অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলামের উদারতা (প্রথম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:২৬:৫২ সকাল

ইদানিং সংখ্যালগুদের উপরে হামলা,তাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ব্যপকভাবে বেড়ে গেছে।বেড়ে গেছে অত্যাচারের মাত্রা।যারা এসব করছে তারা কি সত্যিকারের মুসলমান ?! সংখ্যালগুদের উপর সামান্যতম জুলুম-নির্যাতন কি ইসলাম সমর্থন করে??

আসুন জানিঃ

একটি মুসলিম দেশে ইসলাম মুসলিমকে শুধু অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতেই বলে না, রাষ্ট্রে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ-সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক স্থানে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার তুলে ধরা হয়েছে। অমুসলিমরা নিজ নিজ উপাসনালয়ে উপাসনা করবেন। নিজ ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মালয়কে সুরক্ষিত রাখবেন। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা সমান। তাদের প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্য ইসলাম বরদাশত করে না। যেসব অমুসলিমের সঙ্গে কোনো সংঘাত নেই, যারা শান্তিপূর্ণভাবে মুসলিমদের সঙ্গে বসবাস করেন তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো নয়; ইনসাফ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। {সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮}

আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছেন পরমতসহিঞ্চুতা ও পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে। আল্লাহ ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرۡجِعُهُمۡ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٠٨ ﴾ [الانعام: ١٠٨]

‘তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’। {সূরা আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮}

কোনো বিধর্মী উপসনালয়ে সাধারণ অবস্থা তো দূরের কথা যুদ্ধাবস্থায়ও হামলা করা যাবে না। কোনো পুরোহিত বা পাদ্রীর প্রতি অস্ত্র তাক করা যাবে না। কোনো উপসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া যাবে না। হাবীব ইবন অলীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন»

‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি : (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৯৪৩০]

এদিকে মুতার যুদ্ধে রওয়ানার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন :

« وَلاَ تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلاَ صَغِيرًا ضَرَعًا وَلاَ كَبِيرًا فَانِيًا وَلاَ تَقْطَعُنَّ شَجَرَةً وَلاَ تَعْقِرُنَّ نَخْلاً وَلاَ تَهْدِمُوا بَيْتًا ».

‘তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ [মুসলিম : ১৭৩১]

আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

« كَانَ إذَا بَعَثَ جُيُوشَهُ ، قَالَ : لاَ تَقْتُلُوا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’ [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়]

আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। আপন খিলাফতকালে প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণ করতে গিয়ে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিআল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন,

‘হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) অনুরূপ করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে। [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক : ১/৫২; তারীখুত তাবারী]

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

৯৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

163044
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১২
শেষ বিকেলের লিখেছেন : ভাইজান ; ইসলাম ধর্মে অমুসলিম, কাফেরদের সমূলে হত্যা করার নির্দ্দেশ দেয়া আছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে সুরার মাঝখান থেকে কোন কিছু উদ্বৃতি দিলে কোরাণের অর্থ বুঝা যায় না। কোরান বুঝতে হলে আগের আয়াত, পরের আয়াত, সুরা নাজিলের শানেনুজুলে কি বলা হয়েছে তা জানতে হবে। কাফের অমুসলিম, মুর্তাদ, নাস্তিক কতল করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

শুধু শুধু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ইসলামের ক্ষতি করবেন্না। আল্লাহ আপনাকে কোরান বুঝার তৌফিক দান করুক।
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
117384
সত্যের বিজয় লিখেছেন : শেষ বিকেলের@ সত্য বললে কাদের গায়ে আগুন জ্বলে জানিস ? এই তোদের মত নাফরমান নাস্তিকবাদীদের ।
এই ব্লগে তোর প্রায় প্রতিটি পোস্টে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।আবার কুরআন বুঝার জ্ঞান দিতে এসেছিস !
ইবলিস শয়তানকে দেখার ইচ্ছা সবার মাঝে। আর আমিও দেখতে চেয়েছিলাম।
আজ দেখলাম ইবলিস শয়তান 'শেষ বিকেলের/যমুনার চরে নাম নিয়ে আমাদের মাঝে বসবাস করছে।
"আউজু বিল্লাহিমিনাশ শায়তনির রাজিম"
163105
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
শেষ বিকেলের লিখেছেন : ইহুদী, নাসারা, নাফরমান, নাস্তকের এত লাথ্থি খেয়েও তোদের হুশ হয় না?
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
117499
সত্যের বিজয় লিখেছেন : Happy তুমি লাত্থি খাইয়াছ বলিয়াই এতো রাগ করিতেছো বুঝি বাপু ! @শেষ বিকেলের

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File