ফেরারী পাখি ইকবাল সাহেব
লিখেছেন লিখেছেন Medha ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:০৫:২৩ বিকাল
ফেরারী পাখি ইকবাল সাহেব
নাস্তা করে তৈরি হয়ে নিচ্ছেন। আজকে একটা সেমিনারে তাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একটি বক্তৃতা দিতে হবে।
মনে মনে খুব খুশী বোধ করছেন ইকবাল সাহেব। আগেও তিনি বহু
সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছেন, কিন্তু এখনকার কথা ভিন্ন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ফিল্টার আবিস্কার করার পর থেকে চারদিক থেকে ডাক অসছে।তার সন্মানিটাও বেড়েছে কয়েকগুন। তবে ইকবাল সাহেব যেখানে সেখানে যান না। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে প্রচন্ড ভয় পান।১৯৭১ সালে এই ভয়ের কারনে তিনি মুক্তিযুদ্ধ
না করে পুরো সময়টা খাটের তলে চেতনার ফ্যান্টাসি করে কাটিয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধ না করলেও মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে ও শুনলে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
তার মনটা শিশুদের মত ভেজা কান্নার আবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।
সেমিনারে গিয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠল ইকবাল সাহেবের।
সেমিনারে অনেক ছোট ছোট মেয়ে এসেছে।
এটা তিনি খুব পছন্দ করেন। এদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে,নাচতে, চেতনা শিখাতে তিনি আনন্দ পান।
সেমিনারে এসেছেন মামুন মিয়া।তার একটা দাত ভাংগা।এই
দাতটা সে ভেংগেছে ডাব চুরি করতে গিয়ে। কিন্তু মামুন মিয়া তার সকল গল্পে প্রমাণ সরূপ এই
ভাংগা দাঁতটা দেখিয়ে দেন। এই সেদিন মামুন গল্প করছিল সে নাকি জ্বীন দেখছে।খুব ভোরে উঠেছিল প্রস্রাব করতে। দেখে কি ইয়া লম্বা এক মানুষ,মাথা তার আকাশে ঠেকছে! মামুনকে দেখে একটা ফু দিল!আর সেই ফুয়ের জোরে মামুন মাটিতে আছরে পরে এবং তার একটি দাঁত ভেংগে যায়।এর প্রমান হিসেবে মামুন তার ভংগা দাতটা দেখিয়ে দেয়।
আজো মামুন তার বক্তৃতায় বলল
"ভাইরে বোনরে কি নিষ্ঠুরতায় রাজাকাররা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কযে অত্যাচার করেছে!সারা শরীরে কত যে অত্যাচার করেছে! খুচিয়ে তার দাঁত ভেংগে ফেলেছে। "এই পর্যায়ে মামুন তার ভাংগা দাতটি প্রমানসরুপ সবাইকে দেখিয়ে দেয়।উপস্থিত জনতা তুমুল হর্ষধ্বনি ও হাততালি দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা মামুনকে অভিনন্দন জানায়।আকাশ বাতাশ বিদির্ন করে রাজাকারে ফাঁসির দাবি উঠানো হয়।
আব্দুল গফফার মিয়া স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি তার এলাকায় অত্যান্ত বীরত্বপূর্নভাবে যুদ্ধ করেছিলেন।
তিনি এখন ভ্যান চালান। কস্টে সৃষ্টে জীবন চলার পরেও তার
জীবন কোন আফছোস হয় না। তার আফছোস হয় তখনি যখন দেখেন ৭১ সালে যাদের জন্মই হয় নি কিংবা যারা যুদ্ধই করেনি তারাই এখন মুক্তি যোদ্ধা সাজছেন। তিনি সেমিনারের
এক কোনে বসে মামুনের মিথ্যাচার শুনছেন। মামুনকে তিনি চেনেন। 'একনাম্বার লম্পট একটা।ওর অপকর্মের শেষ নাই।ও আবার সাজছে মুক্তিযোদ্ধা!'আপন মনে বললেন আব্দুল গফফার মিয়া। চিন্তা করছেন আব্দুল গফফার আজ নাকি কোন ইকবাল
সাহেব এসেছেন। উনি নকল মুক্তিযোদ্ধা ধরার জন্য কি নাকি আবিস্কার করেছে! সিদ্ধান্ত নিলেন আব্দুল গফফার, মামুনের ভন্ডামির ব্যাপারটা ইকবালকে জানাবেন তিনি।
বসে আছেন ইকবাল সাহেব,এক পৌর ব্যাক্তি এল।চশমার উপর দিয়ে তাকালেন পৌড় ব্যাক্তিটির দিকে।একমুখ দাড়ি চোয়াল ভংগা শান্ত দর্শন বৃদ্ধটি। এদের দেখলে ইকবাল সাহেব বিরক্ত হন। এরাইতো ৭১ সালে সারাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী করেছে!
খুন করেছে ধর্ষন করেছে আগুন
লাগিয়েছে।লোকটির কথা শুনে তার আর বুঝতে বাকি রইল না। মুক্তিযোদ্ধা দের নামে কুত্সা রটিয়ে বিভেদ সৃষ্টিকারতে চাচ্ছে এই বৃদ্ধ। ইকবাল সাহেব তড়াক করে উঠে বৃদ্ধর অস্তিন টেনে ধরলেন।
সরোষে বললে ফাইযলামি পাইছেন
মিয়া আপনি ফিল্টারে ধরা পড়ে গেছেন আর যাই কই!বৃষ্টির মত কিল ঘুষি চড় থাপ্পর পড়তে লাগল আব্দুল গফফার মিয়ার উপর।হতভম্ব আব্দুল গফফার
মিয়া হতভম্বতা কাটিয়ে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।
এতেও থামাথামি নেই মুক্তিযুদ্ধের
সৈনিকদের!এইসব রাজাকারদের শেষ রেখে আর ভূল করতে রাজি নয় তারা! মৃত্যু নিশ্চিত করে তবেই থামল তারা! থুথু ছিটিয়ে দিল লাশটার উপর। এলাকায়
রটে গেল মুক্তিযোদ্ধা অব্দুল গফফার আসলে রাজাকারদের চর!
সপক্ষের শক্তিরা তার দুর্নাম করতে করতে একদিনেই তাকে ভয়ংকর জঙ্গী বানিয়ে দিল। যারা এটা বিশ্বাস করল না, তারা চুপটি করে থাকল।আব্দুল গফফারের প্রতি করা মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করার সাহস করো হলো না!
পোস্টমর্টেমের পর আব্দুল গফফারের লাশ তার পরিবারকে দেয়া হল।কিন্তু লোকজনের অভাবে যথাসময় লাশ দাফন হলো না। লাশ সামনে রেখে আব্দুল গফফারের স্ত্রী ও কন্যা নিথর হয়ে পড়ে রইল। কাঁদার মত চখের
পানি আর অবসিস্ট নেই।
গভীর রাতে একদল ছেলে এল! পরম শ্রদ্ধায় আব্দুল গফফারকে তারা দাফন করল। যেই মাটির জন্য যুদ্ধ করেছিল আব্দুল গফফার, সেই মাটি আব্দুল গফফারকে পরম মমতায় নিজের
বুকে স্থান দিল।
বিষয়: বিবিধ
১০৭১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন