম কলোরাডো।
আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এটি। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বেশিরভাগটাই ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক’ এর মধ্যে পড়েছে।
পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণেই কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে এই সুবিশাল গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। তবে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। বহু বছর লেগেছে এটার বর্তমান অবস্থায় আসতে। তবে ঠিক কতো বছর আগে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হতে শুরু করেছিলো, সে সম্পর্কে কিন্তু ভূগোলবিদরা এখনো তর্ক-বিতর্ক করেই যাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে ধরা হয় যে আজ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগে তৈরি হয়েছিলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। /
আসলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরগুলো স্তরে স্তরে সাজানো। আর এইসব এক একটা স্তরকে বলা হয় ‘প্লেট’।
কলোরাডো নদী থেকে উৎপন্ন বলে এখানকার প্লেটগুলোকে বলা হয় কলোরাডো প্লেট। ভুল করে এগুলোকে আবার খাবার প্লেট ভাবা যাবেনা। ) যাই হোক, এই প্লেটগুলো তৈরি হতেও কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর সময় লেগেছে।
প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নীচের স্তর। এই স্তর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শীর্ষ থেকে প্রায় ৫-১০ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে সবার প্রথমে কিন্তু এই স্তরটাই তৈরি হয়েছিলো। এরপর ধীরে ধীরে এই স্তর খাড়া উপরে উঠে যেতে থাকে। তৈরি করতে থাকে নতুন নতুন পাথরের স্তর।
আবার কলোরাডো নদী আর এর শাখা-প্রশাখাগুলো ছিলো ভীষণ খরস্রোতা। তাই এদের স্রোতের কারণে পাথর ক্ষয় হয়ে হয়ে নদীর নতুন গতিপথ তৈরি হতে লাগলো, আর ক্ষয়ে যাওয়া সেইসব পাথর থেকে নতুন নতুন স্তর সৃষ্টি হতে লাগলো।
এরপর আসলো বরফের যুগ। বরফ যুগের পরে বরফ গলে গিয়ে নদীতে পানির পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো। ফলে নদীর স্রোতও গেলো বেড়ে। এই স্রোতের কারণে পাথরের স্তর আরও দ্রুতগতিতে, আরও গভীর হয়ে ক্ষয়ে যেতে লাগলো।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে কলোরাডো নদী দিয়ে ভ্রমণের সময় চারপাশের দেয়ালে পাথরের যে স্তরগুলো দেখা যাবে সেগুলোও কিন্তু এরকম ক্ষয় হয়েই তৈরি হয়েছে। আর আজকের কলোরাডো নদীর যে গভীরতা, সেটিও হয়েছিলো প্রায় ১২ লক্ষ বছর আগে।
এরপর ৩০ থেকে ১ লক্ষ বছর আগের সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘটলো আরও পরিবর্তন। সেই সময়ে খুব অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিলো। একদম ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হতো। ফলে আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাই এসে জমা হতো কলোরাডো নদীর তলদেশ আর পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
বছরের পর বছর এসব ছাই আর লাভা জমা হয়ে হয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে জমে পরিণত হয় পাথরে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নতুন পাথরের স্তরগুলোই এসব লাভা আর ছাই দিয়ে তৈরি পাথরের স্তর।
বিষয়: বিবিধ
৩৮৬০ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১ম মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা নিয়েন!!
হারিকেনের তৈল শেষ হয়ে এসেছিল মনে হয়!
ফ্যানকেই হেলিকপ্টার মনে স্কাই-ডাইভ করেছিলেন!!
কিন্তু প্যারাস্যুট হিসেবে কি নিয়েছেন?!!)
হায় হায় ! চোট লাগেনি তো ?
এক কথায় অসাধারন ও চমৎকার পোস্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন।
তবে ভালো লাগলো মন্তব্যখানি দেখে!!
কিভাবে যাব?
সুন্দর পোস্ট ।মনে হয় অ্যা্রিজিনা চলে গেছি ।
সুন্দর ছবির সাথে বর্ণনা ।অন্নেক ধন্যবাদ ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন