আপনার স্ত্রীকে সময় গিফট্ করুন

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৮:৩১:২৭ সকাল

সময়' - ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বড় একটা গিফট।

.

'আজ সারাদিন কাজের বেশ চাপ ছিল, এখন আমি টায়ার্ড। এখন একবারেই কানের কাছে ক্যান ক্যান করবানা' — দিনশেষে ঘরে ফিরে হয়ত এটাই হয় স্ত্রীর উদ্দেশ্যে আপনার আমার প্রথম কথা।

.

তারপর হয়ত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন বা খবরের কাগজটা হাতে নেন, অথবা টিভি ছেড়ে রিমোট নিয়ে বসেন। অথবা ফেসবুকটা লগিন করে বসে যান। বিশ্বাস করুন এমন রুটিন মোটেও হওয়া উচিত নয়। এভাবে নিজেই আপনি নিজ হাতে আপনার দাম্পত্য জীবন টা কে ধ্বংস করছেন।

.

এমন হওয়া উচিত ছিল যে- আপনি ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে একটু আপনার স্ত্রী এর সাথে একাকী বসবেন, টিভির রিমোট নয় বরং তার হাতটা ধরে সারাদিনের খবরা খবর জিজ্ঞাসা করবেন, তার অভিযোগ গুলো শুনবেন, মোবাইল নয় বরং তাকে মনযোগ দিবেন।

.

দেশের খবর বা খেলার খবর কিংবা নীল সম্রাজ্যে (ফেসবুকে) কে কী করল তার খবর রাখার থেকে আপনার রাব্বাতুল বাইতের (ঘরের রানী) খবর রাখা আপনার জন্য বেশি জরুরী এবং ফরজ।

.

সে আপনার অনুপস্থিতিতে সারাদিন আপনার ঘর, আপনাদের সন্তান কে আগলিয়ে রেখেছেন, সন্তানকে স্কুলে নিয়ে গিয়েছেন, আপনার জন্য রান্না করেছেন, আপনি এসে শোবেন বলেই বিছানা টা গুছিয়ে রেখেছেন এভাবে আপনার অনেক হক আদায় করেছেন যেগুলোর অনেক কিছু করতেই তিনি বাধ্য নন বা তার উপর ফরজ করা হয়নি। সন্তান থাকলেও আপনার স্ত্রীকে আলাদা ভাবে সময় দিন প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময়। শুধু আপনি আর আপনার স্ত্রী। আর কেউ না।

.

যদি অভিযোগও করে তেল নাই, লবণ নাই, কারেন্ট বিল দেওয়া বাকী হ্যান ত্যান তাও মনযোগ দিয়ে শুনুন। একটা হাসি দিন৷ সেই লজ্জা পাবে। 'শুধু আমি বলেই তোমার সাথে সংসার করে গেলাম' — এটা আমাদের সবার স্ত্রীদের ডিফল্ট সেটিংস। এসবে কিছু মনে করা যাবে না।

.

প্রত্যেক মানুষ চান তার অভিযোগ অভিমান শোনার মত কেউ থাকুক৷ আর মানুষ যাকে সব থেকে বেশি ভালবাসেন তার উপরেই বেশি অভিযোগ করেন, বেশি অভিমান দেখান।

.

আপনিই শুনুন তার অভিযোগ গুলো, এভেন সেগুলো আপনার বিপক্ষে গেলেও। কারন আপনি সু্যোগ না দিলে শয়তান তাকে ওয়াসা দিয়ে হয়ত বাইরের কারো কাছে অভিযোগ গুলো শেয়ার করাবে। এতে আপনার ও তার উভয়েরই ক্ষতি।

.

এখন কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই বিবাহিত ভাইদের উদ্দেশ্যে। আমার প্রশ্নগুলো বোনদের পক্ষ থেকে নয় বরং একজন সাংসারিক পুরুষ হিসেবে অপর সাংসারিক পুরুষদের উদ্দেশ্যে।

.

— আপনি শেষ কবে আপনার স্ত্রীর জন্য উপহার হাতে ঘরে ঢুকেছিলেন তাকে চমকে দেবার জন্য? শেষ সারপ্রাইজ কবে দিয়েছেন?

.

— শেষ কবে আপনি আপনার স্ত্রীর জন্য অন্তত কিছু একটা নিয়ে ঘরে ঢুকেছিলেন, একদম নিজ থেকেই, তার কোন আবদার ছাড়াই? হোক না তা ২ টাকার একটা চকলেট বা ৫ টাকার মুড়ি ভাজা!

.

— শেষ কবে আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছেন যেখানে আপনার স্ত্রী কেনাকাটার জিনিস বাছাই করতে করতে আপনার মতামত চাইছিল আর আপনি বলছিলেন, "এটা না, ওটা নাও..."? কিংবা তোমাকে এটা না ওটাতে বেশি সুন্দর লাগবে।

.

— শেষ কবে আপনি আপনার স্ত্রীকে বিনা আবদারে বাইরে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন? সামর্থ্যের মধ্যেই একটু খানি লং ট্যুরে?

.

— আপনি দরিদ্র হলে শেষ কবে কাজ থেকে ফিরে বাসায় গিয়েই তাকে নিয়ে বেরিয়ে ২০ টাকার হলেও চপ পেয়াজু খেয়েছেন বা ফুচকা খেতে খেতে আড্ডা দিয়েছেন?

.

— শেষ কবে আপনি আপনার স্ত্রীকে পাশের দোকান থেকে কিছু একটা কিনে দিয়েছিলেন - অন্তত একটা আইসক্রিম?

.

— শেষ কবে তাকে ফুল দিয়েছেন?

.

— আপনার স্ত্রী কোন কসমেটিক্স ব্যবহার করেন তার নাম কেউ বলতে পারবেন? তাকে শেষ কবে নিজে থেকে কসমেটিক্স কিনে দিয়েছেন? সে তো আপনার জন্যই সুন্দর থাকতে চায়।

.

একটু মনে করুন...

.

আফসোসের সাথে সত্যতা স্বীকার করি আমাদের অধিকাংশ ছেলেরই উত্তর গুলো মনে করতে একটু সময় লাগবে। একটু মনে করে দেখতে হবে।

.

আপনার স্ত্রী আপনার থেকে বেশি কিছু চান না, আপনার প্রতি তার আবদারগুলো হয়ত খুবই সীমিত (অবশ্য এটাও ঠিক যে সব স্ত্রীর আবদারই সীমিত নয় এখানে শুধু দ্বীনি স্ত্রীদের চাহিদা ফোকাস করছি)

.

আপনার কাছে আপনার স্ত্রী যা চান তা হলো - আপনার সময়, তার প্রতি আপনার আর একটু বেশি মনোযোগ।

.

খুব কি বেশি এই চাওয়াটুকু?

.

আমরা স্বামীরে যেন একটু বুঝি যে অর্থই জীবনের সব নয়। সারাজীবন অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতেই যেন না কাটিয়ে দিই। অর্থের পেছনে ছুটতে যেয়ে দাম্পত্যজীবন ধ্বংস বা একঘেয়ে করে না তুলি। শুধু স্ত্রীর দোষ দেবার পূর্বে নিজের দায়িত্ব গুলো, দোষ গুলো একটু যাচাই করে দেখি।

বিষয়: বিবিধ

৭৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File