প্রযুক্তির অপব্যবহারের কুফল

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:২৫:৫৭ বিকাল

ফুলে ফুলে সাজানো লাবণ্যের সংসার। এক মেয়ে। ‘ক্লাস ফোর’-এ পড়ে। স্বামী আরিফ হোসেন ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করে। একেবারে বিত্তশালী না হলেও সংসারে অভাব-অনটন নেই। মেয়ে নিয়ে লাবণ্য থাকে বরিশাল শহরে একটি ভাড়া বাসায়।

আরিফ ছুটি পেলেই চলে আসে স্ত্রী-সন্তানের কাছে। তাদেরকে সাধ্যমতো সময় দেয়ার চেষ্টা করে। সে স্ত্রীকে ভালোবাসে অনেক অনেক। খুব বিশ্বাস করে। আর সংসার ও দাম্পত্য জীবন তো বিশ্বাসের খুঁটির উপরই সুদৃঢ় থাকে। কিন্তু সেই বিশ্বাসের ভিত যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে তখন আর সেখানে ভালোবাসা থাকে না। সুখ-শান্তি থাকে না। নেমে আসে ধ্বংসলীলা।

আরিফ লক্ষ্য করলো লাবণ্যকে মোবাইল ফোন দেয়ার পর থেকে প্রায় সময় তার নাম্বার ‘বিজি’ থাকে। ব্যাপারটি তার ভালো লাগে না। জিজ্ঞেস করলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না।

ক্রমেই আরিফের মনে সন্দেহের বীজ দানা বাঁধতে থাকে। যে স্ত্রীকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসতো তার প্রতি কেমন যেন অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে লাগলো তার।

একদিন সকালে আরিফ লাবণ্যের সঙ্গে কথা বলবে বলে কল করলো। দেখলো নাম্বার বিজি। একটু পরে আবার ট্রাই করলো। তখনো বিজি। এভাবে অনেক সময় ধরে একই অবস্থা। সেদিন আর অফিসে গেল না সে। সোজা চলে এলো গাবতলী বাস কাউন্টারে। বরিশালের টিকিট কাটলো। গাড়ীতে উঠেও অনেকবার লাবণ্যের নাম্বারে চেষ্টা করলো। তখনো আগের মতোই বিজি। পাটুরিয়া ফেরীঘাটে এসে পড়লো। গাড়ী ফেরীতে উঠলো।

আরিফ গাড়ী থেকে বের হয়ে ফেরীর ছাদে চলে এলো। মনটা ভালো নেই। কেমন যেন একরাশ অসহ্য অব্যক্ত যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে হৃদয়ের ভেতরে। বিষণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নদীর দূর সীমানায়। পালতোলা নাও দেখা যায়। ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা মাছ ধরে। ভটভট শব্দ তুলে ইঞ্জিনচালিত নৌকা মানুষ নিয়ে নদী পার করছে। আরো বড় বড় অনেক ফেরী গাড়ী ভরে নদী পার হচ্ছে। ছোট ছোট লঞ্চও যাত্রী ভরে পানি কেটে তরতর করে এগিয়ে চলছে। রোদের উজ্জ্বল আলো নদীর পানিতে পড়ে চিকমিক করছে। কিন্তু এ সবের কিছুই যেন ওর বিষণ্যতাকে ছাপিয়ে চোখের দৃষ্টিকে স্পর্শ করতে পারছে না।

আরিফ আবারও লাবণ্যের নাম্বারে ‘কল’ করলো, ‘বিজি’। বরিশাল আসতে আসতে যতোবার কল করলো ততোবারই নাম্বারটি বিজি পেলো। বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কল করলো, একইভাবে ‘বিজি’।

আরিফ ভেতরে প্রবেশ করলো। তার আসার খবর লাবণ্য জানতো না। তাই নির্বিঘেœ মোবাইলে কথা বলে চলছিল। আরিফ বাসায় ঢুকেই পেছন থেকে গিয়ে লাবণ্যের হাত থেকে মোবাইলটি কেড়ে নিলো। লাবণ্য হতভম্ব হয়ে গেল। আরিফ অপর প্রান্তে দেখলো পুরুষ কণ্ঠ। কল কেটে দিয়ে কল টাইম চেক করলো। দেখলো একটা কলে চার ঘন্টা দশ মিনিট। আরেক কলে তিন ঘন্টা।

আরিফের মাথায় যেন খুন চেপে বসলো। কোনো কিছু না ভেবেই লাবণ্যের গলা চেপে ধরলো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র! নি®প্রাণ হয়ে পড়লো লাবণ্যের দেহ।

স্ত্রীকে মেরে ফেলেও যেন তার মধ্যকার রাগ কমেনি। সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা ছিলো, তা জ্বালিয়ে মৃত লাবণ্যের পুরো চেহারা পুড়িয়ে বিকৃত করে ফেললো। ইতোমধ্যে মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে এলো। মেয়েকেও কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেরে ফেললো।

নির্জন বাড়ি বিধায় এ ঘটনা কেউ টের পেলো না।

অসম্ভব ভালোবাসতো যে স্ত্রী-সন্তানকে, তাদেরকে নিজ হাতে হত্যা করে আরিফ যেন পাগলপ্রায় হয়ে উঠলো। অস্থিরভাবে ছুটে এলো থানায়। পুলিশের কাছে সব স্বীকার করলো। আরো বললো, আমি যে স্ত্রীকে এতো ভালোবাসি, তাই তার এমন কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারিনি। তাই তাকে হত্যা করেছি।

পুলিশ জিজ্ঞসা করলো, তাহলে নিষ্পাপ মেয়েটিকে কেন হত্যা করলেন? আরিফ বললো, আমি জানি, স্ত্রী হত্যার দায়ে আমার ফাঁসি হবে। তখন এ মেয়ের অবস্থা কি হবে? তার ভবিষ্যত অন্ধকার। সমাজে একজন খুনির মেয়ে হিসেবে অনাদরে-অবহেলায় সে বড় হবে। তাই তাকেও মেরে ফেললাম। স্যার, আমি অপরাধী। প্লীজ! আমার অপরাধের শাস্তি আমাকে দেন।

প্রিয় ভাই-বোন, প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্যে। কিন্তু আমরা বড়ই ভুল করি তা অপাত্রে ব্যবহার করে। আমাদের সমাজে মোবাইল ফোন এখন একটি মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এর কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পারস্পারিক বিশ্বাস ও সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে ফুলের মতো সাজানো-গোছানো সোনার সংসার। প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান রকম ঘটনা-দূর্ঘটনা। যা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে এবং স্বচক্ষে অবলোকন করে আসছি।

বিষয়: বিবিধ

১২৫২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

171508
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪১
বুড়া মিয়া লিখেছেন : স্বামী কাছে থাকার পরেও কতো নারীরা করে – দেখলেন না রুমানা-হাসান এর কাহিনী! বেচারা হাসান – আলাদা হইয়া গেলেও পারতি, আপনার এ লোকও আলাদা হতে পারতো। কিছু কিছু বিষয়ে আবেগী হতে হয় না!

আমরা পুরুষরাই আসলে সমাজে বেশী নির্যাতিত, কিন্তু বেশিরভাগই প্রকাশ করে না! আর ওইসব নারী নামক পশুগুলো, তাদের পেটের সন্তানও তাদের কাছে তাদের সুবিধা অর্জনের জন্য সামান্য একটা পুজি – সন্তানকে এর বেশী কিছু তারা মনেই করে না!
171514
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
হতভাগা লিখেছেন : স্বামীর উপহার দেওয়া মোবাইল দিয়ে স্বামীর পাঠানো ফ্লেক্সিতে স্বামীর সাথে কথা না বলে বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিকের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন আলাপ মেয়েদের খুবই কমন একটা গুন ।

এসব মেয়েরা নিজেদের বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারে না কারণ ঐ সব চাল চুলোহীন ছেলের সাথে তার বাবা মা তাকে বিয়ে দিতে চান না । ফলে বাবা মার কথা মানতে গিয়ে সে বাধ্য হয় সম্পূর্ন অপরিচিত একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় ।

বিয়ে করার পর তার স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে । ফলে ছাড়াছাড়ি হওয়া হয়ে পড়ে অবশ্যম্ভাবী ।

এটা মেয়েটারই প্রি প্ল্যান্ড করা থাকে । ফলে বাটে পড়ে স্বামীটি ।




171528
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৩
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : উফ ,,আমাদেরকে সচেতন হতে হবে নিজের ক্ষেত্রে পরিবারের ক্ষেত্রে সমাজের ক্ষেত্রে।
অপনেক অনেক ধন্যবাদ।
171548
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
ফেরারী মন লিখেছেন : চরম সত্য লিখেছেনরে ভাই। এজন্য হাজার লাইক পোষ্টে। আশা করি পোষ্টটি পড়ে আমরা সবাই সচেতন হবো।
174385
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:০৮
সত্যের বিজয় লিখেছেন : ধন্যবাদ সবাইকে পড়া ও কমেন্ট করার জন্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File