"আমি অনিল দাশ নই। আমি রামু চাকমা নই। আমি আমার মৃত্যু চাই..
লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২৩:৫১ রাত
-অবশেষে ডিশিসন। সুইসাইডই বেছে নিলাম..
"জানি ধর্মে এটা নিষেধ আছে। সৃষ্টিকর্তা বৈধতা দেয়নি। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় খুজে পাইনি।
"জীবন এত সহজ নয়, এখানে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। যুদ্ধ করো। জান প্রাণ দিয়ে লড়াই করো। মৃত্যুই সমাধান নই। বীরের মতো নিজেকে তুলে ধরো এবিশ্ব ব্রম্মাণ্ডের কাছে। তোমাকে খুঁজছে এ-বিশ্ব। মৃত্যু নই।-
-ইদানীং যারা এসব নীতিকথা শুনাতে আসে। ইচ্ছা হয় এক চটকানায় ওদের কাঁনের পর্দা ফাটায়ে দিই। জিহ্বাটা ছিড়ে ফেলি। চোঁখ দুটো তুলে ঐ রাস্তার ডাষ্টবিনে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে আসি। পরম তৃপ্তিতে খাক ঐ ক্ষুধার্ত কুকুগুলো।
"আমি ঐ সৈনিক, যে শুরুতেই লক্ষ লক্ষ ভ্রুণের সঙ্গে লড়াই করে জননীর ডিম্বানু দখল নিই। জননীও যুদ্ধ কম করেনি। দীর্ঘ ১০-মাস ১০-দিন আমার লাত্থি উষ্ঠা খেয়ে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে এ-হিপোক্রেটিক ধরাধামের মুখ দেখিয়েছে।
"ওয়ান ম্যান আর্মি" শব্দটা শুধু বাবা নামের রোবটিক মানুষদের "ক্ষেত্রেই"মানায়। তারা ক্লান্ত হয়না।অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অন্ন-বস্ত্র তাদের তেমন স্পর্শ করেনা কীভাবে সন্তানের জীবনের ধাপগুলো ঊচ্চতর থেকে উচ্চ শিখরে পৌছানো যায় সেটাই প্রধান লক্ষ্য ঐ-সব "ওয়ান ম্যান আর্মিগুলোর"
"যখন এক পা, দু পা হাটতে পারি বাবা হাত ধরে তুলেনা। যুদ্ধ শেখায়। ঊঠো যুদ্ধ করো। জীবনের যুদ্ধ কৌশলের শুরু বাবার সে হাটি হাটি এক-পা দু-পা থেকেই হাতে। যুদ্ধে সকল সরঞ্জাম নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন বাবা নামক ওয়ান ম্যান আর্মি।
"আমিও সে যুদ্ধক্ষেত্রের ঐ সৈনিক। ক্লাস ওয়ান থেকে যার যুদ্ধটা শুরু।সৈনিকের যুদ্ধাস্ত্র/ সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে দিনমজুর বাবাকে শখ আহ্লাদ, ছু'তে পারেনি। ওয়ানম্যান আর্মিটা নিজের বহুস্বপ্নের কবর দিয়েছেন। তবুও সেমিষ্টারে সেমিষ্টারে টাকা পাঠাতে কখনো দেরি করেনি। পারফিউম ইঊজ করতাম না। আর্মিটা বড্ড ক্ষেপে যেতো। ভালো দামী পারফিঊম এনে সৈনিকের কপালে চুমু খেয়ে বলতেন-
"সোনা বাপ আমার। এভাবে মন ভার কইরা থাকিস না।- যুগের সাথে তাল মিলাইয়া চলতে হয়। রাগ করিস না। অলটাইম পরিপাটি থাকিস। মন দিয়া লেখা-পড়া করিস। কিছুর হইলে দুই-এক দিন আগে জানাবি।- লজ্জা নিবিনা-।
"ওয়ান ম্যান আর্মিটার হাতে তখনো পারফিউম। দিনমজূর বাবার শরীরে ঘামের মিষ্টিগন্ধ। কাঁনের ভেতর ধ্বনিত হচ্ছে এক কমাণ্ডারের আদেশবাণী-।
.
"বহু প্রতিকুলতা পেরিয়ে যুদ্ধের সেমিফাইনাল ষ্টেজে এসে এ-গ্রেডে পাশ দিলাম।- খবরটা শুনে শক্ত সামর্থ্য আর্মি,টা সৈনিককে বুকে জড়িয়ে ,প্রচুর কেঁদেছিলো। ঠিক যেনো মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চার কাঁন্না।
"মায়ের ঊল্লাসের সীমা নাই।নিজের পালিত মোরগ হাঁস বিক্রি করে মসজিদে এতিমখানায় মিষ্টি-জিলাপি বিতরণের ধুম ফেলেছিলো রেজাল্টের খবর শোনে।-
"বুঝলেন ভাইজান? আমার কষ্টের দিন শেষ। আমার পোলায় ভার্সিটিতে এ-গ্রেডে পাশ দিছে। বিশাল বড় চাকরী হইবো। মজূরী আর ভাল্লাগেনা। চাকরীর পরে মানুষে আর মজুরের বাচ্চা মজুর কইবোনা।-
"একথা বলতে পাড়া-প্রতিবেশী কাঊকে বাদ রাখেনি বাবা-মা।
"গ্র্যাজুয়েশন কম্প্লিটের দীর্ঘ ৪ বছর গেলো। সিভি যুদ্ধও কম করিনি। বাসায় ফিরলে বাবা-মা'র সরল চাহনি। সাথে ছোট্ট একটা প্রশ্ন।- "কিছু হইলো বাজান?
"মুখে ঊত্তর আসেনা। গলাটা ধরে আসে। মাথাটা নিচূ করে রুমে যেয়ে একা একা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি।
"টেনশন নিসনা বাজান। "অনিল দাশ" তোর ৩-বছর পর পাশ দিয়া চাকরী পাইছে। "রামু চাকমাও দুই বছর পরে পাশ দিয়া চাকরী পাইছে। তুইও একদিন পাবি বাজান। কান্দিস না। ধৈর্য ধর বাজান, একটু ধৈর্য ধর। সবই ঠিক হইয়া যাইবো বাজান।
"মা-বাবার নিত্য মিথ্যা শান্তনা।
"দীর্ঘ ৪-বছর গেছে জানি ৪০ বছরে কিছুই ঠিক হবেনা " আমি বঙ্গভাগের বিরোধীতাকারী হিন্দুদের উত্তরসুরী অনিল দাশ নই। আমি ২০০ বছর আগে মায়ানমার থেকে ধাওয়া খেয়ে ভেগে আসা মগ দস্যু সন্ত্রাসীদের উত্তরসুরী "উপজাতি রামু চাকমাও নই। আমার জাতীয়তা বাঙালী। ধর্মীয় পরিচয় মুসলিম।
"বাঙালীর কোনো "কোটা নাই" মুসলিম "কোটা"? সেটা সম্ভবত বর্তমানে একমাত্র জেলখানা /কয়েদি সেক্টরে প্রযোজ্য। এছাড়াও কোত্থাও এ "কোটার" অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এ- বঙ্গদেশের কোত্থাও না।
"ইদানীং মা-বাবার শান্তনাগুলোও বড্ড বদ হজম হচ্ছে। পা,য়ের সেন্ডেলের তলার ফুটাটাও জানান দিচ্ছে-তুই এপৃথীবির একটা বোঝা ছাড়া কিচ্ছু না। আদমশুমারীর হাজিরা দেওয়া ছাড়া এদেশে তোর কোনো কাজ নাই।-তবে এ মুহুর্তে "মায়ানমার যেয়ে রোহিঙ্গাদের মতো মরলে অন্তত "আত্বহত্যার মতো মহাপাপের বোঝা কিছুটা হালকা হতো।
"আমায় ক্ষমা করুন, জননী- আমায় ক্ষমা করুন পিতা, আমায় ক্ষমা করুন কমান্ডো, ক্ষমা করুন "ওয়ান ম্যান আর্মি"- আমি লক্ষ লক্ষ ভ্রুণের সাথে লড়াই করে এ-ইন্ডিয়ান "অনিল দাশ" বার্মিজ সেটেলার "রামুর চাকমার" "কোটার" চিপায় আজ জীবনযুদ্ধে এক পরাজিত লজ্জিত সৈনিক..
"প্রিয় পিতা ও মাতা।-ইতি- আপনার প্রিয় পুত্রধন।
.
বিষয়: সাহিত্য
১৯৪৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ ১০-মাস ১০-দিন না এটা হবে ৯ মাস ১০ দিন।
আত্মহত্যা করার সময়ের সেলফি আপলোড করে একটা পোস্ট দিবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন