অন্তরালে অন্ধকার
লিখেছেন লিখেছেন সিমানা ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৫:০৯:৫৩ বিকাল
পর্ব-৪
নাবিলা ল্যাপটপে জরিনার ছবি আপলোড করে, হালকা বিবরণসহ প্রতিবেদন লিখতে শুরু করলো । কিন্তু সাদিয়া প্রবেশ করার কারণে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেললো, এখন জানালে ওকে না নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইবে, কথায় কথা বাড়বে।
সাদিয়া নাবিলার পাশে বসলো,
-নাবিলা কথা আছে, জরুরী।
-কী কথা?
-দাদীকে জরিনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, চাচী আর আম্মুও ছিলো।
আগ্রহী হয় নাবিলা,
-কী বললো?
-চাচী বললো জরিনা নাকি কোন এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে। অনেক খুঁজেছেন মেওর চাচা সহ সবাই। পায়নি।
নাবিলা মনোযোগী কণ্ঠে,
-ওনাদের কথায় তোমার কী মনে হলো যে ওনারা এই নাটক বিশ্বাস করেছেন?
-হ্যা, বিশ্বাস মানে কী, যেন “এক আত্মা দো দীল” চাচীতো জরিনাকে এতো এতো বকা দিলো, সাথে দাদীও।
-তোমাকে খবরটা দিয়েছিলো কে যেন?
-মুনিরের সৎ বোন মাশকুরা।
-আচ্ছা ও কী কোন হেল্প করতে পারবে?
-চলো ওদের বাসায় গিয়ে কথা বলি।
-না তুমি ওকে এখানে ডাকো।
-আসবে?
-কেন আসবেনা? তুমি না ওর হবু ভাবী। নাবিলার ঠোঁট জুড়ে দুষ্টুমীর হাসি।
সাদিয়া অনুরোধের সুরে,
-সত্যটা কিন্তু সকলের সামনে আনতেই হবে, নাবিলা। চরিত্রহীন ঐ লোকের সাথে......
মাশকুরা প্রবেশ করলো, সাদিয়া খুশি হয়ে,
-দেখো ও অনেকদিন বাঁচবে, এসো বসো মাশকুরা এতোক্ষণ তোমার কথায় বলছিলাম।
মাশকুরা হাসি মুখে,
-শুনলাম কাল তোমাদের সাথে আম্মুর দেখা হয়েছিলো, আমার সাথে দেখা না করে চলে এসেছো, তাই আমি আসলাম।
-ভালো করেছো। নাবিলা বললো।
সাদিয়া বললো আমি নাস্তা নিয়ে আসি নাবিলা তুমি ওর সাথে কথা বলো।
নাবিলা কোনরকম ভূমিকা না করে,
-জরিনার রুমটা কখন কখন খোলা হয়?
-শুধু খাওয়ার সময়।
-প্রত্যেক বেলাতেই কী খাবার দেয়া হয়?
-আমি সঠিক জানিনা।
-তুমি কখনো খাবার দিয়েছো?
-না আমাকে কখনো যেতে দেয়না, আর খাবার কে কখন দেয় আসলে সেটাও আমি জানিনা।
-মাশকুরা তুমি কী বুঝতে পারছো, তোমার পুরো পরিবার একটা জঘণ্য ক্রাইমে জড়িয়ে গেছে?
চুপ হয়ে মাথা নিচু করে মাশকুরা, ওর দৃষ্টি ছলছলো, ধরা গলায়,
-নাবিলা আপু আমি সেটা বুঝি, আম্মু যা করছে শুধুমাত্র সংসারের অশান্তি কমাতে আর আমার মুখ চেয়ে।
সাদিয়া খাবারের সরঞ্জাম হাতে নিয়ে ঢোকে। মাশকুরা বলতে থাকে,
-এই ঘটনার আগে এমন কোন দিন নেই যেদিন আব্বু আম্মুকে মারেনি, আর ভাইয়াও একটু এদিক সেদিক হলেই আম্মুকে টর্চার করতো, জরিনার সাথে এরকম হওয়ার পর আম্মু যখন পুলিশকে জানাতে চেয়েছিলো, তখন ভাইয়া......
মাশকুরা এবার একটু জোরেই কেঁদে ফেলে, সাদিয়া ওর মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়, নাবিলা নির্বাক, মাশকুরাকে স্বাভাবিক হওয়ার সময় দেয়। একটু পরে নাবিলা মলিন কণ্ঠে,
-মাশকুরা তুমি আমাদেরকে সবটা বলো, আমি কথা দিচ্ছি তোমার আম্মুকে কোন সমস্যায় ফেলবোনা......
মাশকুরা বিব্রত কণ্ঠে,
-ভাইয়া খুবই বাজে একটা কথা বলেছিলো, যে জেল যদি খাটতেই হয় তাহলে মাশকুরাকেও জরিনার মতো করে ধরা দেবো। জিহবায় কামড় দেয় নাবিলা, সাদিয়াও। একটু চুপ থাকে তিনজনই।
নাবিলা বললো,
-তুমি আমাদেরকে সাহায্য করবে?
-কী রকম?
নাবিলা কিছু বলার আগে সাদিয়া বললো,
-আমরা ছাদে চলে যাই কেউ এসে পড়বে।
নাবিলা সম্মতি জানালো।
ছাদের এক কোণে তিন জনই দাঁড়ালো, নাবিলা বললো,
-এটা এমন একটা প্লান, যেটাতে ডু অর ডাই টাইপের ফলাফল। তোমাকে যে কাজটা করতে হবে তা হলো জরিনাকে ঐ ঘর থেকে বের করার জন্য ঐ তালার চাবিটির নকল কপি বানাতে হবে।
-আমি কপি করেছি গতকালই, সাদিয়া আপু অনেকদিন আগে বলে রেখেছিলো।
-ও তাহলে তো এক ধাপ এগিয়ে, বাড়িতে যেন তোমার বাবা আর ভাইয়া থাকে। আমরা যখন যাবো তার পনেরো মিনিট আগে তোমাকে ফোন করে জেনে নেবো তারা আছে কী না ঠিক আছে?
ভীত কণ্ঠ মাশকুরার,
-হুম!
-ভয় পেওনা তুমি, চাবিটা আমাকে দাও, চাবি ঠিক আছে তো?
-হ্যা আপু। (আগামী পর্বে সমাপ্য)
বিষয়: বিবিধ
১০৮৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন