সু-বুদ্ধিহীন বুদ্ধিবৃত্তিক বুদ্ধিজীবি বনাম নির্বাচন ২০১৪
লিখেছেন লিখেছেন লোটাস ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫৯:২৭ সন্ধ্যা
বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জল ইতিহাস বুকে ধারণকারী বিশ্ব মানচিত্রের এক গর্বিত সার্বভৌম অংশের নাম। ঐতিহাসকভাবে স্বীকৃত এক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন লড়াকু জাতি অধ্যুষিত এই দেশ। যে তার নিজের ভাষা নিজ সংস্কৃতি রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে হলেও তার মান রক্ষায় পৃথিবীর বুকে একমাত্র নজীর স্থাপন করে আদায় করে নিয়েছে স্বীকৃতি, যার স্বরূপ 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। নির্যাতন, দমন-পীড়ন আর অধিকার হরণের অভিপ্রায়ে পরিচালিত বর্বরতার বিরূদ্ধে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আদায় করে নিয়েছে স্বাধীনতা। কিন্তু আজ সেই জাতির অভ্যন্তরে বিভেদের বিষবৃক্ষ এমন করে প্রোথিত করার অপকৌশল চলছে যা দেখে আজ প্রায়শই মনে হয়, এ কোন উদভ্রান্ত সময়ের মুখোমুখি আমরা! কিন্তু মূলতঃ সময় উদভ্রান্ত নয়, বরং উদভ্রান্ত আমাদের সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল, যারা মিশে রয়েছেন এ-দেশের রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবি-সমাজসেবক নামক বিভিন্ন রাষ্ট্রনিয়ামক গোষ্ঠীর মাঝে; আর দিনের পর দিন এঁটে চলেছেন লুন্ঠণ আর ক্ষমতা দখলের কুটকৌশলী চকচকে বাচনের গোলকধাঁধায় সব হড়প করে নেবার ষড়যন্ত্র। কিন্তু পুরোনো রদ্দি নতুন মোড়কে বাজারজাত করার পূর্বে অন্তত ভোক্তাশ্রেণীর যে স্বাস্থ্যসচেতনতা জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে তা ঐসব বায়বীয় তথ্যসম্বলিত আবেগনির্ভর বিভেদাঙ্ক উৎপাদক তথাকথিত বুদ্ধিজীবি নামক চুক্তিজীবেদের উর্বব মগজে না ধরলেও ওটা যে সেই তেপুরোনো বৃটিশ ও্উপনিবেশবাদী "Divide & Rule" ফর্মূলা'র নব উন্মেষ এটা বুঝতে অন্তত এই লড়াকু জাতির বেশীদিন লাগে না - এটা অন্তত এই যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি, পাকিস্তানের দোসর ইত্যাদি ভাষ্য ফেরী করে বেড়ানো বিশেষ একটি গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষাকারী শ্রেণী, যারা গণতন্ত্র'র মৌলিক চেতনায় ১৯৭১ এর অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে মাত্র ৩/৪ বছরের শাসনের মধ্য দিয়ে কলঙ্কিত করে একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে গোটাজাতিসহ দেশটাকে চিরগোলাম বানাতে চেয়েছিলো, তাদের অনুধাবন করতে পারা উচিত। কেননা তাদের কে সেই জঘন্য অভিপ্রায় বাস্তবায়নের বিপ্রতীপেই ১৯৭৫-এ দিতে হয়েছিলো চরম মূল্য। এখানে সংগতই একটি প্রশ্ন উচ্চকিত হয়ে ওঠে যে, সেই ৭১-এ সমগ্র জাতি যেখানে সমর্থন দিয়েছিলো আওয়াশীলীগ তথা শেখ মুজিবকে, মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানেই কেন সেই সমর্থন এমন এক নিংড়ানো-নিঃশেষিত পর্যায়ে চলে এল যে, সেই অবিসংবাদিত নেতার এমন বিভৎস নারকীয় হথ্যান্ডের পর তার জানাযায় পর্যন্ত এল না জনতা, বরং তার বীপরিতে বহু মানুষকে মিষ্টি বিতরণ করে খেতে দেখা গেছে। যে চিত্র আবার আজ এই দেশের মধ্যে ফুটে উঠছে-প্রকট হচ্ছে। আবার সেই বাকশালী কালো থাবার বিস্তার ঘটানোর জোর চেষ্টা চলছে বাংলার ভাগ্যাকাশে ভিন্ন কায়দায় অভিনব ডিজিটাল প্রলেপে। সেদিনও যেমন নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিলো বিরোধীদল এবং সমালোচনাকারী গণমাধ্যমসমূহ - একই লক্ষ্য নিয়ে উলঙ্গভাবে প্রচেষ্টা চলছে, দেশকে বেরোধীদলহীন করার। আর এই প্রচেষ্টা'র সহায়ক নিয়ামক হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছেন আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে অবস্থানরত তথাকথিত সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবি শ্রেণী। তাদের কথাবার্তা এবং বিশ্লেষণ শুনে মাঝে মাঝে নিজেকেই বড় অসহায় মনে হয় বিবেকের দংশনে এই ভেবে যে, "একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর মানুষ কি করে বিচার-বিবেচনায় এতটা নীচে নামতে পারে?" পরক্ষণে এই শ্রেণী কে কারো একজনের 'নষ্ট বুদ্ধিজীবি' শব্দচয়নের মাঝে চিহ্নিত করতে পেরে একটু স্বস্তি পাই। কিন্তু তাতেও দায়বদ্ধতা ঘোচানত না পেরেই মূলত কাগজ কলমের আশ্রয় নেয়া।
এখন প্রতিদিন টেলিভিশন মিডিয়াতে সম্প্রচারিত হয় বিভিন্ন 'টক-শো'। আমাদের রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দেউলিয়াপনা এবং তার নিরিখে জনতার ভোগান্তি এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মাঝে একটু সান্তনা খোঁজার জন্য, একটু আশার আলো অনুসন্ধানে প্রচারিত সকল নাচ, গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির চাইতেও অনেক বেশী বিনোদন যেন এই 'টক-শো' অনুষ্ঠানগুলো। কিন্তু সেখানেও যখন এমন সব দলকানা বা দলবাজ সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবিগণ অন্ধের মত তার সুবিধাদাতা রাজনৈতিক গোষ্ঠী'র স্তুতি গাইতে থাকে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে একটা ঘোরের মধ্যে রাখার নিমিত্তে সত্য-মিথ্যা একাকার করে ফেলে, তখন সান্তনার শেষ সুযোগ হারিয়ে রাগে-দুঃখে কেউ নিজের পয়সায় কেনা ঘরের টিভি'টিও ভেঙ্গে ফেলেন। যদিও কিছুক্ষণ পরে রাগ একটু প্রশমিত হলে সে আফসোস করে এই বলে যে,"কি করব, এমন নির্জলা মিথ্যা কাঁহাতক সহ্য করা যায়!"
সেদিন যেমন একটি টক-শো'তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক তিনি আবার একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানও বটে, -এক প্রসঙ্গে 'হেফাজতে ইসলাম' সংগঠনের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে কোরআন শরীফের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনভাবে বললেন যা সত্যিই সরাসরি অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এমন অপব্যাখ্যা বা খন্ডিত ব্যাখ্যা এমন জ্ঞানী শ্রেণীল মানুষের কাছ থেকে এলে তাদের জ্ঞানপাপী ছাড়া ভদ্রভাষায় আর কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় না। যেমন উনি বললেন,"আল্লাহপাক কোরআন শরীফে স্বয়ং ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহপাক স্বয়ং ইসলামকে তথা তাঁর দ্বীনকে হেফাজত করবেন। তাহলে সেক্ষেত্রে কেন ইসলামকে এই হেফাজতের হেফাজত করতে হবে?" এক্ষেত্রে উনাদের মত বুদ্ধিজীবিদের এই ধর্মপ্রাণ সহয সরল বাংলা'র মানুষের ধর্মানুভূতিকে বিভ্রান্ত করার এহেন অপকৌশল প্রয়োগের অস্ত্র হিসাবে কোরআনকে ব্যবহারের প্রবণতা'র বিরূদ্ধে একজন মুসলমান হিসাবে ধিক্কার জানিয়ে উনাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, -অবশ্যই এই ঘোষণা কোরআনে আল্লাহপাক দিয়েছেন, কিন্তু সেটা এই অর্থে যে, আপনাদের মত বিরোধীতাকারীরা হাজার বিরোধীতা করলেও আল্লাহ'র এতটুকু ক্ষতিসাধন হবে না, সেটা বোঝাবার জন্য এবং তৎসঙ্গে কোরআনে বহুস্থানে পরিস্কার ঘোষণা রয়েছে যে, মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ'র খেলাফত কায়েম করা তথা আল্লাহ'র দ্বীন কায়েম করা। আর সেটাই হল আল্লাহ'র তরফ খেকে বান্দা'র জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। তাই যদি সেই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টার সাথে নিজেকে নিয়োজিত করি তবে আমিই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব অন্যথায় আমিই ক্ষতিগ্রস্ত হব - আল্লাহ বা আল্লাহ'র দ্বীনের কোন ক্ষতি হবে না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় -এর বুদ্ধিজীবিসহ অন্যান্য বহু পুজনীয় অবস্থানের বুদ্ধিজীবিরা যখন এমন জঘন্য কুটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্য মগজে নিয়ে, তখন তার বিপরীতে আর যাই-ই হোক কোন সৃষ্টি'র সূচনা হয় না বরং ধ্বংশের উপলক্ষ তৈরী হয়।
অতঃপর আওয়ামী বুদ্ধিজীবিরা নির্বাচন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সহযোগী হিসাবে এমন সব যুক্তিতে ১৯৭১ প্রেক্ষাপট এবং যুদ্ধাপরাধ কে নিয়ে যুক্তিবিদ্যার সেইসব খোঁড়া যুক্তি,"মূরগী কেঁচো খায়-মানুষ মূরগী খায়; অতএব মানুষ কেঁচো খায়" এর মত যুক্তি উপস্থাপন করেন যা শুনে সত্যিই বিরক্ত বা ক্ষোভ ছাড়া সর্বসাধারণের মনে কোন ভাবের উদ্যেগ হয় না। আজ গণতন্ত্রকে হত্যা করে সেটাকে উনারা 'যুদ্ধাপরাধী নিধন মিশন' হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, যা সত্যিই শুধু হাস্যকরই নয় বরং চরম বিরক্তিকর এবং একইসাথে ষড়যন্ত্রতূল্য। দেশের সম্পদসহ জনগনের সম্পদ চুরি কের যারা অফুরন্ত বিত্ত-বৈভবের মালিক বনেছেন, তারাই আবার ফেরী করে বেড়ানোর চেষ্টা করছেন এই বলে যে, জামায়াত দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বিত্ত-বৈভবে ফুলেফেপে উঠেছে। ঠিক আছে জামায়াত যদি সেটা করেই থাকে সফলভাবে, তাতে দোষের কি? তারা তো চুরি করে বা অন্যের সম্পদ লুন্ঠন করে বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে সেটা করেনি, বরং তাদের সততা-নিষ্ঠা-মেধা-শ্রম বিনিয়োগ করে, সর্বপরী দেশের বেকার জনগোষ্টীর বৃহৎ অংশের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তারা সেটা করেছে। আরও বলতে শুনি, এদের এত টাকা যে এরা আমেরিকা সিনেটকে কিনে নিচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কিনে নিচ্ছে, বৃটিশ পার্লামেন্ট কিনে নিচ্ছে - তাহলে আমার প্রশ্ন হল, এ-খাতে যদি তারা এত বিনিয়োগই করতে চায় বা অর্থ বিনিয়োগ করেই যদি এই সমস্যা তারা সামাল দিতে চায়, তবে এত হাই প্রোফাইল বন্ডেজ কেনার চেয়ে তো অনেক সহযে এবং কম খরচে আওয়ামী মন্ত্রী-নেতা-বুদ্ধিজীবি কিনে য়োটা তাদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী এবং স্থায়ী সমাধান হত।
এছাড়াও জামায়াত এযাবৎ প্রতিবার সংসদে গেছে, সরকারের সক্রিং অংশ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু তাদের একজন নেতার বিরূদ্ধেও কোন দূর্নীতি বা কোন অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ জনগন দেখে নাই। এমন কি ১/১১ এর সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশগ্রহণকারী সকল দলের নেতাদের দূর্ণীতির ফিরিস্তি যখন সাধারণকে চরমভাবে মর্মাহত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে, এমনকি সেই সময়েও জামায়াতের মন্ত্রীত্ব বহনকারী কোন নেতার নামেও একটি অভিযোগ দাখিল হতে দেখেনি জনগন। যার ফলশ্রুতিতে এই আওয়ামী বুদ্ধিজীবিদের কেউ কেউ (মৃয়মান কন্ঠে, কেনান, সেই সময় জোরালো কন্ঠে এখনকার মত মিথ্যা বলার ও তার প্রচার করার সুযোগ ছিল না) বলতে চেষ্টা করেছেন কোন কোন মহলে যে, সেই ফকরুদ্দিন-মঈনূদ্দিনের সরকার জামায়াতপন্থী, নাহলে জামায়াতের একজনও গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন? মূলতঃ সত্যটাকে না খঁজে উনারা সেই 'সূচীবায়ু' রোগগ্রস্ত। যে কারণেই দেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটিও সঠিক তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়াই সরকারসহ তার পোষ্য এসকল বুদ্ধিজীবি ও তাদের সহযোগী কিছু গণমাধ্যম সকল দোষ জামায়াত-বিএনপি'র উপর চাপিয়ে মূলতঃ বিরোধীদলকে ঘায়েল করা এবং জনগনের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর অপকৌশল প্রয়োগে নিয়োজিত - যেখানে আওয়ামী অপশক্তি'র এহেন ঘৃণ্য কর্মকান্ডে জড়িত থাকার এমনকি অগ্নিসংযোগের সময় জনতার হাতে হাতেনাতে ধরা পড়ার প্রমাণ মেলে তা সত্ত্বেও। আসলে এটাও সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বখলনায়ক হিটলারের ডানহাতখ্যাত গোয়েবোলস্ -এর তত্ত্ব 'একটা মিথ্যাকে এক'শ বার প্রচার কর তাহলে সেটা সত্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে' -এর প্রয়োগ ছাড়া আর কিছুই নয়।
নির্বাচনকেন্দ্রিক এ সংকট ঘণীভূত হওয়ার সময় এই আওয়ামী শাষকগোষ্ঠী বিরোধীজোটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তার প্রতিকারের দাবিতে নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্তের মধ্যেও লজ্জাহীণভাবে যুদ্ধাপরাধ ও স্বাধীনতাবিরোধী গন্ধ খুঁজতে এবং প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেশবাসী তথা সমগ্র বিশ্ব দেখতে পায় তাদের নির্বাচনেই বরং তারা স্বীকৃত রাজাকারদের পর্যন্ত মনোনয়ন দিয়েছেন, নেতা-নেত্রী তাদের অন্দরমহলের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। আওয়ামীলীগ যেন এখন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ নেতৃত্ব বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছে। সেই মেশিনের একদিক দিয়ে রাজাকার, খুনী, চোর, লুটেরাদের ঢোকাবেন এবং অন্যদিক দিয়ে বের করবেন সব মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক ইত্যাদি। পাশাপাশি এও দেখতে পায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অজুহাতে যে নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বকীয় সামর্থ্যবান সংস্থা দেখিয়ে বিরোধী দলকে নির্বাচনে যোগদান করার জন্য প্রলুব্ধ ও পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলো; কিন্তু সে প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়ার বিরোধীদলের সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক ছিলো এবং তাদের দাবিটাও কতটা যৌক্তিক ছিল। এমনকি শুরু থেকে সরকারসহ তার সকল সহযোগীরা যেমন বুদ্ধিজীবি, কিছু গণমাধ্যম পর্যন্ত জনগনকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বারংবার প্রচার করেছে,"বিরোধীদলের যদি এতই জনসমর্থন থেকে থাকে তবে কেন তারা নির্বাচন বর্জন করছে?" ইত্যাদি। কিন্তু পরিশেষে এটা প্রমাণিতই হয়ে গেল যে, বিরোধীদল ভোটে অংশগ্রহণ করলে জনগনের ভোটে না হারলেও সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের ভোট চুরির মারফতে বিরোধীদলকে পরাজিত দেখিয়ে আওয়ামী অপশক্তিকে বিজয়ী করার সর্ব ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত ছিল।
মৌলিক অর্থে সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে যদি বিশ্লেষণ করা যায় তবে একথা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার যে, বিএনপিসহ যে বিরোধীদলীয় জোট, এই জোটকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরাজিত করার যতগুলো উপায় রয়েছে তার কোনটাতেই আওয়ামীলীগের মোকাবিলা করা'র সম্বল, নৈতিক জোর ইত্যাদি হারিয়েছে। আর, এই অক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতেই এমতাবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন নামক গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলে আওয়াশী দুঃশাসন, দূর্ণীতি, অত্যাচার, দলীয়করণ, গুম, হত্যা ইত্যাদি'র জন্য আওয়ামী জোটকে জনগনের চাপে এমন এক আস্তাকূড়ে নিপতিত হতে হবে যেখান থেকে তাদের হয়ত বিগত ৭১ পরবর্তী দুঃশাসনের প্রতিবাদে নিক্ষিপ্ত সেই ২১ বছরেরও দ্বিগুনের অধিক সময় বনবাসযাপন করতে হতে পারে; যে শঙ্কা থেকেই তারা উপহার দিয়েছে প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন কলঙ্কিত এক প্রহসনের নির্বাচন, যা ইতিহাসে এক গৃণিত প্রয়াস হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তৎসঙ্গে এই গোষ্ঠী এখন তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে তাদের বিরোধী এই ১৮দলীয় জোটকে ভাঙ্গার ও দূর্বল করার। কেননা, তারা পরিস্কারভাবেই বুঝতে পারছে এই ১৮ দলীয় জোটকে রাজনৈতিক ময়দানে তাদের ম-হা-জো-ট কে আরও ম----হা বানিয়েও মোকাবেলা করা সম্ভবপর নয়; যার প্রতিফলন দেখতে পাই মহাজোট নেত্রী (গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল) প্রধানমন্ত্রী'র এমন উক্তির মধ্যে,"জামায়াত কে ত্যাগ করতে হবে বিএনপি কে আলোচনায় বসতে হলে"। প্রকৃত অর্থে এমন উক্তি তাদের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার বা রাজনৈতিক সৎসাহস হারিয়ে ফেলার প্রত্যক্ষ বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। পাশাপাশি তাদের যে ভারত নির্ভরতা সেটা প্রথ্যক্ষ করে বাংলাদেশের আপামর জনগন আজ প্রচন্ডভাবে ক্ষুব্ধ-বিতশ্রদ্ধ। আজ ভারত তাদের (আওয়ামী জোটের) হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মত একটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্বভার গ্রহণের মত ধৃষ্টতা দেখাবার সাহস পায়। এই উক্তির মধ্য দিয়েই প্রকাশ হয়ে যায় আওয়ামীলীগ নিজে টিকে থাকার স্বার্থে জনগণের অধিকারকে কোথায় নিক্ষেপ করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে কিভাবে বিকিয়ে দেবার আয়োজনে ব্যস্ত। এহেন পরিস্থিতিতে সমগ্র বাংলাদেশের কোটী কোটী জনতা আবার ফুসে উঠছে এই আগ্রাসী ভারতকে ও তার দালালদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে, যেমন করে চিরতরে বিতাড়িত করেছিল সেই পাকিস্তানী হানাদারদের ১৯৭১ -এ।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন