দৃষ্টির হেফাজত ও খেয়ানত
লিখেছেন লিখেছেন পবিত্র ০৭ মে, ২০১৪, ০৮:৩৭:৪১ রাত
মানুষ যখন অশ্লীল ও অপকর্ম করার সুযোগ পায় এবং খারাপ কাজটি করার জন্য যা দরকার তার সবকিছু তার হাতের নাগালে থাকে, তখন মনে খারাপ কর্মের উদ্রেক হয়। আর দৃষ্টি মানুষের অন্তরে প্রথমে উদ্রেককে জাগ্রত করে।
মানুষের দৃষ্টি হল, ইবলিসের বিষাক্ত হাতিয়ার বা তীর। দৃষ্টি হেফাজত করতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের শিকার হতে হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দৃষ্টির ব্যাপারে অধিক সতর্ক করে বলেন: মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন”। [সূরা গাফের, আয়াত: ১৯]
সুফিয়ান (রহঃ) এর অর্থ সম্পর্কে বলেন, একজন লোক যখন কোন মজলিশে বসে আর রাস্তা দিয়ে কোন নারী অতিক্রম করতে দেখলে সে গোপনে তার দিক তাকায়। যখন লোকেরা দেখে যে লোকটি মহিলাটির দিকে তাকাচ্ছে, তখন সে চোখ সরিয়ে ফেলে তার দিকে তাকায় না। আর যখন তারা গাফেল হয়, তখন সে আবার তাকায়। একে বলা হয়, চোখের খেয়ানত।
রাসুল (সাঃ) বলেন: চোখের যেনা হলো দৃষ্টি। অর্থাৎ এমন জিনিস দেখা যা আল্লাহ কর্তৃক হারাম।
একজন বান্দাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দণ্ডায়মান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত এবং তাকে তার আমল বিষয়ে একদিন অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন,
“তুমি যখন একা থাক তখন তুমি এ কথা বল না, আমি একা, আমাকে কেউ দেখছে না। বরং তুমি বল, অবশ্যই আমার উপর পাহারাদার নিযুক্ত আছে। আর তুমি এ কথা মনে করো না যে, আল্লাহ ক্ষণিকের জন্যও বেখবর, কিংবা তুমি যা তার কাছে গোপন রাখ তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে গায়েব থাকবে”।
অনিচ্ছায় বা হঠাৎ দৃষ্টির কোন গুনাহ নাই। তবে শর্ত হল, সাথে সাথে চক্ষুকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর যদি সে তার দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করে, তখন তার উপর গুনাহ অবশ্যই বর্তাবে।
আলী রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘হে আলী! প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না। প্রথমটি ক্ষমার যোগ্য কিন্তু দ্বিতীয়টি নয়।’
চোখের হেফাজতের দ্বারা অন্তর নিরাপদ থাকে। কারণ, অন্তর ও চক্ষু উভয়ের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে, উভয়ের একটি অপরটি দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং একটি কর্ম অপরটিকে প্রাণচাঞ্চল্যটা দান করে। ফলে একটি সংশোধন হলে অপরটির সংশোধন হয়, আর একটি নষ্ট হলে অপরটি নষ্ট হয়।
যখন বান্দার দৃষ্টি নিরাপদ থাকে তখন তার আত্মাও নিরাপদ ও ঠিক থাকে, আর যখন মানুষের দৃষ্টি সঠিক না থাকে এবং খারাপ বস্তুর দিক দেখার কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার অন্তর বা আত্মাও খারাপ ও নষ্ট হয়ে যায়।
মানুষ যখন কোন কাজে শিথিলতা দেখায়, তখন তা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। তেমনি ছোট হারাম বা ছোট গুণাহের প্রতি শৈথিল্য তাকে বড় হারাম বা কবীরা গুণাহের দিক নিয়ে যায়। হারাম বা নিষিদ্ধ কাজে একজন মানুষ তখন লিপ্ত হয়, যখন অশালীন বস্তুর সাথে তার সংশ্রব থাকে। এ কারণেই শরীয়ত অশালীন অপকর্মের সকল উপাদানকে নিষেধ করে।
বর্তমানে ইন্টারনেট ও ফেসবুক অশালীন অপকর্মের জন্য একটি বড় উপকরণ বা মাধ্যম। অনেকে আবার এর পক্ষে দলীল পেশ করে বলে থাকে, এগুলো তো বাস্তব নয়। অথচ এটাও স্পষ্ট গুনাহের কাজ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাইতো আল্লাহ তাআলা দৃষ্টির হেফাজতের কথা আগে বলেছেন।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার ভালো লাগায় আনন্দিত হলাম ভাইয়া।
জাযাকাল্লাহ খাইরান কাসীরা!
যখন বান্দার দৃষ্টি নিরাপদ থাকে তখন তার আত্মাও নিরাপদ ও ঠিক থাকে, আর যখন মানুষের দৃষ্টি সঠিক না থাকে এবং খারাপ বস্তুর দিক দেখার কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার অন্তর বা আত্মাও খারাপ ও নষ্ট হয়ে যায়।
এটি চরম সত্য কথা। সব সমস্যার মুল এখানেই। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন