জাফর ইকবাল স্যারকে ফোন দিতে হবে...
লিখেছেন লিখেছেন Medha ২৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৯:৪৫ সকাল
এটি একটি ছোট গল্প এর সাথে জীবিত বা মৃত কারো কোনো সম্পর্ক নাই।
---------------------------------------------------------------------
সিলেটে পড়ার সময় আরিফ ছিলো ভার্সিটির পরিচিত মুখ। গণিত অলিম্পিয়াড, বিতর্ক, বই পাঠ প্রতিযোগিতা সব কিছুতে প্রথম সারির অংশগ্রহণকারী, পরে সে হয়ে গেলো আয়োজনকারীদের একজন। জাফর ইকবাল স্যারের ক্লোজ সার্কেলটার অল্প কয়েকজন ছাত্রের একজন। স্যারের এক ভক্তের সুবাদেইতো গ্রামীণফোনে মোটা বেতনের চাকরীটা হয়ে গেলো, মাষ্টার্সের থিসিস সাবমিট করার আগেই।
এখন আরিফ সারাদিন অপেক্ষা করে কখন অফিস শেষ হবে। সারাদিনই নাদিয়ার কথা ভাবে সে। রুপনগরে নতুন উঠা এপার্টমেন্টের বাসাটা তাকে সারাদিন চুম্বকের মতো টানে। অফিসের গাড়ি যখন তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তখন লিফটের জন্য অপেক্ষা করতেও তর সয় না। অসহ্য মনে হয়। অবশ্য সপ্তাহের কোন কোন দিন তার বউ নাদিয়া দেরী করে অফিস থেকে ফেরে, ঐসব দিনে সে বাইরের কাপড় না খুলেই বসে বসে টিভি দেখে।
টিভিটা তার খুব প্রিয়। আটচল্লিশ ইঞ্চি প্লাজমা টিভিতে একাত্তর টিভি এতো পরিস্কার দেখায়, জীবন্ত হাই ডেফিনিশন! পরদিন শনিবার ছুটি, তাই অনেক রাত হয়ে গেলেও ওরা দুজনে টিভি দেখছিলা। জামাত শিবিরের তান্ডব, বাসে বিএনপির লোকজনের দেয়া আগুন।
এমন সময় দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ শুনে আরিফ একটু অবাক হয়, সিকিউরিটি তো ফোন করে কিছু জানায়নি। দরজা খুলে দেখে এমদাদ সাহেব এবং তার সাথে দুইজন মোটাসোটা পুলিশ অফিসার দাড়ানো। একজনের দিকে প্রথমেই চোখ চলে যায়, জঘন্য রকমের হোতকা ও কালো। চেহারাটা ভাবলেশহীন, কিন্তু নোংরা ভাব চোখেমুখে। ভয় লাগে, ঘৃণাও লাগে।
এমদাদ সাহেব একই এপার্টমেন্টের আটতলায় থাকেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যাবসায়ী। মাঝে মাঝে লিফটে অথবা নিচের পার্কিং এ দেখা হয়। আরিফ খেয়াল করেছে লোকটা সুযোগ পেলেই নাদিয়ার শরীরে চোখ বুলিয়ে নেয়।
ভেতরে ঢুকে এমদাদ সাহেব আর একজন পুলিশ অফিসার সোফায় বসে, মোটকা অফিসারটা বুকশেলফের বইগুলো দেখতে থাকে। এমদাদ সাহেব পরিচয় করিয়ে দেন, ইনি সালাউদ্দিন সাহেব আমাদের মীরপুর থানার ওসি। আর উনি ফখরুল ভাই, সেকেন্ড অফিসার।
ভোটকা সেকেন্ড অফিসার ফখরুল ততক্ষণে বুকশেলফ থেকে কোরআন, মকসুদুল মোমেনীন আর বেহেশতি জেওর তিনচারটা বই নামিয়ে টেবিলের উপর রাখে। মোটা ভুড়ির জন্য ঝুঁকতে তার
একটু কষ্ট হয়। ওসি সাহেব একবার নাদিয়া আরেকবার আরিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। পুরুষ্ট গোঁফে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করেন,
তো আরিফ সাহেব কতদিন থেকে জামাত করেন?
আরিফ জোর প্রতিবাদ করতে যায়, অনেক কথা বলে উঠে। এমদাদ সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, বুঝতেই পারছেন আরিফ সাহেব এইসব জিহাদী বই আপনার
বাসায়, কি ডেঞ্জারাস সিচুয়েশনে পড়েছেন আপনি। এখন থানায়
নিয়ে আপনাকে বিস্ফোরক আর ভাংচুর মামলায় আসামী করা হবে। রিমান্ড হবে জেল হবে, আপনার চাকরিও চলে যাবে। আপনার জন্য পুলিশ আদালত বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ভাবীর অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেন। আপনাদের দুজনের পুরো জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে।
কিন্তু আপনি যদি কোঅপারেশন করেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না। কেউ কিছু জানবেও না। ডিসিশন আপনার।
বলতে বলতে এমদাদ সাহেব আবারও নাদিয়ার উপর চোখ বুলান।
পরের ঘটনাগুলো যেন সিনেমার পর্দার মতো একেরপর এক ঘটে যায়। আরিফ সোফায় স্থবির দর্শক হয়ে বসে থাকে।
কাঁপতে থাকা হাত দিয়ে সে ডাচ-বাংলার চেকে সাইন করে দেয়। এবং তারপর পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায়।
একটা কথা বলার শক্তিও সে জোগাড় করে উঠতে পারেনা। কয়েকবার তার বুঝে আসে না এসব কি বাস্তব, না স্বপ্ন
দেখছে সে। নাদিয়ার হাত ধরে ওসি সালাউদ্দিন সাহেব বেডরুমে চলে যান। নাদিয়া যেতে চায়নি,
কিন্তু ওসি সাহেব গাট্টাগোট্টা শক্তপোক্ত মানুষ। একহাত নাদিয়ার পেছনে রেখে তিনি অনেকটা ঠেলেই নিয়ে যান তাকে।
পরে ওসি সাহেব বেরিয়ে এলে এমদাদ সাহেব ও সেকেন্ড অফিসার ভোটকা ফখরুলও বেডরুমে যায় আর পরে বেরিয়ে আসে।
আরিফ ও অন্যরা সবাই মিলে আটচল্লিশ ইঞ্চি এলসিডি স্ক্রীণে একাত্তর টিভি দেখতে থাকে। সেকেন্ড অফিসার ফখরুল ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল এনে ওসি সাহেবের গ্লাসে পানি ঢেলে দেয়।
পরদিন অফিসে আরিফ অসহ্য রাগে দুঃখে ভেঙ্গে যেতে থাকে। এমন এক ঘটনা, কাউকে কিছু বলাও যায় না।
দুপুরে সে জাফর ইকবাল স্যারকে ফোন করে। স্যার পুরো ঘটনা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
বলেন, এই দেশে এটা অসম্ভব। যারা একাজ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের দলটার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুযোগসন্ধানী শত্রু। আরিফ তুমি বিন্দুমাত্র চিন্তা করবে না আমি এখনই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলছি। কালকের ভেতরে তুমি দেখবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
স্যার আরিফকে অনেক সান্তনা দেন।
নাদিয়া সেদিন অফিসে যায়নি। পরদিন থেকে অবশ্য আবার অফিস করা শুরু করে। তবে আরিফের দিকে তাকায় না, আরিফের সাথে কথা বলে না। একসপ্তাহ চলে যায় এভাবে, আরিফ কি করবে বুঝতে পারেনা। শেষপর্যন্ত শুক্রবার রাতে আরিফ চেষ্টা করে নাদিয়া কে বুঝাতে।
নাদিয়াকে সে বলে, স্যার বিষয়টা দেখছেন। দেখবে ওদের কঠিন শাস্তি হবে। স্যার বলেছেন এরা জামাত শিবিরের গুপ্তচর। এসময় দরজায় জোরে জোরে ধাক্কার শব্দ!
আরিফের হার্টবিট যেন এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সে জাফর ইকবাল স্যারকে কল করতে থাকে। স্যারের ফোন কেউ রিসিভ করেনা। আরিফ চিন্তায়
পড়ে যায়, স্যার তো রাত জেগে পড়ালেখা করেন। কি হলো, স্যার
ফোন ধরছেন না কেন? এদিকে দরজায় ধাক্বা বেড়ে যায়, দেরী হলে আশেপাশের ফ্লাটের মানুষজনও জেনে যাবে। কতক্ষণ
আর দরজা বন্ধ করে রাখবে!!
পিপহোল দিয়ে সে দেখে আগের তিনজনই আন্তরিক বন্ধুর মতো দাড়িয়ে আছে।
দরজা খোলার পর ওসি সালাহউদ্দিন সাহেব হেসে বলেন, কি খবর আরিফ সাহেব? কোথায় কোথায় ফোন করেছিলেন বলে হাহাহাহাহাহা শব্দে একটা আমুদে অট্টহাসি দেন। এরপর এমদাদ সাহেব আর সেকেন্ড অফিসার ফখরুল আরিফের সাথে বসে টিভি দেখে।
ভোটকা ফখরুল চ্যানেল বদলে এমটিভি চালিয়ে দেয়, ঐশ্বরিয়ার
নাচ দেখাচ্
বিষয়: বিবিধ
১১২১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নাচ দেখাচ্
চুক চুক
মন্তব্য করতে লগইন করুন