পরবর্তী যুগের কিছু হানাফী উলামা 'সুনানে আবু দাউদ' কিতাবের একটি রেওয়ায়েতকে বিকৃত করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয় তার জবাব-
লিখেছেন লিখেছেন রেজাউলকরিম ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৩২:১২ দুপুর
পরবর্তী যুগের কিছু হানাফী উলামা 'সুনানে আবু দাউদ' কিতাবের একটি রেওয়ায়েতকে বিকৃত করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয় তার জবাব-
মাহমুদ আল-জালালপুরী, যুবাইর আলী যাই, বকর আবু যাঈদ এবং তাদের অনুসারীদের খণ্ডন-
বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য এর আবু খুযাইমা আনসারী এবং আবু হিব্বান কর্তৃক কৃত একটি দাবীর সংক্ষিপ্ত জবাব। তাদের মতবাদপন্থী এবং তাদের আন্দোলনের সাম্প্রতিক যুগের একজন নেতা, মাহমুদ আল জালালপুরী (মৃঃ ১৪১৬ হিঃ/ ১৯৯৫ খ্রিঃ) এই দাবীটি করেছিলেন এবং উল্লেখিত ২ জন এই দাবীটি প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। এই দুজন উল্লেখ করেছেন যে হানাফী দেওবন্দীরা সুনানে আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতকে বিকৃত করেছেন এবং আল্লাহর কাছে এরকম বিকৃতি থেকে আশ্রয় চেয়েছেন তারা।
দেখুনঃ আবু হিব্বান এবং আবু খুযাইমা আনসারী কর্তৃক অনূদিত মাহমুদ আল জালালপুরী এর " Na’am as-Shahood a’la tahreef al-ghalaain fee Sunan Abee Dawood: Yes, We Do Have Witnesses Regarding the False Distortion of the Extremist’s In Sunan Abee Dawood. " কিতাবের পৃষ্ঠা ৪ এ
সমসাময়িক সৌদি লেখক ড. বকর আবু যাঈদও তার 'আল রুদুদ' কিতাবে (পৃঃ ২৫৮) এই অসার দাবীটি প্রচার করেছেন।
জবাব
বাস্তবতা হল, আমাদের কাছেও স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে সুনানে আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতকে পরবর্তী যুগের হানাফী উলামারা বিকৃত করেছেন বলে যে অভিযোগটি করা হয়েছে, এই উগ্রপন্থীদের কাছে তার কোন প্রমাণ নেই। এটা শুধু দাবী নয় আমাদের পক্ষ থেকে, বরং এটি একটি বাস্তব সত্য যা হাদীসশাস্ত্রের বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ ২ জন ইমামের কিতাব, যা প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে লিখা হয়েছে, সেখান থেকে স্ক্যান সহকারে দেখানো হবে সামনে ইনশাআল্লাহ্। এবং সবচেয়ে বাস্তব সত্য হল, হাদীসের এই ২ জন হাফেয যাদের নাম পরে উল্লেখ করা হবে তারা দুজনই শাফী মাযহাবের !
আল-জালালপুরী তারাবীহ রাকাআত সম্পর্কিত একটি রচনার জবাবে লিখেছেন যে এই রচনাটিতে তিনি একটি মারাত্নক ও নতুন ফিতনা দেখতে পেয়েছেন। তাই তিনি মনে করেছেন এর একটি জবাব দেয়া দরকার যাতে করে ভবিষ্যতে দ্বীনের ভেতর কেউ নতুন করে এমন ফিতনা ঢুকাতে না পারে।
তারপর তিনি লিখেন যে ঐ রচনাটিতে আবু হুরায়রা (রদ্বিঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে উমর (রদ্বিঃ) লোকদেরকে উবাই ইবনে কা'ব এর পিছনে একত্রিত করালেন এবং তিনি তাদেরকে ২০ রাকাআত পড়ালেন। (আবু দাউদ)
আমরা সেই রচনাটি দেখিনি এবং এটি আমাদের বুঝে আসেনা যে এই রেওয়ায়েতটি কেন আবু হুরায়রা (রদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত হবে, যেখানে এটি পরিষ্কার যে আমাদের হাতে যে রেওয়ায়েতটি আছে তাতে উমর (রদ্বিঃ) এর যুগের কথা বর্ণিত যা হাসান বসরী বর্ণনা করেছেন।
তারপর জালালপুরী সাহেব লিখেছেন যে এই হাদীসে 'রাকাআত' শব্দটি ভুল, সঠিক শব্দ হল 'লাইলাহ' অর্থাৎ রাত। তাই আবু দাউদের এই হাদীসের সঠিক অর্থ হবেঃ উমর (রদ্বিঃ) লোকদেরকে একত্রিত করালেন উবাই ইবনে কা'বকে অনুসরণ করার জন্য এবং তিনি (উবাই) তাদেরকে ২০ রাত্রি পড়ালেন।। ... এটি হল হাদীসের সঠিক শব্দ যেখানে ২০ রাত্রির কথা উল্লেখ আছে, ২০ রাকাআতের কথা নয়। এবং এখানে ২০ রাত্রির জায়গায় ২০ রাকাআতের কথা উদ্ধৃতি করে একে ২০ রাকাআত তারাবীহ এর দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা - পবিত্র একটি কিতাব এর লজ্জাজনক এবং অসম্মানজনক বিকৃতি।
৭ নং পাদটীকাটি অনুবাদক যুবাইর আলী যাই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে তিনি দাবী করেছেনঃ সুনানে আবু দাউদে এরকম কোন রেওয়ায়েত আছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইমাম বায়হাকীর 'সুনান আল কুবরা', 'মিশকাত আলা মাসাবীহ', 'তুহফাতুল আশরাফ' এবং অন্যান্য কিতাবেও আবু দাউদের এই হাদীসটি '২০ রাত্রি' শব্দ সহকারে আছে। ইমাম যায়লাঈ হানাফীও তার কিতাব 'নাসবুর রায়াহ' তে আবু দাউদের এই হাদীসটি '২০ রাত্রি' শব্দ সহকারে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও অনেক প্রমাণও রয়েছে, তবু এগুলোই পর্যাপ্ত ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের জন্য এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। ( তা'দাদ রাকাআহ কিয়াম আর রমাদ্বান, পৃ-২৭ )
যুবাইর আলীর মত জালালপুরী সাহেবও হাদীসের পরবর্তী অন্যান্য কিছু কিতাবের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে ইমাম হাসান আল বসরী থেকে '২০ রাকাআত' এর বদলে '২০ রাত্রির' কথা উল্লেখ রয়েছে। এটা মূল ইস্যু নয় এই জবাবটিতে, বরং মূল বিষয় হল এটি দেখানো যে কোন হানাফী ইমামই '২০ রাকাআত' এর জায়গায় '২০ রাত্রি' এর কথা উল্লেখ করে এই হাদীসের বিকৃতি ঘটাননি এবং নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেননি যেভাবে আল জালালপুরী এবং তাদের অনুসারীরা দাবী করে থাকে।
জালালপুরী আরও কিছু আলোচনা করে পরবর্তীতে লিখেছেনঃ আমরা পূর্বে প্রমাণ করে এসেছি যে ১৩১৮ হিঃ পর্যন্ত ভারতে ছাপানো আবু দাউদের সমস্ত পাণ্ডুলিপিতে হাদীসে '২০ রাত্রি' শব্দটি আছে এবং এর ব্যতিক্রমের কোন চিহ্ন নেই। অন্যদিকে, মাওলানা মাহমুদল হাসান (দেওবন্দী হানাফী) তার ব্যাখ্যাসহ আবু দাউদ ছাপিয়েছেন, প্রকাশকরা নিজেরা অথবা অন্য কারও পরামর্শে হাদীসের 'রাত্রি' শব্দটির উপরে 'নুন' হরফটি অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন এবং এরপর এর পাদটীকায় লিখেছেন যে এই 'নুন' হরফটি দ্বারা পাণ্ডুলিপির পার্থক্য বুঝানো হচ্ছে এবং এই পার্থক্যটি হল 'রাকাআত'। পরবর্তীতে মাওলানা ফাহার আল হাসান (দেওবন্দী হানাফী) এর ব্যাখ্যাসহ যখন সুনানে আবু দাউদ ছাপানো হয়, তখন 'রাকাআত' শব্দটি হাদীসের মধ্যে লিখা হয় এবং 'নুন' হরফটি 'রাকাআত' শব্দের উপরে লিখা হয়। তারপর পাদটীকায় 'রাত্রি' শব্দটি লিখে উল্লেখ করা হয় যে, 'নুন' হরফটির মাধ্যমে পাণ্ডুলিপির পার্থক্য বুঝানো হয়েছে। অতএব সবকিছু পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য ছিল পাণ্ডুলিপির বিভিন্নতার চরিত্র অংকন করে বুঝানো। একইভাবে সুনানে আবু দাউদের সাথে ছাপানো 'বাযাল মাজহুদ' কিতাবেও হাদীসে 'রাত্রি' শব্দটি রয়েছে এবং এই 'রাত্রি' শব্দটির উপরে 'নুন' হরফটি লিখা হয়েছে এবং পাদটীকায় 'রাকাআত' শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। পাদটীকায় 'রাকাআত' শব্দটির সাথে এটি লিখা হয়েছে যে, " শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক এর পাণ্ডুলিপিতে এমনই আছে। "
এগুলো এজন্যই লিখা হয়েছে যাতে এটি বুঝা যায় বা স্পষ্ট হয় যে কার কাছ থেকে এটি এসেছে, কে এই পাণ্ডুলিপিটি দেখেছে এবং এটি কোথায় আছে এখন। ... অতএব অনুসন্ধানের মাধ্যেমে এটি মনে হয় যে, এখানে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে সুনানে আবু দাউদের কিছু পাণ্ডুলিপিতে '২০ রাকাআত' শব্দটি রয়েছে যাতে এই হাদীসকে ২০ রাকাআতের পক্ষে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু অন্যান্য সাক্ষী/প্রমাণ এর উপস্থিতিতে এই ক্ষুদ্র ষড়যন্ত্রটিকে যদি তাদলিস এবং প্রতারণা বলা না হয়, তাহলে এটিকে আর কি বলা হবে ?
জবাব
প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছেঃ “A picture tells a thousand words” অর্থাৎ " একটি ছবিই এক হাজার শব্দ বলে দেয় । " জালালপুরী, যুবাইর আলী, বকর আবু যাঈদ এবং পূর্ব পশ্চিমে তাদের অনুসারীদের প্রচারিত এই অসার দাবীর জবাবে ইনশাআল্লাহ্ আমরা এখানে স্ক্যান করা দলীলের মাধ্যেমে দেখাব যে প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে এবং পরবর্তী যুগের হানাফী মুহাদ্দীস, শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী এর অনেক আগে, হাদীসশাস্ত্রের প্রধান ২ জন ইমাম সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপিটি দেখেছেন এবং তাদের সেই পাণ্ডুলিপিতে '২০ রাকাআত' শব্দটিই ছিল ! উল্লেখ্য যে, হানাফী মুহাদ্দীস শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী তার সময়কার 'আহলে হাদীস' দলের নেতা সায়্যিদ মুহাম্মাদ নযীর হোসাইন দেহলভী এর শায়খদের একজন ছিলেন।
হাদীসের এই ২ মহান হাফেজরা হলেন আর কেউ নন, বরং হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ) এবং তাঁর সমসাময়িক হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (মৃঃ ৭৭৪ হিঃ)।
কোন হানাফীই সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে 'রাত্রি' শব্দটিকে 'রাকাআত' শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়নি, তার প্রথম প্রমাণ ইমাম শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী (রহঃ) এর 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' কিতাব (১/৪০০-৪০১) থেকে। নিচে স্ক্যান দেওয়া হয়েছে মুয়াসসাসা আর্ রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' এর ছাপানো কিতাব থেকে। এই কিতাবের রেওয়ায়েতগুলো সমসাময়িক বিখ্যাত হাদীস বিশেষজ্ঞ শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত সম্পাদনা করেছেন এবং এতে হুসাইন আসাদ এর ব্যাখ্যাও রয়েছে।
প্রচ্ছদ দেখুনঃ
আয্ যাহাবী এর 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' কিতাব (১/৪০০-৪০১) থেকে স্ক্যান যেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি '২০ রাকাআত' শব্দ সহকারে রয়েছে, '২০ রাত্রি' শব্দ সহকারে নয়।
উপরের স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো যে কেউই দেখতে পাচ্ছেন, সাথে সাথে এও দেখতে পাবেন যে পাদটীকায় শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত তার নিজের ব্যক্তিগত তাহকীক এবং সত্যায়ন সহ ২০ রাকাআত তারাবীহ এর সমর্থনে আরও কিছু রেওয়ায়েতের কথাও উল্লেখ করেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলে শায়খ শুয়াইব এর ব্যবহৃত সুনানে আবু দাউদ কিতাবের সম্পাদনাটিও দেখতে পারেন, সেখানেও '২০ রাকাআত' শব্দটি আছে।
কোন হানাফীই সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে 'রাত্রি' শব্দটিকে 'রাকাআত' শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়নি, তার দ্বিতীয় প্রমাণ ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) এর 'জামি'উল মাসানীদ' কিতাব থেকে। এখানে দারুল ফিকর থেকে প্রকাশিত এবং ড. আব্দুল মু'তী আমিন কালা'যী কর্তৃক সম্পাদিত কিতাবটি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রচ্ছদ দেখুনঃ
ইবনে কাসীর এর 'জামি'উল মাসানীদ' কিতাব (১/৫৫) থেকে স্ক্যান যেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি '২০ রাকাআত' শব্দ সহকারে রয়েছে, '২০ রাত্রি' শব্দ সহকারে নয়।
সুনানে আবু দাউদের বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত আল হাসান আল বসরী এর এই রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ কোনটি ?
আবু দাউদে উল্লেখিত এই রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ কোনটি তা পরীক্ষার জন্য হাদীসের অন্য একটি স্বতন্ত্র কিতাব দেখা যেতে পারে যেখানে প্রায় একই সনদে আল হাসান আল বসরী (রহঃ) থেকে প্রায় একই ধরণের রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। হাদীস সংকলন নিয়ে ইমাম ইবনে আবি দুনিয়া (মৃঃ ২৮১ হিঃ) এর লিখা ছোট কিতাব যা 'ফাযাইল রমাদ্বান' নামে পরিচিত, তার ৭৮ নং পৃষ্ঠাতে তিনি তার নিজ সনদ দ্বারা প্রায় একই ধরণের রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এখানে '২০ রাত্রি' এর কথা উল্লেখ রয়েছে, '২০ রাকাআত' নয়। আবু দাউদ আল সিজিস্তানী এর সমসাময়িক ইবনে আবি দুনিয়া এর কিতাব থেকে স্ক্যানঃ
উপসংহার
আল্লাহর রহমতে যে কোন নিরপেক্ষ পাঠকদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় যে, উপমহাদেশের কোন হানাফীই ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সুনানে আবু দাউদের এই রেওয়ায়েতটিতে 'রাত্রি' শব্দের স্থলে 'রাকাআত' শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করে রেওয়ায়েতটিকে বিকৃত করেননি। যেহেতু ইমাম যাহাবী এবং ইমাম ইবনে কাসির উভয়েই তাদের কিতাব যথাক্রমে 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' এবং 'জামি আল মাসানিদ' এ '২০ রাকাআত' এর কথা উল্লেখ করেছেন, '২০ রাত্রি' এর কথা নয়, এবং যেহেতু হাদীসের এই ২ জন শীর্ষস্থানীয় হাফেয '২০ রাকাআত' শব্দ সহকারেই আবু দাউদের পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণ করেছেন এবং তারা কাউকেই এজন্য হাদীস বিকৃতির অভিযোগ তুলেননি, সেহেতু অবশ্যই অবশ্যই ১৩১৮ হিঃ এর অনেক আগে সুনানে আবু দাউদের এমন কিছু পাণ্ডুলিপি ছিল যেখানে '২০ রাকাআত' এর কথা উল্লেখ আছে।
আর রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ বের করার জন্য আমরা অন্য একটি স্বতন্ত্র কিতাব, ইবনে আবি দুনিয়া এর 'ফাযাইল রমাদ্বান' থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে যেখানে '২০ রাত্রি' এর কথা রয়েছে। আর ২০ রাকাআত তারাবীহ এর স্বপক্ষে অনেক সহীহ রেওয়ায়েত রয়েছে যা শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত নিজেই 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' কিতাবের তার নিজের সম্পাদনাতে উল্লেখ করেছেন।
যেহেতু জালালপুরী কিছু হানাফী এই রেওয়ায়েতটিকে বিকৃত করেছেন বলে অতিরঞ্জিতভাবে দাবী করেছেন ও অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেছেন এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কিতাবের লজ্জাজনক এবং অসম্মানজনক বিকৃতিঃ
সাথে সাথে তিনি একথাও বলেছেনঃ এ ধরণের একটি ভয়ংকর বিকৃতি একজন বিশ্বাসীর হৃদয়ে কাঁপুনির সৃষ্টি করে এবং বিশেষত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মাহদেরকে ধর্মীয় বিকৃতি এবং পরিবর্তন থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা এখনো এই বিকৃতি করাতে অনড়। একজন সম্মানিত মুসলিম অবশ্যই এ ধরণের কাজে উদ্বিগ্ন বা রাগান্বিত হয়ে থাকেন এবং যদি এ ধরণের কিছু না হত, তাহলে এক সুন্দর নবুওয়াতের সত্যতা নিয়ে খুঁত থেকে যেত।
এবং সাথে সাথে যুবাইর আলী বলেনঃ আবু দাউদে এ ধরণের রেওয়ায়েত আছে - এটি একটি চরম মিথ্যা।
সেহেতু আমরা তাদের এই অতিরঞ্জিত কথাগুলোর জবাবে বলতে চাইঃ আল জালালপুরী মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু হানাফীদের বিরুদ্ধে করা তার এই দাবীগুলোর জবাব তাকে পরকালে দিতে হবে কারণ তার এই দাবীগুলো তার আগের হানাফী উলামাদের বিরুদ্ধে অপবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যুবাইর আলী, বকর আবু যাঈদ এবং যে ২ জন অনুবাদক এই বিকৃতির অভিযোগটি প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, যদি তারা সৎ হয়ে থাকেন তাহলে তাদের কাছে এখনও সময় আছে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য যে কেন আল যাহাবী এবং ইবনে কাসীর এর কাছে '২০ রাকাআত' শব্দ সহকারে এই রেওয়ায়েতটির ব্যাপারে কোন ধরণের অসুবিধা ছিল না !
এই ২ জন অনুবাদক, আবু খুযাইমা এবং আবু হিব্বান যেভাবে দারুল উলুমু দেওবন্দের সাথে সম্পর্কিত হানাফী উলামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এই বলে যে হানাফী দেওবন্দীরা সুনানে আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতকে লজ্জাজনকভাবে বিকৃত করেছেন এবং আল্লাহর কাছে তারা এরকম বিকৃতি এবং মিথ্যা ব্যাখ্যা থেকে আশ্রয়ও চানঃ
ঠিক একই রকমভাবে তারা কি এখন ইমাম আল যাহাবী এবং ইবনে কাসীরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলার সাহস করবেন ?
অথবা জালালপুরী যেরকম নাম দিয়েছেন তার কিতাবেরঃ " না'আম আস শাহুদ আ'লা তাহরীফ আল গালাঈন ফি সুনান আবি দাউদঃ হ্যা, আমাদের কাছে সাক্ষী/প্রমাণ রয়েছে উগ্রপন্থীদের কর্তৃক সুনানে আবু দাউদের মিথ্যা বিকৃতি সম্পর্কে "
এখন যদি হানাফীরাও একই রকম ভাবে বলেঃ " হ্যা, আমাদের কাছে আরও উঁচুমানের সাক্ষী/প্রমাণ রয়েছে প্রকৃত উগ্রপন্থীদের মিথ্যা দাবী সম্পর্কে, আর হানাফীরা সুনানে আবু দাউদের বিকৃত করেনি " তাহলে এটি কি অন্যায় হবে ?
আফসোসের বিষয় হল, বর্তমান যুগে ন্যায়বিচার অনেক কমে গেছে, তাই হানাফী পাঠকরা এই আশা করবেন বলে মনে হয় না যে কথিত 'সালাফী' বা 'আহলে হাদীস' মতবাদের হাদীস বিশেষজ্ঞ এর আনাড়ি দাবীদার এই লোকেরা জনসম্মুখে তাদের এই দাবী তুলে নিবেন এবং স্বীকার করবেন যে ১৩১৮ হিঃ এর অনেক আগেই ইমাম যাহাবী এবং ইবনে কাসীর এর কাছে '২০ রাকাআত' শব্দ সম্বলিত সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপি ছিল এবং সাথে সাথে ভারতের পূর্বযুগের হানাফী উলামাদের বিরুদ্ধে আলোচ্য রেওয়ায়েত বিকৃতির যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, তার জন্য তারা লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
ওয়াল্লাহু আ'লাম
বিষয়: বিবিধ
২৭৯০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন