তাবলীগের পরশে

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ২৩ জুন, ২০১৪, ০৮:৩০:৫১ সকাল

আলেম ওলামা ও হুজুরদের মোটেও দেখতে পারতাম না। সামনে দিয়ে কোন পাঞ্জাবী ওয়ালা যেতে দেখলে ডাক দিতাম। নানা কু-রুচীপূর্ণ কথা বলতাম।

প্রশ্ন করতাম; এই যে মোল্লাহ! তোমরা না ফতোয়া দাও ছবি তুলা বা ঘরে রাখা হারাম। এখন যে দুই টাকার বা পাঁচ শত টাকার নোটে মুজিবের ছবি নিয়া ঘুরো, এটা রাখা আরাম! তাই না?

২০১৩ সালে আমাদের মসজিদে ঢাকা থেকে আগত এক তাবলিগী ভাই উপরোক্ত কথা গুলো এক দমে বলে যাচ্ছিলেন।

তখনকার উনার অবস্থা জানতে চাইলে উনি বললেন যে- আমি এক ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে। ছোটকাল থেকেই এক মডার্ন পরিবেশে বেড়ে উঠি। কোন কিছুর কমতি ছিল না। চাইতে দেরী কিন্তু পাইতে দেরী নেই। ভাগ্যিস, তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে আজ বাবা-মা, বড় ভাইরা আমাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছেন প্রায় ৩ বৎসর হলো।

প্রশ্ন করলাম, কীভাবে এই পথে আসলেন?

দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বললেন, আগেই তো বলেছি, কোন পাঞ্জাবী ওয়ালা দেখলে তাকে কীভাবে হেনস্থা করতাম।! পাশের বিল্ডিং এ থাকতেন এক বয়স্ক মাওলানা সাহেব। উনি-ই সব চেয়ে বেশি আমার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য! উনি কখনো রাগ করতেন না। হাসি মুখে আমার সাথে করমর্দন করে চলে যেতেন। যেদিন আমি উনাকে কিছু বলতামনা, উনি-ই আমার পাশে এসে সালাম দিয়ে বলতেন, আব্দুল্লাহ (ছদ্ম নাম) কেমন আছ?জবাবে উনাকে অপমান করতাম।

এক দিন আমার হাত ধরে বললেন, আমার সাথে চল। বললাম,

-কোথায়?

-আমি যেখানে যাই।

-আজ না।

টিক আছে বলে চলে গেলেন। এভাবে অনেক দিন বলার পর ভাবলাম, দেখিনা কোথায় নিয়ে যান?

কাংখিত স্থানে আসরের সময় উপস্থিত হলাম।

আরে! এতো কাকরাইল গাট্টি ওয়ালাদের আস্তানা!!

যাইহোক! কৌতুহল নিয়া ভিতরে প্রবেশ করে আসরের নামায পড়লাম। আগে কখনো পড়িনি। তাই পাশের জনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছিলাম। নামায শেষে এক সু-দর্শন হুজুর ওয়াজ করলেন। উনার কথাগুলো আমার অন্তর আমার অন্তর ছুয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে এসে নিজেকে অন্যরকম মনে হতে লাগলো। পরের দিন সেই হুজুরের আগেই আমি কাকরাইল চলে যাই। ওয়ায শুনলাম। আজ দোজখের আযাব ও বেহেশতের চির শান্তির ব্যাপারে আলোচনা হলো। আমার মনে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ! আমার জীবন তো ধবংস। তিন দিন সময় লাগানোর ওয়াদা করে বাড়িতে চলে আসি। এখন আর বাড়িতে আগের মতো হট্টগোল কিছুই করা হচ্ছেনা। সবাই চিন্তায়। কী হল তার? আমি যখন আমার ঘটনাটা বললাম, তখন-ই ঘটল বিপত্তি। চোখ লাল করে একেকজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন দিনের কথা বলায় সবাই বলে উঠলেন, যেতে চাইলে চিরদিনের জন্য চলে যাবে। আর ফিরে আসবেনা। (দু চোখে পানি)

কিছুক্ষন পর,

আমি হুজুরের সাথে দেখা করে সব খুলে বললাম। উনি বললেন, দেখ! মা বাবাকে বিগড়িয়না। উনাদেরকে বুঝাও। আমি আর বাসায় ফিরে যাবনা বলে মনস্থ করেছি। ইতিমধ্যে খবর আসল, আমাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। চলে যাই কাকরাইলে। ৩দিন পর ১০ দিন এভাবে ৪০ দিন সময় লাগাই।

এখন কীভাবে চলছেন জানতে চাওয়ায় বললেন- এক মুরব্বীর সহযোগিতায় সুন্দর একটা চাকরী পাই। এর পর নিজের রুজী ও আরো কিছু টাকা ধার করে নিজস্ব একটা দোকান খুলি। আলহামদুলিল্লাহ,আমি দোকানের পাশাপাশি এখন নিয়মিত তাবলিগে সময় লাগাই। যে হুজুরদের আমি দেখতে পারতাম না, আজ সেই হুজুরদের বেশ ধরে দেশ দেশান্তর ঘুরতেছি।

আমি বললাম, আপনি কি বাড়িতে আর যান নি বা মা বাবা আপনার খোজ করেন নি?

বললেন, না, আমি আর এই পরিবেশে ফিরে যাইনি বা উনারা আমার খুজ ও করেন নি। জানি না উনারা কেমন আছেন? তবে উনাদের জন্য দুয়া করি, আল্লাহ যেন মওতের আগেই তাদেরকে দ্বীনের পথে ফিরে আনেন।

এর জন্যে তো আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।

বললেন, ইনশা আল্লাহ! এবার থেকে সেই চেষ্টায় লেগে যাবো।

বিদায় নিয়ে চলে আসতে চাওয়ায় হাত ধরে বসিয়ে দরদমাখা কন্ঠে বললেন,

ভাই, অনেক কথা তো বলেছি, আমার আব্বা আম্মার জন্য দুআ চাচ্ছি। আর সেই হুজুরকে দুআ করবেন, যার কারণে আমার এতো পরিবর্তন। মা বাবা, বাড়ী ঘর, টাকা পয়সা সব ছেড়ে আমার মন তবুও এই প্রশান্তিতে আছে যে, আল্লাহ পাক আমাকে মেহেরবানী করে সঠিক পথে চলতে ও উনার কালেমার দাওয়াত দিতে অধমকে কবুল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১২২৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237808
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : কেউ তবলীগের পরশে ভাল হয় আবার কেউ জামাত-শিবিরের পরশে । সবি আল্লাহর ইচ্ছা । আমার কত সহপাঠিকে দেখলাম নেশার আসক্তিতে হারিয়ে যেতে ! ছাত্রাবাসে পতিতা নিয়ে কত সহপাঠি মৌজ করেছে, সহপাঠিদের আরো কত খারাপ কাজ দেখেছি ! মনেহয় যেন, শিবিরকে ক্যাম্পাসে আল্লাহর একটি রহমত হিসেবে পেয়েছি । যারা আমাকে যাবতীয় ভালকাজে উৎসাহিত করেছিল । আবার তাবলীগের এক ভাইকে শিবিরের ছেলেদের সাথে মিশে তালিকা নিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের হাতে দিতেও দেখেছি ।
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৯
184388
নেহায়েৎ লিখেছেন : শেষে যেটা বললেন এটাই ওদের আসল রূপ! ওরা ছাড়া অন্যদলের প্রতি এইরকমই হিংস্র। ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত যখন ইসলাম প্রচার করে তখন কোন ইহুদী-খ্রীষ্টান বাঁধা প্রদান করে না। আর সকল নবীরা যখন তাওহীদের দাওয়াত দিতেন তারা বাঁধা প্রাপ্ত হতেন। এতে বুঝা যায় নবীদের ইসলাম আর ওদের ইসলামের মধ্যে কতটা পার্থক্য!
237814
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:১৫
আয়নাশাহ লিখেছেন : তাবলীগ জামায়াতের জন্য অনেকেরই ভাল আমল আখলাক হয়েছে। তারা নিজেরা লম্বা জামা পরেন, মাথায় পাগড়ী বাঁধেন, চিল্লায় সময় লাগান এবং ইস্তেমায় যান আর এর মাধ্যমে নিজেকে ঠিক কারার পাশাপাশি দাও্য়াতের কাজও করেন। এসবই ঠিক আছে। কিন্তু ইসলামকে জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্টার জন্য তারা কিছুই করেন না বরং যারা এটা করতে চায় তাদের সহযোগিতার বদলে প্রচন্ড বিরোধিতা করেন। তারা নিজেদের কাজের সাথে সাথে ইসলামী অন্য সংগঠন গুলোকে সহযোগিতা করলে আরও ভাল হতো।
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১২
184379
নেহায়েৎ লিখেছেন : সুন্দর কথা বলেছেন
237823
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৩৯
জাকির হোসাইন লিখেছেন : ঠিক এরকমভাবেই আমাদের গ্রামের এক বড় ভাই সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিলেন তাবলীগের স্পর্শে!
237828
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৩
নেহায়েৎ লিখেছেন : মাশা আল্লাহ! বুঝবেন আরো বেশি কুরআন পড়ুন, সহীহ হাদীস পড়ুন। ইসলাম কি জানার চেষ্টা করুন। আল্লাহ সবাইকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২২
184384
ইমরান ভাই লিখেছেন : Love Struck Love Struck
237838
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫২
রায়হানমোসি লিখেছেন : তাবলীগ অবশ্যই প্রয়োজন। তবে ইসলাম প্রচারে তবলীগ অসম্পূর্ণ। আরো বৃহত্তর কাজের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। সেটা হলো জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা। আমি তবলীগ ভাইদেরকে শ্রদ্ধা করি এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে বলে জামায়াতে ইসলামকেও আরো বেশি শ্রদ্ধা করি।
237877
২৩ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:৪৩
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : তাবলীগ ভাইদের কাছে আমার অনুরুধ ,আসুন আমরা সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি । নাহয় এই নাস্তিকরা আপনাদেরও ছাড়বেনা । আসুন আলাদা ফতুয়া তৈরি করে জাতিকে আলাদা না করে , জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করি । আর সেটাই হবে আমাদের কামিয়াব ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File