আবুল আলা মওদুদী সাহেবের কিছু ভ্রান্ত আকীদা
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৬:৫৪:৩৯ সকাল
আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর ভ্রান্ত
উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না।
কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার
এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য
নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম
খাবারের সাথে যেমন সূক্ষ্ণ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত
হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও
জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন।মওদুদী রচিত
‘তাফহিমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ
দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর
পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য
এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের
বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ
পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত
করা সম্ভব নয়।যেমন তিনি বলেন,
প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার
অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের
পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত
হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য়
সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের
জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত
তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড,
সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ
নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন
(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার
ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন
তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং;
কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ
করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল
আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী] জামাত শিবিরের বন্ধুরা ,, তোমাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই, আমরা তোমাদের শুধু হক্ব পথেই আহ্বান করছি,, উপরোল্যেখিত মওদুদী মতবাদ সম্পুর্নই ইসলাম বিরোধী। আর এসব আমার মনগড়া মিথ্যে বানোয়াট কল্প কাহিনিও নয় যা প্রমান সহই উল্যেখ করেছি। এখনো সময় আছে, বেড়িয়ে এসো মওদুদীর কথিত ভ্রান্ত মতবাদ থেকে, নচেৎ কাল বিচার দিবসে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে। আর লা জবাবে তুমিই হবে জাহান্নামী।
বিষয়: বিবিধ
৪৯৩৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর মাসুম মানে কী তা আগে শিখে নিয়ে পণ্ডিতী করলে কি ভালো হয়না?
মাসুম মানে ভুল, পাপ বা গুনাহ করলেও তা ধর্তব্য নর--এটাই মূলকথা। যেমন আমরা আপনজন ভুল করলেও খেয়াল করিনা বা ধরিনা কিন্তু একই ভুল কেউ করলেই ক্ষেপে যাই। আল্লাহও নবীদের ভুল, পাপ ধরবেন না।
আর আপনি বলতে চাচ্ছে-নবীরা মানুষ নয় ফেরেস্তা--তাইতো? আল্লাহ কিন্তু রাদের মানুষ বানিয়েছেন আমাদের মত শুধু নবুয়ত দিয়ে পৃথক করেছেন মাত্র। নতুবা আমাদের সাথে আর কোন ফারাক নেই কেন তাদের।
কুরআন পড়ুন আর আল্লাহ কিছু নবী সম্পর্কে তাদের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে কী বলেছেন দেখুন--তাহলে আল্লাও কি মিথ্যে বলেছে নাকি মাওলানাই একাই?
মাসুম মানে নিষ্পাপ । অর্থাৎ নবী রাসূল রা কোন গুনাহ করেন নি ।
হ্যা...কোন ভুল বুঝাবুঝি বা অনিচ্ছাকৃত কারণে বা ভুলে নবীদের থেকে কিছু কাজ সংঘটিত হয়েছে।কিন্তু আল্লাহ পাকের দরবারে নবীদের মাকাম ও মর্যাদা অনের উচ্চ তাই ক্ষুদ্র ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও সেটাকে বড় বলে ধরা হয়।এ হিসেবে নবীদের সেসব কাজকে 'জানবুন/মা'সিয়ত' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যদিও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো পাপই নয় ।
মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভী বলেন-নবীদের ক্ষেত্রে খেলাফে আওলা এমন,অন্যদের ক্ষেত্রে পাপা করা যেমন ।
-সূত্রঃমারেফুল কুরআন/মুবাহাছায়ে শাহজাহানপুর
কুরআনের কথাও কি মিছে যে, বিভিন্ন নবীর ত্রুটি যা বলা হয়েছে? যেমন-নবীর ক্ষত্রে আয়েশা রাঃ এর ঘরে মধু খাবার ও মিছে তোহমত দেবার সময় আয়েশাকে সন্দেহবশত এক প্রকার নবীর বর্জন?
এটা কি পাপ না হলেও মানবিক দুর্বলতা নয় নবীর, যা আল্লাহই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন? এসব কী তবে ভালো কাজ বা ছওয়াবের কাজ যা আমরা নবীর সুন্নত হিসেবে আমাদের বিবিদের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করবো? এমন কাজ অন্য নবীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে, যেমন-ইউনুস আঃ আল্লাহর সাথে রাগ করে হিজরত করা, ইব্রাহীম আঃ কর্তৃক চন্দ্রসূর্য ইত্যাদিকে স্রষ্টা বলে ঈমান আনা এবং পরে সংশোধন করে একত্বাবাদের দিকে ফিরে আসা?
এতো আল্লাহই বলেছে সত্য হিসেবে আমাদের জানার জন্য--এটাই কি মাসুমিয়াত নাকি তারাও মানুষ হিসেবে এসবের ঊর্ধ্বে নন-এটাই বুঝায়? মওদুদী সাহেব আল্লাহর কথাই বলে আপনাদের মত বোকাদের পালায় পড়লেও কিন্তু তার সমকক্ষ আল্লাহ আপনাদের কখনোই বানাবেন না?
মাওলানা মাওদূদি ছাড়া আর কারো এই বিষয়ে ভুল নেই? দাউদ (আ) সম্পর্কে আর কারো বক্তব্য নাই? আল্লামা সুয়ূতী ভুল করেন নি?
মানে খেয়ে আর কাজ নেই আপনার, তাই এইসব নিয়ে একটা ব্লগ দিলেন। সত্যের বিজয় ঘটাবেন, বাংলাদেশের মিথ্যার বেসাতি বিলানো লোকদের কাতারেই তো গেলেন!!
Brother do understand spoken Urdo but can't read Urdo, Hindi, chinese, farsy etc. From my personal interest i find none.
That means it does not work. Please ref.only Bangla or English book only not urdo or chinese
نحمدهُ ونستعينهُ ونستغفرهُ ونؤمن به ونتوكل عليه و نعوذبالله من شرور انفسنا ومن سيءات اعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له ونشهد ان لا الٰه الا الله وحده لاشريك له و نشهد انّ سيد نا و حبيبنا و حبيب ربنا وطبيب قلوبنا داولٰنا ومولٰنا محمدا عبده ورسوله. امّا بعد! نان خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمّد صلي الله عليه وسلم وشرالامور محدثاتها وكل محدثت بدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار.
انبياء عِصْمَة নবীদের নিষ্পাপতা
যে সমস্ত মাসআলার উপর ভিত্তি করে মাওলানা মওদূদী (রাহঃ) কে কাফির, পথভ্রষ্ট, খারিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে সে গুলোর মধ্যে انبياء عِصْمَة বা নবীদের নিষ্পাপতা অন্যতম। মাওলানা মওদূদী (রাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “তাফহীমাত” দ্বিতীয় খন্ডের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত দাউদ (আঃ) এর কিচ্ছা বর্ণনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে এ সম্পর্কে লিখেনঃ
“এবং এটি একটি সূক্ষ্ম রহস্য যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে দিয়ে দু-একটি ভুল-ত্রুটি হতে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে এবং জেনে নেয় যে, এরা খোদা নন বরং মানুষ।” মাওলানার উল্লিখিত কথা গুলোই হচ্ছে তাকে এ জঘন্য ও মারাত্মক আখ্যায় আখ্যায়িত করার মূল কারন।
সন্মানিত পাঠক বৃন্দ, আসুন আমরা তাহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য কিতাব এবং নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরামদের মতের সাথে মাওলানার কথাগুলো মিলিয়ে দেখি সত্যিই কি তিনি এ ধরণের বিষেষণে বিশেষিত হওয়ার যোগ্য?
আল্লামা তাফতাজানীর অভিমতঃ
আল্লামা সা’দুদ্দীন মাসউদ তাফতাজানী (রাহঃ) তার লিখিত “শারহে আকা’ঈদে নাসাফী”তে (যে কিতাবটি এ উপমহাদেশের সরকারী, আধাসরকারী এবং ক’উমী মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়) বলেনঃ
اِن الانبياء معصومون عن الكذب خصوصا فيما يتعلق بامر الشرائع وتبليغ الاحكام وارشاد الامه – امّا عمادا ………. فبا لا جماع واما سهوا فعند الاكثرين – وفى عصمتهم عن سائرالذنوب تفصيل وهوانهم معصومون عن الكدرقبل الوحى وبعد لا بالا جماع وكغاعف تعمد الكباىرعند الجمهور خلا فالاحشوية وانما الغلاف فى امتنا عه بذليل السمع او (؟؟؟؟) وامّا سهوا فجوزه الاكثرون – امّا الصغائر فيجوز عمدا عند الجمهور خلا فاللجبائ واتباعه ويجوج سهوا بالا تغاق الاما يدل على الخسة كسرقة لقمة والتطفيف بحبة لٰكن المحقين اشترطوا اف ينبهوا عليه فينتهوا عنه – هٰذا كله بعد الوحى واما قبله فلا دليل علىٰ امتناع صدور الكبيرة – (شرح العقائدللنسفى)
নবীগন মিথ্যা হতে পবিত্র। বিশেষ করে শরীয়ত ও রিসালত প্রচারের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মধ্যে তারা মিথ্যা হতে সম্পূর্ন পবিত্র। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যপারে সকলেই একমত,তবে ভুলবশতঃ অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে। অধিকাংশ আলেমদের মতে তারা এই প্রকার মিথ্যা হতেও পবিত্র। অপরাপর যাবতীয় গুনাহ হতে নবীগণ পবিত্র হওয়া সম্পর্কে আলোচনা আছে। উহা এই যে, তাহারা কুফরী হতে সম্পূর্ন পবিত্র। অহি আসার পূর্বে হউক কিংবা পরে। এতে কারও মতভেদ নেই। অনুরুপভাবে তারা জমহুর বা অধিকাংশ উলামাদের নিকট ইচ্ছাকৃত কবীরা গুণাহ হতেও পবিত্র।
হাশাবিয়া সম্প্রদায় এর বিপরিত মত পোষণ করে। তবে মতভেদ রয়েছে এ কথার মধ্যে যে,কবিরা গুনাহ হতে পবিত্র থাকা ও বিরত থাকা কি বর্ণিত দলীলের দ্বারা প্রমানিত, না বিবেকের দ্বারা। আর ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ উলামাদের মত হল যে উহা জায়েয ও সম্ভব আছে। ছগীরা গুনাহ জমহুর উলামাদের মতে নবীগন হতে ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। কিন্তু জুব্বাই ও তাহার অনুসারীদের অভিমত এর বিপরিত। আর অনিচ্ছাকৃত ভুলের দ্বারা ছগীরা গুনাহ হওয়া সকলের ঐক্যমতে জায়েয আছে, কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ প্রকারের ছগীরা জায়েয নয়। যেমন- এক লোক যা চুরি করা ও ওজনে কম দেওয়া এ ব্যাপারে মুহাক্কে’ক বা নির্ভর যোগ্য আলেমগণ শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর যেন সতর্ক করা হয়। যাতে তারা বিরত থাকতে পারেন। এ সব মতভেদ অহি নাযিল হওয়ার পরের অবস্থায়। কিন্তু অহি নাযিল হওয়ার পূর্বে নবীগণ হতে কবীরা গুনাহ নিষিদ্ধ ও অসম্ভব হওয়ার কোন দলীল নেই। ( দেখুন শারহে আকা’ঈদে নাসাফী, ইছমতে আম্বিয়া আলোচনা।)
আল্লামা তাফতাজানীর উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথাগুলো স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সে গুলো হচ্ছেঃ-
১। নবীরা সর্বাবস্থায় কুফরী হতে পবিত্র।
২। জমহুর উলামাদের মতে তারা ইচ্ছাকৃত কবীরা গুনাহ হতেও পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ নবীদের থেকে হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতে নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৪। সকল উলামাদের ঐক্যমতে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর অভিমতঃ-
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তার লিখিত “ইছামানুল আম্বিয়া” নামক কিতাবে বলেনঃ-
والذى نقول: ان الانبياء عليهم الصلوٰة والسلام معصومون في زمان النبوة عن الكبائر واصغائر بالعمد امّا علٰى سبيل السهو فهوجائز -
এবং আমরা যা বলি তা হচ্ছে যে, আম্বিয়ায়ে কিরাম নবুয়াত প্রাপ্তির সময় থেকে ইচ্ছকৃত কবীরা এবং ছগীরা গুণাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুল বশতঃ কবীরা ও ছগীরা গুণাহ হতে পারে। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-২৮)
হযরত আদম (আঃ) এর ইছমত সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী উল্লেখ করেনঃ-
وانما قلنا انه كان عاصيا لقوله تعاليٰ (وعصيٰ اٰدمُ ربّه فخويٰ ) وانما قلنا ان العاصي صا حب الكبيرة لوجهين: (احدهما) ان النص يقتضي كونه متعا …. وهو قولهٔ تعاليٰ (ومن يعصي اللهَ ورسولهٔ وتعدّ حدودهٔ يدخله نارًَا خالدًَا فيها) ولا معني لصاحب الكبيره الامب فعلًَ فعلاًَ يعاقب عليه – (وثانيهما) ان العصيان اسم زمّ فلا يطلق الا عليٰ صاحب الكبيره
এবং আমরা বলি যে, তিনি আছী (অবাধ্য) ছিলেন। কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, “আদম (আঃ)তার রবের অবাধ্য হন অতঃপর পথ ভ্রষ্ট হন।“ আমরা আ’ছীকে দু’কারণে কবীরা গুনাহগার বলি।
১। কোরআন শরীফের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) শাস্তি প্রাপ্ত ছিলেন কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে তাকে দোজখে প্রবেশ করাবেন এবং ওখানে সে সদা সেখানে থাকবে। আর কবীরা গুনাহগার ঐ ব্যক্তি কেই বলা হয় যে এমন কাজ করে, যে কাজের উপর তাকে শাস্তি দেওয়া যায়।
২। ইছয়ান (অবাধ্যতা) এমন একটি খারাপ কাজের নাম যা কবীরা গুনাহগার ছাড়া অন্য কারও উপর প্রয়োগ করা হয়না। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-৩৬)
আল্লামা আলুসীর অভিমতঃ-
আল্লামা আলুসী (রাহ) তার বিখ্যাত তাফসীর রুহুল মা’আনীতে লিখেনঃ-
فان الصغائرالفيرا المشهره يا لخسه يحوزصدورها منهم محمدًَا بعدالبعثه عندالحمهور عليٰ مادكره العلامه التفتاراني – الثاني في شرح العقائد ويجوز صدورها سهوًَابا لاتفاق
জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মতানুসারে নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে। কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ ধরণের ছগীরা গুনাহ হতে পারেনা। আর অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা সকলের ঐক্যমতে হতে পারে। আল্লামা তাফতাজানী ও তার শারহে আকাঈ’দে নাসাফীতে এভাবে উল্লেখ করেছেন। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)
আল্লামা আলুসী কোরআন শরীফের আয়াত فحصيٰ اٰدمُ ربّه فخويٰ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ-
طاهر الايٰة يدل عليٰ ان ما وقح منه كان من الكبائر وهو المفهوم من كلام الامام –
বাহ্যিক ভাবে আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) থেকে যা সংগঠিত হয়েছিল তা কবীরা গুনাহ ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযীর কথা থেকেও এমনটিই বুঝা যায়। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর (রঃ) অভিমতঃ-
মুফতি মোহাম্মদ শফী (রাহ) তার লিখিত “মাজালিসে হাকীমুল উম্মত” নামক কিতাবে থানবী সাহেবের অভিমত উল্লেখ করেনঃ-
আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকে তার নৈকট্যের যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন এবং তাদেরকে সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন, যেমন এটা তার রহমত ও নিয়ামত, এমনি ভাবে কোন কোন সময় নবীদের থেকে কোন কোন ব্যপারে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনা সমুহ কোরআন শরীফের মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে এগুলোও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও রহমত। এর মধ্যে এক বড় ফায়দা এটাও যে, মানুষের যেন নবীদের খোলা হোয়ার সন্দেহ না হয়। ভুলত্রুটি হওয়া এবং এর উপর আল্লাহতায়ালার সতর্ক করা এটাই পরিষ্কার করে দেয় যে, নবীরাও আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ। (দেখুন পৃষ্ঠা নং- ৬৫)
মুহতারাম পাঠক বৃন্দঃ হযরত থানবী (রাহ) এর কথা গুলো মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথা গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন শব্দ ও অর্থগত দিক দিয়ে প্রায় মিলে যাচ্ছে। আমরা উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথা গুলো স্পষ্টতঃ জানতে পারলাম সেগুলো হচ্ছেঃ -
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’য়াতের সকল উলামায়ে কিরাম এ কথার উপর একমত যে, নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
২। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে ইচ্ছকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কবীরা গুনাহ হতে পারে।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) কিন্তু গুনাহ শব্দ ব্যবহার করেন নাই। তিনি বলেছেন নবীদের থেকে “লগজিশ” বা ভুল ত্রুটি হতে পারে। এতটুকু বলার কারনেই তাকে কাফির, গুমরাহ, খারেজী, ক’দিয়ানী আর কত কিছু বলা হয়েছে। কবি কি সুন্দর বলেছেনঃ “আমরা একটু আঃ শব্দ করলেই তা হয়ে যায় বদনামের কারন। আর তারা হত্যা করলেও এর কোন আলোচনা হয় না।”
মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর সমালোচনা ও তার জবাবঃ
মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর সমালোচনা করতে গিয়ে তার লিখিত “মওদূদী দস্তুর” নামক কিতাবে লিখেনঃ
“এখন বলুন উপরোল্লিখিত আ’কীদা (যা তাফহীমাতে উল্লিখিত আছে) যা প্রত্যেক নবী সম্পর্কে, যাদের মধ্যে জনাব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও আছেন, কতটুকু ইসলামের মূলনীতি ও আ’কীদার সাথে সামঞ্জস্যশীল? যাতে প্রত্যেক নবী থেকে ইছমত এবং হেফাজত উঠিয়ে নেওয়া এবং ইচ্ছে করে ভুল ত্রুটি করানো স্বীকার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি থাকতে পারেন না। এবং কোন নবীর উপর সর্বদা ভরসাও করা যায় না। যে হুকুমই হউকনা কেন এতে এ সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা ইছমত ও হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের। এখন বলুন এ মতভেদ মৌলিক না আংশিক এবং বলুন জামায়াতে ইসলামী এবং উহার প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা?”
মদনী (রাহ) এর সমালোচনা থেকে তিনটি কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
১। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে প্রত্যেক নবী থেকে ভুলত্রুটি হতে দিয়েছেন, এটা ইসলামী আ’কীদার বিরোধী।
২। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের।
৩। মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা মুসলমান নন।
হযরত মদনী সাহেবের কথাগুলো কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না, কারনঃ-
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সকল উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত যে, ভুল বশতঃ নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ হতে পারে এবং জমহুর উলামাদের মতে ইচ্ছাকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে। এমতাবস্থায় যদি হেফাজত উঠানো না হয়, তবে বুঝা যাবে যে, একদিকে আল্লাহর হেফাজত আছে, আর অন্যদিকে নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি তথা ছগীরা গুনাহ প্রকাশ পাচ্ছে। এটা কিন্তু অসম্ভব। কারন এতে পরোক্ষ ভাবে আল্লাহ তায়ালা হেফাজতের উপর পুর্ণ সক্ষম নন বলে প্রকাশ পায়। (নাউজুবিল্লাহ) অতএব মানতেই হবে যে, যখনই নবীদের থেকে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি প্রকাশ পায় তখন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে তা করতে দেন।
২। মুহাক্কেক বা নির্ভরযোগ্য উলামাদের মতানুসারে যখনই নবীদের থেকে কোন লগজীস হয় তখনই তাদেরকে অবহিত করা হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। আল্লামা তাফতাজানী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর (লগজিশের) যেন সতর্ক করা হয়।
আল্লামা আলুসী বলেছেন-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه فينتبهوا –
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন, তাদেরকে যেন এর উপর অবগত করানো হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। (দেখুন রুহুল মা’আনী খন্ড নং-১৬ পৃষ্ঠা -২৭৪
সাদরুশশারিয়া বলেনঃ-
وهو فحل من الصغائر يفحله من ڠير قصد ولابد ان ينبه عليه (توضيح)
লগজিশ ছগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যা ইচ্ছা ব্যতিরেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু এটা অত্যাবশ্যকীয় যে, এর উপর যেন তাদেরকে অবগত করানো হয়।
আল্লামা সায়িদ সুলাইমান নদভী সাহেব বলেনঃ-
মানুষ হিসেবে তাদের থেকে ও ভুল ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার ওহীর দ্বারা এ সমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন। (দেখুন সিরতুন্নবী, খন্ড নং- ৪ পৃষ্ঠা নং-৭০)
কোরআন শরীফে এর অনেক উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।
১। তাবুকের যুদ্ধের সময় কিছু সংখ্যক মুনাফিক কৃত্রিম ওজর পেশ করে রাসুল করীম (সঃ) এর নিকট যুদ্ধে গমন হতে নিষ্কৃতি চেয়েছিল, রাসুল (সঃ) স্বীয় স্বভাবজাত নম্রতা-সহনশীলতার কারণে এরা মিথ্যা বাহানা করতেছে জেনেও তাদেরকে রোখছত দিয়ে দিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এটা পছন্দ করেন নাই এবং এরুপ নম্রতা সমীচীন নহে বলে সাথে সাথে ওহী দ্বারা সতর্ক করলেনঃ
عفا الله عنك لم أذنت لهم حتىٰ يتبيّن لك الذين صدقواْ وتعلم الكٰذبين(٤٣)
হে নবী, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। তুমি কেন এ লোকদের অনুমতি দিলে? যদি না দেতে তা হলে তোমার নিকট সুস্পষ্ট হত যে, কোন লোকেরা সত্যবাদী, আর মিথ্যেবাদীদেরকেও জানতে পারতে।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং-৪৩)
২। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুনাফিকের মৃত্যুর পর তাহার ছেলের অনুরোধে রাসুলে করীম (সঃ) ঐ মুনাফিকের জানাযার নামাজ পড়াতে উদ্যত হয়ে গেলেন। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা ওহী দ্বারা তাকে সতর্ক করলেন এবং নামায পড়ানো থেকে বিরত রাখলেন।
ولا تصلِّ عليٰٓ أحد منهم مات ابدا ولا تقم عليٰ قبره – انهم كفرواْ
بالله ورسولهِ وماتواْ وهم فسقون (٨٤)
তাদের কোন লোক মরে গেলে তার জানাযা তুমি কখনই পড়বেনা তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেনা। কেননা তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে কুফরী করেছে। আর মরেছে তারা ফাসেক অবস্থায়।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং ৮৪)
৩। রাসুল করীম (সঃ ) তার কোন স্ত্রীর মনস্তুস্টির জন্য মধু পান না করার কসম করেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ না করার কসম করা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য শোভন নহে, তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহী দ্বারা অবগত করলেন।
ياآيّها النبىّ لم تحرِّم مآ أحلّ الله لك – تبتغى مرضات أزوٰجك – والله غفوررحيم (١)
হে নবী। আল্লাহ তায়ালা যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন নিজের জন্য হারাম করলে। তুমু কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাইতেছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা-তাহরীম, আয়াত নং-১)
৪। হযরত নূহ (আঃ ) সেই ঐতিহাসিক তুফানের সময় তার কাফের ছেলেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে তা পছন্দনীয় হল না, তাই সাথে সাথে ওহী নাযেল করলেনঃ-
قال يا نوح انّه ليس من اهلك – انّه عمل غير صالح – فلا تسئلن ما ليس لك به علم – إنىّٓ أعظك أن تكون من الجٰهلين (٤٦)
আল্লাহ বলেন: হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নহে। সে অসৎ কর্ম পরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করনা। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি অজ্ঞদের অন্তরভুক্ত না হও। (সুরা-হূদ আয়াত নং- ৪৬)
৫। হযরত মুসা (আঃ) যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন তখন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন – هذا من عمل الشيطان – এটা শয়তানের কান্ড।
এ ছাড়াও কোরআন শরীফে অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং হযরত মদনী (রাহঃ) এর একথা ঠিক নয় যে, “এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের”।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) ইছমতে আম্বিয়া সম্পর্কে কোন কথা কোরআন হাদীস কিংবা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আ’কিদার খেলাফ বলেন নি। সুতরাং হযরত মদনীর (রাহ) এর কথা অত্যন্ত মারাত্মক যে, জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা এবং মাওলানা মওদূদী (রাহ) মুসলমান নন। আমরা বলতে বাধ্য হব যে উপরোল্লিখিত তিনটি ব্যপারে মদনী সাহেবের ইজতেহাদী ভুল হয়েছে।মাওলানা মওদূদী (রাহ) যথার্থই এক মর্দে মুমিন, এবং একথা বললে ভুল হবে না যে, এ বিংশ শতাব্দীর তিনি এক উজ্জল নক্ষত্র। সুতরাং এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে “মুসলমান নন” শব্দটি ব্যবহার করা মুসলিম মিল্লাতের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়।
সন্মানিত পাঠকবৃন্দঃ – হযরত হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর ফতোয়াটি যদি মেনে নেয়া যায়, তাহলে আল্লাম্মা তাফতাজানী, আল্লামা আলুসী, ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী, হাকীমুল উম্মাৎ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, এমন কি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সমস্ত উলামায়ে কিরামদের ব্যাপারে আপনারা কি বলবেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন