এমন ভুল যেন কেউ না করি :(
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের বিজয় ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৮:৪৯ রাত
তায়িফ লেখাপড়ায় ভালো। পরীক্ষায় সব সময়ই এক দুইয়ের ভেতরেই থাকে। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে।টেস্ট পরীক্ষায় সে প্রতিটি বিষয়ে গড়ে ৮৫% করে নাম্বার পেলো। আম্মু নাম্বারের কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেন। বললেন:
-তোর আব্বুও শুনলে খুব খুশি হবেন।
রাতে আব্বু অফিস থেকে ফিরলেন। তায়িফ গিয়ে মার্কশিট দেখালো। আব্বুও খুব খুশি হলেন। আব্বু বললেন:
চূড়ান্ত পরীক্ষায় যদি আরো ভালো করতে পারো, তুমি যা চাও তাই পাবে।
-আব্বু আমি ভার্সিটিতে ভর্তির আগে একটা বাইক চাই।
-ঠিক আছে। তবে শর্ত হলো ফলাফল আরো ভালো করতে হবে।
-ঠিক আছে আব্বু।
তায়িফ দিনরাত পড়াশোনা চালিয়ে গেলো। আব্বু-আম্মুও সারাক্ষণ তার সাথে সাথে থাকলেন। রাতজেগে পড়াশোনার সময় পালাক্রমে জেগে থাকলেন। গরম দুধ-রঙ চা ইত্যাদি বানিয়ে তাকে সাহস যুগিয়ে গেলেন।
এভাবে একসময় পরীক্ষা শেষ হলো। ফলাফলও বের হলো। তায়িফ দুরুদুরু বুকে ফলাফল আনতে গেলো। আনন্দে তার চোখের পানি এসে গেলো। পরীক্ষায় সে আশাতীত ফলাফল করেছে।গোল্ডেন A+ পেয়েছে সে।
আব্বু অফিসে বসেই খবর পেয়েছেন। আম্মুই জানিয়ে দিয়েছেন। বিকেলে আম্মুকে বলে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে গেলো। ক্লাসের সবাই মিলে দেখা করতে যাবে।
ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। বাসায় এসে আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলো:
-আব্বু কোথায়?
-স্টাডি রূমে আছেন।
-আব্বু, আসবো?
-হ্যা, এসো।
আব্বু উঠে এসে তায়িফকে জড়িয়ে ধরলেন। তার চোখে আনন্দাশ্রু।
-আব্বু! আমার উপহার কোথায়?
-আছে আছে, এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেনো?
তিনি আলমারি খুলে একটা কাঠের সুদৃশ্য বাক্স বের করলেন। এটা তার কুরআন শরীফ রাখার বাক্স। আব্বু বাক্সটা তায়িফের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন।
-আমি তো কুরআন শরীফ চাইনি আব্বু। আমি কুরআন শরীফ দিয়ে কী করবো? আমি বন্ধুদেরকে বলেছি বাইকের কথা। আমি এখন তাদের কাছে মুখ দেখাবো কী করে?
একথা বলে বাক্সটা বিছানায় রেখে ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বের গেলো।
পেছন থেকে আম্মু অনেক ডাকলেন, তায়িফ অভিমানে ফিরেও তাকালো না।
তায়িফ ঠিক করলো আর ঘরে ফিরবে না। বন্ধুবান্ধবের সাথেও দেখা করবে না। কোনো আত্মীয়ের বাড়িতেও উঠবে না। লুকিয়ে অন্য কোথায় চলে যাবে। তাই করলো।
বেশ কিছুদিন পর তার মনে অনুশোচনা জাগলো। বুঝতে পারলো, তার এভাবে হুট করে বের হয়ে আসা উচিত হয় নি। আব্বুর কোনো সমস্যাও থাকতে পারে। সেটা বলার সময় তো সে দেয়নি।
তায়িফ বাড়ি ফিরে এলো। একমাস পর। ঘরে ঢুকে দেখলো আম্মু একা একা বসে কুরআন তিলাওয়াত করছেন। তাকে দেখে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল তায়িফ।
তায়িফের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আম্মু এই একমাসেই অনেক বুড়িয়ে গেছেন। শরীর একদম ভেঙে গেছে। সে পাশে গিয়ে বসলো।আম্মু বলে ডাক দিতেই আম্মু তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
-আব্বু অফিস থেকে ফিরেন নি?
আম্মু উত্তর দিলেন না। অনেকবার প্রশ্ন করার পর তিনি ফোঁপাতে ফোঁপাতে যা বললেন, তা শুনে তায়িফ মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
সেদিন তায়িফ চলে যাওয়ার পর আব্বু ভেবেছিলেন পাগল ছেলেটা ফিরে আসবে। রাত গভীর হলো, সকাল হলো, দুপুর হলো, বিকের পেরিয়ে রাত হলো। তায়িফ এলো না। আব্বু ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। নানাদিকে দৌড়ঝাপ করতে করতে তার প্রেসার বেড়ে গিয়েছিলো। একরাতে স্ট্রোক করলেন। আগে তো দুইবার হয়েছে। এবার শেষবার ছিলো।চলে গেলেন না ফেরার দেশে।...
তায়িফ কোনোমতে তার কামরায় আসলো। সবকিছু আগের মতোই আছে। পড়ার টেবিলের উপর দেখলো সেই কুরআন শরীফের বাক্সটা রাখা। সে কৌতূহলভরে বাক্সটা খুললো। তায়িফ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে দেখলো, বাক্সের মধ্যে একটা সুন্দর কুরআন শরীফ রাখা।
তার পাশেই রাখা আছে বাইকের চাবি।
চাবির সাথে একটা চিরকুটে লেখা আছে:
“তারা এন্টারপ্রাইজে বাইকটা রাখা আছে।
-তোমার আব্বু।"
(বাস্তবতার আলোকে গল্পটি কাল্পনিক)
বিষয়: বিবিধ
১০১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাছাড়া এই মিলাদুন্নবী তারা কোথায় পেলো?
...আসলে সরল মুসলমানদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে পেটপুজাই হল ঐ সব ভণ্ডদের আসল উদ্দ্যেশ্য।@বুড়া মিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন