সন্তানকে আগে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিন
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ২৭ মে, ২০১৪, ০৩:১০:১৫ দুপুর
আমার এলাকার এক ভদ্রলোককে চিনতাম। একই
এলাকায় থাকার সুবাদে প্রায় প্রতিদিনই তার
সাথে দেখা হতো। লোক হিসেবে খুব ভালো ছিলেন।
সবার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতেন।
তার তিন ছেলে এক মেয়ে। সুখী পরিবারই বলা যায়।
তিনি খুব সংগীত ভক্ত লোক ছিলেন, সে হিসেবে তিনি তার তিন ছেলে এবং মেয়েকেও নিয়মিত
সংগীত চর্চা করাতেন। বহু টাকা পয়সা খরচ করে ৪
ছেলে মেয়েকেই তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি সংগীত
শিক্ষা দিয়েছেন। ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে ২/৩ জনই
এখন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর কাতারে।
মেজো ছেলেটা আমার বয়সী ছিলো এবং এলাকায় তার
সাথে আমার মোটামুটি বন্ধুত্বও ছিলো। এক সময়
হয়তো তার মতো আমিও গানের জগতে ডুবে ছিলাম
কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে দ্বীনের
আলো একটু হলেও আমার উপর পড়েছে, যার দরুন গান
বাজনা ছেড়ে দ্বীনের পথে সময় দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমার এই পরিবর্তনে আমার সেই
বন্ধু মোটেও খুশী হতে পারেনি।
"দোস্ত কি ক্ষ্যাত
মার্কা জামা পড়িস, আনস্মার্ট, আনকালচার লাগে"
এই টাইপের কথা তো অনেক দিন শুনতে হয়েছে। তবুও
আমি ওকে বলেই গেছি
-দোস্ত ওসব ছেড়ে দে, আল্লাহর
হুকুম নবীর তরীকা মতো চল। কিন্তু কে শুনে কার
কথা !
কয়েকদিন পর আমার বন্ধুর বাবা অর্থাৎ সেই
ভদ্রলোক হঠাৎ মারা গেলেন। সকল আত্মীয়
স্বজন জড়ো হলো, খবর পেয়ে আমিও গেলাম। স্হানীয় হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে কিছু হাফেজ ছাত্র এনেকুরআন তেলাওয়াত করানো হচ্ছে,
লোকটির ছেলে মেয়েরা বিমর্ষ অবস্থায় বসে আছে। আমাকে দেখেই
আমার বন্ধু কেঁদে উঠলো। শান্তনা দিলে একটু স্বাভাবিক হল সে ।
অতঃপর বললাম,
-'দোস্ত তোর বাবা এত
টাকা পয়সা খরচা করে তোদের গান শিখিয়েছেন, গানের
পিছনে কতো মেহনত করেছেন, এক কাম কর, আজ
তোরা সব ভাই বোন মিলে আংকেলের
স্মরনার্থে একটা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শুনা !!!
এই মেহনত তোর বাবার জন্য কি একটুও কাজে লাগবেনা?
কথাটা শুনে আমার বন্ধু অঝোরে কাঁদতে থাকে, কাদার
কারনটা আমি বুঝতে পেরেছি। যাই হোক, আমার বন্ধু
কিছুদিন পর আমার সাথে দেখা হলে বলে, দোস্ত
আমি গান বাজনা ছেড়ে দিছি, যেই শিক্ষা আমার
পরকালের কোন কাজে আসবেনা, ধ্বংস
ছাড়া মুক্তি আসবেনা, সেই শিক্ষার আমার দরকার
নেই। সেই থেকে একেবারে খালেস
দ্বীনওয়ালা হয়ে গেলো আমার প্রিয় বন্ধুটি।
কাড়ি কাড়ি টাকা খরচা করে দিন রাত পরিশ্রম
করে যারা সন্তানকে দুনিয়াবি গোমরাহীর
শিক্ষা দিচ্ছেন আপনারা কি ভেবেছেন এর ফলাফল কি,
তার প্রতিক্রিয়া কি? আপনার
ছেলে মেয়েকে জাহান্নামে যাওয়ার পথ সুগম
করে মসজিদ, মাদ্রাসায় লোকদেখানো কিছু টাকা দান
করে, কিছু যাকাত ফিতরা খয়রাত দান করে ভাবছেন
আপনার জান্নাতের পথ সুগম করে ফেলবেন? কখনোই
না, বরং আপনার ছেলেমেয়েরাই
আপনাকে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবে,
তারা একা যাবেনা, কারন তাদের পরিনতির জন্য আপনারা পিতা-মাতারা'ই মূলতঃ দায়ী।
বিষয়: বিবিধ
১২০৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন