অন্তরালে অন্ধকার
লিখেছেন লিখেছেন সিমানা ২৪ মার্চ, ২০১৪, ০৯:১০:৪৫ সকাল
পর্ব-৩
গভীর রাত। চারেদিকে শুনশান নিরবতা। নাবিলা, সাদিয়া যে রুমে শুয়েছে সেখানে ওরা ছাড়াও আরো তিনজন ঘুমাচ্ছে। নাবিলা উঠে বসলো। যেভাবেই হোক নাবিলা এখন মেওর বাড়ীর বন্ধ ঘরের জানালায় যাবে, সাদিয়ার অনুমানটা সঠিক কিনা দেখার জন্য। ওড়না মাথার উঠিয়ে দিলো, গলায় ক্যামেরাটা ঝুলিয়ে নিলো, হালকা করে মুখটাও ঢাকার চেষ্টা করলো, কেউ যেন একবার দেখেই চিনে না ফেলে এই জন্য। খুবই সন্তর্পনে পা ফেলে মেইন দরোজা পর্যন্ত গেলো, কিন্তু এই দরোজায় বেশ বড়োসড়ো একটা তালা ঝুলছে একটু হতাশ হলো নাবিলা, কিন্তু পরক্ষণেই দরোজার পাশে লোহার সাথে একটা চাবি ঝুলানো দেখে খুশি হলো। অনেক ঝক্কি ঝামেলা শেষে মেওর বাড়ি বন্ধ জানালার পাশে, কিন্তু নাবিলা ভয় পাচ্ছে কারণ এরকম পরিস্থিতে সে কখনই পড়েনি। জানালাতে টোকা দিলো, কোন সাড়া নেই কারো, অনেকটা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও, নাবিলা একটা করে টোকা দিচ্ছে আর বারবার চারপাশে দেখছে কেউ দেখে ফেললো কীনা । না কারো কোন সাড়া নেই। নিরুপায় হয়ে একটু আড়াল হয়ে দাড়ালো ভাবলো সাদিয়ার ধারণা সত্য নয়। ও যতটুকু জেনেছে তাতে মেওর বাড়ীর কাজের মেয়েকে ধর্ষণের পর আটকে রাখা হয়েছে একটা ঘরে, কিন্তু কোন ঘরে তা জানা নেই। আর এই ধর্ষণের কাজটি করেছে মেওরের বড় বউয়ের একমাত্র ছেলে মুনির। মেয়েটিকে আটকে রাখার কারণ হলো সে যেন কখনো কাউকে কিছু বলতে না পারে। নাবিলা ভেবেছে ওকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে, ওর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরী করবে, আর মুনিরের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কাজের মেয়েটার বয়স নাকী ১৪ বছর। সবটাই নাবিলার শোনা কথা, সাদিয়ার কাছে শুনেছে। নাবিলা ফেরার জন্য পা বাড়ায়, ঠিক তখনই একটা ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পায়,
-কে?
সক্রিয় হয়ে ওঠে নাবিলার পুরো অবয়ব।
একটু নিচু স্বরে,
-আমি, আমি সাদিয়াকে চেন? ওর বোন।
-কী চান?
-তু...তুমি একটু জানালাটা খোল আমি দু মিনিট কথা বলেই চলে যাবো।
জানালা খুলে গেলো, বাইরের রাস্তার আলো মেয়েটির মুখমন্ডলে। জীর্ণ, শীর্ণ, মলিন মুখখানা, তাতে জখমের দাগ স্পষ্ট। নাবিলা ছবি তোলার চেষ্টা করলো, আলোর পরিমান কম হওয়ায় ছবিটি ঝকঝকে না হলেও অস্পষ্ট নয়। প্রশ্ন করার আগে মোবাইলের অডিও রেকর্ডার অন করলো,
-নাম কী তোমার?
-জরিনা।
-রাতে খেয়েছো?
-না
-তোমাকে আটকে রেখেছে কেন?
-আমি কাউরে যেন কিছু কইতে না পারি।
-কী বিষয়ে?............
কথা বলেনা জরিনা, নাবিলা বললো,
-তোমার ভয় নেই আমি কাউকে কিছু বলবনা, আর আ... মি তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবো, তোমার বাবা মার সাথে দেখা করাবো......
ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে জরিনা, আর ভেতরে অন্য কোন ঘরের দরোজা খোলার আওয়াজ পেয়ে, জরিনা খুব দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিলো।
নাবিলা আর ওখানে দাড়ানো সঙ্গত মনে করলোনা, দ্রুত পা ফেলে নানা বাড়ির পথ ধরলো।
বিষয়: বিবিধ
৯২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন