কবিতা ঃএক ফোঁটা জল। উৎসর্গ - ফেলানি বেগম
লিখেছেন লিখেছেন হলুদ রঙ মেঘ ২২ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫১:৩৯ দুপুর
কিশোরী ফেলানি------
জীবিকার লাগি রাত্রি-দুপুর খাটিয়া করিত পার,
দুবেলা দুমুঠো ভাত ফেলানির আজন্ম সাধ!
কাজের খোঁজে দিল পাড়ি পরদেশ
সীমান্তে রক্তখেকো ক্ষিপ্ত বাহিনীর চক্ষু দিয়ে ফাঁকি
বাবাসহ পার হয়ে গেল আপন দেশের মাটি।।
জীবিকার লাগি জুটে নিল কাজ দাদা-বাবুদের ইটের ভাটায়,
আপন হাতে নরম মাটির সাথে গড়িয়া মিতালী
চালিয়ে যেত কাজ রাত্রি-দুপুর সারাবেলা সারা-রাত,
দুচোখ মেলে আকাশের পানে খুঁজিত সুখের নীল
নীল আকাশে আঁধার কাল মেঘের ভেলা উড়ে যেত বাতাসে
ভাবিত ফেলানি এমনি হয়ত তাহার জীবনের আঁধার
উড়ে যাবে ভোরের বতাসে মিশে যাবে ঘাসে
সবুজ পাতার নাওয়ে আড়িয়াল বিল পাড়ি দিয়ে দিয়ে
ধরা দিবে সেই অধরা সুখ মাঘের কৌকিল।
অনেক বছর পরে ফেলানির হাতে পোঁছাল মায়ের এক খানি চিঁঠি
বাবা সহ যেতে হবে মায়ের কুঁড়ে ঘরে বাজবে সানাই,সাজবে বিয়ের সাজ।
নতুন জীবনের আশা ফেলানির মনের ভাষা, প্রকাশ করিল তারি অস্রুস্নাত দু-নয়ন
এবার সুখ আসে ধরা দিবে আকাশের নীলে শঙ্গ-চিল শালিকের বেশে।
আচেনা সুখের খোঁজে বাবাসহ কিশোরী
রওনা হইল ‘কার্তিক- নবান্নের দেশ’ এই বাংলায়
বহুপদ পাড়ি দিয়ে, শত কষ্ট বাঁধা দূরে ঠেলে
লুকায়ে কিশোরী সীমান্ত কাঁটাতারের পাশে, ঝোপ-ঝাড়ের ভিড়ে,
সীমান্ত রক্ষী হায়েনা,হ্রিংস্র প্রানিদের দৃষ্টির অগোচরে
ফেলানির বাবা কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করিল নিরাপদে,
এবার মাতৃভূমির স্বাদ নিবার পালা বধুবেশি ফেলানির
শক্ত করিয়া কাঁটাতারের বেড়া ধরিয়া আপন হাতে,
উপরে উঠিয়া দেখিলো ফেলানি, সেই চিরচেনা নীলাকাশ বাংলার
সবুজ মাঠের ফসল ডাকছে ‘ফেলানি আয় ঘরে ফিরে আয়’ !
সুখ যদি কভু নাহি পারি দিতে, তবু দিব বর্ষার ঘোলা জল,
আরো দিব ফুল, মিষ্টি-বকুল, নিশির শিশির
হঠাৎ অগোচরে কিশোরীর লাল জামা আটকাল সাম্রাজ্যবাদীদের কাঁটাতারে,
অজানা আশঙ্কা লুকায়িত ভয়ে কিশোরী দিল চিৎকার,
ওমনি জেগে ওঠে ঘুমন্ত হায়েনা, হ্রিংস্র জানোয়ার!
কিশোরীর রক্তে লাল করে দিল সাম্রাজ্যবাদের কাঁটাতার।
মৃত্যু ক্ষুধায় কাতর পিপাসার্ত বধুবেশী ফেলানি
বলিল হায়েনার তরে----
ভাই দেবে আমায় ‘একফোঁটা জল’
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন