কর্পোরেট লাইফ (৩)

লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৫৭:১১ রাত



"ক্যাম্পাসে....

-সিয়াম, ইরীনা কইরে....? সপ্তাহ খানেক ক্যাম্পাসের আশপাশেও দেখিনা।

-বলিস কী? সত্যিই তুই জানিস না? ইরীনা কোনোদিন ভার্সিটিতে আসবেনা।

-কেন? বিয়ে হইয়া গেছে? নাকি স্ট্যাডির ইচ্ছা নাই?

-বিয়েও হয়নি। ষ্ট্যাডির ইচ্ছাও প্রবল। কিন্তু ইরীনার পক্ষে নাকি খরচ চালানো সম্ভব না-। বাদ ফাঁও প্যাঁচাল। ল ক্যান্টিনে যাই। চা খামু...

-ফাও প্যাঁচাল কী? এক থাপ্পড়ে তোর কাঁনের পর্দা ফাটাইয়া দিমু। প্রকৃত বন্ধু হইতে শিখ ব্যাটা। ইরীনা ভার্সিটিতে আসবেও। পড়বেও।গ্র‍্যাজুয়েশনও কম্পলিট করবে।

-হাঃ হাঃ হাঃ সুমন, তুই পড়াবি? যেখানে তোর খরচ চালাতে তোর পরিবারের অবস্থা টাইট। সেখান অন্য একটা মেয়ে? তাও তুই...?

-হ্যাঁ পড়াবো। ইরীনার পড়ার খরচ জোগাতে প্রয়োজনে চুরি করবো।- তাতে তোর সমস্যা কী?

-থাম.. এ-স্বার্থনিজ পৃথীবিকে যতক্ষণ দিবি, ততক্ষণই ভালো থাকবি। আবেগ দিয়ে গল্প উপন্যাস লেখা যায়। জীবন চলেনা। প্যাঁচাল বাদ দে, এখনো সময় আছে থেমে যা...

"ক্লোজফ্রেণ্ড সিয়ামের কথা শুনিনি। প্যাঁচালও বাদ দিইনি। থেমেও যাইনি। দ্রুত ছুটে চলি ইরীনাদের বাসায়। স্যাঁত স্যাঁতে রুমে বিছানার ঊপর জীর্ণ-শীর্ণ রোগাক্রান্ত একজন মহিলা। ঊনি ইরীনার মা।- হঠাৎ করে ওদের বাসায় আসার কারণে ইরীনা থতমত খেয়ে গেছে। ওর মুখে স্পষ্ট লজ্জার ছাপ দেখেছিলাম।- ওকে জিজ্ঞেস করলাম।- ভার্সিটিতে যাচ্ছোনা কেন?

-ইয়ে মানে... মায়ের অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। ভাইয়াও ইদানীং বাসায় টাকা পয়সা দেয় না। ড্রাগস এডিক্টেড হলে যা হয় আরকি! আসলে টিউশনীর টাকায় কিচ্ছুই হয়না। সংসার খরচ পড়ালেখার খরচ একসাথে মেইন্টেইন করা ইম্পসিবল। ইদানীং মায়ের শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। বেশীদিন বাঁচার সম্ভাবনাও নেই। খুব ইচ্ছে ছিলো বি-এ কম্প্লিট করে জব খুঁজে মাকে নিয়ে জীবনটা গুছিয়ে নেবো। তার আর হবেনা। মা-ও হয়তো বাঁচবেনা। নদীর স্রোতে বেওয়ারিশ খড়কুটোর মতো হয়তো ভাসতে ভাসতে আমার জীবন চলে যাবে। হ্যাঁ এটাই জীবন। বাদ আমার দিন..

"এক অসহায় ইরীনার কান্না মিশ্রিত জবাব।-

-ইরীনার কথাও বাদ দিইনি। মাথায় হাত রাখলাম। অভয় দিলাম। বললাম:- আগামীকাল ভার্সিটিতে আসবা। তোমার পড়ালেখার খরচ আমার। সংসার খরচটা টিউশনির টাকায় চালিয়ে নিও। ইরীনাদের বাসা থেকে ফিরে হলে যাইনি। বাসায় যাই। রাতে আমার সহজ সরল মাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে পাঁচ হাজার (৫০০০) টাকা মেনেজ করে সকালে হলে ফিরি। ইরীনার হাতে ৫০০০টাকা তুলে দেই। এভাবে মাকে প্রায়ই উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে টাকা নিতাম। বন্ধু-বান্ধবদের কাছেও দেনা করতে করতে ছ্যাঁচড় উপাধী পেয়েছিলাম। শুধু ইরীনার জন্য। মায়ের শখ করে পালিত হাস মুরগীও চুরি করে বিক্রি করতাম রাতের আধারে। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় ইরীনার ফোন:- "মা বেঁচে নাই" দ্রুত ছুটে যাই ওদের বাসায়। দাফন কাফন সম্পন্ন করি। ইরীনাকে নিয়ে আসি হলে...

"চলবে...

পর্ব (১)

পর্ব (২)

বিষয়: সাহিত্য

১৪৩১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380562
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৩৮
হতভাগা লিখেছেন : ইরীনাদের ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড মনে হয় আসছে সামনে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File