স্বামীর অবাধ্যতার পরিনাম !
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৭:৫৭ সকাল
হযরত মাওলানা মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. বলেন, প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে পাকিস্তানে এক মহিলার মৃত্যু হয়। জানাযার পর তার লাশ যখন কবরে রাখার জন্য খাটিয়া থেকে নীচে নামানো হয় তখন দেখা যায় কবরের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর সাপ! বিষাক্ত এই সাপ দেখে উপস্থিত লোকজন ভয় পেয়ে যায়। তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর ঐ মহিলার জন্য দ্বিতীয় আরেকটি কবর খোঁড়া হয়। লাশ কবরে নামানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বিতীয় এই কবরটি খালিই ছিল। সাপ কিংবা অন্য কোনো প্রাণী সেখানে ছিল না। কিন্তু যখনই তারা লাশ কবরে রাখতে গেল তখনই দেখা গেল তার মধ্যেও সেই সাপ যা প্রথম কবরে ছিল। এরপর তৃতীয় কবর খোঁড়া হলো। তাতেও লাশ রাখার সময় প্রথম কবরের সেই সাপটি দৃশ্যমান হলো। অবস্থাদৃষ্টে সবাই বলাবলি করতে লাগল, এই লাশের জন্য যত কবরই খোঁড়া হোক না কেন, সব কবরেই এই সাপ চলে আসবে। সুতরাং এই কবরেই লাশ দাফন করা হোক। কবরে রাখার জন্য আবার যখন খাটিয়া থেকে লাশ নীচে নামিয়ে আনা হলো, তখন সাপটি কবরের এক পাশে গিয়ে লাশ রাখার জায়গা করে দিল। কিন্তু যখন লাশ রাখা হলো তখন সঙ্গে সঙ্গে সাপটি লাশের মুখ থেকে কাফন সরিয়ে তার জিহ্বা পেঁচিয়ে ধরল। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলে আবারো পেরেশান হলো। আশ্চর্য হয়ে সবাই বলাবলি করতে লাগল, ঘটনা কি?! কেন এমন হচ্ছে? লাশ দাফন করতে আসা লোকদের মধ্যে মহিলার স্বামীও ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার স্ত্রীর উপর এই আযাব আসার কোনো কারণ কি আপনি বলতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বলতে পারব। আমার স্ত্রী আমার সাথে অসদাচরন করত।আমাকে বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট দিত। কিন্তু আমি ধৈর্যধারণ করতাম। কখনও এর বদলা কিংবা প্রতিশোধ নিতাম না। তার কটুকথা ও দুঃখজনক আচরণের পরিবর্তে আমি তাকে কিছুই বলতাম না। স্বামীর কথা শুনে লোকজন বলতে লাগল, হ্যাঁ ভাই! আমরা বুঝতে পেরেছি, আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যেই আপনার স্ত্রীর এই দুরবস্থা। আপনি এখন দয়া করে তাকে মাফ করে দিন। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নচেৎ তার রেহাই নেই! অতঃপর মহিলার স্বামী মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুললেন। তার সাথে হাত তুলল উপস্থিত সবাই। স্বামী বললেন, হে আল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীকে মাফ করে দিলাম। সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনিও তাকে মাফ করে দিন। সেই সাথে কবরের যাবতীয় আযাব থেকে তাকে হেফাযত করুন।' দোয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেখা গেল, ভয়ঙ্কর সাপটি মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল! ফলে সকলের পেরেশানী দূর হলো এবং তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। প্রিয় মা ও বোনেরা! আপনারা যারা স্বামীকে কষ্ট দেন, কটুবাক্য বর্ষণে জর্জরিত করেন, মুখে যা আসে তাই বলেন; স্বামীকে মানেন না, তার কথামত চলেন না, তার আনুগত্য করেন না, তাকে শ্রদ্ধা করেন না, সম্মান করেন না, আলোচ্য এই সত্য ঘটনাটি পাঠ করে এ ব্যাপারে একটু ভাববেন কি? নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে একটু চিন্তা করবেন কি? হ্যাঁ, যদি ভাবেন, যদি চিন্তা করেন, যদি স্বামীর সাথে সকল প্রকার অসদাচরন পরিত্যাগ করতে পারেন, যদি অতীতের সকল ভুলের জন্য আজই স্বামীর পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নিতে পারেন, তাহলে আমি মনে করি, আপনি নিজের উপর বড় রহম করলেন, বড় এহসান করলেন এবং আমার বিশ্বাস, এই পথ ধরেই আপনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে পারবেন। কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, আল্লাহ পাক যেন আপনাদের সকল প্রকার অহমিকা পরিত্যাগ করে স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে তাকে সন্তুষ্ট করার তাওফীক দান করেন। আমীন। আর হ্যাঁ, আরেকটি জরুরি কথা মনে রাখবেন, স্বামীর কাছে মাফ চাইলে স্ত্রীর সম্মান হ্রাস পায় না, বরং বাড়ে। আজ পর্যন্ত কোনো নারী একথা বলতে পারেনি যে, স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে তার সম্মান ও মর্যাদা কমেছে কিংবা সে ঠকেছে। তাই আবারও দোয়া করি, আল্লাহ পাক আপনাদেরকে সঠিক বুঝ নসীব করুন। আমীন। [সূত্র : মালফুযাতে ফকীহুল উম্মত, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭০]
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন