দাড়ি কামিয়ে ফেলার ফলে সংঘটিত সাতটি ভয়াবহ গুনাহ
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১১:১২ রাত
(১) অবাধ্যতাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (স.) যখন কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও কোনো মুমিন নারীর তাদের সে ব্যাপারে নিজেদের কোনো রকম এখতিয়ার থাকবে না – (যে তারা তাতে কোনো রদবদল করবে); যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে নিসন্দেহে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।” (আল-আহযাব ৩৬)
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা জ্বিন ২৩)
“রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।” (হাশর ৭)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”আর আমি যা কিছু নিষেধ করেছি তা থেকে বেঁচে থাকো” [৩]
হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বার্ধক্যে (সাদাচুলকে) উপড়ে ফেলো না। কেননা তা কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য আলোকবর্তিকা হবে”। (তিরমিযি, আবু দাউদ, রিয়াদুস সালেহিন ১৬৪৬)
“যে আমার সুন্নাহ’র বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই।” (বুখারী, ৪৬৭৫)
দাড়ি কিংবা মাথা থেকে চুল উপড়ে ফেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে, যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সে কালো কিংবা সাদা উভয় প্রকার চুলের বৃদ্ধিকেই অপছন্দ করে থাকে,অথচ সাদা দাড়িকে কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য নূর হিসেবে বলা হয়েছে।
(২) ঔদ্ধত্য ও হেদায়েতের পথ হারিয়ে ফেলা
সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, “যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ (স.)), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি”। (নিসাঃআয়াত ৮০)
যেহেতু রাসুলুল্লাহ স. এর সুন্নাহ (আদেশ, কাজ এবং গুণগতভাবে) বলছে দাড়ি বড় করার কথা, সেহেতু এটা কামিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর সম্মানিত সুন্নাহ তথা জীবনাচরণের প্রতি একটি চরম অপমান। তিনি বলেছেন, “যে আমার সুন্নাহর বিরাগভাজন হয় সে আমার দলভুক্ত নয়”। (মুসলিম, ৩২৩৬; বুখারী, আহমদ, নাসায়ী)
“যে কেহ এমন আমল করবে যা করতে আমরা নির্দেশ দেইনি , তা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম)
আমাদেরকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নি’মা (নিয়ামত) এবং মর্যাদা। নিঃসন্দেহে দাড়ি কামানো সেই নিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং যেই আল্লাহর রাসূল(সা.) এর দেখানো পথ সর্বোত্তম পথ, সেই পথ থেকে বিচ্যুত হওয়াও বটে। এটা আমাদেরকে অবিশ্বাসীদের মতো স্তরেও নামিয়ে দেয় যাদের কাছে তাদের বদ কর্মগুলো সুশোভিত হয়ে দেখা দেয়; এভাবেই তাদের বিকৃত স্বভাব-প্রকৃতি আজকে তাদের বোধশক্তির এতটাই বিলোপ ঘটিয়েছে যে, তারা আজ বলছে, সভ্যতার অগ্রগতি ও অবস্থা অনুধাবনের জন্যে নারী পুরুষের বড় বাহ্যিক পার্থক্যগুলো (উদাহরণ স্বরুপ; দাড়ি) দূরীকরণ আবশ্যক !
(৩) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটানোঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। ” (রুম ৩০)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ‘খালক’ শব্দটি দ্বারা মানুষের ফিতরাহ তথা স্বাভাবিক স্বভাব প্রকৃতিকে বোঝানো হয়েছে।
ফিতরাগত বৈশিষ্টের পরিবর্তন সাধন হল শয়তানের অনুসরণ এবং পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অবাধ্যতা। শয়তানের এই চক্রান্ত উন্মোচন করে দিয়ে আল্লাহ বলেন,
“শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব।
তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং
তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।'
যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। ” (নিসাঃ ১১৮-১১৯)
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধান করে বলেছেন, “আল্লাহ যেসব নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন যারা উল্কি অঙ্কন করে এবং নিজেদের শরীরেও উল্কি আঁকে, এবং সেই সকল নারীদের যারা নিজেদের ভ্রু কামায় এবং যারা নিজেদের দাঁতের মাঝে কৃত্রিমভাবে ফাঁক বৃদ্ধি করে যাতে তাদেরকে দেখতে সুন্দর দেখায়, তারা আল্লাহর সৃষ্টির উপর নিজেরা পরিবর্তন সাধন করে।”
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি এই অভিশাপের কারণ ব্যাখা করে বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি সাধন করা”। এই অভিশাপ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের পরিবর্তন নিষিদ্ধ। কাজেই যে তথাকথিত “সৌন্দর্য বর্ধন” এর জন্য তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন সাধন করে, সুবহানাল্লাহ ! সমস্ত প্রশংসা তাঁরই যিনি সব ভুল ত্রুটির ঊর্ধে এবং যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন নিখুঁতভাবে।
দাড়ি কামানো ‘আন-নামাস’র অন্তর্গত, যা হলো আরও বেশি ‘সুন্দর’ হবার জন্যে মুখমণ্ডল থেকে চুল কিংবা মহিলাদের চোখের ভ্রু উপড়ে ফেলা । পুরুষদের জন্যে যা অধিকতর কুৎসিত।...চলবে ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর উপহার উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন