কর্পোরেট লাইফ (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:০৩:৩৯ সন্ধ্যা
"ডিভোর্স পেপার্স! খামটা খুলে বিশাল এক ধাক্কা খেলাম। বিশ্বাস হচ্ছেনা। ভুল হচ্ছেনাতো কোথাও?। নাকি আমি কল্পনা দেখছি? টানা ১৫ মিনিট যাবত পেপার্সের প্রতিটা লাইন। প্রতিটা শব্দ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। না। ভুল দেখছিনা কিছুই। কিন্তু কেনো?।
"হাতে হাত রেখে রেল লাইনের দু-পাশ ধরে কত শত বিকেল পাড়ি দেওয়া। কখনো কখনো পার্কের ছায়াঘেরা বেঞ্চিতে ভালবাসার খোসা ছাড়া বাদাম বিনিময়। কত সন্ধ্যায় গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নায় দুজনার জ্যোৎস্নাস্নান। কতশত গভীর জ্যোৎস্নায় দু-জনার গভীর অভিসার। কত রোমান্স। সব ভুলে গেলো?
"যা ভাবার পর ভেবো। আগে পেপার্সে সাইন করো।
"ইরীনার ডাকে অতীত স্মৃতির রাজ্য ছেড়ে বর্তমানের বাস্তব নগরীতে ফিরতে হলো। স্মৃতির আর্কাইভ থেকে আবারো মধুর অতীতগুলো রিপিট করে শুনিয়ে বললাম:-পাগলামী রাখো। ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে তোমার অফিসে এসেছি এগিয়ে নিতে। হুট করে ডিভোর্স চাচ্ছো? ভালোবাসার কী কোনো মূল্য নাই? কর্পোরেট লাইফ ওয়ার্ল্ড তোমায় ইউজ করবে পতিতা বানাবে। ভাবো.. ভাবো...
"-হুঁহাঁঃহাঁঃহাঁঃ ইরীনার এমন ডাকিনী টাইপ তাচ্ছিল্যের হাসিতে ফেটে পরে ফাকা রিশিপশন।
"খানিক নীরব থেকে ইরীনা বলা শুরু করলোঃ- কী বললা ভালবাসা? তুমি আমাকে ইউজ করোনাই? তোমার বাবার সম্পত্তির লোভ না থাকলে কী তুমি আমায় বিয়ে করতা? তোমার কলিগ "দীয়ার সাথে তুমি পরকিয়া করোনাই? তুমিই শিখাইছিলা লিভ-টুগেদার হলো "নারী স্বাধীনতার" অবিচ্ছেদ অংশ। তাড়াতাড়ি পেপার্সে সাইন করো। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দাও আমার। আমার কলিগ খুব স্মার্ট। ভাল বেতন পায়। তোমার সাথে ম্যাচিউর্ড করতে কষ্ট হচ্ছে...
"ইরীনার জবাবের কোনো বিরোধীতা করতে পারলাম না। আজ ইরীনার কথার কোনো জবাব আমার কাছে নেই। পানির কোন আকার থাকেনা। রঙ থাকেনা। যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে। যে রঙ দেওয়া হয় সে রঙ ধারন করে। আধুনিক সভ্যতার শ্রোতে গা ভাসাতে যেয়ে "ধর্মীয়" বিধিবিধান ভুলে নিজে এতদিন পশু ছিলাম। স্ত্রীও পশু হয়েছে। ভুলে গেছিলাম বাবা-মার ধর্মীয় কথা..
-বাপধন.. তোমার স্ত্রী হইলো তোমার শস্যক্ষেত্র। শস্যক্ষেত্রে বেড়া না থাকলে "গরু-ছাগলে খায়"
-বউ আর বই পরের হাতে গেলে ফেরত আসেনা। ফেরত আসলেও আগের মতো থাকেনা। বাপ...
"এখন, হাড়ে, হাড়ে টের পাচ্ছি মায়ের রাগের কারণ। কেনো ইরীনার চাকরীর কথা শুনে কষিয়ে ঠাস! ঠাস!! করে থাপ্পড় মেরেছিলো আমার গালে। মায়ের থাপ্পড়েই থেমে গেলে আজকে এই মুহুর্তটা আসতোনা আমার সামনে। বড্ড দেরী হয়ে গেছে। উপায় নেই। শান্তগলায় ইরীনাকে বললাম-ডিভোর্স চাও দেবো কিন্তু একটা শর্ত আছে। রাজী থাকলে এখনই সাইন করবো।
-কী শর্ত? বলো
-তাসনোভা আমার কাছে থাকবে।
-উফ!! বাবা বাঁচালে। পেপার্সে সাইন করো। নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে। তবুও সাইন করে বিদায় হও।
"ভেবেছিলাম ইরীনা "মা। আমাকে ডিভোর্স দিলেও মেয়েকে দিবেনা। খুব সহজেই দিয়ে দিল মেয়েকে। সাইন করে বেড়িয়ে আসলাম।বেরিয়ে দেখি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। "তাসনোভার জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। বাসায় যাচ্ছি। এখন মধ্যরাত। এ-রাতের আধারে এই যান্ত্রিক নগরী ছাড়বো মেয়েকে নিয়ে। মায়ের পা, ধরে মাফ চাইবো... তাহাজ্জুদ পড়বো।
"ধর্মান্ধ হবো। মৌলবাদী হবো। চলে যাবো আফগানীস্তান। আমার সন্তান ধর্মান্ধ হোক। মৌলবাদী হোক।..
"তাসনোভা হোক ধর্মান্ধ "তাসনোভা" কর্পোরেট "বেশ্যা" নই---
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
বিষয়: সাহিত্য
১৭২৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডিভোর্স যে দিল দেন মোহরের টাকার কি হল ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন