"সাপ-নেঊল, অথবা এক পাপমুক্ত সম্পর্কের গল্প"
লিখেছেন লিখেছেন নূর আল আমিন ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:১২:৫৭ দুপুর
দু'জনে শেষ বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম বিয়ের পনের দিনের মাথায়। এক বর্ষায়। মেহেদী রাঙ্গানো তুল তুলে নরম হাত, ধনুকের মতো নাক,কুচঁকুঁচা কালোচুলের মিষ্টি ঘ্রান, রঙ্গীন মার্বেলের মত চক্ষু জোড়া। আর চক্ষু শীতলিনী শ্যামবর্ণের এক মায়ভরা লাজুকতা মিশ্রিত মুখ।- এগুলো সব আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার ফল, স্বপ্নের বাস্তবায়ন,কখনো কখানি বর্ষায় একাতিত্বে এ-পাশ ও-পাশ, হাহুতাশের দিনগুলোর "কবর রচনার" দিন।
"ঊম্মাহ!!? এমনভাবে ভ্যাবলার মতো চাইয়া কি ভাবেন?-কি হলো? কানে যায়না?-শিরীনের ফ্রি কাঁনমলা খেয়ে ভাবনার জগত ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। সাবান মাখিয়ে ঘষে ঘষে আমাকে এলিয়েন বানায়ে ফেলেছে । যদিও এলিয়েন বানানোটা শিরীনের কাছে নতুন কিছু না। তবে আজ আমি ছিলাম একদম সম্পুর্ণ অপ্রস্তুত।
"-সেই হাত, সেই নাক, সেই, সেই চুল, সেই চোঁখ, সেই মূখ, কিচ্ছুই বদলেনি কমেনি কিচ্ছুই, বহুগুণে বেড়ে গেছে "ভালোবাসাটা" ভিজতে ভিজতে কখন যে স্মৃতির অতল গহ্বরে ডোব দিলাম বুঝিইনি। অপ্রস্তুতির জন্য আজ "বৃষ্টির" খুব প্রয়োজন ছিলো। স্মৃতির আর্কাইভ ঘাটতে ঘাটতে এটাও দেখলাম কলেজে লাইফে হিজড়া ছিলাম! কারণ গার্লফ্রেণ্ড নামক কোনো আধুনিক(!) "বস্তু" আমার ছিলোনা বলে বন্ধুরা আদর (!) করে এ-উপাধীতে ভূষিত করতো। তখন হিজড়া শব্দটা শুনে ততটা খারাপ লাগতোনা। এখন যত্তটা খারাপ লাগে ওদের সাংসারিক জীবনের অবস্থার কথা শুনে! ওরা কেঊই তেমন সুখে নাই। রিদ্ধ'র প্রানপ্রিয় স্ত্রীতো ডিভোর্সই দিয়ে চলে গেছে। বাকীদের অবস্থাও একই কারো স্ত্রীর সাথে বনিবনা হচ্ছেনা। তো, কারোর স্ত্রী স্বামীকে পরকিয়ায় আসক্ত বলে সন্দেহ করছে! তো স্বামী করতেছে স্ত্রীকে। কিন্তু বিয়ের আগে সবার স্ত্রী'রাই ছিলো একে অন্যের হৃদপিন্ড স্বাস, প্রশ্বাস, নিশ্বাস! বর্তমানে এখন যেনো সংসার না একই খাচায় বিষাক্ত সাপ-নেঊলের বসবাস।
"উফফ!! কি এত্ত ভাবেন? বউ মইরা গেছে? ভাবাভাবি বাদ দেন। প্রচণ্ড খিদা লাগছে। খিঁচুড়ি কি ঠান্ডা কইরা খামু? -না ভাবনার জগৎ'টা মন্দ না। কিন্তু জগৎ থেকে ফিরতে হলো অর্ধাঙ্গিনীর চঞ্চলীয় ডাকে। ওকে খাইয়ে দেওয়াটা অবশ্য নতুন কিছু না। এজন্য অবশ্য বঊ পাগল উপাধীও পেয়েছি ভাবীর কাছ থেকে। যে যা ইচ্ছা তা বলুক। আমাদের প্রিয় রাসুল সাঃ ঊম্মুল মু'মেনিনদের নিজহাতে খাওয়াইয়ে দিতেন। আর আমরাতো সেই রাসুল সাঃ এর উম্মত। আমরা যদি স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ না করি উম্মত দাবী করবো কিভাবে?
"-সম্ভবত মুসলিম শরীফের হাদিসে আছে।- "স্ত্রী'র মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেওয়া সহস্র দীনার সদকা করা সমান।-
"এছাড়াও রাসুল সাঃ বলেছেনঃ- "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তিই উত্তম যে নিজ স্ত্রীর নিকট উত্তম ( তিরমীযিঃ ১১৬২)
"হঠাৎ, এটাও ভাবি এত্ত এত্ত দীনার সদকা করার চান্স কিভাবে পেতাম যদি সকল রাসুলগণ বিয়ে না করতেন। পবিত্র একটা সম্পর্কের মাধ্যম তৈরী করে আমাদেরকে সভ্যতা শিক্ষা না দিতেন? জীব বলতেই জৈবিক চাহিদা আছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পৃথিবীর জীবজগৎয়ের আকর্ষণ ছিলো, আছে, থাকবে, ওপেন সেক্স তো রাস্তার কুকুরও করে। কিন্তু মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। যারা সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ জীব। মহান আল্লাহ তাদের দিয়েছেন ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা। তাইতো মহান রব মানুষের পবিত্র সম্পর্কের আদেশ দিয়ে বাণী নাজিল করেছেনঃ-
"তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (নরনারী) তাদের বিয়ে দিয়ে দাও। এবং তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন তাদেরও। তারা যদি নিস্বও হয়। নিজ আল্লাহ অনুগ্রহে আল্লাহ তাদের সচ্ছল করে দিবেন(সূরা আন নূর ৩২-৩৪)
"আমি যে কোটিপতি তা নই,সম্পদ! সে তো দু-চালা টিনের ঘর, আর ক্ষুদ্র ১-টা ব্যাবসা! তবুও ভালবাসার কমতি নাই,যেখানে ৩বছর আগেও শিরীনকে চিনতাম না! তার অস্তিত্বই ছিলোনা! ভাবনা থেকে সরাতে পারি না মহান রবের ঐশী বাণীঃ
"স্ত্রীরা তোমাদের পোষাক, এবং তোমরা তাদের পোষাক"(সূরা বাকারাহঃ- ১৮৭)
"কোনো ভাবেই ভাবনাগুলো শেষ হতে চাচ্ছেনা। আজকে যেনো বড্ড ভাবুক হয়ে গেছি মনে হচ্ছে। যে হারে রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর ঘরে নাই বিদ্যুৎ। আধো অন্ধকার আধো আলো এমন একটা পরিবেশে ভাবুক না হয়ে উপায় আছে? জানি ভাবলে ভাবা শেষ হতে চাইবেনা। দু,জনের রোমাঞ্চতা দেখে বিদ্যুৎ মশাইও হয়তো লজ্জিত হয়ে চলে গেছে। তাড়াতাড়ি আসবে বলে মনে হচ্ছেনা। না এই মুহুর্তে বাস্তবতা ছেড়ে কোথাও যাওয়া উচিৎ হবেনা। দু-পাশে দু-জন মধ্যে জ্বলন্ত মোম। আলো আধারীর খেলায় দু-জনার প্রেমগুলো গাঢ় হচ্ছে। এ যেনো চক্ষুশীতলিনীর চক্ষু শীতল করা দৃষ্টিতে পবিত্র ভালোবাসার চুক্তি সাক্ষর। চক্ষুশীতলিনীর দৃষ্টি যেনো যুগ যুগান্তরের পবিত্র প্রেম বিনিময়। সে এক পবিত্র সুখ।
"না। চক্ষুশীতলিনীর প্রেমে কোনো পাপ নাই" মহান মালিক প্রদত্ত "ভালাবাসায়" কোনো খাদ নাই"
বিষয়: সাহিত্য
১৩১৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জান্নাতি ভালোবাসা।
সুবহানআল্লাহ!
ভালো লাগলো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন