"দাম্পত্য নাটক না "ইবাদত"
লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৫:৪৫:২১ বিকাল
-হ্যাঁ। শিরীন, আজ ফিরতে একটু দেরী হবে। খেয়ে নিও
-আপনার হাত ছাড়া কখনো মুখে আহার গেছে?
"শুক্রবার। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত। আচ্ছা? ভুলেও কী কখনো ভেবেছিলাম কোনো অপরিচিত মেয়ে কখনো সুমন সাহেবের জন্যে ক্ষুধা পেটে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? কখনো কখনো ফোনে আহ্লাদী সুরে বলবে আর কত? আসবেন না? কখনো অভিমানে গাল ফুলিয়ে গাল একদম বার্গার বানিয়ে রাখবে।
ক্রিং! ক্রিং!! ক্রি!!! অ্যাঁ! ধ্যাত
দেয়ালে ঝুলন্ত ঘড়ির এলার্মিংয়ের শব্দে নজর দিয়ে নিজের উপর প্রচণ্ড বিরক্তি ঝাড়লাম। কী! রাত ১-টা। উফ! বিরক্তির মাত্রাটা ক্রমশ বাড়তেছে। এখনো আরো ২০টা পেপার্স বাকী। ২০x৫-১০০। মানে কাজ শেষ হবে রাত প্রায় ৩টায়। শালার মোবাইল কোম্পানীগুলাও...
"ঠিকভাবে কলমও চলছেনা শিরীনের কথা ভেবে।
"একা একা খাবেনা। রাত শেষে ভোর হলেও খাবেনা। মুখে তুলে খাওয়ানোর আগ পর্যন্ত ১লোকমাও খাবেনা। প্রচণ্ড অভিমানী।শিরীন অভিমান করলে ভাল লাগে ঐ তো... ঐ মাস খানেক হবে। কোন এক দুপুরে খাবারে গম্ভীরভাবে বলেছিলাম-একা একা খাঁও
-পারবো না
-খাঁও বলছি
-মজা করতেছেন?
-না মজা না, সত্যিই একা একা খাও
-খাবো না।
-ক,দিন খাবানা?
-যদ্দিন না খাওয়াই দেন
-অসুবিধা নাই মরো :/ তবুও খাওয়াবো না
"না। শিরীনের সাথে এভাবে আচরণ করা ঠিক হয়নাই। এভাবে মনে ভালবাসা চেপে রেখে মুখে মুখে শিরীনের সাথে অভিমান অভিমান খেলায় আর পারছিনা। ৩-দিন তো হলো। আর কত? খাইয়ে দেবো। জিতে যাক শিরীন। মনে মনে এগুলো ভেবে ভেবে বাসায় ফিরছিলাম। ঘরে এত্ত ঝটলা? কী হলো? সরেন সরেন, সাইড দেন। প্রস্তুত ছিলাম না শিরীনকে এভাবে দেখার। বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে শিরীন। স্যালাইন লাগানো। রাফাত ভাবীর কোলে। ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে শিরীনের?
"ঠাস! ঠাস!! করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গালে।
"থাপ্পড় খেয়ে বুঝলাম। নিজের মনের সাথে মুখের যুদ্ধে জিততে পারলেও শিরীনের সাথে ভালবাসার অভিমান খেলায় জিতেও হেরে গেছি। শিরীনের চেহারা দেখেছো? ৩দিনে কেমন কঙ্কাল হয়ে গেছে?। যেই তুমি স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়া ছাড়া একবেলাও খাওনি।সে তুমি ৩দিন? শিরীনের ফ্যাকাশে মুখটা দেখেছো? কখনো তো মলিন থাকেনি। ৩-দিন উপাসেও তার মুখে হাসি ছিলো। তুমি স্বামী হয়ে নিজের স্ত্রী মনের হাহাকার বুঝার চেষ্টাও করলানা? সে না তোমার অর্ধাঙ্গীনি? কীভাবে তুমি এত অমানুষ হইলা? এতটা দায়ীত্বহীন তো কখনো ছিলানা? তুমি কী ভুলে গেছো দাম্পত্যের ঐসব হাদিসগুলো?
"হাকাম ইবনু নাফি’ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।
"তুমিনা কালেমা পড়ে তার সব দায়ীত্ব নিছিলা। কালেমার শপথ ভুলে গেলা? সেও হতে পারতো নামমাত্র স্ত্রী। তোমার ফেরার অপেক্ষায় উপাস থাকতোনা। স্ত্রীর ভালবাসার কাছে হেরে গেলা? ছিঃ ছিঃ লজ্জা করেনা তোমার? এতটা নাটকীয়তা ভালনা। কখনোই ভালোনা। দাম্পত্য জীবনটা কোনো নাটক না। "ইবাদত" বুঝলা? ইবাদত" তুমি কী তিরমিযীর ঐ হাদিসটা ভুলে গেছো?
"তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। (তিরমিযী-১১৬২)।
"অনুশোচনার ঘুণপোকা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো আমায়।
তখন ইচ্ছে হচ্ছিলো নিজের মুখে নিজে থুঃ থুঃ ছিটাই।
"আসলে মাঝে মাঝে বাস্তবতা গল্পকেও হার মানায়।
"পেপার্স ভাজ করে ব্যাগে রাখি। বাসায় যেয়েও লেখা যাবে। ভোরেও লেখা যাবে। শীতের রাত। আগে শিরীন পরে কাজ
"হ্যালো... শিরীন আসছি...
বিষয়: সাহিত্য
১৭৫৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন